দক্ষতা অর্জন করতে হয় ছোট কাজ করেই........
দেশে চাকরি নেই; কেউ নাকি চাকরি পায় না। কিন্তু বিডিজবস-এর মতো ওয়েবসাইটে হাজারে ৫/৬টার বেশি complete profile পাবেন না। ফেসবুক-এ বেকারত্ব নিয়ে স্ট্যাটাস দেবে, কিন্তু লিঙ্কডইনে কারো প্রোফাইল রেডি না!
আমি খুব ছোট একজন উদ্দ্যোক্তা। আমার অফিসে দুজন ইঞ্জিনিয়ার, দুইজন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ নিয়োগ দিতে বিডিজবস থেকে ১০০ জন ইঞ্জিনিয়ার, ১০০ জন এমবিএ সনদধারী শর্ট লিস্ট করে তাদের মধ্যে থেকে ২+২= ৪ জন বাছাই করতে একমাস লেগেছে। আবেদন করা ১০০ জন ইঞ্জিনিয়রের এবং ১০০ জন এমবিএ সনদধারীর ফেসবুক প্রোফাইল এবং টাইমলাইন আমি দেখেছি। প্রায় সবাই "কই খাইতে গেলাম, কোথায় ঘুরতে গেলাম, কই আড্ডা দিলাম, কার বৌভাতে গেলাম- সবই আপডেট আছে, কিন্তু নিজের সিভিটা আপডেট হয় নাই!
বিশ্ববিদ্যালয়ে BBA/MBA পড়ে, নেয় মার্কেটিং আর হিউম্যান রিসোর্স। কেন? ফাইন্যান্স নিবে না; কারণ অংকে দূর্বল! কে তাকে বুঝিয়েছে- ফাইন্যান্স পড়তে সাইন্সের হায়ার ম্যাথের মাস্টার্স শেষ করে আসা লাগে। একাউন্টিং পড়বে না কারণ তার ব্যাকগ্রাউন্ড হয় আর্টস না হয় সাইন্স ছিলো! কে তারে বুঝিয়েছে- SSC বা HSCতে কমার্সের স্টুডেন্ট না হলে একাউন্টিং-এ পড়া যায় না! আবার ওদের অনেকেরই ধারণা, দেশে একাউন্টেন্টের কোনো দরকারই নাই; সব কম্পিউটারে করা যায়!
এদিকে মার্কেটিং এ পড়ে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ এর কাজ করবে না; হতে চায় ডাইরেক্ট মার্কেটিং ম্যানেজার, এসির রুমে বসে সেক্রেটারী টেবিলে বসে কাজ করবে। মার্কেটিং-এর সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করলে সুন্দর করে উত্তর দিবে, কিন্তু মার্কেটিং করতে গেলে কাস্টমারের সাথে দুর্ব্যবহার করবে। HR-এ পড়েও বলতে পারে না HR-এর মূল কাজ কী? নুন্যতম লেবার ল জানেনা, শুধু জানে- স্টাফদের চাকরি দেওয়া আর চাকরি খাওয়ার জন্য কাগজে সই করতে হয়!
যে কাউরে জিজ্ঞেস করেন- কী চাকরি করতে চায়? হয় বলবে ব্যাংকে কাজ করব, না হয় বলবে মাল্টিন্যাশনালে ক্যারিয়ার গড়ব। কিন্তু ব্যাংকে কী কাজ করতে হয় বা মাল্টিন্যাশনাল-এ কী করা হয় জিজ্ঞেস করলেই লা জবাব। ব্যাংকে বসে মানুষের টাকা গুনে সিল মারা আর মাল্টিন্যাশনাল মানে ম্যালা টাকা- এটুকুর বাইরে কোনো ধারণাই নাই!
চাকরি দিতে যাবেন, কোন যোগ্যতার বলে চাকরি পেতে চাও জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসবে- GPA 5, Golden 3.75 Golden 3.5! কিন্তু এই রেজাল্ট কিভাবে আপনার প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগবে, সে কথা জিজ্ঞেস করলেই ধরা!
অনার্স পাশ করে বসে আছে, চাকরি পাচ্ছে না, চেষ্টাও করে না; কোথায় কি কাজ করলে স্কিল বাড়াবে- সেই খবর নেই, হুট করে মাস্টার্স-এ ভর্তি হয়ে মাস্টার্স করবে; এবারও চাকরি নাই! অথচ চাকরির বাজারে সব চাইতে বেশি চাহিদা কারিগরি বিষয় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে একটা ডিপ্লোমা করতে তাদের সম্মানহানী হয়।
এদিকে দেশে যোগ্য লোক পাওয়া কঠিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক প্রধান, আমার শ্রদ্ধেয় প্রবীন শিক্ষক ডক্টর মোহাব্বত আলী স্যার তাঁর আর এক ছাত্র বিখ্যাত শিল্পপতি নুর আলীকে ইউনিক হোটেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, 'ভারতীয়দের চাকরি না দিয়ে আমাদের দেশের ছেলেদেরকে চাকরি দাও।'
নুর আলী উত্তর দিয়েছিলেন, "স্যার, স্কিলড একটা দেশী ছেলেকে দেখায় দেন, এক্ষুণি চাকরি দিচ্ছি।"
স্যারকে হতাশ হতে হয়েছেে!
শিক্ষার উদ্দেশ্য চোখের পর্দা সরিয়ে দেওয়া, মানুষকে অহংকার মুক্ত করা, কোনটা সঠিক কোনটা সঠিক নয় বুঝতে শেখানো; কিন্তু হয় উল্টোটা। এমবিএ করছে, এখন আর রিক্সার গ্যারেজের মালিক হতে পারবে না। অনার্স শেষ করে ফেলছে, বাপ যে ছোট্ট খামার দিয়ে ৩/৪ ভাইবোনকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেছে, সেই খামারকে নিজের বুদ্ধিতে বাড়াতে চেষ্টা করবে না।
এখন চলছে CEO-এর যুগ। ১,০০০ টাকায় একটা ডোমেইন, ৫০০ টাকায় হোস্টিং, ৩০০ টাকায় চার রঙের ভিজিটিং কার্ড করেই এখন CEO! কোম্পানিতে লোক ক’জন? মাত্র তিনজন!
কাজের স্কিল নাই; কমিটমেন্ট ঠিক নাই; বিজনেসের প্ল্যান নাই; টাকার কথা তো বাদই দিলাম। দু’দিন পর সব শেষ! অমনি শুরু হয়ে যাবে- আম্রিকায় সিলিকন ভ্যালি আছে, কিক স্টার্টার আছে, আমাদের কিচ্ছু নাই। আরে বাবা আকিজ সাহেব কোন ভ্যালিতে ছিলেন? স্কয়ার-এর স্যামসন এইচ. চৌধুরী ক্যামনে এগিছেন?
দক্ষতা অর্জন করতে হয় ছোট কাজ করেই.........কিন্তু আমাদের অনার্স-মাস্টার্স পাস করা অনুজরা, সন্তানেরা ছোট কাজ করবেন না! তাদের মুখে শুধু- নাই, নাই, নাই। আর নাই!
সত্য কথা বলতে, পেশাদার সমাজে এমন মানুষেরও খুব একটা দরকার নাই!
(২০১৮ সনের জুলাই মাসে ফেসবুকে লিখেছিলাম। সামান্য এডিট করে পুনঃপ্রচার করলাম)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




