বিএনপি’র ৪৭ বছরের অর্জনঃ এক দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রার ইতিহাস......
বাংলাদেশ টেলিভিশন কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ 'বিএনপি’র ৪৭ বছরের অর্জন' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে আমাকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোয়।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ১৯৭৮ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দলটির লক্ষ্য ছিল জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা। চড়াই উৎরাই আর কঠিন সময় অতিক্রম করে বিএনপি আজ ৪৭ বছরে পদার্পণ করেছে। এই দীর্ঘ সময়ে দলটির অর্জন, অবদান এবং সংগ্রাম বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিশেষ অধ্যায় হিসেবে স্থান পেয়েছে- অনুষ্ঠানের নির্ধারিত ৩০ মিনিটে বলা অসম্ভব। তবুও আমি ৭ টি পয়েন্ট নিয়ে কথা বলতে চাইঃ-
১. বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তনঃ
স্বাধীনতার পর একদলীয় শাসনব্যবস্থা দেশে গণতন্ত্রকে সংকুচিত করেছিল। শহীদ জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং বিএনপি সেই ধারার প্রধান বাহক হয়ে ওঠে। ফলে জনগণ মুক্তভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, যা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিকাশে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।
২. অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়নমুখী পদক্ষেপঃ
বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে অর্থনীতিকে মুক্তবাজারভিত্তিক করার উদ্যোগ নেয়। শিল্পায়ন, কৃষিখাতে ভর্তুকি, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে আত্মনির্ভরতার পথে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এর ফলে দেশীয় অর্থনীতি চাঙা হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
৩. অবকাঠামোগত উন্নয়নঃ
বিএনপি শাসনামলে দেশের যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ বিদ্যুতায়নসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।
৪. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অবদানঃ
শিক্ষা খাতে নারী শিক্ষার প্রসার, প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার প্রচেষ্টা ছিল বিএনপির একটি বড় অর্জন। স্বাস্থ্য খাতেও হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখে।
৫. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যঃ
বিএনপি সরকার বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যায়। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) প্রতিষ্ঠায় শহীদ জিয়ার উদ্যোগ বাংলাদেশকে আঞ্চলিক সহযোগিতার অগ্রদূত করে তোলে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনা প্রেরণও বিএনপির সময়কালে শুরু হয়, যা আজ দেশের গৌরবের অন্যতম প্রতীক।
৬. নারীর ক্ষমতায়নঃ
বিএনপি নারী নেতৃত্বকে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে আসে। দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া—যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তার শাসনামলে নারীর সামাজিক মর্যাদা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়।
৭. গণআন্দোলনে নেতৃত্বঃ
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হোক কিংবা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম- প্রতিটি আন্দোলনে বিএনপি ছিল জনগণের অগ্রভাগে। দলটি বারবার দমন-পীড়ন, কারাবরণ ও ষড়যন্ত্রের শিকার হলেও গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে পিছিয়ে আসেনি।

৪৭ বছরের এই দীর্ঘ যাত্রায় বিএনপি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বারবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত রূপান্তর, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য ও নারীর ক্ষমতায়ন- সব ক্ষেত্রেই দলটির অবদান সুস্পষ্ট।
চড়াই উৎরাইয়ের পথ পাড়ি দিয়ে বিএনপি আজও গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে জনগণের কাছে প্রাসঙ্গিক। ৪৭ বছরের এই অর্জন বিএনপিকে আগামী দিনের সংগ্রামে আরও দৃঢ় ও শক্তিশালী করে তুলবে।
ধন্যবাদ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



