somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাবেক সিইসি নুরুল হুদার বিরুদ্ধে মবের অভিঘাত কেমন হয়, এটাই প্রশ্ন!

২৩ শে জুন, ২০২৫ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যেকোনো মবে অতি-উৎসাহী থাকে সর্বোচ্চ ৮/১০ জন, অংশ হয়ত নেয় জনাপঞ্চাশেক। কিন্তু এর বদনাম হয় সংগঠনের। প্রভাব পড়ে সারাদেশে। আর মবে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বাইরে থাকা হাজার হাজার মানুষ। তারা হয়ত সাময়িক ক্ষমতাহীন, কিন্তু প্রবল আক্রোশে অপেক্ষা করতে থাকে সময়ের।

চিরদিন কারো সময় সমান যায় না। বছর দিন আগে যে বিএনপি-জামায়াত ছিল ক্ষমতাহীন, তারা এখন ক্ষমতার শীর্ষে। এর প্রকাশ তারা সারাদেশে রেখে চলেছে। তারা প্রত্যেকেই একেকটা বেসরকারি বাহিনী। ফলে সারাদেশে মব ছড়িয়ে পড়েছে।

ঢাকায় কিংস পার্টি এনসিপির মব দৃশ্যমান এবং স্বীকৃত। কিন্তু ঢাকার বাইরে তারা মূলত সংখ্যালঘু। ঢাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা মবে এনসিপির সহায়ক শক্তি হলেও ঢাকার বাইরে সারাদেশে তারাই কেন্দ্রীয় চরিত্রে।

মবকে একপ্রকার জাতীয় উপাদান বানিয়ে দিয়ে এনসিপি এই মুহূর্তে মব থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। এতেই সামনে চলে আসছে মবে বিএনপির বিভিন্ন সংগঠনের আগ্রহ। এভাবে চলতে থাকলে এই বদনাম একা বিএনপিকেই বয়ে বেড়াতে হবে। ক্ষমতা পাওয়ার আগেই তারা ক্ষমতাসীন রূপে নিজেদের জাহির করতে তাদের অনেকের আগ্রহ এখন মবে। ফলে এনসিপির মব ক্রমে বিস্মৃত হতে চলেছে, এর দায় গিয়ে পড়তে যাচ্ছে বিএনপির ওপরই।

জামায়াত-শিবির এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত। তাদের কেউ কেউ কোথাও থাকলেও তার নাম সামনে আসে না। তারা কৌশলে অন্যকে সামনে ঠেলে দেয়। ফলে মবের বদনাম যতটা এনসিপি ও বিএনপির, বদনাম অর্ধেকও নাই জামায়াতের। তারা ‘খেলে কম, খেলায় বেশি’।

গতকাল সাবেক সিইসি কেএম নুরুল হুদার ওপর যে মব চালানো হলো, এটা এনসিপি করেনি, জামায়াত করেনি; করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল। যদিও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ওখানে জড়িত নয়, তবু এই দলের নেতাকর্মীরা অনলাইনে এর সমর্থন দিয়ে এই মবকে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে পরিণত করে চলেছে। এগুলো অভব্য চিন্তা, অশিষ্ট আচরণ এবং অপরিপক্ব রাজনীতির নমুনা।

নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক সংস্থা হলেও এই কমিশনকে স্বাধীন ভাবার পেছনে বিবিধ সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারা ক্ষমতার অধিকারী হলেও সরকারের বাইরে যেতে পারে না। বর্তমান নাসিরউদ্দিনের কমিশন কি ইউনূস সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে টু-শব্দটি করতে পারছে? পারছে না। তারা কি পারবে সরকারকে অগ্রাহ্য করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে? পারবে না। অথচ নির্বাচন কমিশনের কাজে সহায়তার সাংবিধানিক দায়িত্ব সরকারের।

কেএম নুরুল হুদার কমিশন স্বাভাবিকভাবে তৎকালীন সরকারের অপ্রত্যক্ষ নির্দেশনার কাজ করেছে। বিএনপির সময়েও একই ঘটনাও ঘটেছিল। আগামীতেও এভাবে চলবে হয়ত। তার মানে কি সময়ের-শক্তিমানেরা এভাবে মব চালাবে ক্ষমতার বাইরে থাকা মানুষদের ওপর?

আজ নুরুল হুদা আক্রান্ত হয়েছেন, কাল নাসিরউদ্দিন কি এর বাইরে থাকার চিন্তা করতে পারবেন? পারবেন না। একটা ভয় কাজ করবেই। নাসির-কমিশনের কাজে কি সবাই সন্তুষ্ট হয়ে যাবে? এটা সম্ভব না। কেউ সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। পক্ষবিশেষের অসন্তোষ থেকেই যাবে।

নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক পদ ও প্রতিষ্ঠান। এই পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা আগে এভাবে ছিল না। এখন শুরু হয়ে গেছে। দুপুরে থানায় মামলা আর সন্ধ্যায় মব আক্রমণ দিয়ে যে নজির স্থাপিত হলো দেশে, এর ভবিষ্যৎ ভয়াবহ হতে পারে।

নুরুল হুদাকে দিয়ে সাংবিধানিক পদাধিকারীদের ওপর হামলার যে নজির স্থাপন হলো, ভবিষ্যতে অন্য সাংবিধানিক পদাধিকারীদের জন্যে উদ্বেগের।

যেভাবেই থাকুক বিচার ব্যবস্থা। আদালতে কেউ তার ভাষায় অবিচারের শিকার হলে তার লোকেরা কি বিচারক ও বিচারপতিদের বাসায় আক্রমণ করবে? বাসা ঘেরাও করে তার ওপর হামলে পড়বে? এসব কি হয়? নিয়মিতভাবে হয়নি; তবে জেনে রাখুন কেএন নুরুল হুদাকে দিয়ে আপনারা শুরু করে দিলেন।

গত দশ মাসে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মবের শিকার হয়েছেন। মবে অনেকের জীবনও গেছে। ব্যক্তিবিশেষ ও দলের প্রতি প্রবল আক্রোশে হয়ত অনেকেই হয় এর প্রতিবাদ করতে পারেননি, কিন্তু যখন সাংবিধানিক সাবেক পদাধিকারীরা আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন, তখন এর ভবিষ্যৎ প্রভাব কিন্তু আছেই। হয়ত অজ্ঞতায় জানেন না অনেক কিছু, তবু জেনে রাখুন সাংবিধানিক পদাধিকারীরা এমন কিছু রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করে থাকেন, যা অবসরের পরেও রাষ্ট্র দিয়ে থাকে। কেএম নুরুল হুদারা সেই পদের লোক ছিলেন।

সাবেক সিইসির বিরুদ্ধে মব-লাঞ্ছনার পর সরকারের পক্ষ থেকে এর আইনি প্রতিবিধানের কথা বলা হয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে এটা তাদের আরেক ‘কথার কথা’। তবু দেখুন, মবকে প্রশ্রয় দেওয়ার সরকারকেই এই মবের বিরুদ্ধে বলতে হয়েছে। কেন বলেছে জানেন? বলতে বাধ্য হয়েছে। এই বাধ্যবাধকতা কীসের, এটা বুঝতে পারার কথা না মব-সমর্থকদের।

আপনারা যদি ২২ উপদেষ্টা আর এক প্রধান উপদেষ্টার ২৩ জনকেই সরকার ভাবেন, তবে হয়ত আংশিক ভাবছেন। এধরনের অনির্বাচিতের ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র একাধিক থাকে। এরা চুপ থাকে। এখনো চুপ আছে। এই চুপ থাকা মানে ‘গণঘুমে’ থাকা নয়। আপনি হয়ত বলবেন ‘গণঘুমে’, কিন্তু আমার বিবেচনা সতত ইতিবাচক বলে, আমি ভাবছি অন্য ভাবে।

এভাবে কি তবে চলতে থাকবে? প্রশ্নটা করাই যায়। উত্তর মিলবে কবে জানি না, তবে নিশ্চিত করে বলতেও পারি—এভাবে আসলে চলবে না!

ছোট্ট করে বলি—কেএম নুরুল হুদা আক্রান্ত হওয়ার পরের অভিঘাত সামলানো কঠিন হয়ে যেতে পারে!

#কবিরয়াহমদ
২৩ জুন ২০২৫

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:০০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×