somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

কিং ক্যাম্প জিলেট.....

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিং ক্যাম্প জিলেট.....

‘জিলেট’। এই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডটির সঙ্গে আমরা সকলেই কম-বেশি পরিচিত। মূলত, শেভিং ক্রিম এবং রেজারের জন্য পরিচিত হলেও, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বডি কেয়ার পণ্যের জগতে একচেটিয়া ব্যবসা জিলেটের। ডিওডোরান্ট থেকে শুরু করে সাবান, ফেয়ারনেস ক্রিমসহ অনেক ধরনের প্রসাধনীই বাজারে এনেছে জিলেট। এই ‘জিলেট’-এর প্রতিষ্ঠাতা। কিং ক্যাম্প জিলেট।

কিং ক্যাম্প জিলেট জন্মগ্রহন করেছিলেন ৫ জানুয়ারি, ১৮৫৫ সালে শিকাগোর উইসকনসিনের ফন্ড ডু ল্যাকে। ১৮৭১ সালে এক অগ্নিকাণ্ডে তাঁর ঘরবাড়ী ভস্মীভূত হওয়ার পর জিলেট সেলসম্যান হিসাবে কাজ শুরু করেন। এই কাজের সূত্রে তাঁর পরিচয় হয় ক্রাউন ক্যাপ (বোতলের ছিপি) আবিষ্কারক উইলিয়াম পেইন্টারের সঙ্গে। তাঁর সাফল্যের কাহিনী জিলেটকে উদ্দীপ্ত করে। এরপর জিলেট নিজ থেকে কিছু আবিষ্কারের চেষ্টায় মগ্ন হন।


কিং ক্যাম্প জিলেট ছিলেন সেলসম্যান। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করাই ছিল তাঁর কাজ। তবে সাধারণ বিক্রয়কর্মী থেকেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবক। হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম মিলিয়নেয়ার।

স্রেফ হতাশা থেকেই এক অভিনব পণ্য বাজারে আনার পরিকল্পনা এসেছিল তাঁর মাথায়। আর সেই ‘আশ্চর্য’ পণ্য হল রেজার এবং ব্লেড। একুশ শতকে দাঁড়িয়ে ব্লেড আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকলেও, আজ থেকে দেড়শো বছর আগেও এই ধরনের কোনো সামগ্রীর কোনো অস্তিত্বই ছিল না পৃথিবীতে। কিন্তু কীভাবে ব্লেড আবিষ্কার করলেন জিলেট?

চুল কাটা, দাড়ি কামানো, নখ কাটা, পেন্সিল কাটা- ছোট বেলা থেকে এমন নানা কাজে আমরা ব্লেড ব্যবহার হতে দেখে আসছি। বিশ শতকের শুরু পর্যন্ত দাড়ি কামানোর একমাত্র যন্ত্র ছিল ক্ষুর। এই যন্ত্র ব্যবহারের সময় একটু অসাবধান হলেই রক্তক্ষরণ ছিল অনিবার্য। কখনও আবার সেই ক্ষতচিহ্ন থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে। জিলেটের সঙ্গেও ঘটেছিল তেমনটাই। দাড়ি কাটতে গিয়েই স্থায়ী হয়ে যায় গালের ওপর গভীর ক্ষতচিহ্ন। আর সেই ক্ষতদাগ দেখেই ভয়ে তাঁর মুখের ওপরেই দরজা বন্ধ করে দিতেন ক্রেতারা। কথায় আছে, ‘আগে দর্শনদারি, পরে গুণবিচারি’। মানুষের বাহ্যিক রূপ দেখেই অনেক সময় মনে মনে তাঁর চরিত্রের ছবি তৈরি করে নিই আমরা। ফলে সেলসম্যানের কাজে ব্যাঘাত ঘটছিল ভীষণভাবে।

একটা সময় ভেবেছিলেন দাড়ি বড়ো করে ঢেকে ফেলবেন ক্ষতচিহ্ন। তবে লাভ হয়নি তাতেও। এরপর ক্রমশ হতাশা গ্রাস করতে থাকে জিলেটকে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাড়ি কামানোর সময় নিজের সঙ্গে প্রায়শই কথা বলতেন কিংবদন্তী উদ্যোক্তা। ১৮৯৫ সালের এক সকালে শেভ করার সময় জিলেটের মাথায় একটি ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া খেলে যায়। এক নতুন ধরনের
রেজরের কথা ভাবেন তিনি। যেটি হবে নিরাপদ, স্বল্পমূল্য এবং ব্লেড হবে ডিসপোসেবল। ঠিক এভাবেই তিনি জন্ম দিয়েছিলেন ‘সেফটি রেজার’ কথাটির। কিন্তু কীভাবে কাজ করবে এই যন্ত্র? তা নিয়েই গবেষণা শুরু হয় তাঁর। যন্ত্রটির ব্লু-প্রিন্টও তৈরি করে ফেলেন জিলেট। মূলত:, দাড়ি কাটার এই যন্ত্রকে দুটি ভাগে ভাগ করেছিলেন তিনি- একটি স্ট্যান্ড ও অন্যটি ব্লেড। স্ট্যান্ডটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য হলেও, ব্লেড অর্থাৎ ধারালো ধাতব খণ্ডটি হবে ডিসপোজেবল। তবে তা একবার কিম্বা একাধিক বার ব্যবহারযোগ্য।

জিলেট এই ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করেছিলেন ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে। যদিও তা বাস্তবায়িত করতে তাঁর লেগে যায় দীর্ঘ ৬ বছর। কারণ এই যন্ত্রের নকশা তৈরি করলেও, তিনি তো প্রযুক্তিবিদ নন। ফলে, যন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে তাঁকে নির্ভর করতে হয় অন্যদের ওপরেই। আর সমস্যা সেখানেই। যে যন্ত্রকে কোনোদিন কেউ দেখেইনি, নামও শোনেনি- তা বানানো কি মুখের কথা? তার উপরে আবার জিলেটের দাবি, তাঁর এই ব্লেডকে তৈরি করে দিতে হবে স্বল্পমূল্যে। কারণ সেটা ডিসপোজেবল। ফলে, বেশি দাম দিয়ে কিনবেন না ক্রেতারা। স্বাভাবিকভাবেই অধিকাংশ প্রযুক্তিবিদই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জিলেটকে। অবশেষে তাঁর এই প্রস্তাবকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করতে রাজি হন এমআইটির প্রযুক্তিবিদ্যায় স্নাতক ছাত্র, উইলিয়াম নিকারসন।



১৯০১ খৃষ্টাব্দে প্রথম নিকারসনের হাত ধরেই তৈরি হয় জিলেটের রেজার এবং ব্লেড-এর প্রথম প্রোটোটাইপ। কার্বন-স্টিলের তৈরি সেই ধারালো ব্লেডের আয়তন ছিল দেড় ইঞ্চি বাই এক ইঞ্চি। জিলেটের নতুন ব্লেডের নকশাটি ছিল দ্বিমুখী ধারওয়ালা। তারপর আরও কিছু পরিবর্তন করা হয় তাতে। ধাতব পাতটির মাঝে সংযুক্ত করা হয় স্ক্রু আটকানোর ফুটো। কেননা স্ক্রু দিয়েই এই ব্লেড আটকাতে হত স্ট্যান্ড বা রেজরের সঙ্গে। কিন্তু কেমন দেখতে ছিল এই ব্লেড? অনেকের মনেই হয়তো এসেছে এই প্রশ্নটা। আজকে আমরা যে ব্লেড ব্যবহার করে থাকি, হুবহু একই আকৃতি ও আয়তন ছিল জিলেটের ব্লেডের। বা বলা ভালো, জিলেটের তৈরি ব্লেডের ডিজাইন অপরিবর্তিত থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রায় একশো কুড়ি বছর ধরে।

এরপর ১৯০৩ সালে দক্ষিণ বস্টনে একটি কারখানা তৈরি করে ফেলেন কিং জিলেট। শুরু হয় সেফটি রেজারের বাণিজ্যিক উৎপাদন। ততদিনে পেটেন্টের জন্যেও আবেদন করা হয়ে গেছে তাঁর। তবে প্রথম বছরের ফলাফল খুব একটা আশাপ্রদ হয়নি। সেই বছর বিক্রি হয়েছিল মোটে ৫১টি রেজার এবং দেড়শোটি ব্লেড। যদিও সেটা ছিল বিপ্লবের শুরু। ১৯০৪ সালের ১৫ নভেম্বর পেটেন্ট পান তিনি। পেটেন্ট নম্বর-৭৭৫১৩৪। সেই বছর বিক্রি হয় ৯১ হাজার রেজার এবং দেড় লক্ষাধিক ব্লেড। ১৯০৬ সালে তাঁর ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে কানাডা, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স-সহ বিশ্বের সমস্ত উন্নত দেশেই। এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সেনানীদের নিরাপত্তার জন্য জিলেটের থেকে রেজর ও ব্লেড কিনেছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিটি সেনাকেই প্রদান করা হয়েছিল জিলেটের সেফটি রেজর। কেবলমাত্র সেনাবাহিনীতেই ব্যবহৃত হয়েছিল ৩ কোটি ২০ লক্ষ ব্লেড।



এই ব্যবসাই মাত্র কয়েক বছরে তাঁকে করে তুলেছিল মিলিওনেয়ার। বস্টন শহরের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিও হয়ে ছিলেন তিনি। কেননা, এই বাজারে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না কেউ-ই। ১৯০৪ সালেই সেফটি রেজারের পেটেন্ট আছে তাঁর নামে। ফলে, অন্য কোম্পানির পক্ষেও অসম্ভব হয়ে ওঠে এই যন্ত্রের পুনরুৎপাদন করা। অন্যদিকে ব্লেডের পেটেন্ট পেয়েছিলেন নিকারসন। তাঁর থেকে ব্লেডের স্বত্ব কিনে ব্লেড উৎপাদন শুরু করেছিল একাধিক সংস্থা। যদিও ব্লেড ব্যবহারের একমাত্র যন্ত্র ছিল জিলেটের রেজর। তাই ব্লেড তৈরির ক্ষেত্রে তাঁরাও অনুসরণ করেন জিলেটের নকশাই। আজও যা অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে। ১৯৩২ সালের জুলাই মাসে প্রয়াত হন জিলেট। তারপরে সেফটি রেজরের জগতে আত্মপ্রকাশ করে অন্যান্য প্রস্তুতকারক সংস্থারা। বলতে গেলে প্রায় ৩ দশক ধরে গোটা বিশ্বে শেভিং-এর জগতে রাজত্ব করেছিলেন কিং ক্যাম্প। সেদিক থেকে নামের সাথে তাঁকে রাজা বললেও ভুল হবে না!

কিং জিলেট ৯ জুলাই ১৯৩২ সালে ৭৭ বছর বয়সে ক্যলিফোর্নিয়ার লস এ্যাঞ্জেলসে মৃত্যুবরণ করেন।

ছবি, তথ্যসূত্র: জিলেট রেজর উইকিপিডিয়া। ভাবানুবাদ আমার।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:২১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪



গত কয়েকদিন আমি চিনি ছাড়া চা খাচ্ছি।
সারাদিনে মাত্র দুই কাপ চা। আগে চা খেতাম কমপক্ষে ৮ থেকে দশ কাপ। সবচেয়ে বড় কথা চা যেমন-তেমন, সিগারেট খাচ্ছি না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রচুর ব্লগিং করুন, কিন্তু......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৯

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×