মধ্যবিত্তের জ্বালা.......
"উপরে উচ্চবিত্ত নীচেতে নিম্নবিত্ত
মধ্যবিত্ত, সে যেনো প্রকৃতির উপহাস।
ভিক্ষাও মিলেনা, কেউ তো দেয়না
দুঃখে কাটে যার বারো মাস।"
আর্থীক বিচারে মধ্যবিত্তরা এমন একটা শ্রেণী যারা খুব উন্নত খায় পরে না, আবার খাওয়া পরায় একেবারে দীনতাও অবলম্বন করে না। ভদ্রসম্মতভাবে স্বসম্মানে দিনপাত করে। যে সব পরিবারে সদস্যসংখ্যা কম তারা তুলনামূলক সচ্ছল। কারো ধারে না, ধরায়ও না। আর যাদের সদস্যসংখ্যা বেশি তাদের টানাপড়েনের ভেতর দিয়ে চলতে হয়। সময়ে ধারকর্জে হাত বাড়াতে হয়। তবু তারা সুখী পরিবার।
কিন্তু আজ এইসব পরিবারও অসুখী। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে বাঁধাধরা আয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারছে না। যাদের 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়'- সেই নিম্নবিত্তের সমতুল্য অনটনে না পড়লেও হাট-বাজারে যাবার সময় গিন্নীর বাজার ফর্দে খুব বিরক্ত হয়। এ কষ্ট রোজকার। তার ওপর নতুন কষ্ট বুকটা থেঁতলে দেয় টিভি চ্যানেলগুলো। কথাগুলো আমার এক বন্ধুর-যিনি সরকারী কলেজের অধ্যাপক পদ থেকে সদ্য অবসর নিয়েছেন। সততা আর নৈতিকতা তাঁর জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে।

তিনি বললেন- প্রত্যেক চ্যানেলে প্রতিদিন মজাদার খাবার রান্নার রেসিপি প্রচার ও পুনঃপ্রচার হয়ে থাকে। প্রচার হয়ে থাকে পোশাক ফ্যাশান ডিজাইনের প্রদর্শনী। আজকাল মধ্যবিত্ত পরিবার কমই আছে যেখানে দু'একজন স্কুল কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া শৌখিন বাতিকের মেয়ে কিম্বা ছেলে নেই। এইসব ছেলের জন্য দামী মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, মেয়ের জন্য নতুন রান্নার উপকরণ কিনে দিতে ও নতুন ডিজাইনের পোশাক সংগ্রহের বায়না মেটাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ে। ছেলে মেয়ের আবদার 'না' করা যায় না আবার 'হাঁ' করলে পকেট হা হয়ে সংসারে বিপত্তি ঘটায়। এদিকে তেল-চিনি, শাকসবজি মাছ-মাংস ডিমের বাজারে আগুন। কিনতে গেলে হাত ঝলসে যায়, কলিজা পুড়ে যায়। রসুন পেঁয়াজ মরিচ আদাও কম যায় না। তারাও উচ্চমূল্যের তপ্ত ছাই মেখে ক্রেতা ভোগায়। আজকাল অনেকে তিন পদ দিয়ে ভাত খায় ঠিকই। কিন্তু সে পদ তিনের মধ্যে প্রথমটা ডালের ভর্তা, দ্বিতীয়টা ডালের বড়া ভাজি, তৃতীয়টা মসুর কিংবা মাসকলাইর ঝোল ডাল। এহেন কষ্টের মধ্যে টিভি চ্যানেলগুলো উস্কিয়ে মারছে মরার উপর খাঁড়ার ঘা। তারা ভাবছে না টিভি হচ্ছে সকল শ্রেণীর দর্শকের চেনা-জানা-শোনার মাধ্যম। তাদের দেশ কাল পাত্র পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রচারসূচি নির্ণয় করা উচিত। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অনুষ্ঠান নির্বাচন করা।
সত্যি কথা বলতে কি, সমাজের সব ধরনের নিপীড়নের প্রথম শিকার হচ্ছে মধ্যবিত্ত জনগোষ্টী বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্ত। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জ্বালা এই বিশেষ গোষ্টীকেই ভোগ করতে হয়। ওরা চাহিদা মত খেতেও পারেনা আবার না খেয়েও থাকতে পারেনা।
বিজ্ঞাপনদাতা আর প্রচারকারী চ্যানেলগুলো প্রতিনিয়তই এভাবে লোভাতুর পণ্যগুলো আরো ফ্লেভার মিশিয়ে দর্শকদেরকে প্রলুব্ধ করে চলছে। আর তা দেখে মধ্যবিত্ত পরিবার মাথা নীচু করে পকেটের সব শেষের কয়েনটা বিলিয়ে দিয়ে আসছে। এখন অবশ্য সমাজের মধ্যবিত্ত মানুষদের মধ্যে থেকে আরো একটা শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে "নিম্নমধ্যবিত্ত" নামে। অদূর ভবিষ্যতে মধ্যবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্ত বলে কিছু থাকবেনা, থাকবে উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্ত- যার আলামত ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




