somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

গনি মিয়ার বাজেট.....

০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গনি মিয়ার বাজেট.....

"গনি মিয়া একজন কৃষক। নিজের জমি নাই। অন্যের জমি বর্গা চাষ করে। গনি মিয়া অনেক ধুম ধাম করিয়া ছেলের বিবাহ করাইল। গ্রামের সবাইকে দাওয়াত দিয়া ভূরিভোজন করাইলো। অনেক ফুর্তি করিল। ইহাতে সে অনেক কর্জ করিল। সেই কর্জ আর সে শোধ করিতে পারিল না। গ্রামের লোকেরা বলিতে লাগিল গনি মিয়া কেন কর্জ করিতে গেল?
"

এই গল্পটি আমাদের ছেলে বেলায় সবুজসাথী নামক প্রাথমিক স্তরের বইয়ে পাঠ্যভুক্ত ছিল। তখন পড়ার জন্য পড়তাম। পরীক্ষার জন্য মুখস্ত করতাম। কিন্তু তখন তার মানে বুঝতাম না। মাস্টার মশাই শুধু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, "কর্জ করিয়া আমোদ ফুর্তি করা, নিজে অভুক্ত থাকিয়া সবাইকে নিয়ে ভোজনবিলাস করা অনুচিত। ইহাতে আরও গরীব হইতে হয়। পরিণামে আরও কষ্টে পড়িতে হয়।"

তখন আমার মাথায় অতশত ঢুকত না। মনে হইতো ইহা গনি মিয়ার একান্ত ব্যাক্তিগত বিষয়- ইহা লইয়া আমার মাথা ঘামানো নিষ্প্রয়োজন।

যুগ পাল্টাইয়াছে। গনি মিয়ারাও মডার্ন হইয়াছে। গনি মিয়ারা এখন এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল গ্রুপ নাম ধারণ করিয়াছে। কর্জ করার অভ্যাসী গনি মিয়াদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়িয়াই চলিয়াছে। সঙ্গত কারণেই তাহারা আর আগের সেই গনি মিয়া নাই, আগের সেই গাঁও-গ্রামের দাদন ব্যবসায়ীও নাই। কর্জের টাকার জন্য গনি মিয়াদের এখন আর অশিক্ষিত, চামার টাইপের দাদন মহাজনদের দ্বারস্থ হইতে হয়না। তাহাদের স্থলে সরকারি, বেসরকারি ব্যাংকসমূহ স্থান লইয়াছে। গনি মিয়ারা ফ্রন্ট ডোর অথবা ব্যাক ডোর দিয়া সেই অর্থলগ্নিকারী সুসজ্জিত অফিসগুলোতে বুক ফুলাইয়া এসি’র বাতাস খাইয়া পারস্পরিক আপ্যায়ন এবং ... ইত্যাদি ইত্যাদিতে সম্মানিত হইয়া আন্ডার হ্যান্ড, ব্যাকহ্যান্ড কারবার সারিয়া মিলিয়ন অংকের কর্জ হাসিতে হাসিতে হাসিল করিতেছে। অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের বেনিয়ারাও পরম উৎসাহে তাদের খেদমত করতেছে। খেদমতের বিনিময়ে তাহারা উইন উইন সিচুয়েশনের ভাগ-বখরা নিজেদের ভোল্টে নির্বিঘ্নে ঢুকাইয়া লইতেছে। হতভাগ্য দুই একজন ধরা খাইতেছে সত্য। তবে 'বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো'র যাদুমন্ত্রে বেকসুর হইয়া সমাজে বিচরণ করিতেছে।

আজকালকার গনি মিয়াদের মধ্যে কেউ কেউ যথার্থই বর্গাজীবি, নিজের জমি নাই। থাকলেও প্রায় ভূমিহীন পর্যায়ের। বাকীদের জমি জমা আছে। তবে স্বভাবে তারা গনি মিয়া তুল্য।

নিজের জমি এবং অন্যের জমিও নিজের মনে করিয়া অন্যের জমি, অন্যের সম্পদ ধর্ষণ, কর্ষণ করিয়া থাকে। গনি মিয়ারা নিজের জমিতে কর্ষণ, ধর্ষণ করে কিনা জানিনা। ইহা তাহাদের প্রাইভেট বিষয়। তবে ইহারা যে নিজ জমি ভিন্ন অন্যের তত্ত্বাবধানে থাকা পতিত, অনুর্বর, উর্বর, লাখারিজ জমি পাইলেই বাছবিচার না করিয়া ধর্ষণ-কর্ষণে লিপ্ত হইতেছে ইহা ফাঁস হওয়া অডিও, ভিডিও ক্লিপিংয়ের কল্যাণে চাক্ষুষ হইতেছে। শুধু যে গনি মিয়ারাই ম্যারাডোনা স্টাইলে খেলিতেছে না। মিস/মিজ/মিসেস গনি মিয়ারাও বেশুমার খেলিতেছে। ইহারাও নীচতলা, উপরতলা বন্ধক রাখিয়া ভালই চালাইতেছেন। ইহাদেরও অডিও, ভিডিও ক্লিপিং ফাঁস হইতেছে। এই সমস্ত লইয়া কিছু দিন মিডিয়া পাড়া সরগরম থাকে। বিনোদন প্রিয় পাবলিক মারা খাওয়াতেও বেশুমার বিনোদন খুঁজিয়া লইতেছে। চারিদিকে গনি মিয়াদের আধিপত্য মুহম্মদ ঘোরির ঘোড়ার মত টগবগ করিতেছে।

আগেকার গনি মিয়ারা ফুটানি দেখাইতে যাইয়া কর্জ করিয়া ঘি খাইয়া নিঃস্ব হইয়াছে। আজকালকার গনি মিয়ারা মিলিয়ন মিলিয়ন অংক কর্জ করে। কর্জ শোধ করিবার কোন খায়েসই ইহাদের নাই। প্রথমত ইহারা অর্থলগ্নিকারী মহাজনদের সাথে আঁতাত করিয়া ভল্ট ধর্ষণ, কর্ষণের কাজ নির্বিঘ্নে সম্পাদন করিতেছে। উইন উইন সিচুয়েশনের অলিখিত মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং সম্পাদন করিয়া কর্জের টাকা মালেশিয়া, কানাডা, দুবাই, সিংগাপুর, লন্ডন, আমেরিকা, পর্তুগাল, স্পেন বেলজিয়ামে সরাইয়া ফেলিতেছে। কখনও কখনও যতসামান্য দিয়া হোয়াইট কারবারে বিনিয়োগের সাইন বোর্ড লটকাইয়া সিংহভাগ সুইস ব্যাংকে সুইচ করিতেছে। অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে থাকিল জাতীয় আবহ সৃষ্টি হইয়া থাকে। ভাগ, বাটোয়ারা বা বখরার অর্থের কমবেশি লইয়া অথবা বঞ্চিত কাহারো বিটলামির কারণে কিছু হতভাগার কাহিনী ভাইরাল হইয়া থাকে। এইরুপ হইলে সরকারি যন্ত্র ‘হায়, হায়, ইহা কি হইলো, কেমনে হইলো, কাহারা করিলো, কাহারা জড়িত’ ইত্যাদি বিলাপে চারিদিক কাঁপাইয়া ফেলিতে থাকে। তাহার পর 'তদন্ত কমিটি গঠন করা হইয়াছে', 'কাউকে ছাড় দেওয়া হইবে না' হুংকার দিয়া ইংরেজিতে কথা বলা 'গাল ফেন' বগলদাবা করিয়া "খলিফা আল বুরুজ" ওরফে "বুর্জ খলিফা"য় হানিমুনে যায়। ইহা লইয়া সুশীলের মাতামাতি, গুঁতোগুঁতি, হাতাহাতি, খায়-খাতির, আড়াল-আবডাল খেলা চলিতে থাকে। আরেকটি ইস্যু আসিয়া ইহার অগ্নিনির্বাপণ করে।

এতক্ষণ তো শুধু ব্যক্তি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গনি মিয়াদের কথা বলিলাম। এবার বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গনি মিয়ার কথা বলিঃ
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গনি মিয়াদের গুরু। তিনি এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল গ্রুপের বাপ-মা। তিনিই উহাদেরকে লালন-পালন করেন। তাহাদের আইনী লেবাসে আগলে রাখেন। তিনি নিজে কিছু করেন না। তিনি তাহার নিযুক্ত বোতল বরকত, রাখাল আতিয়ার, আহঃ রউফ তাং, এস কে সুর দিয়া সকল কুকাম করায়। আবার বছরান্তে লাখ লাখ কোটি টাকা কর্জ করিয়া উন্নয়ন বাজেট নামক লুটপাটের টাকা যোগান নিশ্চিত করে। চলতি বাজেটে গনি মিয়া ৩ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা কর্জ করিয়া লুটেরাদের জন্য বরাদ্দ করিয়াছেন।

"ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও!
ফিরে চাও ওগো পুরবাসী, সন্তান দ্বারে উপবাসী।
দাও মানবতা ভিক্ষা দাও!"

অবশ্য এইবার আমার মতো অনেক বেকুব অভাজন ভাবিয়াছিল- দুনিয়া খ্যাত মশহুর অর্থনীতিবিদ নোবেল জয়ী ডক্টর ইউনুস স্যার বাস্তবতার নিরিখে ভিন্নরকম একটা বাজেট উপহার দিবেন। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। যাহা মাল মুহিত, তাহাই লোটাস কামাল, ইহাই ছালেউদ্দিন কা মাল!

গনি মিয়ার সম্ভাব্য আয়- ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা।
গনি মিয়ার সম্ভাব্য ব্যয়- ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
ঘাটতি - ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা গনি মিয়াকে ভিক্ষা মাংতে হবে।
"আমার আল্লাহ নবীজির নাম....
আশেপাশের ময়মুরুব্বি যে আছেন যেথায়
সত্যি কথা হায়, এই অন্ধ কালা কয়-
জগৎ নামের ইস্টিশনে কারো থাকন নাই,
আমার আল্লাহ নবীজির নাম..."।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×