somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর.....

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর.....

"আরেকটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয় / মোরা সুখের-দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়" - ডিপ্রেশন ও নানাবিধ সাইকোলজিক্যাল রোগ থেকে বাঁচতে সোশ্যাল ইন্টারঅ্যাকশনের মাধ্যমে এই "প্রাণ জুড়োনোর" কোনো বিকল্প কিন্তু ডাক্তার/ বিজ্ঞানীরাও দিতে পারছেন না! কারণ- নেচার, হোমো স্যাপিয়ান্স প্রজাতিকে সেভাবে তৈরী করেননি।

একসময় মানুষের ৬টি প্রজাতি ছিল, যার পাঁচটি পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। থেকে গেছে মাত্র একটি প্রজাতি- "Homo sapiens"। কেন হোমো স্যাপিয়ান্স প্রজাতিটি টিকে গেলো আর অনেক বড়ো আকৃতির এবং অনেক বেশি শক্তিশালী "Neanderthal" নামক মানুষের প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে গেলো, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন- তার প্রধান একটি কারণ হচ্ছে নিয়ান্ডারথাল মানুষ ছিল মূলত "Solitary"- মানে তারা একা একা বা খুব ছোট্ট ছোট্ট গ্রুপে আইসোলেশনে থাকতে পছন্দ করতো। অন্যদিকে হোমো স্যাপিয়ান্স প্রজাতিটি সব সময় বড়ো বড়ো গ্রুপে দল বেঁধে থাকতো।

জীব জগতে এটি নতুন কিছু নয়। একদিকে লেপার্ড যেমন সলিটারি আনিম্যাল, অন্যদিকে সিংহ, হায়েনারা থাকে দল বেঁধে। দল বেঁধে থাকার সুবিধা হলো- Safety in numbers..... মানে একজন বিপদে পড়লে বাকিরা তাকে সাহায্য করতে পারে। সলিটারি প্রাণীদের ক্ষেত্রে তেমন ঘটে না। ঠিক এই কারণেই হোমো স্যাপিয়ান্স একসময় দল বেঁধে মেরে শেষ করেছিল অনেক বেশি শক্তিশালী সলিটারি নিয়ান্ডারথাল প্রজাতিকে। নিয়ান্ডারথালরা সলিটারি প্রাণী হওয়ায় তারা তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। তাছাড়া দল বেঁধে থাকায় স্যাপিয়ান্স প্রজাতিটির খাদ্যের অভাব হয়নি এবং মহিলা, শিশু ও অসুস্থরা প্রয়োজনীয় প্রটেকশন পেয়েছে। মানুষ মরে গেলে পচে যায় (Biological decomposition of dead bodies) আর বেঁচে থাকলে বদলায়- সেই বদলানোর মধ্যেই নতুন করে জীবনীশক্তি গড়ে ওঠে।

নগরকেন্দ্রিক জীবনে এসে আমরা ক্রমশ ভুলে যাচ্ছি যে হোমো স্যাপিয়ান্স প্রজাতিটি সংঘবদ্ধ জীব। নেচারে আমরা যে এখনো বিলুপ্ত হইনি তার কারণ আমরা দল বেঁধে ছিলাম। একা বাঁচার জন্য আমাদের তৈরী করা হয়নি। কাজেই মানুষ কোনো কারণে একা হয়ে গেলে, নেচার শারীরবৃত্তীয়ভাবে মানুষকে ফাইটিং মোডে নিয়ে যায়। একাকিত্বে ভোগা মানুষের উপর স্টাডি করে দেখা গেছে যে তাদের প্রেসার বেশি, সুগার লেভেল বেশি এবং হার্টবিটও বেশি। মানুষ তখন অপরিচিতদের থ্রেট হিসেবে দেখতে শুরু করে। তার থেকে একটি Vicious cycle তৈরী হয়। মানুষের Immune কমে যায়, inflammation increases the chance of heart disease, stroke and premature death চান্স বেড়ে যায় ৫৮% !

একটা জার্নালে পড়েছি, বর্তমান পৃথিবীতে ৩৩% মানুষ একাকিত্বে ভোগেন - মানে প্রত্যেক তিনজনের একজন। তারা কিন্তু সবাই বয়স্ক নন। সবচেয়ে বেশি একাকী মানুষ থাকেন ব্রাজিলে, তারপর তুরস্ক এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত! ডিমেনশিয়া, আলজাইমার, ডিপ্রেশন ভারতী উপমহাদেশে যে প্রায় মহামারীর আকার ধারণ করেছে তার অন্যতম কারণ এই একাকিত্ব। 'একাকিত্ব' মানে কিন্তু একা থাকা নয়। একাকিত্ব একটি "State of Mind" যেখানে মানুষটির মনে হচ্ছে সে একা, নির্বান্ধব, মন খুলে দুটি কথা বলার যার কেউ নেই।

ইউরোপ-আমেরিকা-ভারতীয় নামকরা ডাক্তারগন নিদান দিলেন আরো বেশি বেশি "Social Interaction and Social Connect" তৈরী করার। তারা বললেন হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের খুঁজে বের করে তাদের সঙ্গে দেখা করার। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে বন্ধু সার্কেলকে বাড়ানো এবং রিয়েল ওয়ার্ল্ডে তাদের সঙ্গে বেশি বেশি সোশালাইজ করার। অর্থাৎ ফিরে যেতে হবে সেই অতীতে যখন গাও গ্রামের ছেলে-বুড়োদের সকাল-সন্ধ্যা মাঠে-ময়দানে, চায়ের দোকানের আড্ডা বা পাড়ার মা-খালা, চাচী-ফুফুদের "পাড়া বেড়ানো" সংস্কৃতিই সুস্থ থাকার আসল চাবিকাঠি!

একজন মনোবিদকে এক বয়স্ক ভদ্রলোক নিজের জীবনের কথা বললেন- স্ত্রী মারা যাবার পর তিনি নিদারুন একাকিত্বে ভোগেন এবং ২০১৯ তে তার স্টেজ ওয়ান ক্যান্সার ধরা পড়ে। ভদ্রলোক তখন "আর ক'দিনই বা বাঁচবো, যাবার আগে সবার সঙ্গে দেখা করে যাই" মোডে চলে গিয়ে খুঁজে খুঁজে তার হারিয়ে যাওয়া, ভুলে যাওয়া আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং নিজের বাড়িতে তাদের ডেকে নিয়ে সকাল-সন্ধে আড্ডা বসান। ভদ্রলোক যে শুধু ক্যান্সার সারভাইভ করেছেন তাই নয়, তিনি বললেন আমি এখন মানসিক ভাবে সম্পূর্নই সুস্থ। মজা করে আরো বললেন, বাড়িতে আড্ডা বসানোয় চা, সিঙ্গারা, মিষ্টি দিয়ে আতিথেয়তায় তার যে খরচ হয় সেটি ওষুধের খরচের ৩০%-ও নয়। ওটাকে তিনি ভালো থাকার ইনভেস্টমেন্ট হিসেবেই দেখেন!

অতএব, কবির ভাষায় মিনতি- "দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর, লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর, হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী, দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি.....।"

Courtesy: National Geographic Channel. Nature of Homo sapiens.

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

NVR (No Visa Required) এর জন্য জেনে রাখা দরকার

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৯
×