somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খানপাড়ার দিনলিপি -১

২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




'ও চাচী, ও চাচী... কই যাও?
ও চাচী...
তন্দ্রার চেঁচামেচি শুনে উঠানে বের হতেই চোখে পড়লো- 'ময়লা বোরকা গায়ে দিয়ে' 'ময়নার মা' হনহন করে চলে যাচ্ছেন তালবাখড়ার পথে...
তালবাখড়ায় ময়নার মায়ের বাপের বাড়ি। ময়নার মা নিশ্চয়ই বাপের বাড়ি যাচ্ছেন। মন্তু জানে, তবুও তন্দ্রার সাথে সুর মেলালো-
'ওচাচী, ও চাচীইইই...
কই যাও? কই যাও?...
কিন্তু ময়নার মা পিছু ফেরার প্রয়োজন মনে করলেন না। তিনি হনহন করে সামনে এগুতে থাকলেন। গতরাতে ভাইঝির কল এসেছে, ভাইর শরীরটা ভালো নেই। একটামাত্র ভাই তার। বাঁচবে কিনা মরবে ঠিক নাই। ভাইকে দেখতে যাওয়ার চাইতে বড় কর্তব্য তার আর কিছুই নেই এই মুহূর্তে।
ময়নার মায়ের হনহন করে আড়াল হওয়া পথ থেকে চোখ ফিরিয়ে বিরক্তদৃষ্টিতে মন্তুর দিকে একপলক তাকিয়ে ভেতরঘরে চলে গেলো তন্দ্রা। আর মন্তু আস্তে আস্তে 'ময়নার বাড়ির উদ্দেশে পা বাড়ালো। তার চোখেমুখে কোনপ্রকার বিরক্তিরেখা দেখা গেলো না। যেনো এই দৃশ্য দেখার জন্যই সে ঘুম থেকে উঠেছে....

(হাজিগঞ্জ বাজার থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণের সবুজশ্যামল গ্রামটার নাম আইলাপুর। আইলাপুরের শ্রেষপ্রান্তে মকবুল খানের বাড়িটার আশপাশে পাশাপাশি কয়েকটা বাড়ি নিয়ে গড়েওঠা ছোট্ট পাড়াটার নাম খানপাড়া। খানপাড়ায় দুইদশক ধরে মকবুল খান, জসিম খান, হারুন খান, হেলাল খান, হরিবাবু, চন্দনবাবু সহ আরো দুতিনটে ফ্যামিলি মিলে বসবাস করে আসছে।
এ পাড়ার সবাই মকবুল খানকে বেশ মান্য করে। পাড়ার যেকোনো সমস্যায় মকবুক খানের বুদ্ধি পরামর্শ নেওয়া হয়।
সারাবিশ্বের সাথে করোনাভাইরাস নিয়ে এপাড়ার ছেলেবুড়ুরাও আতংকিত। মন্তু, তন্দ্রা, বিমলদের কথায় গত সন্ধ্যায় মকবুলসহ পাড়ার জোয়ান বুড়ুরা পরামর্শে বসেছিলেন। করোনা পাড়ায় ঢুকবার পূর্বে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এবং সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেউ অকারণে পাড়ার বাহিরে বের হবেন না। কারো বাজারসদাই বা কোনকিছুর প্রয়োজন হলে মন্তু, তন্দ্রা বা বিমলদের জানাতে... তারা ব্যবস্থা করবে।
মন্তু, তন্দ্রা, বিমলরা পাড়ার তরুনদের নিয়ে হোয়ার্টসএপ গ্রুপ খুলে গতরাতে বেশ কিছু প্লান পরিকল্পনাও করেছে....
মকবুল খানের পুলা লন্ডন থেকে সাবানপানি কেনে পাড়ার সবাইকে দেওয়ার জন্য কিছু টাকা পাঠিয়েছে।
আজ সকালে সবার ঘরেঘরে সাবানপানি দেয়া হবে।
কলিম ড্রাইভার, ব্যবসায়ী আজমল, নন্দসহ ছেলেপেলে যারা প্রয়োজনে পাড়ার বাইরে যাওয়া আসা করবে তাদের জন্য মন্তুদের নির্মাণাধীন ভবনে হোম কোয়ারিন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা করা হবে।)

গতরাতে মানা করার পরও সকাল সকাল নিয়ম ভেঙ্গে ময়নার মায়ের হনহন করে চলে যাওয়াটা হজম হচ্ছে না তন্দ্রার। এব্যাপারটা সবাইকে অবগত করতে হোয়ার্টস এপ গ্রুপে সে বিশাল একটা ভয়েস ছেড়ে বসে আছে।
বেলা বাড়ছে। বাড়ছে খানপাড়ার মানুষদের নিত্যদিনের ব্যস্ততা।


২।

বারান্দার ছেঁড়াফাটা চাটাইএ বসে কুদ্দুছকে জোর করে করে ভাত গেলাচ্ছে ময়না। রাতের ভাসি ভাত গিলতে চাইছে না কুদ্দুছ, তাই ফাঁকেফাঁকে নোংরাকথায় গালমন্দ দিচ্ছে। কখনো কখনো চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে চড় থাপ্পড়ের ভয় দেখাচ্ছে। গালি কিংবা চেঁচামেচির শব্দ দূর থেকেও স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে।

দেউড়িতে মন্তুকে দেখে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া শাড়ির আচলটা ঝটপট মাথায় দিতে দিতে বারান্দা থেকে একটা পিড়ি এগিয়ে দিলো ময়না।
মন্তু বসতে বসতে বললো- তার মেলা কাজ পড়ে আছে। ছেলেপেলেদের নিয়ে নতুন ঘরগুলোতে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। বাজারে যেতে হবে। এতসব ব্যস্ততা ফেলে সে এসেছে, ময়নার মায়ের তালবাখড়া যাওয়ার কারণ জানতে।
ময়না কচুমচু করতে করতে মায়ের তালবাখড়া যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলো। এবং বললো, সে যেতে মানা করেছিল, কিন্তু মা শুনে নি!'
মন্তু বিরক্ত হওয়ার ভান করে বললো, 'এসব করলে হবে না আপা। চাচী বাড়ি ফিরলে বইলো, ঘর থেকে বের না হতে। আর তোমরাও চাচীর থেকে দূরে দূরে থাইকো।'
ময়না হ্যা সূচক মাথা ঝাঁকাল।
ময়না বুঝতে পারছে, এখন সতর্ক থাকা জরুরি। তার স্বামী জয়নাল দুবাই থাকে। গতরাতে কথা হয়েছে। জয়নাল বারবার বলেছে, ছেলেরে নিয়ে যাতে ঘর থেকে বের না হয়। কিন্তু ময়নার মা ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন না।


সন্ধ্যায় বিমল হোয়ার্টস আপ গ্রুপে আপডেট দিয়েছে। 'বাংলাদেশে নতুন করে আরো তিনজন আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০।'
প্রতিউত্তরে তন্দ্রা লিখেছে, 'নতুন করে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের এলাকা সম্পর্কে জানা গেলে ভালো হইতো। আমরা সতর্ক থাকতে পারতাম।'
তন্দ্রা ঠিক বলেছে। কোন কোন এলাকার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, এটা বললে ঐ এলাকাগুলোর মানুষজন সাবধান থাকতে পারতো। এতে সংক্রামণ কিছুটা হলেও কম হইতো।

হাজিগঞ্জ বাজারের আশেপাশের এলাকার কেউ আক্রান্ত হওয়ার খবর এখনো শুনা যায়নি। তবুও আজ থেকে কলিম ড্রাইভার, আজমল, নন্দ এবং মন্তু আলাদা থাকবে....

(চলবে)


ছবি: সংগ্রহীত

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:২৯
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×