
'গুম এবং অতঃপর' বইটি একান্তই আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সত্যিকার ঘটনা এলোমেলো ভাবে লেখা একটি বই। আমাকে কিভাবে গুম করা হয়েছিল, গুম অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতনের বর্ননা এবং গুহার মতো যায়গায় কিভাবে গুম কালীন সময়ে ছিলাম- সেইসব লেখার সাথে লিখেছি গুম জীবনে S M Sagor ফসিউল আলম এর সাথে কয়েক মিনিটের কথা। শেষ রাতে সহযোদ্ধা Zahid Hassan, Rezwanul Haque Shovan (ব্লগার শের শায়েরী) Rajon Bapari Wasim Iftekharul Haque এর সাথে দেখা হওয়া থেকে জেল জীবনের কথা....

গুম জীবনে গুহাবন্দী অবস্থায় আমার চোখ বাঁধা এবং দুইহাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ লাগানো থাকতো সব সময়। দশ দিনের মধ্যে আমার একটি বারের জন্যও দিন/রাতের সময় জ্ঞান ছিলো না। আন্দাজ করি- গুমের দ্বিতীয় দিন আমাকে গুহা থেকে টেনেহিচড়ে বের করে নিয়ে যায় টর্চার সেলে...
প্রশ্নঃ 'আবু সুফিয়ান কে? তার সাথে আপনার সম্পর্ক কি? তিনি একটা নিউজ করেছেন- আপনি নিখোঁজ....'!
আমি জবাব দেই- "আবু সুফিয়ান আমার অনুজ প্রতীম বন্ধু। বাংলাভিশন টেলিভিশন চ্যানেলের রিপোর্টার ছিলেন। পরে নিজেই একটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল করেছেন। তার সাথে অনেক দিন আমার যোগাযোগ নাই....'। এই নিয়ে অনেক অবান্তর প্রশ্ন-
'যার সাথে যোগাযোগ নাই সে কিভাবে তোর নিখোঁজ সম্পর্কে নিউজ করে?'
যার জবাব সত্যিই আমার জানা নাই, কারণ, আমিতো ওদের হাতে বন্দী। কারোর সাথে দেখা সাক্ষাৎ, কথা বলারও কোনো সুযোগ নাই। তবুও আমার দোষ! অতএব, চালাও নির্যাতন.... শুরু হলো বেধড়ক মারধর....
জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আমার স্ত্রীর কাছে জানতে পারি- আমার নিখোঁজের পর সম্ভাব্য সব যায়গায় খোঁজ নিয়ে কোনো সন্ধান না পেয়ে আমার স্ত্রী এবং ছোট ভগ্নীপতি মিজান সাংবাদিক Abu Sufian ভাইকে জানায়। সুফিয়ান ভাই সাথে সাথে নিজে রিপোর্ট করে এবং তার পরিচিত অন্যান্য সাংবাদিকদের আমার নিখোঁজ সম্পর্কে নিউজ করতে বলে। অন্যদিকে আমাকে যখন ষ্টীমার থেকে তুলে নিয়ে আসে তখন বিবিসি এবং ডেইলি স্টার এর সিনিয়র সাংবাদিক মোরশেদ আলী খান সাহেব আমার পাশেই ছিলেন। তিনিও তার অনুজ প্রতীম সাংবাদিকদেরও জানিয়ে দেন- "হুমায়ুন কবির নামে এক জনকে ষ্টীমার থেকে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার লোক পরিচয়ে জোরজবরদস্তি তুলে নিয়ে গিয়েছে...."!

একদিকে সুফিয়ান ভাই অন্যদিকে মোরশেদ আলী খান সাহেবের সামান্য সূত্রের খবর একই দিনে ১০/১২ টা জাতীয় দৈনিক এবং সোশ্যাল মিডিয়া নিউজ পোর্টাল প্রচার করে। ব্লগার বন্ধু বিদ্রোহী ভৃগু ( Mim Masqur) এবং অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ব্লগার Mostofa Kamal Palash আমার গুম বিষয়ে ব্লগে পোস্ট দেয়। সব নিউজেই আমার ছবির যোগানদার উল্লেখ্য দুই ব্লগার এবং বন্ধু স্বজন আবু সুফিয়ান ভাই। আমার গুমের খবর খুব দ্রুত মিডিয়ায় চাউর হওয়ায় আমার উপর শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলেও ক্রস ফায়ার থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম।
সাংবাদিক মোরশেদ আলী খান এবং আবু সুফিয়ান ভাই সম্পর্কে আমার বইতে লিখেছি....
সুফিয়ান ভাই বর্তমানে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সিনিয়র অনুসন্ধানী প্রতিবেদক/ রিপোর্টার। তিনি নিজেও 'ক্রসফায়ারের নীলনকশা' নামে অত্যন্ত পরিশ্রমী অনুসন্ধানী মূলক একটা বই লিখেছেন, যা এবারের বই মেলায় অন্যতম বেস্টসেলার তালিকায় স্থান পেয়েছে। অন্যদিকে সিনিয়র সাংবাদিক মোরশেদ আলী খান সাহেব আমার গুম মামলার একমাত্র চাক্ষুষ সাক্ষী।
কয়েক দিন আগে আবু সুফিয়ান ভাই তার লেখা 'ক্রসফায়ারের নীলনকশা' বইটি আমাকে গিফট করেছেন। আমিও তার অফিসে গিয়ে আমার দেশ সম্পাদক শ্রদ্ধেয় মাহামুদুর রহমান ভাইকে এবং আবু সুফিয়ান ভাইকে আমার লেখা বই গিফট করেছি।
(ছবি তোলক Mohammad Emran Hossain)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


