তুমি রোজ এত রাত করে ফেরো কেন? অফিস তো সেই সন্ধ্যা সাড়ে চারটায় শেষ হয়।
ইদানীং লোপার কথায় নীল বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করে না।
ঠাশ করে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।
এটা প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে।
খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে কোন কথা হয় না দু সপ্তাহ ধরে।
দুই বছর হল তাদের বিয়ে হয়েছে।
লোপার বাবার বাড়ির লোকজন অতিরিক্ত সংরক্ষণশীল।তারা মেয়ের ব্যাপারে খোঁজ নেয় না।তাই লোপার দুর্বলতাটা নীল কাজে লাগিয়েছে।দুর্বলতা হলো ভালোবাসার অন্ধ বিশ্বাস !
লোপা আর নীল কলেজ থেকে একসাথে পড়ে ।একই ভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশান করেছে।দীর্ঘ একটা সময়ে লোপা নীলকে এতটাই ভালোবাসতো যে নীলের বড় বড় অপরাধ গুলো বিনাবাক্যে ক্ষমা করে দিতো চুপচাপ।
বন্ধুসমাজে মহত্ প্রেমিকা বলে পরিচিতি পেয়েও গিয়েছিলো ।
নীলের আগে লোপাই চাকরী অফার পায় ।কিন্তু নীলের বাঁধার মুখে করতে পারে না।
এ সময়টাতে দুজনের মাঝে দুরত্ব বেড়ে যায়।
সে সময় নীল অন্য একটা মেয়ের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলো ।
কিন্তু
হঠ্যাত্ করেই পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়ে যায় ।
লোপা স্বপ্ন সাজিয়ে ফেলে । কিন্তু নীল বদলে যায়।সময় দিতে চায় না নিজের স্ত্রীকে। আড্ডা দেয় বাইরে।বন্ধুদের সাথে ট্যুরে যায় ।
লোপা কিচ্ছু বলতো না।
কিন্তু দু সপ্তাহ আগে ছিল ভ্যালেন্টাইন ডে । লোপা সেজে বসে ছিলো যে অফিস থেকে নীল আসলে বেরুবে।নীলের সম্মতিতে প্লানও করাই ছিলো ।
কিন্তু অফিসের কাজের চাপের কথা বলে নীল এড়িয়ে যায় । বের হয় বান্ধবীর সাথে। মেলায় গিয়ে দেখা হয় নীলের কলিগের সাথে ।
কলিগই বলে ওঠেঃ
ওমা একা যে ! ফুল কিনতে গেছে নাকি । আজ তো তিনটাতে ছুটি নিয়েছে ।
লোপার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যেন ।
খোঁজ নিয়ে জানতে পারে পরকীয়ার কথা।
সেই মেয়েটা সব জেনেও নীলের সাথে সম্পর্ক রেখেছে ।
লোপা খোঁজ নিয়ে মেয়েটার আইডি পায় । কিন্তু লোপাকে ব্লক দেয়া । অন্য একটা আইডি দিয়ে ঢুকে অবাক ।
লোপার পাশে হাসোজ্জ্বল নীল চিনতে সময় লাগে না ।
জড়িয়ে ছবি তোলা । একটা না অনেক । ডিনার থেকে শুরু করে ট্যুর ।
লোপা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একবার নীলকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করে ।
নীলকে বলতেই নীল বলেঃ
ওর সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক আছে । থাকলে থাকো । না থাকলে চলে যাও ।
লোপা ডাক্তারী রিপোর্ট লুকিয়ে ফেলে।লুকিয়ে রেখে আবার জব এপ্লাই করে ।
জবের সাথে একটা ফ্লাটও পেয়ে যায়।
একটা লাগেজ নিয়ে বের হয়ে আসে । একটা খাম থাকে টেবিলে ।
লোপা নতুন করে শুরু করতে চায় । তার পেটে নীলের সন্তান ।
প্রথমে ভেবেছিলো নষ্ট করবে ।
কিন্তু কি দোষ সেই অনাগত সন্তানের ?
লোপা আস্তে আস্তে জীবনটা গুছিয়ে ফেলে । ইত্যিমধ্যে বাবা মা ও এসে তার সাথে থাকে । ছেলের ভরণ পোষণ করতে চায় না ।
সাজানো একটা সংসার ।
ছেলে হয়েছে লোপার ।
আর নীলকে ঐ মেয়েকে বিয়ে করেছে ।
কিন্তু সুখ নেই ।
ঐ মেয়েটিও নীল অনুপস্হিতির সুযোগে মেশে অন্যের সাথে ।
সময়ের মূল্য তার কাছে অনেক বেশি ।নীল না থাকলেও তাই স্বামীর অভাব পূরণ করতে অন্য কারে বুকে তার মাথা রেখে ভালোবাসার মিষ্টি কথা চলতেই থাকে ।
ধোঁকাবাজরা বড় জোর কারো বিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারে কিন্তু এমন কাউকে বিশ্বাস করে যে তার চেয়ে বড় ধোঁকাবাজ।
কিন্তু
পৃথিবীতে এত অপরাধের শাস্তি আছে অথচ কারো বিশ্বাস নিয়ে খেলে তাকে মানসিকভাবে ধ্বংস করার শাস্তি নেই । এখন টাকায় মেলে বিচারের রায় ।
কিন্তু
আল্লাহর বিচার নিরপেক্ষ।
লিখাঃ কাব্যপ্রেমী রিফাত ।
বিঃদ্রঃ পরকীয়া ব্যাপারটা প্রচন্ড প্রকট।স্বামী ও স্ত্রীর উভয়ের উচিত সম্পর্কে কিছু সারপ্রাইজ রাখা। এই কর্পোরেট যুগে মানুষ তার কাছেই ছোটে যে তাকে বেশি উত্সর্গ করে !