যখন ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন প্রচুর পড়াশোনা করতাম [কেবল নিশীথে কাব্যরচনা ব্যতীত কিছুই লিখিতাম না]। প্রতি মধ্যরাতে একই রুটিন...
পড়তে বসা- তারপর কোকের বোতলে রাখা মুড়ি ও ট্যাংয়ের কৌ্টায় "বিকল্প" চানাচুর খতম করে, সিগারেট পান তারপর বিভিন্ন ভাবনা ভাবতে ভাবতে কবিত্বের জগতে প্রবেশ, ডায়েরী লিখা-স্মৃতিচারন, প্রেম ভাবনা, অতঃপর ঘুম ঘুম ভাব এবং পরবর্তী দিবসে ঠিকমত পড়াশোনা করার শপথ করে ঘুমানো। ঘুমাতে ঘুমাতে রাত ৩টা, তখন অবশ্য প্রচুর গান শোনা হত, নইলে ঘুমই আসতো না।
মশার অত্যাচারে বাসায় থাকা নিরাপদ ছিলনা। দরজা, জানলা, ফ্যান বন্ধ করে কেবল, মশা হত্যা করার জন্যে- ২-৩টা কয়েল এবং পরে এরোসল স্প্রে করতাম...যদিও তাতে খুব একটা লাভ হতনা। একদিকে প্রচন্ড গরমে কেবল ঘামতাম আর মশারা শুধু অজ্ঞান হতো, কিছুক্ষন পর
তারা আবার জ্ঞান ফিরে পেত আর আমাকে প্রভু ভেবে যেখানে সেখানে সেজদা করতো।
একদিন লক্ষ্য করলাম কিছু নিশাচর পিপঁড়ে মশার শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন, হাত, পা, পাখা ইত্যাদি অতি যত্নকরে আলাদা করে নিজেদের ঘরে নিয়ে যাচ্ছে, ইচ্ছে করলে তারা পুরো মশাটাই বাসায় নিয়ে তারপর সাইজ করতে পারে, তা না করে আগেই টুকরো টুকরো করছে।
তখন মধ্যরাতের রুটিনে নতুন অধ্যায়ের সুচনা হলঃ সারা রুমে পড়ে থাকা অজ্ঞান মশাদের একএ করে টেবিলে রাখতাম আর দেখতাম পিপঁড়েগুলো কিভাবে মশা সাইজ করে। এভাবে গেল কয়েকরাত। তারপর একদিন পিপঁড়ে-তেলাপোকা মারার চক যোগাড় করলাম, একত্রিত মশা নেবার জন্য প্রচুর পিপঁড়া আসতো, তাদের পথে মাঝে মাঝে চক দিয়ে দাগ টেনে দিতাম তখন তারা ভিন্ন পথ বেছে নিত। এই মশার আড়তের চারপাশে বৃত্তাকার দাগ টেনে দিতাম, ব্যাস পিপঁড়ে আর যায় কই,...কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করে, পথ খুজতো...কিন্তু কোন পথ না পেয়ে বিষাক্ত চকের গন্ধে প্রথমে অজ্ঞান, তারপর মৃত্যুবরন। কিছু পিপড়েঁ তখনো বেচেঁ থাকতো...তাদের জন্যে বৃত্তাকার কিছু অংশে মুছে দিতাম...আবার সেই পথে নতুন পিপড়াঁ আসতো...আবার বিষাক্ত চকের বৃত্ত...আবার কিছু পিপড়াঁর মৃত্যুবরন আবার কিছু পিপড়াঁকে মুক্তি দিতাম। তখন কিন্তু মনে হয়নি আমি খুব ক্ষমতাবান, যারা মুক্তি দেবার আনন্দ পেতে চায়, তারা কি পায় জানিনা, তবে যারা মুক্তি পায় তারা পায় আনন্দ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০০৯ রাত ১০:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




