somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

"আমারে না যেন করি প্রচার আমার আপন কাজে"......

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আমারে না যেন করি প্রচার আমার আপন কাজে"......

যথার্থ জ্ঞানীর অন্যতম লক্ষণ- বিষয়টা সহজ করে বোঝা এবং বোঝাতে পারা।

ছাত্রজীবনে এক অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক- বলেছিলেন, "বিষয়ের উপর দখল বা জ্ঞান আর ভালো পড়াতে পারা, দুটো আলাদা ব্যাপার।" অর্থাৎ কেউ ভালো জানলেই যে ভালো পড়াতে পারবেন, এমন নাও হতে পারে। আমি একমত হলাম না। স্যার বললেন, দ্যাখো, তোমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে অমুকের বাড়িটা কোথায় আর তুমি যদি রাস্তাটা ভালো চেনো, তাহলে তুমি ঠিকই বোঝাতে পারবে কীভাবে সেই বাড়িতে যেতে হবে। কেউ হয়ত একেবারে ছবির দৃশ্যকল্পের মতো বোঝাবে, আর তুমি হয়ত একটু কম করে অর্থাৎ বললে- এইতো দুইশো আড়াইশো গজ দূরে....
তোমার উত্তরে প্রশ্নকর্তার কনফিউশন থাকলে সে প্রশ্ন করে ক্লিয়ার করে নেবে। কিন্তু বাড়িটা ঠিকঠাক চিনলে দুজনের ডিরেকশনেই তার পৌঁছাতে অসুবিধে হবে না। একইভাবে, বড় লেকচার ক্লাসের কথা আলাদা, কিন্তু ইনফর্মাল পড়ানো বা ছোট গ্রুপের পড়ানোয় বিষয়টা যে জানে, সে যথেষ্ট সহজ করে বুঝিয়ে দিতে পারে। জানার মধ্যে কোনও অস্পষ্টতা থাকলে সেটা পড়ানোতেও রিফ্লেক্টেড হবে।

সেই থেকে কথাটা আমার মনে গেঁথে রয়েছে এবং মিলিয়ে দেখেছি- কথাটা প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঠিক।

কয়েক দিন আগে, একটা সেমিনারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল....তা নিয়ে এই ব্লগে একটা পোস্ট লিখেছিলাম। সেই সেমিনারে একজন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল...... কথাপ্রসঙ্গে তিনি বলছিলেন, আর্থিক বৃদ্ধি আর অসাম্যের কথা। বলছিলেন, বৃদ্ধি বাড়লে অসাম্যও বাড়বে। তার মোকাবিলা করা যায় কীভাবে, সেটাই চ্যালেঞ্জ। মানে, উপযুক্ত উপায় কী, বা সম্ভাব্য ও গ্রহণযোগ্য উপায় কী কী। যেমন, বৃদ্ধির হার কমিয়ে দিলেই অসাম্যও কমে যাবে- কিন্তু তা গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়, কেননা তাতে কারোরই উপকার হবে না।

বলতে গিয়ে তিনি দুর্দান্ত একটা উদাহরণ দিলেন। ধরুন, একটা মসৃণ হাইওয়ে। আমার একটা টয়োটা করোল্লা কার আছে, আর আপনার আছে রেঞ্জ রোভার। অর্থাৎ আপনার সঙ্গে আমার এমনিতেই অনেকখানি দুরত্ব- বিশাল অসাম্য। এমন মসৃণ রাস্তা পেলে সে দূরত্ব আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে। অন্যদিকে ভাঙাচোরা খানাখন্দে ভরা রাস্তায় চললে রেঞ্জ রোভার নিজের গতিতে যেতে পারবে না, টয়োটা করোল্লা তো তেমনই - অসাম্য নতুন করে সেভাবে বাড়বে না। কিন্তু হাইওয়ের বদলে রাস্তা খানাখন্দে ভরিয়ে তুললে টয়োটা করোল্লা চালকও খুব উপকৃত হবেন, এমন সম্ভাবনা কম। কাজেই...

অর্থনীতির তত্ত্বকথাটথা নয়, শুনতে শুনতেই আমার মনে পড়ে যাচ্ছিল সেই ছাত্রজীবনে শোনা পড়াতে পারার গল্পটা। সত্যিই, যিনি বিষয়টা জানেন, তিনি বলবত তরল করে আরেকজনকে বুঝিয়েও দিতে পারেন। এমনকি আনাড়িকেও। আর যিনি জানেন না, তিনি...

এসব কথা বলার ফাঁকে নিজের কথা ভাবছিলাম। ভেবে দেখলাম, কোনও বিষয়ই আমি, কাউকেই সহজ করে বুঝিয়ে উঠতে পারি না। জ্ঞানীগুণী লোকের সঙ্গে কথা বলার এই এক সাইড-এফেক্ট। নিজের অপদার্থতা এমন কারণে-অকারণে এমন দিনের আলোর মতো নিজের কাছেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে অল্পবিস্তর আত্মপ্রসাদ লাভের আশাটুকুনি থাকে না। সেটা মোটের উপর ভালো নাকি খারাপ, বুঝতে পারিনা। ইন ফ্যাক্ট, এ বিষয়ে প্রাজ্ঞ কাউকে চোখে পড়েনি। অবশ্য খুঁজে পাওয়াটাও তো মুশকিল। সত্যি বলতে কি, নিজের অপদার্থতা বিষয়ে যিনি প্রাজ্ঞ, তিনি কি আর অপদার্থ হতে পারবেন - এবং উল্টোটাও সত্যি।

সামু ব্লগের ম্যারমেরে অবস্থায় অপু তানভীর এর 'ব্লগার ইন্টারভিউ' সিরিজ পর্বটি বেশ উপভোগ্য হচ্ছে। তার সর্বশেষ ইন্টারভিউ পোস্টে একজন গুণী ব্লগারের একটা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার এই পোস্ট। কাজেই...'আমারে না যেন করি প্রচার আমার আপন কাজে, তোমারই ইচ্ছা করো হে পূর্ণ আমার জীবন মাঝে'.....(যাহার জন্য প্রযোজ্য)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৭:২১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×