somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জীবনানন্দ দাশের স্মরণে....

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
জীবনানন্দ দাশের স্মরণে....



বাঙালি জীবিত প্রতিভার দাম দেয় না- এ কথাটা সত্যি।
বনলতা সেন দিতে পারেনি তাঁকে দু'মুঠো ভাতের নিশ্চয়তা। চাকরীহারা বেকার হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন পথে পথে। ফিরেছিলেন দ্বারে দ্বারে। অফুরাণ ঋণের বোঝা কাঁধ থেকে নামাতে করেছিলেন সামান্য টিউশনি। বাড়িভাড়া দেবার টাকা ছিল না। করেছেন বীমা অফিসের দালালির কাজ! শুনুন সেই মানুষটার করুণ আকুতি- ....
_______
আমার প্রিয় অধ্যাপক কবির,

বিশিষ্ট বাঙালিদের ভিতর আমি পড়ি না; আমার বিশ্বাস, জীবিত মহত্তর বাঙালিদের প্রশ্রয় পাওয়ার মতনও কেউ নই আমি। আমি সেই মানুষ, যে প্রচুর প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রতিটি দ্রব্যকে সোনা বানিয়ে তুলতে চায় অথবা মহৎ কোনও কিছু – যা শেষ বিচারে একটা কোনও জিনিসের-মতন-জিনিস; – কিন্তু, ভাগ্য এমনই যে, আজ তার পেটের-ভাত জুটছে না। কিন্তু, আশা করি, একটা দিন আসবে, যখন খাঁটি মূল্যের যথার্থ ও উপযুক্ত বিচার হবে; আমার ভয় হয়, সেই ভালো দিন দেখতে আমি বেঁচে থাকব না। আপনার কথা-মতো আমি জ্যোতিবাবু অথবা বি.সি. রায়’এর সঙ্গে এখনও দেখা করার চেষ্টা করি নি; আমার মনে হয়, আমার মতন মানুষের পক্ষে তাঁরা দূরের মানুষ। আমি যেন অনুভব করি, আপনিই আমাদের মতন লোকের জন্য এক-মাত্র মানুষ; আপনার উপর আমার গভীর আস্থা আছে। আমি সর্বদা বিশ্বাস করি যে, আপনার নিজের পরিপূর্ণ শাসনের ভিতরে আছে, এমন কোনও একটা, আমার পক্ষে মানানসই, জায়গায় আপনি আমাকে বসিয়ে দিতে পারেন; আমাকে একটা উপযুক্ত কাজ দিয়ে দেবার মতন সুযোগ-সুবিধা আপনার খুবই আছে। আমার আর্থিক অবস্থাটা এখন এতটাই শোচনীয় যে, যেকোনো একজন সকর্মক ‘অপর’ মানুষ যে-কাজ করতে পারে, কেন্দ্রীয় সরকার’এর অধীনে সে-কাজ আমারও করতে পারা উচিত। আমি মনে করি, এ-রকম একটা কাজ এক জন মানুষকে সেই সম্মানটা দিয়ে দিতে পারে, যা প্রতিটি মানুষ নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে অর্জন করে নেয়; তার বেশি আমি আর কিছু চাই না। আমার দেশ আমার অস্তিত্বের স-র-মাত্রাটার সাপেক্ষে সেই যথাযোগ্য সুযোগটা আমাকে দিক, যাতে আমি আমার ন্যূনতম জীবনযাপন নিয়ে থেকে যেতে পারি। প্রাইভেট কলেজের অধ্যাপকের কাজ ক্ষুদ্র কাজ : অধিকন্তু অন্যান্য নানা কারণেও ওই কাজটা আমি আর করতে চাই না। আমার খুবই পছন্দ তেমন কোনও একটা মানানসই কাজ, যাতে অনেকটা গবেষণা করতে হয়, লিখতে হয় এবং ভাবনা-চিন্তা করতে হয়।

ইতি,
আপনার জীবনানন্দ দাশ
১৬ই এপ্রিল, ১৯৫৪।
______________

হুমায়ুন কবির (২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৬-১৮ আগস্ট, ১৯৬৯) একজন ভারতীয় বাঙালি শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক ও দার্শনিক। তার জন্ম অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুরের, বর্তমান বাংলাদেশের, কোমরপুর গ্রামে। তিনি দুই দফায় ভারতের শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

হুমায়ুন কবির, জীবনানন্দের কোন চিঠিরই উত্তর দেননি, আর্থিক উন্নয়নে কোনো সহযোগিতাও করতে পারেননি। শুধু মরণোত্তর একাডেমি পুরস্কার পাইয়ে দিয়েছিলেন!

তথ্যসূত্রঃ দীপেনকুমার রায়-এর সম্পাদনায় জীবনানন্দ দাশের পত্রাবলী প্রকাশিত হয় বাংলা ১৯৮৫ সনে। পরবর্তী কালে আবদুল মান্নান সৈয়দ জীবনানন্দ দাশের পত্রাবলী প্রকাশ করেন ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে। জীবনানন্দ দাশের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত পত্রাবলী প্রকাশিত হয় ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৪১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=১। কে বা চিনে আমায় ২। চলো যে যার মত ভালো থাকি =

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:২৭


©কাজী ফাতেমা ছবি
#ভাবনা'রা
যত্ন করে লাগানো পাতাবাহার
কিংবা বারান্দার ঝুলে পড়া ঘাস ফুল
আর মানি প্লান্ট, কাঠ বেলী ওরা আমাকে চিনে,
রোজ বসে যেখানে দেখে নেই মুখশ্রী
ড্রেসিং টেবিলের আয়না সে আমাকে চিনে।

যে গ্লাসটায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীতে ফিরলেন বুচ ও সুনিতা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:৩৫

মহাকাশ স্টেশনে ৯ মাস আটকে থেকে পৃথিবীতে ফিরলেন বুচ ও সুনিতা


আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) দীর্ঘ ৯ মাস কাটিয়ে অবশেষে পৃথিবীতে ফিরতে সক্ষম হলেন দুই বিশিষ্ট মার্কিন নভোচারী... ...বাকিটুকু পড়ুন

'ওরা' পারেও....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭

'ওরা' পারেও....

২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর ফজরের ওয়াক্তে আমাকে আর Zahid Hassan কে র‍্যাব-১০ থেকে মিরপুর থানায় হস্তান্তর করে। সেই দিনই আমাদের কোর্টে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আনে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার রক্তাক্ত রমজান: বিশ্ব দেখছে নিরবে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:৪২



রমজানের পবিত্রতা উপেক্ষা করে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন। এই হামলায় গাজার ডি-ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী ইসাম দা'আলিসসহ চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নুরের চে গুয়েভারা

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:২৯



(১)
কয়েক দিন যাবত রাজীব নুরের মারাত্মক ধরনের মন খারাপ, তাঁর সেলফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছে এখন আর চার্জ নিচ্ছে না, অনও হচ্ছে না! মনে হয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একদিকে ভালোই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×