অবনঠাকুরের টুনির গল্প.....
শৈশবে অনেকেই অবনঠাকুরের টুনির গল্প পড়েছেন বা শুনেছেন।
অবন ঠাকুরের টুনির গল্পটা বলার আগে একটু ভূমিকা দেওয়া দরকার……
গতকাল জাহাংগীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ষষ্ঠ সমার্তন অনুষ্ঠান ছিলো। আমাদের ছোট ছেলে জাবির ছাত্রছিলো। ২০১৯ সালে পাশ করে বের হয়ে এখন ভাল জব করে। আলহামদুলিল্লাহ। ওর ছাত্রাবস্থায় বহুবার জাবি ক্যাম্পাসে গিয়েছি। জাবির ক্যাম্পাস বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ব্যতিক্রম বিভিন্ন কারণে- যার মধ্যে দুশ্চরিত্র কতিপয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র নেতা এবং রাগিং ছাড়া সবই ভালো। ছোট ছেলে রংপুর ক্যাডেট কলেজ এবং মেরিন একাডেমীতে পড়ার সুযোগ ছেড়ে জাবিতেই ভর্তি হয়ে র্যাগিং এর শিকার হয়ে ভয়ানক মানসিক ট্রমার মধ্যে পরে জীবন দুর্বিষহ অবস্থায় চলে গিয়েছিলো। তবে ওর কিছু সৃজনশীল প্রতিভার জন্য অল্পদিনেই সেই পরিস্থিতি সামলে উঠতে পেরেছিলো। আমাদের ছেলে জাবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি এবং ডিবেট ক্লাবের নেতৃত্বে ছিলো- যার জন্য ওর ব্যপক পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তাও ছিলো। গতকাল আমরা পরিবারের সবাই ওদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রাক্তন ও বর্তমান স্টুডেন্ট এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলীর অশেষ সম্মান ও ভালোবাসা পেয়েছি।
এবার আসি অবনঠাকুরের টুনি গল্পে। গল্পটা এমনঃ- টুনি গিয়েছিল বেগুন ক্ষেতে। বেগুনের কাঁটা ফুটল তার নাকের ডগায়। নাক ফুলে ঢোল। সে ছুটল নাপিতের কাছে কাঁটা তুলতে। নাপিত তাকে বিদায় করে দিল এই বলে যে, সে রাজার নাপিত, টুনির নাকের কাঁটা তোলা তার কাজ নয়। টুনি নালিশ করতে গেল রাজার কাছে...তারপর সে এক লম্বা কাহিনি। কাজেই টুনির ইতিবৃত্ত থাক। যে জন্য প্রসঙ্গটি এলো সেদিকটা বলা যাক-
ওই যে নাপিত, অস্বীকার করলেন ফোড়া কাটতে, এককালে কিন্তু চুল-দাড়ি কাটার পাশাপাশি ছোটখাটো ‘সার্জারি’ অর্থাৎ ফোড়াটোরা কাটার কাজও ছিল তাদের পেশাগত কর্মের অন্তর্গত। এখন তা ভাবাই যায় না। নরসুন্দরের কাজের ক্ষেত্র কমে গিয়ে কেশ-শ্মশ্রু-গুম্ফ কর্তন ও পরিচর্যাতেই এখন সীমিতি। গ্রাম বাংলায় এখনও হাটে বাজারে এবং খোদ ঢাকা শহরের অনেক সড়কের পাশে এখনও নরসুন্দরদের দেখা যায়- ছোট দুটি টুল এবং একটা আয়না দেয়ালের সাথে লটকিয়ে নিম্ন আয়ের লোকদের ক্ষৌরকার্য্য সম্পাদন করছে! তবে এই দৃশ্ব্য জাবি ক্যাম্পাস সংলগ্ন গ্রামে এবং সাভার বাজারের রাস্তার পাশে অসংখ্য বললেও ভুল বলা হবেনা।
রাজা-বাদশাহদের যুগে তো বটেই, দেশ স্বাধীনের পরেও নরসুন্দররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষৌরকর্ম করে আসতেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অবস্থাপন্ন লোকেদের তো রীতিমতো বাঁধা নরসুন্দর থাকত। কাজটি না বদলালেও ক্রমে প্রক্রিয়াটি বদলেছে। লোকে এখন নিজের গরজেই নরসুন্দরের কাছে যান। শহর-গ্রাম সর্বত্র এই নিয়ম। গরজটি মূলত চুল কাটানোর। দাড়ি কামানো, গোঁফ ছাঁটার কাজ এখন অধিকাংশ লোক আপন হস্তেই সম্পাদন করেন। কিন্তু চুল কাটা সে প্রক্রিয়ায় সম্ভব নয় বলে এই ডিজিটাল যুগেও মান্ধাতা আমলের নরসুন্দরের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে ছেলেবুড়ো সবাইকে।
পেশাগত ব্যস্ত লোকের এখন প্রতিদিন সেলুনে গিয়ে ক্ষৌরকর্ম করার সময় আসলেই নেই। অথচ কাজটি অনেকের কাছেই প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মুখ-হাত ধোয়ার মতোই অপরিহার্য। তাই আধুনিক নাগরিকের গোসলখানায় ক্ষৌরকর্ম করার সরঞ্জাম মজুত থাকা রান্নাঘরে ভোগ্যপণ্যের মজুতের মতোই জরুরি হয়ে উঠেছে। অন্য সব পণ্যের মতো এসব সরঞ্জামেও পরিবর্তন এসেছে ঢের। নাপিতের হাতে ছিল ক্ষুর। অদক্ষ হাতে তা চিবুকে চালানো রীতিমতো বিপজ্জনক। কাজটি সহজ করে দিতে এসেছিল ব্লেড লাগানো ‘সেফটি রেজার’। বহু দিন, এমনকি এক রেজারে জীবন পারও হয়ে যেত। মাঝে মঝে ব্লেড বদলে নিলেই হলো।
সাবানে ব্রাশ ঘষে চিবুকে সেই ব্রাশ বুলিয়ে যথেষ্ট ফেনায় মুখমণ্ডল ভরে উঠলে রেজার টেনে সাফসুতরো করে ফেলা। তবে যতই ‘সেফটি’ বলা হোক, ব্লেড লাগানো রেজার কিন্তু অতটা নিরাপদ নয়। বেখেয়াল হলে কেটেকুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকেই। উপরন্তু অনেকক্ষণ ধরে সাবান আর ব্রাশ ঘষাঘষি করাও বেশ বিরক্তিকর। নিরাপত্তার সুরক্ষা আর বিরক্তির অবসানকল্পে বাজারে এলো নতুন ধরনের রেজার আর সেভিং ক্রিম, তারপর ফোম। এসব রেজারের সঙ্গে ব্লেড স্থায়ীভাবে যুক্ত। বলা হয়, ওয়ান টাইম ইউজ। তবে একটি রেজার অনায়াসে বার কয়েক ব্যবহার করা চলে। তারপর সেটি ফেলে দিয়ে নতুন আরেকটি। এসব রেজার নির্ভয়ে, এমনকি চোখ বন্ধ করেও চিবুকে চালানো চলে। কাটাকুটির আশঙ্কা প্রায় শূন্য। বাজার এখন এসব রেজার ও সেভিং ফোমের দখলে।
ক্ষৌরকর্মে সাবানের ব্যবহার উঠে গেছে। সেভিং ক্রিমও চলে কম। ঝামেলা কম বলে প্রধান্য ফোমের। তবে ব্লেডের ব্যবহার একেবারে উঠে যায়নি। নরসুন্দররাই ব্লেডের প্রধান ব্যবহারকারী। তাদের হাতের ক্ষুরটি বদলে গেছে। লোকে স্বাস্থ্যসচেতন হওয়ায়, বিশেষ করে রক্ত ও ক্ষতের মাধ্যমে রোগের সংক্রমণ এড়াতে একই ক্ষুরে বহুজনে ক্ষৌরকর্ম করতে সম্মত নন। তাই ক্ষুরের ফলার জায়গায় ব্যবস্থা করা হয়েছে ব্লেড লাগানোর। একটি ব্লেডের মাঝ বরাবর ভেঙে দুই টুকরা করে সেটি আটকে দেওয়া হয় খুরের ফলার জায়গায়।
বাজারে এখন অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্লেড, রেজার, সেভিং ক্রিম, ফোম, সংক্রামক রোধক সুগন্ধী প্রভৃতি পাওয়া যায়। জীবনযাত্রা সহজ করে তুলতে এ ধরনের আরও নতুন নতুন সরঞ্জামও যুক্ত হচ্ছে এই তালিকায়। সজলভ্য ও ব্যবহারবান্ধব হওয়ায় বিকোচ্ছে প্রচুর। আর এভাবেই কখন যেন নরসুন্দরের কাজের একাংশ নিজ হস্তে তুলে নিয়েছেন অনেক লোকে। অর্থাৎ এখন আমরা সবাই নরসুন্দর, সোজা কথায় নাপিত!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




