স্বপ্নের "মায়ের কোল"....
সাভারের খাগান এলাকায় আমার একখণ্ড জমি আছে। মোটামুটি সস্তায় কিনেছিলাম ২২ বছর আগে। আমার জমিটুকুর পাশের জমি দেশ কুখ্যাত- একজন শিল্পপতি এবং রাজনৈতিক নেতার। তাদের কয়েক শত বিঘা জমির ওপর একটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ছাত্র-শিক্ষকদের আবাসন ছাড়াও একটা টেক্সটাইল মিল। যখন জমি কিনেছিলাম তখন আমার জমির আয়তন ছিলো সাড়ে চৌদ্দ কাঠা। বাউন্ডারি ওয়াল করার পর জমির পরিমাণ স্থিতি হয় সাড়ে ১১ কাঠার সামান্য বেশী। বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানির লাইন সম্বলিত জমিতে লো-কস্ট টিন শেড বিল্ডিং করে দূরসম্পর্কের একজন আত্মীয়কে স্ব পরিবার থাকতে দেই, যিনি মূলত কেয়ার টেকার এর দ্বায়িত্ব পালন করতেন। ক্ষমতাসীন প্রতিবেশীর হুমকি ধামকিতে তিনি ভয়ে এলাকা ছাড়েন।
২০০৮ সন থেকে সাভারের বাসিন্দা অনুজ প্রতিম একজন ব্লগার আমার অনুরোধে জমিটা দেখভালের দায়িত্ব নেয়। তারপরও ক্ষমতাসীন প্রতিবেশী হাজী সাহেবের উপর্যুপরি হামলা, ভাংচুর এবং দখলের পর আরও ৩ কাঠা জমি হারাতে হয়। নিত্যনতুন ঝামেলায় ঢাকা থেকে প্রতি মাসে এমনকি সপ্তাহে সপ্তাহে সাভার যেয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ধর্ণা দিয়ে জমির নিয়ন্ত্রণ রক্ষা যন্ত্রণাময় হয়ে যায়। একপর্যায়ে জমিটা নামমাত্র দামে একজন প্রবাসীর কাছে বিক্রির চুক্তিতে দশ লাখ টাকা এডভান্স নেই এবং ক্রেতার সাথে জমি বিক্রি করার বায়নানামা উল্লেখ করে জমি ক্রেতা সাইনবোর্ড লাগিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন প্রতিবেশীর হুমকিতে ক্রেতা ভয়ে জমি কিনতে অপরগতা প্রকাশ করলে বাধ্য হয়ে এডভান্স নেওয়া টাকা ফিরিয়ে দেই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর "দুই বিঘা জমি" কবিতার উপেন হলাম আমি, আর জমিদার বাবু হলে- ভূমিদস্যু।
"শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, ‘বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।’
কহিলাম আমি, ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই –
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়জোর মরিবার মতো ঠাঁই।
শুনি রাজা কহে, ‘বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা –
ওটা দিতে হবে।"
কিছুদিনের মধ্যেই প্রভাবশালী হাজী সাহেব ইন্তেকাল ফরমান। তারপর তার ছেলে এমপি সাহেব করুণা করে আমার প্রতি সদয় হন। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের সহযোগিতায় আমার জমির মালিকানা স্বত্ব নির্ঝঞ্ঝাট হয়।
যখন জমি কিনেছিলাম তখন ইচ্ছা ছিল, মায়ের নামে একটি এতিমখানা করবো, সাথেই ছোটো একটা বাংলো টাইপ বাড়ি করবো....মাঝেমধ্যে গ্রামীণ পরিবেশে এতিমদের সাথে আমিও এক এতিম ওখানে স্বপরিবার কাটিয়ে আসবো।
এখন আর সেই পরিকল্পনা নাই। বরং বেশ কয়েক বছর যাবত একটা বৃদ্ধাশ্রম তৈরির ইচ্ছে আছে সীমিত ক্ষমতায়। জানিনা কতটা বা কবে পারব আমার স্বপ্নটা বাস্তবায়িত করতে.... নাম দেবো "মায়ের কোল"। একান্তই যদি নিজের সাধ্যে না কুলাতে পারি তাহলে একটা ট্রাস্টি বোর্ড করে আপনাদেরও পাশে চাইব.....যেখানে আমার কোনো পদ-পদবী এবং কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণ থাকবেনা।
পথে ঘাটে, স্টেশনে বসে ভিক্ষা করা বৃদ্ধ বৃদ্ধা কিংবা ছেলে মেয়ে খেদানো বুড়ো বুড়ি সেখানে সীমিত পরিসরে রাজা–রানীর মত না হলেও আপন নিবাস অধিকার নিয়ে থাকবেন......। ছোট বাগান, গরমে ঠান্ডা রাখার যন্ত্র, বয়স ভেদে বিনোদনের ব্যবস্থা, ইমারজেন্সি মেডিক্যাল ফেসিলিটি, সব থাকবে..... সঅঅঅব......।
আপনি যখন ডিপ্রেসড থাকবেন, মনে যখন কেউ ব্যথা দেবে, মনে হবে সবাই থেকেও আপনি একা, তক্ষুনি মন ভালো করতে "মায়ের কোল" থেকে ঘুরে যাবেন.. দেখবেন, ওদের ফোকলা হাসির ম্যাজিক আপনার আগামীর দিনগুলো অন্তত কিছুটা হলেও ভালো করে দেবে.......
স্বপ্ন সত্যির অপেক্ষায় দিন গুনছি আপাতত.......
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




