অনেকে এখনো মনে করছেন “জুলাই সনদ” মানেই “জুলাই ঘোষণাপত্র” কিন্তু আসলে দুই জিনিস দুই রকম।
জুলাই ঘোষণাপত্র হচ্ছে ওই ৩১ ডিসেম্বর নাগরিক কমিটি যে ঘোষণা দিতে চেয়েছিল, যেখানে ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দেওয়া, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’-এর একটা ধারণা উপস্থাপন করা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এগুলো থাকবে। অনেকটা একাত্তরের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের কাঠামোতে। জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই একটি দরকারি বিষয়। কারণ আমাদের জাতীয় জীবনে জুলাই অভ্যুত্থানকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট। কিন্তু সমস্যা এখানে হয় যখন এনসিপি জুলাই ঘোষণা কে সংবিধানের অংশ করতে চায়। স্বাভাবিকভাবেই বিএনপি এখানে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের যুক্তি ও পরিষ্কার, সংবিধান তো হচ্ছে দেশ চালানোর গাইডলাইন, সংবিধানে ঘোষণাপত্র থাকতে পারে না। তবে ঘোষণাপত্রকে হয়তো তফসিল আকারে রাখা যেতে পারে।
এটা তো গেল জুলাই ঘোষণাপত্র তাহলে জুলাই সনদ কি জিনিস?
জুলাই সনদ হচ্ছে একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দলিল, যেখানে যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছিল সেখান থেকে আসা প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো পরবর্তী সরকার বাস্তবায়ন করবে, এই বিষয়ে সবার লিখিত সম্মতি অঙ্গীকার নেওয়া। অর্থাৎ, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাস করে যে সরকারই আসুক, সে যেন এই সংস্কারগুলো ফেলে না দেয়, এই নিশ্চয়তা তৈরির জন্যই এই সনদ।
তবে শুধু দলগুলো স্বাক্ষর করলেই যে সেটা কার্যকর হবে, তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। আমরা ’৯১-এর পরেও দেখেছি, ২০০৮-এও দেখেছি, বহু সংস্কার প্রস্তাব আলোকিত আলোচনার মধ্য দিয়ে এসেছে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি।
এই জায়গায় এসে জামায়াত ও এনসিপি বলছে, জুলাই সনদকে গণভোটের মাধ্যমে বৈধতা দিতে হবে। কিন্তু এই প্রস্তাব ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ একবার গণভোটের প্রসঙ্গ এলে, তখন তারা নিয়ে আসতে পারে নতুন সংবিধান বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন, জুলাই অভ্যুত্থানকে বিপ্লব ঘোষনা ইত্যাদি নানা কিছু। তখন আর সংসদ নির্বাচন মূল বিষয়ে থাকবে না এবং বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় নির্বাচন ছাড়াই একটা অনির্বাচিত ব্যবস্থায় পড়ে যাবে।
তাহলে সমাধান কী?
গণভোট এড়িয়ে একটি কার্যকর পন্থা হতে পারে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব দলের স্বাক্ষর নেওয়ার পর একটি অধ্যাদেশ জারি করুক। সেই অধ্যাদেশে বলা থাকবে, নির্বাচনের পর গঠিত সরকার এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবে, এবং সনদে এটাও লেখা থাকতে হবে যে ঠিক কত বছরের মধ্যে পরবর্তী সরকার এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবে, সেটি হতে পারে দুই বছর বা তিন বছর।
এভাবেই জুলাই সনদ আইনি সুরক্ষা পেতে পারে, আর সংস্কারের প্রতিও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা তৈরি হতে পারে। সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে নিয়ে প্রায় সব দলকেই খুব ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বড় দল বিএনপি মোটামুটি বেশিরভাগ সংস্থার মেনে নিয়েছে। এখন তারা যদি জুলাই সনদে আন্তরিকভাবে স্বাক্ষর করে এবং এটিকে অধ্যাদেশ আকারে জারি করতে একমত হয় তাহলে ভবিষ্যতে পাস করে আসলে সেটি বাস্তবায়ন করতে তাদের একটা আইনগত এবং সামাজিক প্রেসার থাকবে। যারা সত্যিকার অর্থেই জুলাই সনদের বিষয়বস্তু অর্থাৎ একমত হওয়া নানা সংস্কার প্রস্তাব কে বাস্তবায়নে রূপ দিতে চায়, তাদের উচিত হচ্ছে এই ধরনের অধ্যাদেশ জাতীয় একটি সমাধানে আসা। তা না করে গণভোট, গণপরিষদ নির্বাচন, বিপ্লব, এই সমস্ত কথাবার্তার দিকে যাওয়া মানেই হচ্ছে সংসদ নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া এবং গণতন্ত্রকে ঝুঁকিতে ফেলা।
(ব্লগার বন্ধু রন্টি চৌধুরীর ফেসবুক পোস্ট)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




