কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাউত" (প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে).....
আমার এলাকার মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ করতে চেষ্টা করি। তবে দীর্ঘ বছরের অভ্যাসমতো আমি জুমা নামাজ আদায় করি বিভিন্ন মসজিদে। আমাদের মসজিদের নিয়মিত খতিব এবং ইমাম মাওলানা মাহাবুবুর রহমান সাহেব দুই সপ্তাহ জুমার নামাযে ইমামতী করেন গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদে। যেহেতু আমি জুমা নামাজে আমাদের মসজিদে নিয়মিত নই, তাই মাওলানা মাহাবুবুর রহমান সাহেবের সাথে জুমা নামাজ আদায় করার সুযোগ তেমন হয় না। ছয় জুমা পর আজ মাওলানা মাহাবুবুর রহমান সাহেবের ইমামতীতে নামাজ আদায় করতে পেরেছি।
আজ তিনি "কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাউত"- আয়াতের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই আয়াতটি কোরআনের সূরা আল-ইমরান (১৮৫ নম্বর আয়াত) এবং সূরা আল-আম্বিয়া (৩৫ নম্বর আয়াত) সহ বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আয়াতটির মাধ্যমে জীবনের নশ্বরতা এবং মৃত্যুর অনিবার্যতা সম্পর্কে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। আয়াতটির প্রসঙ্গ ও তাৎপর্যঃ
(১) জীবনের নশ্বরতাঃ
এই আয়াত আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। ক্ষমতা, ধন-সম্পদ, সৌন্দর্য কিংবা খ্যাতি কিছুই স্থায়ী নয়। মানুষ যত বড়ই হোক না কেন, মৃত্যুর কাছে সবার সমাপ্তি ঘটবেই।
(২) আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনঃ
কুরআনের অন্য আয়াতের সাথে মিলিয়ে দেখা যায়, মৃত্যুর পর সবাইকে আল্লাহর দরবারে ফিরে যেতে হবে। সেখানে মানুষকে তার জীবনের কর্মের হিসাব দিতে হবে। অর্থাৎ, মৃত্যু কোনো সমাপ্তি নয়, বরং এক নতুন যাত্রার শুরু।
(৩) অহংকার বর্জনঃ
যারা ধন-সম্পদ, পদ-মর্যাদা বা ক্ষমতা নিয়ে অহংকার করে, তাদের জন্য এটি এক কঠিন সতর্কবাণী। মৃত্যুর সময় সবকিছু পেছনে পড়ে থাকবে। মানুষের সাথে যাবে শুধু তার সৎকর্ম বা অসৎকর্ম।
(৪) কর্ম ও পরিণতিঃ
এই আয়াতের মূল বার্তা হলো- মানুষ যা করে, তারই প্রতিফল সে পরকালে ভোগ করবে। তাই দুনিয়ার প্রতিটি কাজকেই বিবেচনা করে করতে হবে, কারণ মৃত্যুর পর সংশোধনের সুযোগ আর নেই।
“কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাউত” শুধু একটি আয়াত নয়; এটি মানব জীবনের চিরন্তন সত্য। যা জীবনের বাস্তবতা এবং মৃত্যুর অনিবার্যতা উপলব্ধি করতে শেখায়। মৃত্যু সবকিছুর সীমারেখা টেনে দেয়, আর মানুষকে মনে করিয়ে দেয়- এই দুনিয়া পরীক্ষার জায়গা, আর আসল জীবন হলো আখেরাত। তাই আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হলো মৃত্যুর আগে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ব্যয় করা।
মানুষের মৃত্যু অবধারিত- এটাই জীবনের নির্মম সত্য। কিন্তু সেই মৃত্যু কবে, কোথায়, কীভাবে আসবে- তা জানার ক্ষমতা কারও নেই। তাই মৃত্যু নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, বরং মৃত্যুর চিন্তা মাথায় রেখে আমাদের উচিত পরোকালের কথা ভেবে ইহকালের প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্যবান করে তোলা, নিজেকে পরিশুদ্ধ করে প্রাণীকুলে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়া, অন্যের জীবনে আলো জ্বালিয়ে যাওয়া। কারণ শেষ নিশ্বাসের আগে আমরা যে ভালো কাজগুলো রেখে যাবো, সেটাই হবে আমাদের প্রকৃত পরিচয় ও অমরত্বের পথ।
আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। আমীন।
(ইমাম সাহেবের বক্তব্য ফোনে রেকর্ড করে নিয়েছিলাম। আরবি বাক্যগুলো বাদ দিয়ে নিজের মতো লিখেছি)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



