অসাধারন এক বাংলা সিনেমা - 'পলাতক'!!!
“জীবনপুরের পথিকরে ভাই,
কোনও দেশে সাকিন নাই।
কোথাও আমার মনের খবর পেলাম না” ....
১৯৬৩ সনে মুক্তি পাওয়া 'পলাতক' প্রথম দেখি সম্ভবত ১৯৯৫ সালে, তারপর দেখেছিলাম যতদূর মনে পড়ে ২০১২ সালে, আজ আবারও দেখলাম। তখনও ভিডিও ক্যাসেট, সিডি সহজ প্রাপ্য ছিল না। আমাদের বাড়িতে নিয়ম ছিল কেউ একজন ভিডিও ক্যাসেট /সিডি আনলেই এক বাসা থেকে অন্য বাসায় ক্যাসেট/সিডি নিয়ে দেখতাম। তো সবাই মিলে পলাতক দেখছি। পলাতক এমনই এক অসাধারন ছবি যার প্রতিটা মুহূর্তই উপভোগ্য। পুরো ছবিটাই যেন রসের একটা আধার। এই রস সংস্কৃতির রস যা আপনার মনকে তৃপ্তি দেয়। সেই সময় আমরা নিমাই ভট্টাচার্য, সুনীল, শীর্ষেন্দু আর সঞ্জীবে বুঁদ হয়ে থাকতাম। পলাতক দেখার পর মনে হল জহির রায়হান, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন ছাড়াও আরও অনেকেই আছেন যারা সেলুলয়েডের পাতায় সাহিত্য রচনা করতে পারেন। হ্যাটস অফ টু যাত্রিক দল (তরুণ মজুমদার, শচীন মুখোপাধ্যায় ও দিলীপ মুখোপাধ্যায়)।

পলাতক ছবির কাহিনি ভবঘুরে বসন্তকুমারকে নিয়ে যে নিজেকে জমিদার আংটি চাটুজ্জের ভাই বলেই পরিচয় দেয় (ছবিটি মনোজ বসুর গল্প 'আংটি চাটুজ্জের ভাই' অবলম্বনে তৈরি)। ছবির শুরুতেই দেখি বিশ্ব (বখাটে) ভবঘুরে বসন্ত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। পায়ে তার ব্যান্ডেজ বাধানো ঘা (বসন্তের মতে এটা তার পোষা ঘা)। এই ঘা তৈরিতে লেগেছে ১০পয়সার আলতা আর ১০ পয়সার ব্যান্ডেজ। কিন্তু কেন?
এই কেনোর উত্তর জানতে হলে দেখতে হবে পলাতক সিনেমা।
ছবির গানগুলি যেমন অসাধারন, তেমনি অসাধারন অনুপকুমারের (বসন্ত) অভিনয়। গানে গল্পে অভিনয়ে জমজমাট পলাতক। বসন্ত যেখানেই গেছে মায়ার বাঁধনে জড়িয়েছে সবাইকে কিন্তু নিজে কোন বাঁধনে ধরা দেয় না......।
ছবির শেষ দৃশ্য আরো অপার্থিব, নামকরনের নির্মম স্বার্থকতা। জ্যোস্নার আলোয় জলের বুকে ভাসতে ভাসতে চিরতরে পালিয়ে যায় এক পলাতকা। আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় জীবনের উল্লাসের পাশে পাশে লোকান্তরের কথাও ...
পলাতক - বাংলা সিনেমা ইতিহাসে একটি মাইল-স্টোন! তরুন মজুমদার এর পরিচালনায় আর অনুপ কুমার এর অনবদ্য অভিনয়ে এই চলচিত্র অন্যতম একটি স্থান অধিকার করে রেখেছে সেই ১৯৬৩ থেকে ......

তরুণ মজুমদার ১৯৩১ সালে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। রসায়ন শাস্রে পড়াশোনা শেষ করে পরবর্তীকালে চলচ্চিত্র পরিচালনাই পেশা হিসেবে বেছে নেন স্কটিশচার্চ কলেজের এই প্রাক্তনী। তরুন মজুমদারের স্ত্রী প্রখ্যাত অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন তরুণ মজুমদার। পদ্মশ্রী সম্মানেও সম্মানিত হয়েছেন। তবে তাঁর সেরা প্রাপ্তি বাঙালি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের অফুরন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
ছবিঃ গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


