সরকারের একজন উপদেষ্টা, যার নামে কিছুদিন আগেও অর্থনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে কন্ট্রাক্ট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ক'দিন পরে সেই উপদেষ্টার কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির খবর বেরিয়েছে। এমনকি একটি পদের জন্য ৩০ কোটি টাকার দুর্নীতির খবরও এসেছি।
সেই একই উপদেষ্টা তুরস্কে সরকারি সফরে গিয়ে সেখানে বসবাসরত ৩৩ বছর বয়সী এক প্রবাসী বাংলাদেশী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ডক্টর নাজমুল ইসলাম এর সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। নাজমুল ইসলাম এর স্ত্রী একজন তুর্কী নারী এর তুরস্কের বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদে কর্মরত। যাইহোক, উপদেষ্টা স্যার দেশে ফিরে এসে ২৭ জুলাই কোনো প্রোটোকল না মেনে, কোনো আলোচনা ছাড়াই সেই ৩৩ বছরের যুবককে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বেছে নিয়েছেন। মালদ্বীপে এই যুবককে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে দলীয় পদায়ন বা ব্যক্তিগত পছন্দের মানুষকে বসানোর সবচেয়ে কলঙ্কজনক উদাহরণ তৈরি করেছিলেন শেখ হাসিনা, যখন বাংলাদেশের দুই গ্যাংস্টারের ভাই আজিজকে সেনাপ্রধান বানিয়েছিল। আজও সেই ক্ষত সেনাবাহিনী বয়ে বেড়াচ্ছে, আজও সেই বাহিনীর অনেক অফিসার এই ঘটনা বলতে লজ্জা পান। বর্তমান সরকারের সময় ছাত্র উপদেষ্টারা একই ধরনের কাজ করছেন। একজন উপদেষ্টা ঢাকার এক অঞ্চলের সিটি কর্পোরেশনে নিজের পছন্দের এক অদ্ভুত ব্যক্তিকে বসিয়েছেন; তিনি বসার পর থেকেই উল্টোপাল্টা কাজ করছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ আসছে। আর এখন কথা নাই বার্তা নাই, আরেকজনকে রাষ্ট্রদূতের মতো এত বড় পদ দিয়ে দেওয়া হলো।
জবাবদিহিতাহীন সরকার হলে এমনটাই হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ছাত্র উপদেষ্টাদের উপর থেকে আস্থা হারিয়েছি অনেক আগেই। কিন্তু রাষ্ট্রদূতের মতো উচ্চপদে নিয়োগের ব্যাপারে তো প্রধান উপদেষ্টার জানার কথা। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরও, নির্বাচিত সরকার আসার আগে দেশ নিয়ে এমন ছেলেখেলা করাটা অত্যন্ত হতাশাজনক।
সত্যি বলতে, বাংলাদেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হলো। যে বয়সে বিসিএস দিয়ে ক্যাডার হিসেবে যোগদান করে, সেই বয়সে রাষ্ট্রদূত! একজন বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের অফিসারকে অন্তত ২০ বছর চাকরি করে রাষ্ট্রদূত হতে হয়।
ডক্টর নাজমুল ইসলামের জন্ম ১৯৯২ সালে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নিয়োগ অতীতের সমস্ত রেকর্ড ব্রেক করেছে। তাকে যদি একান্তই নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন হতো, তবে অন্য কোথাও দেওয়া যেত। কিন্তু এক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠতা রক্ষায় সরাসরি রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ?
মালদ্বীপে ২০২০-২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। বর্তমানে রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থাৎ বর্তমান হাইকমিশনারকে স্থলাভিষিক্ত করে নাজমুল ইসলামকে নতুন হাইকমিশনার নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছেন।
কিন্তু তার কি এমন অভিজ্ঞতা যে, সরাসরি এই পদে বসানো হলো?
গত ১ বছরে কেন দেশের দৃশ্যমান সংস্কার হয়নি? কারণ সব সেক্টরে এমন লোকজনকে নিয়োগ দিয়েছে এই উপদেষ্টা পরিষদ। ঘনিষ্ঠতা ও আত্মীয়তা রক্ষায় উপদেষ্টারা অনভিজ্ঞ লোককেই নিয়োগে প্রাধান্য দিয়েছে।
ইহাই হলো নতুন বন্দোবস্ত!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



