মুন্নি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার......
আমি যখন যেখানেই যাই- সুযোগ মতো সেই এলাকায় ভালো রসগোল্লা পাওয়া যায় কি না- সেই খবর নেই। সম্প্রতি গাজীপুর জেলার শেষ প্রান্ত এবং ময়মসিংহ জেলার শুরুতে ভালুকা এলাকায় ব্যবসায়ীক কাজে এক সপ্তাহ ধরে আসা যাওয়ার মধ্যে ছিলাম। ফজরের নামাজ আদায় করে চলে যেতাম এবং কাজ শেষ করে রাত ৮টা নাগাদ ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে ১২ টা নাগাদ বাসায় ফিরে আসতাম। এহেনো কঠিন ব্যস্ততার মধ্যেও রসগোল্লার কথা ভুলিনি।
স্থানীয় একজন, যিনি পেশায় প্রকৌশলী, আমার টিমের সাথে তিন মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভালুকা সাইটে তিনি সার্বক্ষণিক থেকেছেন। তার বাসা গাজীপুর এলাকার শিমুলতলী। একসপ্তাহ তাকে প্রতিদিন সকালে ঢাকা থেকে আসার পথে গাজীপুর থেকে তুলে নিয়ে সাইটে যাই এবং ফেরার পথে গাজীপুর ড্রপ করে যাই। তিনি জানালেন- “বাংলাদেশের মধ্যে সব চাইতে ভালো রসগোল্লা পাওয়া যায়- শ্রীপুর সলিং মোড় মুন্নি মিষ্টান্ন ভান্ডারে। আপনাকে ওখানে নিয়ে যাবো।“

ওনার মুখে রসগোল্লার রসালো প্রসংশা শুনে প্রতিদিন অপেক্ষার প্রহর গুনছি- কবে, কখন যাবো- শ্রীপুর সলিং মোড় মুন্নী মিষ্টান্ন ভান্ডারে রসগোল্লা কিনতে….. অবশেষে এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। আমাদের অবস্থান থেকে প্রচণ্ড জ্যাম, অলিগলি পেরিয়ে ৩০ কিলোমিটার ড্রাইভ করে শ্রীপুর সলিং মোড় মুন্নি মিষ্টান্ন ভান্ডারে পৌঁছলাম। খুবই সাদামাটা একটা মিষ্টির দোকান। দেখলাম- দোকানী এবং আমাদের গাইড ইঞ্জিনিয়ার পূর্ব পরিচিত।
দোকান মালিক আমাদেরকে দোকানের পেছনে যেখানে মিষ্টি তৈরী হয় সেখানে নিয়ে গেলেন। ভেতরে যেয়ে দেখি- ৪/৫ জন কারিগর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে মিষ্টি তৈরী করছেন। দোকানের মালিক আমাদের দুজনকে গরম গরম দুটি করে রসগোল্লা খেতে দিলেন। রসগোল্লার রঙ লালচে খাকি। দোকানের অবস্থান, দোকানের মালিক-কর্মচারী, রসগোল্লার দাম এবং রসগোল্লা প্রথম দর্শনেই মনে হয়েছে- রসগোল্লায় ফুড কালার ব্যবহার করেনি, টেক্সটাইল কালার ব্যবহার করেছে। তারপরও মিষ্টি মুখে দিয়ে আমার মোটেই সুস্বাদু মনে হয়নি। যেহেতু ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের অনুরোধে অনেক দূর থেকে এসেছি এবং রসগোল্লা খোর আমি, তাই অল্প পরিমাণ মানে দেড় কেজি(আমি একাই অর্ধেক খাবো পরিকল্পনা) রসগোল্লা বাসার জন্য এবং আমার গাইড এর জন্য এক কেজি, ড্রাইভারের জন্য এক কেজি- মোট সাড়ে তিন কেজি রসগোল্লা কিনি।
তখন রাত দশটা। ঢাকা পৌঁছাতে কমপক্ষে একটা বাজবে। আমাদের সংগী প্রকৌশলী মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে বললেন- তিনি এখানেই থেকে যাবেন- এখানে তার এক ছোট বোনের বাড়ি, তার বাসার কাছেই যেহেতু এসেছেন- তাই আজ আর গাজীপুর যাবেন না, আগামীকাল সকালে এখান থেকেই সাইতে চলে যাবেন। অগত্যা আমি একাই ঢাকার পথ ধরি। টংগী-উত্তরার মরন জ্যাম পেরিয়ে রাত দুইটায় বাসায় পৌঁছি।
বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে ৪/৫ টা রসগোল্লা নিয়ে একটার আংশিক মুখে দিয়েই মুখের আকৃতি কঠিন হয়ে যায়! আমার জীবনে আমি এতো নিম্নমানের রসগোল্লা আগে খাইনি। যথারিতী ফজরের নামাজ আদায় করেই আমি ভালুকার উদ্দেশ্যে চলে আসি। ৯টার দিকে বাসায় ফোন করে জিজ্ঞেস করি- রসগোল্লা কেমন হয়েছে?
আমাদের দুই ছেলে এবং নাতনীও আমার মতো রসগোল্লার কঠিন ভক্ত- তারা কেউই একটা রসগোল্লার আংশিকও খেতে পারেনি!
গভীর রাতে বাসায় ফিরেও ঢাকা থেকে আমি যথারিতী নয়টার সময় সাইটে পৌঁছি। ৫২ বছর বয়সী ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তখনও আসেননি। ওনার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানলাম- ওনার দুইজন স্ত্রী। একজন থাকেন গাজীপুর, আর নতুন বিয়ে করা স্ত্রী থাকেন শ্রীপুর সলিং মোড়(নতুন বিয়ে করা নিয়ে তার সংসারে গৃহবিবাদ চলছে …. তাই এই স্ত্রীর ঠিকানা গোপন রাখার চেষ্টা করলেও "এইসব বিষয়" গোপন থাকে না। এলাকার কিছু লোকেরা ঠিকই জানে)! বুঝতে বাকী রইলোনা- শ্রীপুর সলিং মোড় রসগোল্লা কেন এতো ভালো! এবং আজ সাইটে আসতে দেরী করছে কেনো…….
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




