সচিবদের ৪৩ কোটি টাকার বাড়ি এবং "লাগে টাকা দিবে গৌরিসেন"........
খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, "আগামী বছর বিশ্ব দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বাংলাদেশ যাতে সেই দুর্ভিক্ষের শিকার না হয় সে জন্য তিনি খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রতি ইঞ্চি জমি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নিজেদের ভূমিকায় নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করে নিজেদের সঞ্চয় করে এবং কৃচ্ছ্র সাধন করে চলতে হবে। আমরা আশা করি সবাই সেভাবে চলবেন.... সরকার কোনো কিছুই অপ্রয়োজনে ব্যবহার করতে যাবে না। আমরা যা প্রয়োজন তা ব্যবহার করব। এর বেশি নয়। আমাদের অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছু ব্যবহারের সুযোগ নেই।"
এক লাফে জ্বালানি তেলের মূল্য ৫৬% বাড়ানোয় নিত্য পণ্যের দাম আকাশচুম্বী, দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় দেশের মানুষের যখন আতংকিত, খোদ রাজধানীতেই ৬ থেকে ৮ ঘন্টা লোডশেডিং, সেই মুহূর্তে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের জন্য ৪৩ কোটি টাকা খরচ করে বাসভবন করতে যাচ্ছে সরকার।
বাসভবন না বলে এটিকে রাজপ্রাসাদ বলা ভালো। ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় পাশাপাশি নির্মিত হবে দুটি প্রাসাদ। প্রতিটি ভবন হবে তিন তলা। সাড়ে ১৮ হাজার বর্গফুটের প্রতিটি ভবনে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করে দুই সেট সুইমিং পুল বানানো হবে। একটি পরিবারে কতজন ‘জলকেলিসক্ষম’ সদস্য থাকলে দুই সেট সুইমিং পুল রাখার কথা তা অঙ্ক করে বের করার মতো বিষয়। এই প্রাসাদের ‘অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা’য় খরচ হবে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। দুটি ভবনে খাট পালঙ্ক-চেয়ার টেবিলের পেছনে খরচ হবে দেড় কোটি টাকা। ২টি ভবনের জন্য ৭টি করে মোট ১৪টি এলইডি টেলিভিশন কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ৯ লাখ টাকা। এত টেলিভিশন কারা দেখবেন—সেও মানবেতিহাসের এক বিভৎসতম বিস্ময়কর প্রশ্ন।
সিসিটিভি সিস্টেম কেনা হবে ৩২ টি। তাতে খরচ হবে ৬০ লাখ টাকা। ঘরে আগুন ধরলে তা নেভানোর যন্ত্রপাতি কিনতে লাগবে পৌনে দুই কোটি টাকা। মাত্র তিন তলার ভবনে উঠতে এক হাজার কেজি লিফটে (ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড) খরচ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। রোমান্টিক রেইনি সিজনে বৃষ্টি নামলে সেই ন্যাচারাল বৃষ্টির পানি দিয়ে যাতে অজু গোসল করা যায় তার জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হবে। এত খরচ হবে ১৮ লাখ টাকা। এই রকমের একটা এলাহী কারবার সেখানে হতে যাচ্ছে।

আরও একটা পুরনো খবরঃ ভোট চুরির জন্য ইসি আট হাজার কোটি টাকারও বেশী ব্যয়ের ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করেছে যা ১৬ লাখ টন খাদ্য শষ্যের দামের সমমূল্যের।
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো।
ভাবছেন সামনেই দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সরকার এতো টাকা কিভাবে খরচ করবে? চিন্তার কিছু নাই, আমজনতা যতই কষ্টে থাকুক "নেশার টাকা ভুতে যোগায়" প্রবাদের মতো আজাইরা বিলাসিতার খরচ জোগান দিবে রাস্ট্র নামক গৌরিসেন। এবার আসুন গৌরিসেন সম্পর্কে কিছু জানা যাকঃ-
বাংলা ভাষায় কতো রকমের প্রবাদ যে প্রচলিত আছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তেমনই একটা প্রবাদ, "লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন"....
এখন প্রশ্ন হলো কে এই গৌরী সেন যে সবাইকে এতো টাকা দিয়ে বেড়ায়? এমন বিখ্যাত একটা মানুষকে প্রতি মুহূর্তে আমরা মুখের কথা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছি ঠিকই, কিন্তু তার প্রকৃত পরিচয় জানার বেলায়ই আমাদের যত উদাসীনতা। এই উদাসীনতা দূর করে আজ জেনে নেয়া যাক গৌরী সেন এর কথা।
গৌরী সেন, জন্মসাল ১৫৮০। পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার ব্যালী মোরের বান্ডেল চার্চের নিকটেই তার জন্ম আর বেড়ে ওঠা। কারো কারো মতে অবশ্য জায়গাটা হুগলী নয়, মুর্শিদাবাদের বহররমপুর। নন্দরাম সেনের সুযোগ্য পুত্র গৌরী সেন। মজার ব্যাপার হলো, অনেকেই গৌরী সেনকে নারী বলেই জানেন। যার কাছ থেকে এতো টাকা আশা করছেন, তার সম্পর্কে একটু তো ঠিকঠাক মতো জানা প্রয়োজন!
জন্মসূত্রে গৌরী সুবর্ণবণিক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। মূলত ব্যবসায়ের সাথেই জড়িত ছিলেন তার পূর্বপুরুষ। সেই সূত্রেই পারিবারিক আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় তরতর করে উঠে যান সাফল্যের স্বর্ণশিখরে। ব্যবসায়িক চক্রগুলোতে দ্রুতই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। কেউ কারো কাছ থেকে ঋণ করেছে কিংবা কেউ সময়মত বেতন না পেয়ে দেনায় জর্জরিত হয়ে আছে, এমন খবর পেলেই তিনি দেদারসে সেই অসহায় ব্যক্তিদের অর্থ দান করতেন। যেমন বিপুল পরিমাণে আয় ছিল তার, ঠিক তেমনি দু’হাত ভরে খরচ করতেও কার্পণ্যবোধ করতেন না গৌরী সেন।
তাই তো গোটা বাংলায় এক নামে তিনি মুক্তহস্তে অর্থ দানকারী প্রবাদ পুরুষ বনে গেছেন। সেই আমল থেকে যে লোকে বলা শুরু করেছে ‘টাকা যা লাগে দেবে গৌরী সেন’, এখনো পর্যন্ত তার চল যায়নি। তবে ২০২২ সালে এসে আমরা যতই বলি না কেন টাকা দেবে গৌরী সেন, তা কিন্তু আদতে সম্ভব নয়। কেননা ১৬৬৭ সালেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। হুগলীতে তার জন্মস্থানের কাছে নির্মিত গৌরীশঙ্কর শিবের মন্দিরটি তারই কীর্তি।
গৌরিসেন তথ্যসূত্রঃ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বোস সম্পাদিত ‘সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান’ প্রথম খণ্ড।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




