somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

কফি আবিষ্কারে মধ্যপ্রাচ্যের সুফিদের অবদান.....

১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কফি আবিষ্কারে মধ্যপ্রাচ্যের সুফিদের অবদান.....

৩৬৫ দিনের মধ্যে দেশী এবং আন্তর্জাতিক দিবস আছে প্রায় ২৫০০ টি! তার মধ্যে ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে "আন্তর্জাতিক কফি দিবস"! ১ অক্টোবর, আন্তর্জাতিক কফি দিবস। এই দিবসের শ্লোগান- “Coffee, Your Daily Ritual, Our Shared Journey”- মনে করিয়ে দিচ্ছি।

চায়ের মতো কফি আবিস্কারের পেছনেও বেশ কিছু গল্প আছে, তবে চায়ের মতো মিথ নাই। কফি আবিস্কারের গল্প যেমনই হোক- কফি আবিষ্কারের ক্ষেত্রে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সুফিদের অসামান্য অবদান! গোতুল আকবর নূরউদ্দীন আবু আল-হাসান আল-শাদিলি ছিলেন একজন ইয়েমেনী সুফি। অজানা এক গাছের বিচিত্র ফল খেয়ে পাখিদের ব্যপক উচ্ছ্বাসের কারণ খুঁজতে গিয়ে তিনি কফি আবিষ্কার করেন! ১৫ শতাব্দীতে ইয়েমেনে সুফিদের খানকাগুলোতে একধরনের পানীয় হিসেবে কফি পানের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানা যায়। সর্বপ্রথম সেখানেই কফি বেরিগুলিকে প্রথমে রোস্ট করা হয়েছিলো অর্থাৎ আজকে যেভাবে এই পানীয়টি তৈরি করা হয় একইভাবে সর্বপ্রথম সুফি খানকাগুলোতে তৈরি করা হয়েছিলো।

কফি আবিষ্কারের আবার অন্য কাহিনীও শোনা যায়- ইথিওপিয়ান মেষপালক খালিদী হঠাৎ করে বনে মেষ পালের চঞ্চলতার খোঁজ করতে গিয়ে দেখে, এসবের পিছনে কারণ হিসেবে রয়েছে একটি গাছের ফল! এরপর যা আবিষ্কৃত হয়, সেটি হলো কফি! এই দুটো ঘটনাই আমার কাছে যুক্তিসংগত মনে হয়।

“কফি” শব্দটি ১৫৮২ সালে ডাচ শব্দ কফির মাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় প্রবেশ করে, উসমানী খিলাফতের সময়ে তুর্কিরা কাহভে শব্দটি এই পানীয়কে বুঝানোর ক্ষেত্রে ব্যাবহার করতো। য়ারা মূলত আরবি কাহওয়াহ শব্দ থেকে কাহভে শব্দের ব্যবহার শুর করে। কফি মূলত ইসলামিক বিশ্বে পানীয় হিসেবে পান করা হতো এবং এই পানীয়টি সরাসরি ধর্মীয় অনুশীলনের সাথে সম্পর্কিত ছিলো। মুসলিমরা পবিত্র রমজান মাসে অনেক বেশি কফি পান করতো যা তাদের দিনের বেলায় রোজা রাখার ক্ষেত্রে এবং রাতে জেগে থাকতে অনেক সাহায্য করে। ১৬ শতাব্দীতে উসমানীরা বিশ্বের সর্বপ্রথম কফিহাউস খুলেছিল যা আজ ইস্তাম্বুল নামে পরিচিত। লেভানটাইন আরব (পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় আরব) এবং তুর্কিরা কফিহাউস তৈরি করেছিলো যেগুলো ১৬ শতাব্দীর মুসলিম ঐতিহ্যবাহী কফিহাউসের পাণ্ডুলিপি আলোচনা ও সামাজিকীকরণের জন্যও ছিল।

ষোড়শ শতাব্দীতে ইস্তাম্বুলে কফিহাউসগুলো একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছিলো। এমনকি উসমানীয় রাজদরবারগুলোতে সুলতান ও তার অতিথিদের কফি পরিবেশন করা ছিলো আপ্যায়নের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এছাড়াও কফির পাত্রগুলো সুন্দর এবং নিখুঁতভাবে তৈরি করার জন্য সুলতানদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে কফি মেকারদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে কফিকে আরবে "শয়তানের পানীয়" বলে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল! তারপর কেটে গেছে বহু যুগ, বহুকাল! আস্তে আস্তে কফি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে! ইস্তাম্বুলে পৃথিবীর প্রথম কফি শপ নির্মিত হয় ১৪৭০ এ - Kiva Han নাম ছিলো এটির! ইস্ট ইন্ডিয়া ট্রেডিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠার আগেই ভারতবর্ষে কফি পানের প্রচলন ছিলো। বাবা বুদান নামক ভারতীয় একজন সুফি সাধক ১৬৭০ সালে মক্কা থেকে ফেরার সময় কয়েকটি কফি বীজ নিয়ে আসেন। সেগুলো রোপন করেন দক্ষিণ কর্নাটকের চিকমাগালুরে। ব্যাস কফি চাষ শুরু হয়! সম্রাট শাহজাহান কফি ভক্ত ছিলেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে চায়ের আগ্রাসনে ধীরে ধীরে কফির জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। তবে কফি হাউজগুলো ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে শিল্প সংস্কৃতি ধর্ম ও রাজনৈতিক আড্ডার অন্যতম কেন্দ্রস্থল।

আরবীয় নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক নাগিব মাহফুজ, বন্ধুদের সাথে দেখা করতে বললেই কফি হাউজে আসতে বলতেন! তিঁনি কায়রোতে যে কফি হাউজে বসে নানা রঙের মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিতেন এবং লেখালেখি করতেন- তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে রেস্তোরাঁটির নতুন নাম রাখা হয়েছে- "নাগিব মাহফুজ ক্যাফে!"

কফি নিয়ে গত ১৫ বছরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি অন্তত গোটা দশের পোস্ট লিখেছি। সেইসব লেখায় বিভিন্ন রকম কফির বর্ণনা যেমন আছে, তেমনি- কফি খাওয়ার উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেছি।

এবার কফির ভালো-মন্দ নিয়ে নয়, কফি যে মানুষের জীবন্ধারা, চিন্তা চেতণাকে বদলে দিতে পারে- তাই নিয়ে একটা গল্প শেয়ার করবো। 'The Coffee Bean: A Simple Lesson to Create Positive Change'- লেখক ডেমন ওয়েস্ট ও জন গর্ডন। বইতে লেখকেদ্বয়ের গল্পঃ-

অ্যাব্রাহাম নামের কিশোর মার্কিন হাইস্কুলের ছাত্র। খুব ভালো ফুটবল খেলত। ফুটবলের জন্যই স্কুলে সে রীতিমতো তারকা বনে গিয়েছিল। সবাই তাকে পছন্দ করত। পড়ালেখায়ও সে বেশ ভালো। স্কুলে অ্যাব্রাহামের প্রিয় শিক্ষক ছিলেন মিস্টার জ্যাকসন।

জ্যাকসন লক্ষ করলেন, ক্লাসে অ্যাব্রাহামের ইদানীং মন নেই। বিষন্ন মনে কী যেন ভাবে। জ্যাকসন তাঁর প্রিয় ছাত্রকে ক্লাসের পর দেখা করতে বললেন। জানতে চাইলেন, ‘ কী হয়েছে তোমার?’
অ্যাব্রাহাম জানাল, তাঁর বাসায় খুব ঝামেলা চলছে। মা-বাবা প্রতিদিন ঝগড়া করেন। যেকোনো দিন তাঁরা আলাদা হয়ে যাবেন। সামনে পরীক্ষা। আবার খুব গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টও আসছে। সবাই তাকিয়ে আছে অ্যাব্রাহামের দিকে- কিন্তু সে এই চাপ আর নিতে পারছে না।

জ্যাকসন কিন্তু ছাত্রকে একটা অদ্ভুত অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন। বললেন, ‘তুমি কাল সকালে একটা পাতিলে পানি আর একটা গাজর নেবে। তারপর পাতিলটা চুলায় বসিয়ে পানি গরম করবে। কী হয়, আমাকে জানাবে।’ অ্যাব্রাহাম বাধ্য ছেলের মতো তা-ই করল। পরদিন স্যারকে জানাল, পানি গরম হওয়ার পর গাজরটা সেদ্ধ হয়ে একদম নরম হয়ে গেছে।

জ্যাকসন এবার আরেকটা অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন,- ‘এবার তুমি গাজরের বদলে পানিতে একটা ডিম রাখবে। কী হয়, আমাকে জানাবে।’

পরদিন অ্যাব্রাহাম জানাল, পানির গরমে ডিমটা সেদ্ধ হয়ে শক্ত হয়ে গেছে।

স্যার বললেন, ‘তুমি এবার পানিতে এক চামচ কফির দানা দেবে। দেখবে কী হয়।’ অ্যাব্রাহাম তা-ই করল। পরদিন জানাল- কফি পানির সঙ্গে মিশে গেছে।

স্যার লম্বা দম নিয়ে বললেন, ‘শোনো, তুমি যখন চারপাশ থেকে চাপ অনুভব করবে, তখন চাইলে গাজরের মতো নরম হয়ে যেতে পারো, কিংবা ডিমের মতো শক্ত হতে পারো। মনে মনে বলতে পারো, “তোমরা আমার ওপর চাপ দিচ্ছ? ঠিক আছে, আমিও শক্ত হয়ে থাকব।” তাতে কিন্তু তোমার কষ্টই বাড়বে। তোমাকে যা করতে হবে, সেটা হলো কফির দানার মতো আশপাশের পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। খেয়াল করে দেখো, গাজর বা ডিমের ক্ষেত্রে কিন্তু পানির কোনো পরিবর্তন হয়নি। গাজর নরম হয়ে গেছে, ডিম শক্ত হয়েছে। কিন্তু কফির দানা তার চারপাশ বদলে ফেলেছে। কফির ক্ষেত্রে পানিটা আর শুধু পানি নেই।’

স্যারের গল্প শুনে অ্যাব্রাহাম যে রাতারাতি তার জীবন পাল্টে ফেলেছিল, তা কিন্তু নয়। বিপুল উদ্যমে খেলতে নেমে তার পা ভেঙে গিয়েছিল! তার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নটা আর পূরণ হয়নি। তবু, সে স্যারের কথা মনে রেখেছে। নিজের স্কুলে ‘কফি বিন ক্লাব’ খুলেছে। ঘুরে ঘুরে সবাইকে এই তত্ত্বের কথা বলেছে।

ডেমন ওয়েস্ট ও জন গর্ডন বলছেন, এই গল্পের শিক্ষা যদি আপনি নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে আপনার জীবনেও আসতে পারে ইতিবাচক পরিবর্তন।

"কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নাই" থাকুক- বর্ণে গন্ধে স্বাদে বাজিমাত করে দিয়ে আজ অবধি কফিই হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় শহরকেন্দ্রিক পানীয়!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×