রাষ্ট্র সংস্কার কিভাবে হবে....
আমাদের রাষ্ট্র সংস্কারের আগে ব্যাক্তি এবং সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। যারা পরিবর্তন করতে দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে সবার আগে। কিভাবে কি পরিবর্তন চান, তাদেরকে জানতে ও বুঝতে হবে- কোথায় কোথায় পরিবর্তন আনতে হবে।
আমি কয়েকটা উদাহরণ দেইঃ-
(এক) বসুন্ধরা গ্রুপের আকবর সোবহান সাহেবের দুই ছেলে। দুই সরকারের আমলে খুনের দায়ে অভিযুক্ত হয়েও তারা কেউ শাস্তির আওতায় আসেনি। পুলিশের চুড়ান্ত প্রতিবেদনেই তাদের নাম বাদ পরে যায়। বিশেষ করে শেষে ঘটনায় অনেক ফোন কল জনগণকে শোনানো হয়েছিল। জানিনা কেন, কারা এই ফোন কল ফাস করে দিয়েছিল। হয়ত টাকার পরিমাণ বাড়ানোর জন্যে বা ভাগ পেতে। তারা দুইভাই কিন্তু সমাজে বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। একজন তো জাতীয় মসজিদের মুসল্লিদের পিও সভাপতি এবং সম্মানিত অবিভাবকও বটে।
(দুই) অশিক্ষিত নিজ পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টায় নিত্য নতুন কাজ নিয়ে হাজির হিরো আলম। কখনো টিকটক, কখনো বেসুরো কণ্ঠে গান, কখনো নাটক, কখনো সিনেমা, কখনো ডিসের ব্যবসা! কি সে করেনা! তার পরিবার হত দরিদ্র। একদা হতদরিদ্র আজ তার কর্ম (হোক তা যে প্রকারের) সে বেশ টাকার মালিক। টাকা হলে যা হয়, সে সম্মান চায়। হিরো আলমও তার ব্যাতিক্রম নয়। নিজেকে সম্মানিত করতে হেন উপায় নাই যা সে করেনা। কখনো বেসুরে রবীন্দ্র সংগীত গায়, অসহায় মানুষের কাছে রবিনহুড সেজে আবির্ভূত হয়, কখনো সংসদ সদস্য হতে চায়। পারেনি। কারণ তাকে ব্যবহার করা হয়েছে। রবীন্দ্র পুজারীদের অভিযোগ এবং আপত্তির কারণে ক্ষমতাসীনের হাউন আংকেল তাকে বেসুরো রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ার জন্যে তার অফিসে ডেকে নিয়ে কান ধরে ক্ষমা চাওয়ায় এবং মুচলেকা নেয়- "জীবনে আর রবীন্দ্র সংগীত গাইবো না"। এরপর তাকে দিয়ে বিএনপি দমনে বিএনপির পরীক্ষিত নেতা রিজভির বিরুদ্ধে মামলা করায়। হিরো আলমের মতো রিজভিও বগুড়ার বাসিন্দা। হিরো আলম তাই করে। তবে যেহেতু সে মুর্খ এবং টাকা ওয়ালা তাই কোথায় থামা উচিত বা তার কতটুকু পর্যন্ত যাওয়া উচিত হয়ত সেই সীমারেখা সে নির্ধারণে ব্যার্থ। কিম্বা হঠাৎ প্রচুর টাকা হাতে আসায় সে নিজেই কি হনুরে ভাবে মত্ত।
(তিন) সমাজ রাষ্ট্রযন্ত্রে, সোশ্যাল মিডিয়ায় একশ্রেণীর এটেনশন সিকার হনু আছে- নিজেই নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘোষণা দিয়ে লম্ফঝম্প করে! আপনি যদি বড় কেউ হন, আপনাকে বারবার বলতে হবে না আমিই বড়, আমিই সেরা, আমি এটা, আমি সেটা। আপনার শিষ্টাটার, আপনার সহনশীলতা, আপনার বিনয়, বলে দেবে আপনি কত বড়। সমীহ পাওয়ার একটাই রাস্তা, তা হলো সমীহ করা।
কথা সেখানে নয়। যদি আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় সঠিক ন্যায় পরায়নতার উপাদান থাকত তাহলে এক নম্বরের দুই পুত্র অপরাধী হয়েও সাধূ হতে পারত না। কিম্বা হিরো আলম হঠাৎ করেই বহুত টাকার মালিক হয়ে সম্মানের কাংগাল হয়ে যেখানে সেখানে মাইর খেত না, কিম্বা কারো হুকুমের দাস বনত না। সমস্যা সামাজিক ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে।
সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হলে সমাজে ন্যায় বিচার, ন্যায় পরায়নতা, সত্যবাদিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সাথে মিথ্যাবাদিতা, সুযোগ সন্ধানের ছিদ্রগুলোকে চিরতরে বন্ধ করতে হবে। তখন আকবর সাহেবের নারীলিপ্সু পুত্র গুলোও যেমন খুনের নেশায় মত্ত হবেনা, তেমনি হিরো আলমেরাও যেখানে যোগ্য নয় সেখানে যেতে মরিয়া হয়ে উঠবেনা। আমিই সবজান্তা, সর্বশ্রেষ্ঠ বলে ম্যাতকার করা লাগবে না। সামাজিক কাঠামোই একজন মানুষের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চপদ নির্ধারণ করে দেবে। সামাজিক প্রয়োজনেই কোন বুদ্ধিমান মানুষকে সমাজ নিম্ন পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হবার সুযোগ করে দেবে। অথবা অযোগ্য কেউ উপরে আসীন হলে তাকে আস্তাকুঁড়েতে নিক্ষেপ করবে!
আমরা কি সেই পথে অগ্রসর হচ্ছি? স্বৈরশাসক এর তীরন্দাজ-বীরন্দাজদের পদে রেখে দিয়ে কি আমরা সেই সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে পারবো? রাষ্ট্র সংস্কার করতে পারবো? আকবর পুত্রদের ন্যায় বিচার আর হিরো আলমদের উপর শক্তি প্রয়োগ থামাতে পারবো?
আমার মনে হয় পারব না!
পারতে গেলে আমাদের আরো সাহসী, আরো বিচক্ষণ, আরো বিপ্লবী হতে হবে!
জুলাই আন্দোলন দীর্ঘজীবী হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৭