হিরো আলমের মুচলেকা.........
২৭ জুলাই একটা মামলা সংক্রান্ত কাজে ডিবি অফিসে যেতে হয়েছিলো। আমি যখন ডিবি অফিসে পৌঁছে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে ফোন করে আমার উপস্থিত হওয়ার কথা জানাই তখন জানতে পারি- "হিরো আলম" এসেছে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন স্বয়ং ডিবি প্রধানসহ উর্ধতন কর্মকর্তাগণ- আমাকে অপেক্ষা করতে হবে!
বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। ডিবির রিসিপশন রুমে বসাতো দূরের কথা দাঁড়ানোর যায়গাও ছিলো না। ভ্যাপসা গরমে সবাই অতিষ্ট! আমার ব্যাক পেইনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হচ্ছিলো। আমি আবার সংশ্লিষ্ট অফিসারকে ফোন করে অনুরোধ করলাম- আমাকে পাস ইস্যু করা হোক, আমি ভিতরে কোথায় যেয়ে বসে অপেক্ষা করবো। তারপর সেই অফিসার এসে আমাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন।
এটাই আমার প্রথম ডিবি অফিসে যাওয়া। অনেক যায়গা জুড়ে ডিবি হেড কোয়ার্টার- সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশ। ভেতরে একটা পুকুরের মাঝখানে চমতকার একটা রেস্টুরেন্ট কাম ওয়েটিং প্লেস। নাম "বৃষ্টি বিলাস"! অসাধারণ সুন্দর পরিবেশে আমি দেড় ঘন্টা কিভাবে কাটিয়ে দিলাম- বুঝতে পারিনি!
হঠাত ডিবি প্রধানসহ উর্ধতন অন্যান্য অফিসার ডিবি মিডিয়া সেন্টারে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে জানালেন- "হিরো আলম এর বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ......হিরো আলম মুচলেকা দিয়েছে- সে আর কোনোদিন রবীন্দ্র সংগীত গাইবেনা। পুলিশের ইউনিফর্ম পরবেনা......ইত্যাদি ইত্যাদি, যা আমরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সংবাদপত্রে পড়ে জেনেছি।
"হিরো আলম মুচলেকা দিয়েছে- সে আর কোনোদিন বিকৃত করে রবীন্দ্র সংগীত গাইবেনা" - এই মুচলেকা দেয়ার পর পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। হিরো আলম যখন ডিবি অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো তখন গোটা ডিবি অফিসের এবং উপস্থিত সকল স্তরের লোকজন হিরো আলমকে দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পরেছিল! মোদ্দাকথা ঐসময় মিন্টু রোডে কিছু সময়ের জন্য জ্যাম পরেছিলো!
এইতো দিন কয়েক আগে এক ইউএনও (বিসিএস ক্যাডারের) দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করাতে ওই ইউএনও সাংবাদিক'কে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেছেন- "জানোয়ারের বাচ্চা, তুই আমাকে চিনিস?"
এতে অবশ্য ওই ইউএনও'কে কোন মুচলেকা দিতে হয়নি।
হিরো আলমের অপরাধ'টা আসলে কি? রবীন্দ্রসঙ্গীত ভুল সূরে গাওয়া?
দেশের কোন আইনে বলা আছে রবীন্দ্রসঙ্গীত ভুল সূরে গাওয়া যাবে না? একজন ইউএনও রাষ্ট্রের টাকা মেরে দিয়ে অপরাধ করে উল্টো গলা উঁচু করে এই জনপদে বলতে পারেন- "জানোয়ারের বাচ্চা তুই আমাকে চিনিস?" আরেকজন রবীন্দ্রসঙ্গীত ভুল করে গাইলে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে মুচলেকা দিতে হয়!
আমি জীবনে কখনো হিরো আলমের কোন ভিডিও দেখিনি। তবে বাধ্য হয়েই লেখার জন্য আমাকে ওই রবীন্দ্রসঙ্গীত'টা শুনতে হয়েছে। আমি হিরো আলমের ভক্ত নই। স্রেফ এই লেখার কারনে তার ভিডিওটা আমাকে দেখতে হয়েছে। হলফ করে বলতে পারব- ইউরোপ-আমেরিকায় অনেক নামকরা সেলেব্রিটি এর চাইতেও ভয়ানক সূরে এলভিস প্রেসলি, বব ডিলানের গান গেয়ে ভিডিও আপলোড করে বেড়াচ্ছে। সেখানে অবশ্য কারো কিছু হচ্ছে না। কেউ মুচলেকাও নিচ্ছে না। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বিস্ময় বালক সুবর্ণ আইজ্যাক বারী এবং তার উচ্চশিক্ষিত পরিবারের সদস্যরা মিলে জাতীয় সংগীত গেয়েছে- যা চরম বিকৃতি, সেজন্য আইজ্যাক বারীকে কিম্বা তার পরিবারকে কোনো প্রকার জবাবদীহি করতে হয়নি!
যারা বয়সে আমার মতো কিছুটা প্রবীণ তাদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা, কোলকাতার প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাস এবং বাংলাদেশের প্রয়াত রবীন্দ্র সংগীর শিল্পী জাহীদুর রহীমকেও রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন নিয়ে অনেক হেনস্তার শিকার হতে হয়েছিলো!
রবীন্দ্রনাথ কী ঈশ্বর? তার গান কী বাইবেল?
তাহলে কেউ যদি নিজের ইচ্ছা মত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়; তাতে আপনাদের সমস্যাটা কোথায়? এই দেশে কি হিরো আলমই প্রথম মানুষ, যে বেসুরে গান গাইছে? অতীতে কি আর কেউ বেসূরে গায়নি?
বার্তাটা খুব পরিষ্কার। এই দেশ এবং সমাজ আপনাকে বার্তা দিচ্ছে- আপনি যদি দরিদ্র হন। আপনি যদি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসেন। আপনি যদি কালো, রোগা, হ্যাংলা-পাতলা কিংবা অশিক্ষিত হন। এই সমাজ; এই রাষ্ট্র আপনাকে আইন দেখাবে।
আপনি আপনার মত কিছু করতে পারবেন না। এটিএন বাংলার মাহাফুজুর রহমান বিকৃত সুর আর কন্ঠে রবীন্দ্র সংগীত টেলিভিশন চ্যানেলে পরিবেশন করলে কিম্বা "দাইমা"- জাতীয় উস্কানিমূলক নাট্যগীতি পরিবেশন করলে কিম্বা অন্যরা এর চাইতে জঘন্য অপরাধ করলেও সমস্যা নেই। তখন এই একই পুলিশ এসে বলবে- আমরা তদন্ত করে দেখছি অপরাধটা আসলে কার! অন্যদিকে রবীন্দ্র চার্চা যে আলাদা একটা ব্রাহ্মবাদী ধর্ম এইটা হিরো আলম হাতেকলমে বুঝায় দিল!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




