প্রসঙ্গঃ Happy New Year.....
উৎসব হলো তা-ই, যা বেশির ভাগ মানুষ উপভোগ করে। অল্প কিছু মানুষের উন্মত্ততা আর উৎসব এক নয়। সেই আনন্দ উৎসব যদি হয় মধ্যরাতে সব চরাচর যখন নিস্তব্ধতায় ঘুমিয়ে থাকে, তখন আকাশ বিদীর্ণ করে বোমা ফাটিয়ে, আতশবাজি পুড়িয়ে আনন্দ-ফুর্তি ও উৎসব করা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
যে উৎসবের সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই, সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সায় নেই, সরকারের বা প্রশাসনের তো নেই-ই, তা আবার উৎসব কী? আর যে উৎসব পালনের সময় অন্যদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করা হয় না; যেখানে সাধারণ সিভিক সেন্স কাজ করে না, সেটা কী ধরনের উৎসব? বঙ্গ সন্তানদের থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপন এর নামে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর শান্তি কেড়ে নেওয়া- এ কি আনন্দ না কী দুর্দশা!
মধ্যরাতের উন্মত্ততা, উৎসবের নামে এক শ্রেণির ছেলেমেয়ের অর্থহীন বাড়াবাড়ি বৃহত্তর নাগরিকগোষ্ঠীর মানবাধিকার হরণ বৈ অন্যকিছু নয়। উৎসবের নামে উপদ্রব করে অন্যকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার ইউনিভার্সাল ফান্ডামেন্টাল হিউম্যান রাইট নয়। অবশ্য যেদেশে ক্ষমতার দম্ভে আমজনতার হিউম্যান রাইট অস্তিত্বহীন- সেখানে হিউম্যান রাইট প্রসঙ্গ বলাই পাপ!
আপসোস, মাত্র ৪/৫ মাস আগেও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দুঃশাসনকালে দেশের এক কোটি মানুষ জেল জুলুম নির্যাতন থেকে বাঁচতে বছরের পর বছর ঘরবাড়ি ছাড়া ছিলো, লক্ষাধিক নিরীহ নির্দোষ মানুষকে গায়েবী মামলায় জেলবন্দী করে রেখেছিল- সেই ক্ষত এখনো শুকায়নি। অন্যদিকে গত ছয় মাসেই প্রায় ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ দিয়েছে। গাজা এখন ধ্বংস্তূপ। কোনো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, সরকারি বেসরকারি ভবন অক্ষত নাই। যেসব মানুষ এখনও প্রাণে বেঁচে আছে তারাও খাবার আর চিকিৎসার অভাবে ধুকেধুকে মরছে। প্রতিবেশী জান্তা সরকারের জাতিগত নিধন নিপীড়নের শিকার নির্যাতিত নিপীড়িত, দেশত্যাগে বাধ্য হয়ে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আমাদের ঘাড়ে চেপে আছে, পশ্চিমা বিশ্বের উস্কানিতে ইউক্রেন-রাশিয়া জ্বলছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় উন্মত্ততায় বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। যখন হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী, তখন আমাদের নব্য ধনিকসম্প্রদায় বখাটে সন্তানেরা মৌজ মাস্ত করবে তাতে অবাক হবে- আমার মতো বোকারাই।
ইদানিং আমাদের দেশে একটি নতুন বিত্তবান শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে। তাঁদের কেউ কঠোর পরিশ্রম করে বিত্তবান হয়েছেন তেমনটা কদাচিৎ হলেও বেশীরভাগই ফাঁকতালে প্রায় রাতারাতি শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তাঁদের সন্তানদের এবং তাদের সহযোগী টিকটকার, বেকার বন্ধুদের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খলতা অস্বাভাবিক নয়। এই শ্রেণীর ফুর্তিবাজদের মধ্যে 'নাহিদ-দিপুমনি-নওফেলদের তথাকথিত আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার' প্রভাব পরবে- এটাই স্বাভাবিক!
জীবনের সব ক্ষেত্রেই সামাজিক মূল্যবোধের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সামাজিক মূল্যবোধ ব্যক্তিজীবনের মতো রাষ্ট্রীয় জীবনেরও সবকিছু প্রভাবিত করে।
আমাদের রাজনীতি নষ্ট হয়ে গেছে। অসুস্থ রাজনীতির মধ্যে সুস্থ-স্বাভাবিক নাগরিক জীবন প্রত্যাশা করা যায় না। মানুষ সব কিছুর আগে নাগরিক অধিকার চায়। মানুষ হিসেবে মর্যাদা নিয়ে বাঁচার অধিকার চায়। গণবিপ্লবের মাধ্যমে ৩৬ জুলাই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পলায়নপর রাষ্ট্রে সে সবই হওয়া উচিত ছিলো নতুন বছরের ভাবনা এবং সেই ভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করে আগামী প্রজন্মের জন্য সাম্যাবস্থার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আফসোস, ফ্যাসিবাদের দোসর ৯৫% প্রশাসনের লোক দিয়ে পরিচালিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিকল ছিড়ে বের হতে পারেনি। অতএব, ফলাফল শুন্যই রয়ে গিয়েছে!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৫২