ইদানীং পেপার পত্রিকা বিশেষ করে ভারতীয় আনন্দবাজার খুল্লেই দেখি সাংবাদিকরা সিনেমা জগতের বিশেষ করে বলিউডের সব উর্বশী, রম্ভা, মেনকাদের (অপ্সরা মানে শায়মাও আছে তার মাঝে ) একটাই প্রশ্ন করে! আর সেই প্রশ্নটা হলো "অমুকজী,তমুকজী আপনাদের কাচের মত, কোরিয়ানদের মত ত্বকের এত যে জেল্লা তার রাজ কেয়া হ্যায় "(কি কারণ)?
উর্বশী মেনকারা হাসি মুখে উত্তর দেয় অন্য কিছুই না, আমার এই উজ্জ্বল ত্বকের পেছনে শুধু একটাই গোপন রহস্য আছে আর তা হলো পানি, আমি সারাদিনে প্রচুর পানি পানি করি", "তা কতটা পানি খাচ্ছেনের উত্তর।
"এই ধরেন ৫/৬ লিটার উল্লেখ্য ওনারা প্রশ্নের উত্তরে আরও জানান তারা পানি ছাড়া ভাত, মাছ,মাংস,ডাল কিছুই খায় না। মাঝে সাঝে দু একটা ফলের টুকরা বা এক টুকরো ব্রকোলি খায় আর শুধু পানি আর পানি
আমি তো অবাক হই, শুধু পানি খেয়ে খেয়ে তারা স্বর্গের পরীর মত সুন্দর, ত্বকে কাচের মত জ্বেল্লা তারা ফেশিয়াল করতে বিউটি পার্লারে যায় না। এমন কি তারা স্নো পাউডার তো দূর কি বাত, সামান্য ময়দা আর হলুদ বাটা যাকে বলে উপটান তাও মাখে না
যাই হোক এইসব পড়ে টরে আমিও ভাবলাম এত সহজে যখন এমন জ্বেল্লাদার ত্বক পাওয়া যায় তাহলে আমিও সেই চেষ্টা করি না ক্যানো! ক্যানো এমন ম্যাড়মেড়ে ত্বক নিয়ে বেচে থাকা!
সাথে সাথে দেশী মামের আধা লিটারের বোতল ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিদেশি মাইক্রন এর বড় একটা বোতল আনলাম। সারাদিন পানি খাই আর আয়না দেখি। আয়নাকে জিজ্ঞেস করি "আয়না বলো বলো, কিছু কি উপকার হইলো আমার ত্বকের ! আয়না নিশ্চুপ
রাগের চোটে ইয়াং গৃহকর্মীকে ডাকি, সে বেশ আধুনিক, সে আমাকে খালাম্মা বা আপা ডাকে না, আন্টি ডাকে। তার কাছে জানতে চাই "শিউলী দেখতো আমার মুখটা কি একটু চক চক করতেছে"?
সে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে বলে, "না আন্টি তেমন তো দেখি না, দাড়ান আপনার পানির বোতলটা ভরে আনি, আপনি আরেকটু পানি খান"।
মন খারাপ আমি পানি খাই আর আয়না দেখি।
আজ আবার যথারীতি আনন্দবাজার পত্রিকার জীবন ধারা পেইজটা খুলে বসি। সেখানে লেখা "পুজোর আগে কাচের মত স্বচ্ছ ত্বক চান কিয়ারা আডবানীর মত? তাহলে আর দেরি নয় কিনে ফেলুন এই পাচটি বিদেশি সিরাম ( আকাশ ছোয়া দামের সাথে সাথে বাপের জন্মে তার নামও শুনি নি আমি )। এই সিরাম দিনে পাচ বার ব্যবহার করুন আর তাতেই আপনার ত্বক হয়ে উঠবে কিয়ারা আডবানীর মত চকচকে, কোরিয়ানদের মত জ্বেল্লাদার ঝকঝকে "।
একি কথা! তাহলে পানি! পানির কি হলো! এত দিন যে তারা বল্লো তাদের রূপের গোপন রহস্য পানি হাতের কাছে থাকা পানির বোতলটা এক ঝটকায় দূরে ছুড়ে ফেললাম। শিউলি দৌড়ে আসলো "কি হলো আন্টি হাত লেগে বোতল নীচে পরে গেছে দেখছি, পানিও তো সব পরে গেছে? দাড়ান আমি এক্ষুনি ভরে আনছি "
আমি সজোরে বলে উঠলাম না আর পানি আনার দরকার নাই
এত রাগ লাগছিল যে সুকুমার রায়ের "ছুটির হিসাব" ছড়ার বাবুটার মত মনে হলো,
"মুখ ধোবোনা,
ভাত খাবো না,
ঘুম যাবো না আজকে রাতে"
ছবি নেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:২১