somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

সুন্দর- অসুন্দরঃ চতুর্থ পর্ব......

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৌন্দর্যবোধের ক্রমবিকাশ....

(১) আদি সৌন্দর্যবোধঃ
মাতৃগর্ভে মানব শিশুর পার্থিব সৌন্দর্যবোধের ভাণ্ডার থাকে একেবারে শূন্যদশায়। এই দশায় যতটুকু আনন্দটুকু থাকে, তা তার মাতৃজঠর ঘিরে। ভূমিষ্ট হওয়ার পর, মানবশিশু তার ইন্দ্রিয় দ্বারা নানারকম তথ্য দিয়ে উপলব্ধি লাভ করতে থাকে। ভূমিষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়া মানবশিশুর দেহ সঙ্কুচিত হয়, এর ফলে তার সারা দেহে তীব্র অস্বস্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়। একই সাথে মাতৃগর্ভের আরামদায়ক উষ্ণতা থেকে প্রাকৃতিক উষ্ণতায় পৌঁছায় বলে, অন্য একটি অস্বস্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতিতে তার কান্না করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। জন্মের পর মানব শিশুর কান্নাটাই তার সুস্থ শরীরে জন্মলাভের শর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জন্মের পর যে শিশু কাঁদে না, তাকে কাঁদিয়ে স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চালানো হয়। একটি শিশুর জন্মটা মায়ের কাছে যেমন আনন্দের, তেমনি জন্মের পর শিশুর কান্নাটা আরও বেশি আনন্দদায়ক। শিশুর জন্মমুহূর্তের এই স্মৃতি স্মৃতিভাণ্ডারে হয়তো থাকে, কিন্তু তা আর পরবর্তী সময় সে জাগ্রত করতে পারে না। শুধু সেই মুহূর্ত নয়, অনেকটা বড় হয়ে উঠা পর্যন্ত যত অভিজ্ঞতা লাভ করে, তার বেশিরভাগ অংশ শিশু স্মৃতিভাণ্ডার থেকে জাগিয়ে তুলতে পারে না।

(২) পর্যায়ক্রমিক সৌন্দর্যবোধঃ
জন্মের পর, একসময় শিশু তার কান্না থামায়। পরমযত্নে পরিচর্যার ভিতর দিয়ে শিশুকে আস্বস্ত করা হয়, সে নিরাপদ। এই স্বস্তিবোধের ভিতর দিয়ে সে নিজেকে নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। মূলত মানুষের এই প্রচেষ্টা সারাজীবন ধরেই চলে। এই প্রচেষ্টার ভিতরে সৌন্দর্যবোধের যতগুলো অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়, তারই আলোকে মানুষের ভিতরে নতুন সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটে। আর সকল সৌন্দর্যবোধের সমন্বয়ে আবার নতুন সৌন্দর্যবোধের জন্ম নেয়। দেখা যায়, শিশু সুমিষ্ট ধ্বনি শুনলে সে স্বস্তি বোধ করে। এই স্বস্তিবোধের বিষয়টি সে প্রাকৃতিকভাবে সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবেই পায়। কর্কশ ধ্বনি বা তীব্রতর ধ্বনিতে সে চমকে উঠে, ভয় পায়। তাই শিশুর সাথে বলতে হয় কোমল স্বরে। তাতে শিশু স্বস্তিবোধ করে।

মায়ের সুর করে কথা বলা বা গান গাওয়ার ভিতর দিয়ে তার সুরের প্রতি আকর্ষণের সৃষ্টি হয়। শিশু ক্রমে ক্রমে সুরের ব্যাপারটার সাথে অভ্যস্থ হয়ে উঠে। শিশু যদি সাঙ্গীতিক পরিবেশে বড় হয়ে উঠে, তার ভিতরে সুরের আনন্দলাভের বিষয়টা অনেকটা প্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা অর্জনের মতো হয়ে উঠে। একালের শহুরে শিশুদের কাছে টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের গান এতটাই প্রিয় যে, শিশুর খাওয়ানোর সময় অনেকেই টেলিভশনের বিজ্ঞাপন চালু করে রাখেন। এই সময় শিশুর স্বরজ্ঞান হয় না, কিন্তু সুরজ্ঞান হয়।

সাধারণভাবে আমরা যাকে সৌন্দর্য বলি, তার সাথে মস্তিষ্কের যান্ত্রিক ফলাফল এবং 'আমি' নামক সত্তার একটি নিবিড় যোগ রয়েছে। নন্দনতত্ত্বে মস্তিষ্কের কার্যক্রমকে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না, যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় ব্যক্তি বিশেষের মানসিক প্রশান্তির উপর। বলাই বাহুল্য, মানুষের মস্তিষ্ক এবং মন দুইই বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট এবং একই সূত্রে মানুষের সৌন্দর্যবোধও বিবর্তনের ফল। এর ভিতরে দৈবত্ব যদি কিছু থাকে, তা হলো পুরো মানুষ সৃষ্টির কার্যক্রম। মানুষ নিসর্গের, মানুষের কল্পনায় সৃষ্টি হয়েছে স্বর্গ, আর সেই সূত্রেই সৌন্দর্যবোধ স্বর্গীয়। মানুষ সৌন্দর্য দ্বারা আবেগাপ্লুত হয় তার সহজাত সৌন্দর্যবোধ থেকে, সেখানে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করে না। আবার এই মানুষই যা অনুভব করে, তার গুপ্তরহস্য জানার চেষ্টা করে, ফলে এক সময় না এক সময় সে আবেগের মোহ থেকে বেড়িয়ে এসে সৌন্দর্যের কাটাছেঁড়া করে। তাতে তাৎক্ষণিকভাবে সৌন্দর্যের মৃত্যু ঘটে কিন্তু সৌন্দর্যবোধ ও তার সৃষ্টির পথ খুলে যায়। এসকল ক্ষেত্রে সৌন্দর্য− সৌন্দর্যবোধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের আকর্ষণী ক্ষমতা আছে। প্রকৃতির ক্ষমতা যাই থাক, মূল কথা মানুষের ওই সৌন্দর্য গ্রহণের ক্ষমতা আছে বা অর্জিত হয়েছে। সেই ক্ষমতার গুণে মানুষ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দৃশ্য পছন্দ করে। এই ক্ষমতায় নিজ দেশে যা নাই, তাকেও ভালো লাগে। নায়েগ্রার প্রবল জলপ্রপাত, কাঞ্চনজঙ্ঘার স্বর্ণালী রূপ, আফ্রিকার খোলা প্রান্তর, বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগ সব কিছুর ভিতরই মানুষ সৌন্দর্য খুঁজে পায়। শুধু তাই নয়, ওই সব বিষয় যখন কোনো শিল্পী সুচারুরূপে ফুটিয়ে তোলেন, তাও ভালো লাগে। প্রকৃতির স্বাভাবিক রূপের সাথে শিল্পী যখন সুসমন্বয়ে বাড়তি কিছু যুক্ত করেন তখনও অন্যভাবে দেখার আনন্দ দর্শক পান। চিত্রের এই চর্চার বিকাশ ঘটেছে সৌন্দর্য চর্চার বিবর্তনের ধারায়। শাওভে (Chauvet) গুহাগুলি প্রায় বত্রিশ হাজার বছর পুরানো। একই সময়ের তৈরি কিছু নারীমূর্তি ও পশুপাখির আকৃতি পাওয়া গেছে গুহাগুলোতে। আমরা বিভিন্ন দোকানে বা মেলাতে ঝিনুক বা শামুকের অলঙ্কার দেখতে পাই। উল্লেখ করতেই হয় ভারত প্রজাতন্ত্রের মহারাষ্ট্র নামক প্রদেশের আওরঙ্গবাদ জেলায় অবস্থিত ইলোরার গুহামুর্তি এবং মন্দিরের অলঙ্করণের কথা।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×