পাথর চোখের কান্না-২
২০২০ সালে 'পাথর চোখে কান্না' শিরোনামে একটা পোস্ট লিখেছিলাম...একই বিষয় নিয়ে আজ আবারও লিখিছি- তাই এবারের শিরোনাম পাথর চোখের কান্না-২
সেই গুম জীবনে একটানা দশদিন চোখ বাঁধা, তার উপর কানে ইলেক্ট্রিসিটি শক দেওয়ায় কানতো গেছেই চোখের দৃষ্টিশক্তিও ৭০% কমে গিয়েছে। বছর চার আগে এক চোখে অপারেশন করে IOL (Inter ocular lence) লাগিয়ে ছিলাম....কিন্তু তেমন একটা উপশম ঘটেনি বরং দিনে দিনে সমস্যা বেড়েই চলছে। কোনো কিছুতেই বেশী সময় তাকিয়ে থাকতে পারিনা। টানা ৪/৫ মিনিটের বেশী পড়া/লেখা করতে পারছিনা। চোখ জ্বালা করে, পানি পরে, দৃষ্টি ঝাপসা ইত্যাদি। চোখের চিকিৎসক পড়াশোনা, লেখালেখি সহ অনেক দৈনন্দিনতা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
আমি 'পড়বো না, লিখবো না, বেশী আলোতে থাকবোনা, চোখে প্রেশার পরে তেমন কিছুই করতে পারবো না'- তাহলে আমি করবোটা কি!
..... ভাবি চোখ বন্ধ করে কি কি করা যায়....
হ্যাঁ, চোখ বন্ধ করে গান শোনা যায়, আবৃত্তি শোনা যায়, চোখ বন্ধ করে অতীত স্মৃতি রোমন্থন এবং ভবিষ্যত আকাশকুসুম কল্পনা করা যায়- যারা আমার চোখ নষ্ট করে দিয়েছে কল্পনায় তাদের চোদ্দগুষ্টির চোখ তুলে কুত্তারে খাওয়ানোর সুখ অনুভব করা যায়। চোখ বন্ধ করে ঠোঁটের উপর ঠোঁট ডুবিয়ে চুমু খাওয়ার সুখ আছে মানি, কিন্তু হাতড়ে সে ঠোঁটের নাগাল পাওয়ার অসহায়তাটুকুও আজ জানি।
প্রতিদিন কিছু সময় কোরআন তেলওয়াত করার অভ্যাস আমার সেই ছেলে বেলা থেকেই- কিন্তু এখন তা করতে পারছিনা! এক সময় মনে হয়েছিল ব্রেইল(Braille) শিখলে কেমন হয়? ব্রেইলে কোরআন আছে তো? ইস্কাটনস্থ অন্ধ ও বধিরদের স্কুলের একজন ট্রেইনার আমার পরিচিত। তাঁর কাছে জানতে পারলাম ব্রেইলে লেখা গীতি বিতান সহ বিখ্যাত বেশকিছু বই আছে। পবিত্র কোরআনের কয়েকটি সুরাও আছে তবে ব্রেইলে লেখা সমগ্র কোরআন আছে কিনা তার জানা নাই।
সিদ্ধান্ত নিলাম, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এর অডিও শুনবো। বেশ কয়েক মাস যাবত কোরআন তেলওয়াত শুনছি। মক্কায় মসজীদ আল হারাম এর ইমাম শ্রদ্ধেয় শেইখ সাউদ আস সুরাইম এর অপূর্ব সুন্দর তেলওয়াত এবং বিটিভির সাবেক সংবাদ পাঠক জায়েদ ইকবাল এর কন্ঠে বাংলা অনুবাদ/ তরজমা শুনছি....অসাধারণ সুন্দর! দীর্ঘ জীবন চোখে দেখে তেলওয়াত করে যে উপলব্ধি তার থেকে বহুগুণ বেশী উপলব্ধি করছি, আত্মস্থ করতে পারছি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পবিত্র কোরআন।
প্রিয় সুহৃদ/ স্বজন, আগামীকাল হাসপাতালে ভর্তি হবো এবং আশা করি দ্বিতীয় বারের মতো আমার চোখে অপারেশন হবে- প্রথমে এক চোখে। দোআ করবেন যেনো দ্রুত সুস্থতা ফিরে পাই।
এই সাময়িক (আমি সুস্থ হবো ইন শা আল্লাহ- তাই সাময়িক বলছি) অসুস্থতা আভাসে বুঝিয়ে দিল দৃষ্টিহীনতার অসহায়তার কথা! তবে এও উপলব্ধি করিয়ে দিল ভালোবাসার চাইতে বড় দৃষ্টিশক্তি সংসারে আর দুটি নেই। আমি অনেকবার দেখেছি অন্ধ দম্পতি একে অন্যকে ধরে রাস্তায় হাঁটছেন। আমি দেখেছি- দুই অন্ধ অমলিন হাসি হেসে এবরো থেবরো রাস্তায় হেটে যেতে- যারা জীবনেও আলো দেখেনি, কোনো রং দেখেনি। আজ বুঝি সে জোড়ের বাঁধন শক্তি কোথায়। এই সাময়িক অস্পষ্টতা এমন স্পষ্টতা নিয়ে ফিরে আসবে যে সে কয়েক দিনের অসুবিধার কাছে ঋণী হয়ে থাকবো...
আলোর অভাবে তবু মানুষ বাঁচে,
ভালোবাসার অভাবে বাঁচেও না, মরেও না...
শুধুই যন্ত্রণাবিদ্ধ হয়ে থাকে....
কি ভয়ংকর সে থাকা!
আর যদি ভালো হয়ে ফিরে আসা নাহয়, কোনো দুঃখ পাবোনা বরং সুখ খুঁজে পেতে চেষ্টা করবো- জীবনের ফেলে আসা ৬৬ বছর অনেক কিছু দেখার স্মৃতি রোমন্থন করে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


