somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ nnএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বিশেষ ক্ষমতাগুলো....

০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বিশেষ ক্ষমতাগু্ল....

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনটা কেমন? একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার ভূমিকা প্রায় পুরোটাই আনুষ্ঠানিক এবং তার থাকা অনেক 'বিশেষ ক্ষমতা'-ও এখন ধীরে ধীরে মন্ত্রী পরিষদের হাতে চলে যাচ্ছে, তারপরও যখন ব্রিটিশ সরকার যখন কোনো যুদ্ধ ঘোষণা করে, বা কোনো চুক্তি সই করে, তার কর্তাব্যক্তিত্ব সেখানে অবশ্যই থাকতে হয়।
আর এগুলো ছাড়াও তার রয়েছে বিভিন্ন অদ্ভুত অদ্ভুত ক্ষমতা, যেগুলো হয়তো পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্রপ্রধানেরই নেই৷ এগুলোর কোনোটা হয়তো আপনাকে বিস্মিত করবে, কোনোটা হাসাবে, কিন্তু কোনোটাই সাধারণ বলে উড়িয়ে দিতে পারবেন না আপনি। তো চলুন দেখে নেয়া যাক ব্রিটেনের রানীর অদ্ভুত কিছু ক্ষমতা।

১। ব্রিটেনের সবগুলো ডলফিনের মালিকানা তার
১৩২৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা দ্বিতীয় এডওয়ার্ডের রাজত্বকালে এমন একটি বিধান গ্রহণ করা হয়, যেখানে বলা হয়- ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের প্রধান দেশের সব স্টার্জন (একপ্রকার মাছ), তিমি এবং ডলফিনগুলোর মালিক। অদ্ভুত এই আইনটি এখনো বেশ ভালোভাবেই বহাল। যুক্তরাজ্যের সমুদ্রধারের তিন মাইলের মধ্যে যদি কোনো ডলফিন বা তিমি ধরা পড়ে, সেগুলোকে গ্রহণ করার জন্য রানীকে অনুরোধ করা হয়- এমনটাই বলা আছে টাইম ম্যাগাজিনের একটি আর্টিকেলে।

২। টেমস নদীর সবগুলো রাজহাঁসও রানীর মালিকানাধীনঃ
রয়েল ফ্যামিলির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ব্রিটেনের জলাশয়ের সব রাজহাঁসই প্রকৃতপক্ষে রানীর মালিকানাধীন, কিন্তু রানী এই ক্ষমতা শুধুমাত্র টেমস ও তার শাখানদীগুলোর ক্ষেত্রেই খাটান।
প্রতি বছর ব্রিটেনে রাজহাঁসদের নিয়ে একটি রাজকীয় অনুষ্ঠানও হয়, যেখানে টেমস নদীর সব রাজহাঁসকে ধরে তাদের রাজকীয় রাজহাঁস হিসেবে চিহ্নিত করে আবার ছেড়ে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানটির নাম ‘সোয়ান আপিং।’

৩। রানী গাড়ি চালাতে পারেন কোনো লাইসেন্স ছাড়াই-
ব্রিটেনের জনসাধারণের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হয় তাদের রানীর নামেই, কিন্তু সমগ্র ব্রিটেনে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যার গাড়ি চালাতে কোনো লাইসেন্স বা নাম্বারপ্লেটের প্রয়োজন হয় না।
তবে লাইসেন্স না থাকলেও গাড়ি রানী বেশ ভালোই চালাতে পারেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি একটি ফার্স্ট-এইড ট্রাক চালিয়েছিলেন উইমেন্স অক্সিলিয়ারি টেরিটরিয়াল সার্ভিসের জন্য। উইমেন্স অক্সিলিয়ারি টেরিটরিয়াল সার্ভিস তখন ছিল ইংল্যান্ডের নারীদের জন্য পৃথক সেনাবাহিনীর স্বরূপ। হ্যাঁ, এই সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল রানী এলিজাবেথের।

৪। রানীর প্রয়োজন হয় না কোনো পাসপোর্টেরও!
ব্রিটেনের রাজপরিবারের সবারই পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়, একমাত্র রানী ব্যতীত। পাসপোর্ট ছাড়াই রানী ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিশ্বের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে, আর যতই বয়স বাড়ছে তার ঘুরে বেড়ানোও বাড়ছে সমান তালেই।

৫। রানীর রয়েছেন একজন ব্যক্তিগত কবি!
ব্যক্তিগত অনেক কর্মচারীই থাকে বড় পদের মানুষদের। থাকে সেক্রেটারি, অ্যাসিস্ট্যান্ট কিংবা ড্রাইভার। কিন্তু ব্যক্তিগত কবি? তা বোধহয় শুধু ব্রিটেনের রানীরই আছে।
ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের অফিসিয়াল সাইট থেকে জানা যায়, রানী একজন কবিকে মনোনয়ন দিতে পারেন তার ব্যক্তিগত কবি বা পোয়েট লরিয়েট হিসেবে। সেই কবি হবেন এমন একজন কবি, যার কাজের রয়েছে জাতীয় তাৎপর্য। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে এই কবির সম্মানী দেয়া হয় একটি বিশেষ ধরনের ওয়াইন দিয়ে।
বর্তমানে ক্যারল অ্যান ডাফি আছেন এই পদে এবং আগামী বছর পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল থাকবেন।

৬। রানী কর দিতে বাধ্য নন!
ব্রিটেনের কোনো আইনে রানীর কর দেয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু ১৯৯২ সাল থেকে রানী স্বেচ্ছায়ই আয়কর এবং মূলধনী কর দিয়ে আসছেন।

৭। রানী অস্ট্রেলিয়ার সরকারকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা রাখেন!
অস্ট্রেলিয়ার আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্বয়ং। এই পদের কারণে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের উপর রানীর বেশ কিছু ক্ষমতা আছে। যেমন ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় রানীর প্রতিনিধি গভর্নর জেনারেল স্যার জন কের তৎকালীন অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রীকে বহিষ্কার করে দিয়েছিলেন। ৩ ঘণ্টার মধ্যে কের সম্পূর্ণ সরকারকেই বন্ধ করে দেন। নতুন করে নির্বাচন হয়ে নতুন সরকার গঠিত হয়ে এরপর। তৎকালীন সরকার অর্থনৈতিকভাবে ধসে পড়ছিল বলে এমনটা করা হয়েছিল তখন।
যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও রানী আরো ১৪টি রাষ্ট্রের প্রধান। কানাডা, জ্যামাইকা, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। এই সবগুলা রাষ্ট্রকে বলা হয় কমনওয়েলথ রাষ্ট্র। উল্লেখ্য যে, ৫৩টি সদস্য দেশ দ্বারা তৈরি সংগঠন 'কমনওয়েলথ অফ নেশনস' এবং এই কমনওয়েলথ রাষ্ট্র এক নয়। কমনওয়েলথ রাষ্ট্র শুধু ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের অধীনে থাকা রাষ্ট্রগুলোকেই বলা হয়।

৮। রানী একটি ধর্মের প্রধান ধর্মগুরু!
ষোড়শ দশকে রাজা সপ্তম হেনরি রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে ব্রিটেনকে পৃথক করে ফেলেন এবং ‘চার্চ অব ইংল্যান্ড’ হয় ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। বর্তমানে সেই চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধান হচ্ছেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, এবং তিনি চার্চের জন্য বিশপ এবং আর্চবিশপদের মনোনয়নও দিয়ে থাকেন।
এই নিয়মটির অবশ্য খুব মজার একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। এই নিয়মের কারণে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের যেকোনো প্রধানকেই অবশ্যই চার্চ অব ইংল্যান্ডের অনুসারী হতে হয়। অন্য কোনো ধর্মের মানুষ ব্রিটেনের রানী বা রাজা হতে পারবেন না, এমনকি ক্যাথলিক হলেও না। যেমন প্রিন্স চার্লস এখন যদি ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়ে যান, রানী এলিজাবেথের উত্তরসূরী তিনি আর হতে পারবেন না।

৯। তাকে আদালতে অভিযুক্ত করার ক্ষমতা কারো নেই!
যেহেতু যেকোনো ব্রিটেনের আদালতের বিচারকার্য রানীর নামেই সম্পন্ন করা হয়, রানীকে অভিযুক্ত করা বা সাক্ষী দিতে বাধ্য করার ক্ষমতা কারো নেই।
তাত্ত্বিকভাবে, রাজতন্ত্রের প্রধানের পক্ষে কোনো অপরাধ করা সম্ভব নয়, বিজনেস ইনসাইডারকে দেয়া এক ইন্টারভিউতে বলেছেন ব্রিটেনের আইনের পণ্ডিত জন কার্কহোপ। তবে এই ক্ষমতা সম্পর্কে ২০০২ সালে ব্যারিস্টার হেলেনা কেনেডি বিবিসিকে বলেছিলেন, “রানীর এই ক্ষমতা অবশ্যই প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়।”

১০। যেকোনো আইন পার্লামেন্টে গৃহীত হতে রানীর সম্মতি অত্যাবশ্যক!
যেকোনো বিলকে পরিপূর্ণ আইনে পরিণত করতে অবশ্যই রানীর সম্মতি থাকতে হয়। একটি প্রস্তাবিত আইন ব্রিটেনের দু'টি পার্লামেন্টেই পাস হবার পর তার পরবর্তী গন্তব্য হয় রাজপ্রাসাদে। সেখানে অনুমোদন পেলেই তা আইন হিসেবে গৃহীত হয়। ব্যাপারটির আনুষ্ঠানিক নাম ‘রয়েল অ্যাসেন্ট’ বা রাজকীয় সম্মতি। তবে এই রয়েল অ্যাসেন্ট দিতে সাধারণত কোনো রাজা-রানীই কার্পণ্য করেন না। সর্বশেষ রয়েল অ্যাসেন্ট দিতে অপারগতা প্রকাশের উদাহরণ পাওয়া যায় ১৭০৮ সালে, তখন ক্ষমতায় ছিলেন রানী অ্যান।
এই ‘রয়েল অ্যাসেন্ট’ ছাড়াও রানীর আরেকটি সম্মতি দেবার জায়গা আছে, তার নাম ‘কুইন্স কনসেন্ট।’ কোনো আইন যদি ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে কোনোভাবে প্রভাবিত করে, তবে সেই আইন পার্লামেন্টে বিল হিসেবে তোলার আগেই রানীর সম্মতি নিতে হয়। এখনো পর্যন্ত এই নিয়মটির প্রয়োগ হয়েছে ৩৯ বার।

এছাড়াও রানীর রয়েছে আরো বিভিন্ন অদ্ভুত অদ্ভুত ক্ষমতা। আর এসব ক্ষমতাগুলোই তার ব্যক্তিত্বকে দিয়েছে স্বকীয় এক রাজকীয়তা, যার কারণে সমগ্র পৃথিবী তাকে দেখে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে। এই নিয়মগুলো বর্তমান বৃটিশ রাজার জন্যও প্রযোজ্য।

(লেখাটা পূণঃপ্রচার। ২০২১ সালে লিখেছিলাম)

তথ্যসূত্র-
https://www.parliament.uk/.../portraits/queen-elizabeth-ii
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:০০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্

লিখেছেন আরোগ্য, ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১

যেহেতু জন্মসূত্রে মা বাবার কাছ থেকে ধর্ম হিসেবে ইসলাম পেয়েছেন তাই হয়তো নিজেকে মুসলিম হিসেবেই পরিচয় দিয়ে থাকেন কিংবা কোন কারণে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আপনি কী মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমাকে আমার ভাল্লাগে না X#(

লিখেছেন শায়মা, ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৩


তোমাকে আমার ভাল্লাগেনা
এক্কেবারেই ভাল্লাগে না,
দেখলে পরে নামটা তোমার
বিরক্তিতে কুচকে কপাল
চোখটা ফেরাই অন্যদিকে।

কি অসহ্য তোমার নামে,
গা জ্বলে যায় বোকামীতে,
বোকার মতন বকবকানী,
গাঁক গাঁক গাঁক গকগকানী।
যাচ্ছো করেই কবে থেকেই!

লজ্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড: ইউনুস কি কাজের থেকে কথা বেশী বলছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:০৩



ড: ইউনস অবশ্যই কাজের থেকে কথা বেশী বলছেন, ইহা শেখ হাসিনা সিনড্রম; তিনি এই ধরণের ১টি পদ বরাবরই চেয়ে আসছিলেন ; এতদিন পরে, ৮৪ বছর বয়সে পেয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেকুব জাতি ড. মুহম্মদ ইউনূসের বক্তব্য বুঝতে পারল না

লিখেছেন আহা রুবন, ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:১৬



বেকুব জাতি ড. মুহম্মদ ইউনূসের বক্তব্য বুঝতে পারল না। তার অফিস থেকে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হল! এই ব্যাখ্যা পেয়ে আমরা ধন্য! কত গভীর একটা ভাব প্রকাশ করলেন অথচ তার সাক্ষাতকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনা পরবর্তী দেশ শাসনে সবচেয়ে যোগ্যব্যক্তি কি তারেক রহমান?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪



আমরা যেহেতু ভোট দিতে চাই, সেহেতু ভোট দেওয়ার লোকতো আগে থেকেই খুঁজে রাখা দরকার। আমার জামাইয়ের মতে শেখ হাসিনা পরবর্তী দেশ শাসনে সবচেয়ে যোগ্যব্যক্তি তারেক রহমান। কেউ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×