somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পীর, মাযার ইসলামে যায়েজ নয় বরং হারাম।

১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[আজমল হক (আজম) ভাইয়ের সৌজনে:]

সকল প্রশংসা এক আল্লাহর যিনি আমাকে লেখার তৌফিক দান করেছেন । অসংখ্য দুরুদ ও সালাম নবী মোহাম্মদ সা: এর উপর ।

আল্লাহ্‌ বলেনঃ “হে ঈমানদ্বারগণ ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর । আর তাঁর নেকট্য অনুসন্ধান কর । তাঁর পথে জিহাদ কর । তাহলে তোমরা সফলতা লাভ করবে” (সূরা ময়েদাহ্‌- ৩৫)

তাওহীদ সম্মত উসীলাঃ
১) আল্লাহ্‌ তা‘আলার সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলী দ্বারা উসীলা গ্রহণঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন: আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ । সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক । আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায় । তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে (সূরা আল আরাফ, আয়াত ১৮০)

রইসুল মুফাসসিরীন আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) ওয়াসীলা শব্দের অর্থ করেছেন নৈকট্য অর্জন করা এবং এমন আমল দ্বারা নৈকট্য অর্জন করো যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন (তাফসীরে ইবনু কাসীর ২য় খন্ড ৭৩ পৃঃ)

সহিহ হাদিসে ওয়াসিলার কথা বলা হয়েছে যে, ওয়াসীলাহ হল জান্নাতের সর্বাধিক নিকটবর্তী এবং সম্মানিত স্থান যার একমাত্র অধিকারী হবেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (মুসলিম ১ম খন্ড ১৬৬ পৃঃ; ইবনু কাসীর ২য় খন্ড ৭৪ পৃঃ)

জাবির বিন আবদিল্লাহ (রাঃ) বর্ণিত নবী (সাঃ) ইস্তিখারার দু’য়ায় বলেছেনঃ হে আল্লাহ ! তোমার জ্ঞানের ওয়াসীলায় আমি তোমার নিকট কল্যান চাই এবং তোমার কুদরাত বা ক্ষমতার ওয়াসীলায় তোমার নিকট ক্ষমতা চাই এবং তোমার নিকট তোমার সুমহান অনুগ্রহ চাই (বোখারী ১ম খন্ড ১৫৫ পৃঃ)

হে আমাদের পালনকর্তা ! আমরা নিশ্চিতরুপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে ঈমানের প্রতি আহবান করতে যে, তোমরাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আন; তাই আমরা ঈমান এনেছি (ইমরান আয়াত ১৯৩)

আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, যখন কোন বিষয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দুর্ভাবনায় ফেলত, তখন তিনি বলতেন,
“হে চিরঞ্জিব, চিরস্থায়ী আপনার করুণার উসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করছি” (তিরমিযী, হাকেম, হাদীছ হাসান)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুনতে পেলেন জনৈক ব্যক্তি দুআ পাঠ করছে: “হে আল্লাহ্‌ আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, কেননা সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য নিবেদিত, তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই । তুমি একক তোমার কোন শরীক নেই । তুমি সার্বিক উপকার সাধনকারী । হে আকাশমন্ডলি ও পৃথিবীর স্রষ্টা । হে সম্মান ও মহত্মের অধিকারী । হে চিরঞ্জিব চিরস্থায়ী । আমি আপনার কাছে জান্নাত চাইছি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”

তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের বললেন, তোমরা জান সে কি দুআ করেছে ? তাঁরা বললেন, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন । তিনি বললেন, “শপথ সেই সত্বার যার হাতে আমার প্রাণ নিঃসন্দেহে সে আল্লাহ্‌র সুমহান নামের উসীলায় দুআ করেছে । যে নামে তাঁকে ডাকা হলে তিনি সাড়া দেন, তাঁর কাছে কিছু চাওয়া হলে তিনি তা প্রদান করেন” (আবু দাঊদ, নাসাঈ, আহমাদ, সনদ ছহীহ্‌)

২- ঈমান ও সৎ আমলের উসীলা করাঃ
বুখারী ও মুসলিমে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, পূর্ব যামানায় তিন ব্যক্তি একদা একটি গর্তের মধ্যে আটকা পড়ে । প্রকান্ড একটি পাথর গর্তের মুখে গড়িয়ে পড়ে, ফলে তারা বের হতে পারছিল না । তখন তারা নিজেদের নেক আমলগুলোর উসীলা করে উক্ত বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্যে আল্লাহর কাছে দুআ করেছিল ।

(সংক্ষেপে) প্রথম ব্যক্তি উসীলা করেছিল পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারকে, তাদের প্রতি তার দয়া ও অত্যধিক অনুকম্পা প্রদর্শনকে । দ্বিতীয় ব্যক্তি ব্যভিচারের কলুষতা থেকে পবিত্রতাকে উসীলা করেছিল । আর তৃতীয় ব্যক্তি শ্রমিকের পারিশ্রমিক সংরক্ষণ করাকে উসীলা হিসেবে উল্লেখ করেছিল । ফলে আল্লাহ্‌ তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে দেন । পাথরটি অলৌকিকভাবে গর্তের মুখ থেকে সরে যায় । তারাও নিরাপদে বের হয়ে আসে (বিস্তারিত দেখুন বুখারী ১ম খন্ড ৩০৩ পৃঃ; মুসলিম ২য় খন্ড ৩৫৩ পৃঃ; সহিহ আল বুখারী ২য় খন্ড আঃ প্রঃ হাদিস নং ২১১১)

৩- নেক লোকের দুআর উসীলা করাঃ এমন একজন নেক ব্যক্তির কাছে দুআর আবেদন করা যিনি জীবিত আছেন । মৃত কোন নবী বা ওলীর কাছে দুআর আবেদন রাখা যাবে না ।

ওমর রা. দুআর সময় আব্বাস রা. কে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, তার ব্যক্তিত্বকে নয় । আর আব্বাস রা. তখন জীবিত ছিলেন । যে কোন জীবিত ব্যক্তির দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করা যায় । ওমর রা. তা-ই করেছেন । তিনি বলেছেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত থাকাকালে আমরা তার অসীলা দিয়ে দুআ করতাম । এখন তিনি নেই তাই আমরা তার চাচা আব্বাসকে দুআ করার ক্ষেত্রে অসীলা হিসাবে নিলাম । ওমর রা. এর এ বক্তব্যে স্পষ্ট হল যে, তিনি কোন মৃত ব্যক্তিকে দুআর সময় অসীলা হিসাবে গ্রহণ বৈধ মনে করতেন না । তিনি নবী হলেও না (সহীহ বুখারী)

সূরা আরাফ এর ৩ নং আয়াতে বলা হইছে - তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে অন্য আউলিয়াদের অনুসরণ করো না ।

সূরা তালাক-৩ যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট ।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি পীর ধরতে বলেছেন ? বরং তাঁর এবং তাঁর খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত আকঁড়ে ধরতে বলেছেন (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৬৫)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে বলেছিলেনঃ
আমি তোমাদের জন্যে দুটি বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি, তোমরা যতক্ষণ তা আঁকড়ে ধরে থাকবে (অর্থাৎ তার অনুসরণ করবে) কখনই পথভ্রষ্ট হবে না । একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব অপরটি হচ্ছে তাঁর নবীর সুন্নাত তথা জীবনাদর্শ ( মুয়াত্বা মালেক হা/১৫৯৫; মিশকাত ১ম খন্ড হাঃ ১৭৭)

সায়াদ ও আবু বাকরাহ (রাঃ) বর্ণিতঃ উভয়ে বলেনঃ আমার দু’কান শুনেছে এবং আমার অন্তর সংরক্ষণ করেছে, মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি অপরকে স্বীয় পিতা বলে দাবি করে অথচ সে ভালো-ভাবেই জানে যে সে তার পিতা নয় তার জন্য জান্নাত হারাম (মুসলিম ১ম খন্ড ৫৭ পৃঃ)

অলি আওলিয়ার সম্পর্কে কুরআনের কিছু আয়াতঃ-
টাইটেল, সার্টিফিকেট-সনদ, সাইনবোর্ড, দরবার শরীফ, বংশের শাজারা নামা, বাহ্যিক অলৌকিকতা, মুরীদ ইত্যাদি না থাকলেও আল্লাহর বান্দা আল্লাহর ওলী হতে পারে । আওলাদে রাসূল বা সৈয়দ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করা ওলী হওয়ার জন্যে শর্ত নয় । বিশাল পাগড়ী বা আলখেল্লাধারী হওয়া ওলীর জন্য শর্ত নেই । আবশ্যক নয় যে মানুষের মাঝে ওলী হিসেবে তাকে পরিচিত হতে হবে । এও আবশ্যক নয় যে তার খানকা বা দরবার শরীফ না থাকলে তিনি ওলী হতে পারবেন না । কেননা ওলী হওয়ার ভিত্তি হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহ্‌ ভীতি ।

আল্লাহ্‌ বলেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত যে বেশী আল্লাহকে ভয় করে” (সূরা হুজুরাতঃ ১৩)

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির মাপকাঠি ব্যতীত অনারব মানুষের উপর কোন আরবের কোন মর্যাদা নেই (বায়হাকি, হাদিসটি সহিহ দ্রঃ সিলসিলা সহিহা হা/ ২৭০০)

তিনি আরো বলেন, “যার আমল তাকে পশ্চাতে ফেলেছে, তার বংশ মর্যাদা তাকে অগ্রগামী করতে পারবে না” (সহীহ্‌ মুসলিম)
কথায় বলে, “জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল”

সাহাবায়ে কেরাম সকলেই আল্লাহর ওলীঃ
আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “যে সব মুহাজির ও আনসার ঈমান আনয়নে অগ্রবর্তী ও প্রথম, আর যেসব লোক একান্ত নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুগামী, আল্লাহ্‌ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন” (সূরা তাওবাঃ ১০০)

তিনি আরো বলেন, “আল্লাহ্‌ সন্তুষ্ট ঐ সকল মুমিনদের প্রতি যারা বৃক্ষতলে আপনার নিকট বায়আত গ্রহণ করেছেন” (সূরা ফাতাহ্‌ : ১৮)

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যারা বৃক্ষতলে আমার নিকট বায়আত নিয়েছে তাদের কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না” ( হাদিস সহিহ দ্রঃ সহিহ আবু দাউদ হা/৪৬৫৩, সহিহ তিরমিযী হা ৩৮৬০)

আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ্‌ তাআলা সকল বান্দার অন্তরের প্রতি দৃষ্টিপাত করে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্তরকে সর্বশ্রেষ্ঠ পেয়েছেন তাই তাঁকে নিজের জন্য চয়ন করেছেন এবং তাঁকে তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব প্রদান করে প্রেরণ করেছেন । মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পর অপর বান্দাদের কলবের প্রতি দৃষ্টিপাত করে তাঁর সাহাবীদের কলব সর্বাধিক উত্তম পেয়েছেন, তাই তাঁদেরকে তাঁর (মুহাম্মাদ সাঃ) সহযোগী হিসেবে নির্ধারণ করেছেন । তাঁর দ্বীন রক্ষার জন্য তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছেন” (মুসনাদে আহমাদ হা/৩৬০০, মওকূফ সুত্রে হাসান, দ্রঃ শরহে আকীদা তাহাবিয়া ৫৩০)

এরশাদ করেনঃ “তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং মুমিনরা- যারা সালাত আদায় করে, যাকাত আদায় করে এবং যারা বিনয়ী । আর যে ব্যক্তি বন্ধুত্ব রাখবে আল্লাহর সাথে, তাঁর রাসূলের সাথে এবং মুমিনদের সাথে, তারা আল্লাহর দলভুক্ত হল এবং নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী” (সূরা মায়েদাঃ ৫৫, ৫৬)

“মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণ পরস্পর পরস্পরের ওলী- বন্ধু” (সূরা তাওবাঃ ৭১)

সূরা হামিম আস সিজদা এর ৩১ নং আয়াতে ফেরেশতারা বলে "নাহনু আউলিয়া উকুম ফিল হায়াতিদ দুনিয়া" অর্থ্যাৎ আমরাই (ফেরেশতারাই) তোমাদের আউলিয়া দুনিয়াতে এবং আখিরাতে ।

সূরা নিসা-৭৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, "তোমাদের কি হলো তোমরা আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করছ না দুর্বল সেই পুরুষ নারী ও শিশুদের পক্ষে যারা বলে হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর, জালিম জাতি থেকে আমাদের রক্ষা কর । আমাদের নিকট তুমি তোমার অলি পাঠাও

“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে, নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে এবং যারা আশ্রয় দিয়েছে ও সাহায্য করেছে তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু” (সূরা আনফালঃ ৭২)

সর্বশেষ আল্লাহর আওলিয়া বা অলি হতে হলে যা লাগে তা হল
সূরা ইউনুস-৬২-৬৩-৬৪: মনে রেখো যারা আল্লাহর আউলিয়া, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত ও হবে না । (আউলিয়া হলো তারাই) যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করে । তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে এবং পরকালীন জীবনে ।

অর্থ্যাৎ আউলিয়া হতে গেলে শুধুমাত্র ঈমান আনতে হবে এবং আল্লাহকে ভয় করতে হবে ।

সূরা বাকারা-২৫৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, যারা ঈমান এনেছে তাদের অলি (অভিভাবক) আল্লাহ । তিনি তাদেরকে বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে । আর যারা কুফুরী করে তাদের আউলিয়া (অভিভাবক) তাগুত (আল্লাহর বিদ্রোহী হোক সেটা আদেশের মাধ্যমে বা আইন কানুন এর মাধ্যমে); সে তাদের কে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায় ।

সূরা আরাফ এর ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানকে আউলিয়া বানিয়ে নিয়েছে ।

সূরা আনকাবুত এর ৪১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, "যারা আল্লাহর
পরিবর্তে অন্য কে আউলিয়ারূপে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সা"

নবীজীর অনুসরণ ছাড়া ওলী হওয়া যাবে নাঃ
যদি দাবী করে যে শরীয়ত হচ্ছে যাহেরী রাস্তা আর মারেফত বাতেনী রাস্তা, অথবা দাবী করে যে শরীয়তের জ্ঞান লাভ করে মারেফত হাসেল করা যাবে না অথবা বলে যে, মারেফতের রাস্তা শরীয়ত থেকে আলাদা তবে সেও আল্লাহর ওলী নয়;

শয়তানের ওলী মারেফতের রাস্তা খুবই গোপন ও সতন্ত্র তাই একজন পীর বা ওলী না ধরলে এবং তাদের কাছে মারেফতের জ্ঞান না পেলে আল্লাহকে চেনা যাবে না, তবে সেও কখনই আল্লাহর ওলী নয়; বরং সে শয়তানের ওলী ।

আল্লাহ আরো বলেন, “এটাই আমার সোজা পথ, তোমরা এটারই অনুসরণ কর । এপথ ছাড়া অন্য কোন পথের অনুসরণ কর না, অন্যথায় তোমাদেরকে তাঁর সঠিক রাস্তা থেকে বিচ্যুত করে দূরে সরিয়ে দিবে । আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে এই নির্দেশ দিলেন, যাতে তোমরা বেঁচে থাকতে পার” (সূরা আনআমঃ ১৫৩)

আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পথ খুবই পরিস্কার ও স্বচ্ছ এখানে কোন গোপনীয়তা নেই রাখ-ঢাক নেই । তিনি বলেনঃ স্বচ্ছ ও স্পষ্ট দলীল প্রমাণের উপর আমি তোমাদেরকে ছেড়ে যাচ্ছি । দিনের মত রাতও পরিস্কার । অর্থাৎ এখানে কোন সংশয়-সন্দেহ, অস্পষ্টতা নেই কিংবা গোপনীয়তা নেই । ধ্বংস প্রাপ্ত লোক ছাড়া তা থেকে কেউ বিচ্যুত হবে না । যারা বেঁচে থাকবে তারা অচিরেই অনেক বিভেদ দেখতে পাবে, তখন আবশ্যক হচ্ছে, তোমরা আমার এবং সুপথ প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত সমূহকে আঁকড়ে ধরবে” (এরবায বিন সারিয়া (রাঃ) থেকে হাদিসটি সহিহ, দ্রঃ সহিহ ইবনে মাজাহ হা/৪৩)

তিনি আরো বলেনঃ “জান্নাতের নিকটবর্তী করে, আর জাহান্নাম থেকে দূরে রাখে এমন কোন বিষয় বাকী নেই, যা তোমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়নি” (ত্বাবরানী, হাদিস সহিহ, দ্রঃ সিলসিলা সহিহ হা/১৮০৩)

আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন আমল করবে, যাতে আমার নির্দেশনা নেই, তবে তা প্রত্যাখ্যাত”
(আয়েশা (রাঃ) থেকে সহিহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আকজীয়া, অনুচ্ছেদঃ অন্যায় হুকুম এবং নব আবিস্কৃত বিষয়সমূহ প্রত্যাখ্যাত হওয়া প্রসঙ্গে, হাদিস/৩২৪৩)

অতএব শরীয়ত, তরীকত, মারেফত, হাকীকত যে নামই ব্যবহার করা হোক না কেন, যে পথেই আহবান করা হোক না কেন, তা যদি পবিত্র কুরআন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহীহ্‌ হাদীছ মোতাবেক না হয় তবে তা প্রত্যাখ্যাত ।

ওলীরা কি নিষ্পাপ ?
আল্লাহর ওলী হওয়ার জন্যে এমন কোন শর্ত নেই যে তিনি নিষ্পাপ হবেন, তার কোন ভুল হবে না, কোন ত্রুটি হবে না বা তার দ্বারা গুনাহর কাজ সংঘটিত হবে না ।

হতে পারে তার মাধ্যমে আশ্চর্য কোন ঘটনা ঘটে গেছে আর তিনি ধরে নিয়েছেন এটা কারামাতে আউলিয়া; অথচ জ্ঞানে ত্রুটি থাকার কারণে হয়তো শয়তান তাকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছে ।
অবশ্য এ সমস্ত কারণে তিনি আল্লাহর বেলায়াত বা ওলীর মর্যাদা থেকে বের হয়ে যাবেন না । কেননা ভুল-ত্রুটির গুনাহ আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন । ঐ সমস্ত ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ শিখিয়ে দিয়েছেনঃ

“হে আমাদের পালনকর্তা ! আমরা যদি ভুলে যাই অথবা ভুল করে ফেলি তবে আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না” (সূরা বাকারাঃ ২৮৬)

হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্তগুলো বাহ্যিকভাবে অপমান জনক হওয়ার কারণে ওমার (রাঃ) কিছুতেই তা গ্রহণ করতে পারছিলেন না । এজন্য তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে প্রকাশ্য প্রতিবাদও করেছেন । নবীজী তাঁর কথাকে গ্রাহ্য না করলে তিনি একই প্রতিবাদ আবু কবর (রাঃ) এর সামনেও পেশ করছেন । কিন্তু আবু বকরও তাঁর কথায় আমল দেননি । পরবর্তীতে ওমার যখন বুঝলেন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল । তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন এবং ঐ প্রতিবাদকে গুনাহের কাজ মনে করে তা থেকে তওবা করলেন এবং অনেকগুলো নেক কাজ করলেন যেন আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করে দেন (এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে বুখারীতে শর্ত অধ্যায়ে ও মুসলিমে জিহাদ অধ্যায়ে বর্নিত হয়েছে)

নবীজী ইন্তেকাল করলে ওমার (রাঃ) তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না । বরং তিনি উদ্দ্যত তরবারী হাতে বলেছিলেন, যে বলবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যু বরণ করেছে তাকে আমি দ্বিখন্ডিত করে দিব । নির্ভিক সৈনিক রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যোগ্য উত্তরসূরী আবু বকর (রাঃ) তাঁর হাতে ঝাঁকুনি দিয়ে বলেছিলেন, ওমার ! তুমি কি পাগল হয়ে গেছ ? আবু বকর (রাঃ) মেম্বারে আরোহণ করে বললেন, জেনে রাখ ! যারা মুহাম্মাদের ইবাদত করত, মুহাম্মাদ মৃত্যু বরণ করেছেন । আর যারা আল্লাহর ইবাদত কর, আল্লাহ্‌ চিরঞ্জিব চিরস্থায়ী তিনি কখনো মৃত্যু বরণ করবেন না । আর তিনি তেলাওয়াত করলেন আল্লাহর কুরআনঃ

“মুহাম্মাদ তো আল্লাহর রাসূল ছাড়া অন্য কিছু নন, তাঁর পূর্বে সমস্ত রাসূল গত হয়েছে । তিনি যদি মৃত্যু বরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে কি তোমরা কি দ্বীন পরিত্যাগ করবে ?” (সূরা আল ঈমরানঃ ১৪৪)

এই আয়াত শুনে ওমার (রাঃ) এর চেতনা ফিরে এল । তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন (ঘটনাটি বিস্তারিত দেখুন সহিহ ইবনে মাজাহ হা/১৬২৭; আর্ রাহীকুল মাখতুম_ সফীউর রহমান মুবারকপুরী প্রণীত রাসুল (সাঃ) এর অনুপম জীবনী গ্রন্থ (বাংলায় অনূদিত)

এই জন্যে যেহেতু আল্লাহর ওলীর ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেহেতু তার যাবতীয় কথাকে মেনে নেয়া বা নির্ভুল মনে করা জায়েয নেই । কারণ নির্ভুল মনে করলে তাকে নবীর আসনে বসিয়ে দেয়া হল ।

ইমাম শাফেঈ, জুনাইদ বাগদাদী, আবু ইয়াযীদ বোস্তামী (রহঃ) প্রমূখ মনিষীগণ বলেছেন, “যদি দেখ যে কোন লোক পানির উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, অথবা বাতাসে উড়ে যাচ্ছে, তাকে দেখে ধোকায় পড়বে না, যতক্ষণ বাহ্যিকভাবে তার মধ্যে শরীয়তের আদেশ-নিষেধের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পূর্ণ অনুসরণ না পাওয়া যাবে” (ওলী সংক্রান্ত এই আলোচনাগুলোর অধিকাংশই ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) প্রণীত “আল্ ফুরকান বায়না আউলিয়াইর্ রহমান ওয়া আউলিয়াইশ্ শায়তান” নামক গ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে)

তাহলে কিভাবে পীর সাহেব বলতে পারেনঃ “শরীয়তের কামেল পীর সাহেব যদি এমন কোন হুকুম দেন, যাহা প্রকাশ্যে শরীয়তের খেলাফ হয়, তবুও তুমি তাহা নিরাপত্তিতে আদায় করিবে । কেননা, তিনি রাস্তা সব তৈরী করিয়াছেন । তিনি তাহার উঁচু-নীচু অর্থাৎ ভাল-মন্দ সব চিনেন, কম বুঝের দরুণ জাহেরাভাবে যদিও তুমি উহা শরীয়তের খেলাফ দেখ কিন্তু মূলে খেলাফ নহে” ? (আশেক মাশুক বা এস্কে এলাহীঃ ৪১ পৃষ্ঠা)

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহর নাফরমানী করে কোন মানুষের আনুগত্য করা যাবে না, আনুগত্য শুধু শরীয়ত সম্মত ভাল কাজে করতে হবে” (বুখারী ও মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ; শায়খ আলবানী সিলসিলা সহীহা গ্রন্থে ১ম খন্ড ১৮০ পৃঃ হাদিস নং/১৮১)

পীর সাহেব কি গুনাহ মাফ করানোর মাধ্যম ?
পীর সাহেব লিখেছেনঃ “পীরের কাছে মুরীদ হওয়ার অর্থ আল্লাহ পাকের কাছে মানুষের বিক্রি হইয়া যাওয়া । পীর সহেব শুধু উছীলা মাত্র । বান্দা অসংখ্য গুণাহ করার ফলে আল্লাহ্‌ পাক তাহাকে কবুল করিতে চান না । পীর সাহেব আল্লাহ্‌ পাকের দরবারে অনুনয় বিনয় করিয়া ঐ বান্দার জন্য দুআ করিবেন, যাহাতে তিনি তাহাকে কবুল করিয়া নেন” (ভেদে মারেফতঃ ৩৪ পৃঃ)

সাহাবী জুন্দুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে । তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্ব যুগের একজন লোকের কথা উল্লেখ করলেন, লোকটি বলেছিল: আল্লাহর শপথ উমুক লোকটিকে আল্লাহ্‌ ক্ষমা করবেন না । তখন আল্লাহ্‌ তাআলা বললেন, “কে সেই যে আমার উপর শপথ করে বলছে, আমি উমুককে ক্ষমা করব না ? আমি উমুককে ক্ষমা করে দিলাম, আর তোমার যাবতীয় আমল ধ্বংস করে দিলাম” (সহীহ্‌ মুসলিম)

আল্লাহ্‌ই ক্ষমাকারীঃ আল্লাহ্‌ আরো বলেনঃ তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপরাশী ক্ষমা করেন, আর তোমরা যা কর তিনি তা জানেন” (সূরা শূরাঃ ২৫)

করুণাময় মহিয়ান আল্লাহ্‌ তাআলা আরো বলেনঃ “আর যারা আল্লাহর সাথে অন্যকে মাবূদ হিসেবে ডাকে না, যথার্থ কারণ ছাড়া আল্লাহ্‌ যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না । বস্তুতঃ যে এগুলো করবে সে শাস্তি ভোগ করবে । কিয়ামত দিবসে তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং তথায় হীন অবস্থায় স্থায়ীভাবে বসবাস করবে । তবে তারা নয়, যারা (খাঁটি) তওবা করে ঈমান আনবে ও সৎকর্ম করবে; বরং আল্লাহ (তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তাদের পাপসমূহকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন । আল্লাহ্‌ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (সূরা ফুরকানঃ ৬৮-৭০)

হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ্‌ আরো ঘোষণা করেছেনঃ “হে আদম সন্তান ! যখনই তুমি আমায় আহ্বান করবে এবং আমার নিকট আশা-আকাংখা পেশ করবে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব, তোমার পাপরাশী যত অধিক থাক না, এতে আমি কোন পরোয়া করি না ।
হে আদম সন্তান ! তোমার গুনাহ সমূহ যদি আকাশের উচ্চতায় পৌঁছে যায় । অতঃপর তুমি আমার কাছে মাফ চাও, আমি তোমাকে মাফ করে দিব । এতে আমি কোন কিছুর তোয়াক্কা করি না” (তিরমিযী, সহীহুল জামে হা/৪৩৩৮)

বান্দার তওবায় আল্লাহ্‌ খুশিঃ
উপরে বর্ণিত আয়াত ও হাদীছগুলো দ্বারা বুঝা যায় কোন মানুষ যদি ব্যভিচার, মদ্যপান, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবী, রাহাজানি ইত্যাদি মহাঅন্যায় করে, এমনকি শির্ক-কুফরীতে লিপ্ত হয়, নামায-রোযা পরিত্যাগ করার মত বিশাল অপরাধে জড়িত হয়, অতঃপর দুনিয়ার জীবনে মৃত্যুর পূর্বেই অনুতপ্ত হয় এবং খাঁটি মনে তওবা করে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে একমাত্র আল্লাহ্‌ ছাড়া কেউ তাকে ক্ষমা করতে পারবে না, কেউ গুনাহের সাগর থেকে উদ্ধার করতে পারবে না, তবে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন । পূর্বের সমস্ত পাপকে ধ্বংস করে দিবেন । তিনি কারো পরোয়া করেন না ।
কেননা নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেনঃ “পাপ থেকে তওবাকারী এমন ব্যক্তির ন্যায় যার কোনই পাপ নেই” (সহীহ্ ইবনে মাজাহ্ হা/৪২৫০, সহীহুল জামে হা/৩০০৮)

হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ “যে ব্যক্তি পৃথিবী পূর্ণ পাপের বোঝা নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হবে, এ অবস্থায় যে সে আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করেনি, তাহলে পৃথিবীপূর্ণ ক্ষমা নিয়ে আমি তার সামনে উপস্থিত হব” (সহিহ মুসলিম হা/৪৮৫২)

মৃত্যুর সময় পীর কি শয়তান থেকে বাঁচাবে ?
পীর সাহেব লিখেছেনঃ মৃত্যুর সময় যখন শয়তান ঈমান লুটিবার জন্য আসিবে, তখন পীর ছাড়া উপাই নাই.....। (ভেদে মা'রেফত ৩২ পৃঃ)

ইমাম ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, মানুষরূপী শয়তানের সাথে সদ্ভাব গড়ে তুললে, তাদের সাথে সদাচরণ দেখালে অনেক সময় তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচা যায় । কিন্তু ইবলিস শয়তান থেকে বাঁচার কোন কৌশল কাজে লাগে না । এই জন্যে যিনি তাকে সৃষ্টি করে তোমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন, তাঁর স্মরণাপন্ন হলে তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তিনি তাকে প্রতিহত করবেন এবং তোমাকে তার ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচিয়ে দিবেন তোমার বিরুদ্ধে তার ষড়যন্ত্রকে বানচাল করে দিবেন” (তাফিসীর ইবনে কাছীর ৭/১৮১ পৃঃ সূরা ফুস্‌সেলাত ৩৬ নং আয়াতের তাফসীর)

এই জন্যে আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে শয়তান থেকে বাঁচার পথ বাতলে দিয়েছেন ।

তিনি এরশাদ করেনঃ “শয়তানের কুমন্ত্রনা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে তবে তুমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ । যারা আল্লাহকে ভয় করে চলে, শয়তান যখন তাদেরকে কুমন্ত্রনা দিয়ে খারাপ কাজে নিমগ্ন করে, সাথে সাথে তারা আত্মসচেতন হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে । ফলে তৎক্ষণাৎ তাদের জ্ঞান চক্ষু খুলে যায়” (সূরা আরাফঃ ২০০-২০১)

শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে আল্লাহ্‌ তাঁর নবীজীকে আরো তালীম দিচ্ছেনঃ
“আর আপনি বলুন ! হে আমার পালনকর্তা ! আমি আপনার কাছে শয়তানের প্ররোচনা ও কুমন্ত্রনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আপনার কাছে আরো আশ্রয় কামনা করছি যে তারা (শয়তানরা) যেন আমার কাছে উপস্থিত হতে না পারে” (সূরা মু'মেনূনঃ ৯৭-৯৮)

আল্লাহ্‌ তাআলা এরশাদ করেনঃ “যারা ঈমানদার এবং যারা তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে তাদের উপর শয়তানের কোনই কর্তৃত্ব-ক্ষমতা নেই” (সূরা নাহালঃ ৯৯)

আল্লাহ্‌ আরো বলেনঃ “নিশ্চয় আমার (প্রকৃত) বান্দাদের উপর তোমার কোনই কর্তৃত্ব নেই” (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৬৫)

শাফাআতের শর্তঃ
আল্লাহ্‌ পাক বলেন, “দয়াময় আল্লাহ্‌ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারো সুপারিশ সেদিন (কিয়ামতের দিন) কোন উপকারে আসবে না” (সূরা ত্বাহাঃ ১০৯)

আল্লাহ্‌ বলেনঃ “আকাশে অনেক ফেরেশতা আছে । তাদের সুপারিশ কোন কাজে আসবে না, যতক্ষণ আল্লাহ্‌ যার জন্যে ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন, অনুমতি না দেন” (সূরা নাজমঃ ২৬)

পীর সাহেব লিখেছেন “সত্যই কেয়ামতের অবস্থা এইরূপ (ভয়ানক) হইবে এবং আল্লাহর হুকুমে সেই দিন নিঃসন্দেহে পীরগণ থেকে সাহায্য পাওয়ার আশা করা যায় (ভেদে মারেফতঃ ২৫-২৬)

আল্লাহ পাক বলেনঃ “আল্লাহ্‌ যার প্রতি সন্তুষ্ট সে ছাড়া কারো জন্য সুপারিশ করা হবে না” (সূরা আম্বিয়াঃ ২৮)

তিনি আরো বলেনঃ “যার জন্যে অনুমতি দেয়া হবে সে ছাড়া তাঁর নিকট কারো জন্যে সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না” (সূরা সাবাঃ ২৩)

যদি ধরে নেয়া যায় যে, পীরদের উপর আল্লাহ্‌ সন্তুষ্ট হয়ে তাদেরকে সুপারিশ করার অনুমতি দিবেন । (যদিও তা সুদূর পরাহত) কিন্তু পীর সাহেবরা কি করে জানলেন যে তাদের মুরীদদের উপরও আল্লাহ্‌ সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন ফলে তাদেরকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবেন ? যার কারণে তারা মুরীদদেরকে বলেনঃ- কামেল পীর হইলেন আখেরাতের উকীল স্বরুপ (ভেদে মারেফতঃ ৬১ পৃঃ)

অথবা “সেই দিন নিঃসন্দেহে পীরগণ থেকে সাহায্য পাওয়ার আশা করা যায়” ইত্যাদি কথা বলে তাদের কাছ থেকে বায়আত নিয়ে থাকেন ? (হে আল্লাহ্‌ তুমি আমাদেরকে ঈমান ব্যবসায়ীদের কবল থেকে রক্ষা কর)

আল্লাহ তাআলা বলেন, “কোন সুপারিশকারীর সুপারিশ তাদের উপকারে আসবে না” (সূরা মুদ্দাস্‌সিরঃ ৪৮)

ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন, “এ সকল মুশরিকদের অন্তরে যে বিষয়টি বদ্ধমূল আছে তা হচ্ছে, তাদের ওলীগণ তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে সাহায্য-সুপারিশ করবেন । এই বিশ্বাসটাই হচ্ছে আসল শির্ক ।
আল্লাহ্‌ তাআলা স্বীয় কিতাবে এ বিশ্বাসকেই প্রত্যাখ্যান ও বাতিল করেছেন, বলেছেন পরকালে সাহায্য-সুপারিশের পুরা বিষয়টাই তাঁর অধিনে । তাঁর অনুমতি না পেয়ে কেউ কারো জন্যে সুপারিশ করতে পারবে না । যার কথা ও কাজে তিনি সন্তুষ্ট থাকবেন তার পক্ষেই সুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে । আর তারা হচ্ছে ঐ সকল মানুষ যারা তাওহীদ বাস্তবায়ন করেছে এবং যারা আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন পীর-ওলীকে সাহায্য বা সুপারিশকারী গ্রহণ করেনি । আল্লাহ্‌ যাকে চাইবেন তাদের জন্যে সুপারিশ করার অনুমতি দিবেন । তখন তারা হবে সুপারিশ লাভে সর্বাধিক ধন্য মানুষ” (মাদারেজুস্ সালেকীন ১ম খন্ড, ২৫৫ পৃঃ)

আল্লাহ্‌ বলেন, “তারা বলে, এরা আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশকারী” (সূরা ইউনুসঃ ১৮)

অতএব কিভাবে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শির্ককারীদের জন্যে সুপারিশ করবেন ?

তিনি বলেন, “আমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে জনৈক ফেরেশতা আগমণ করে আমাকে দুটি বিষয়ের যে কোন একটি কিয়ামত দিবসে গ্রহণ করার জন্য স্বাধীনতা দেন । একটি হচ্ছে আমার উম্মতের অর্ধেক মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে । দ্বিতীয়টি হচ্ছে কিয়ামত দিবসে আমি তাদের জন্যে শাফাআত করব । আমি সুপারিশের বিষয়টিকে গ্রহণ করি ।
আমার শাফাআত ঐ লোকদের জন্যে যারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে (তথা তাওহীদ নিয়ে) মৃত্যু বরণ করেছে” (আওফ বিন মালেক আশজাঈ (রাঃ) থেকে ইমাম তিরমিযী ‘শাফাআত’ অনুচ্ছেদে হাদিসটি বর্ণনা করেন হা/২৩৬৫; ইবনে মাজাহ্ হা/৪৩০১ ও ৪৩০৮)

পীরের মুরীদ হলেই যদি আখেরাতে পার পাওয়া যায়, তবে পীরের আত্মীয় হলে তো কোন কথাই নেই । সে তো জান্নাতে চলেই গেছে । অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকটাত্মীয়দের ব্যাপারে এরকম কোন দায়িত্ব নেননি বা তাদেরকে পার করে দেয়ার আশ্বাসও দেননি ।

সহীহ্‌ বুখারী ও সহীহ্‌ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্‌ যখন নাযিল করলেনঃ وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ “এবং আপনার বংশের নিকট আত্মীয়দেরকে জাহান্নামের ভয় দেখান” (সূরা শুআরাঃ ২১৪)

তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ বংশ কুরায়শ এবং কুরায়শের অন্যান্য গোত্রকে একত্রিত করলেন এবং বললেনঃ
“হে কুরায়শ সমপ্রদায় তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর, আমি আল্লাহর পাকড়াও থেকে তোমাদের কোন কাজে আসব না । হে আবদে মানাফ গোত্র ! আল্লাহর পাকড়াও থেকে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না । হে আমার চাচা আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব ! আল্লাহর পাকড়াও থেকে আমি আপনার কোন উপকার করতে পারব না । হে ছাফিয়া ! রাসূলুল্লাহর ফুফু, আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করার জন্যে আমি আপনার কোন উপকার করতে পারব না ।
হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমা ! আমার নিকট দুনিয়ার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও । আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচানোর জন্যে আমি তোমার কোন উপকার করতে পারব না” (নাসাঈ, অনুচ্ছেদঃ ওসীয়ত, হা/৩৫৮৬; দ্রঃ সহীহ্ নাসাঈ আলবানী হা/৩৬৪৬, ও সহীহ্ মুসলিম, অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ
وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
এর ব্যাখ্যা, হা/৩০৫)

এই আলোচনার পরও যদি কোন মানুষ দাবী করে যে, সে কিয়ামতে আল্লাহর কাছে কারো জন্যে সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখে, তবে সে যে নিজেকে আল্লাহর সমক্ষ নির্ধারণ করে মুশরিক হয়ে গেল একথা সূর্যের মত স্পষ্ট ।
অনুরূপভাবে একথাও প্রকাশ হয়ে গেল যে, কেউ যদি বিশ্বাস করে নির্দিষ্টভাবে উমুক ব্যক্তি তার এবং আল্লাহর মাঝে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তিনি তার জন্যে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন সেও কাফের মুশরিক ।
যদিও সে কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ পাঠ করে, নামায পড়ে, যাকাত দেয়, রোযা রাখে, হজ্জ-ওমরা করে এবং দাবী করে যে আমি মুসলিম । এর সম্পর্কেই

আল্লাহ্‌ বলেন, “আপনি বলুন, আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিব, কাদের যাবতীয় আমল বরবাদ ? তারা হচ্ছে সেই লোক দুনিয়ার জীবনে যাদের কর্মপ্রচেষ্টা গুমরাহীর পথে পরিচালিত হয়েছে; অথচ তারা মনে করে যে তারা নেক আমল করছে” (সূরা কাহ্‌ফঃ ১০৩-১০৪)

পীর সাহেব আরো লিখেছেনঃ কেয়ামতের সেই মহাবিপদের সময় হক্কানী পীর সাহেবগণ আপন মুরীদগণকে হযরত নবী করীম (সঃ) এর কাছে পৌঁছাইয়া দিবেন । এবং হুজুরে আকরাম (সাঃ) তাহাদিগকে হাউজে কাউছারের পানি পান করাইবেন” (আশেক মাশুক পৃঃ ৬৬)

তিনি আরো লিখেছেনঃ “এরূপভাবে পরকালেও তাঁহাদের (ওলীদের) ক্ষমতার সীমা থাকিবে না । হাশরের মাঠে একজন আওলিয়ায়ে কেরামের উছিলায় হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া ছাল্লামের হাজার গুনাহগার উম্মতকে আল্লাহ্‌ পাক মাফ করিয়া দিবেন” (আশেক মাশুক পৃঃ ৮১)

জনাব পীর সাহেবদের প্রতি আমার প্রশ্ন হচ্ছে, একবারও কি আপনারা চিন্তা করেছেন আপনাদেরকে সেই কঠিন হাশরের দিনে কে সাহায্য করবে ? কে আপনাদের জন্যে সুপারিশ করবে ? কে আপনাদেরকে পুলসিরাত পার করাবে ? কে আপনাদের গুনাহ মাফ করিয়ে দিবে ? নাকি আপনারা আল্লাহর নিকট থেকে অগ্রিম ছাড়পত্র পেয়ে গেছেন যে আপনাদের কোন গুনাহ্‌ হবে না ? আপনারা নবী-রাসূলদের মত নিষ্পাপ ? নাকি এমন কোন গ্যরান্টি বার্তা পেয়ে গেছেন বা আপনাদের কাছে ওহী হয়েছে যে হাশরের মাঠে আপনাদের কোন সাহায্যের দরকার পড়বে না- আপনারা বিনা হিসেবে মুক্তি পেয়ে যাবেন ? আপনারা কি নিশ্চিতভাবে জান্নাতের টিকেট খরীদ করে নিয়েছেন ? কে বিক্রি করল আপনাদের কাছে জান্নাতের টিকেট ? কোথায় পেলেন এই ক্ষমতা ? আল্লাহ্‌ কি আপনাদেরকে তাঁর ক্ষমতার অংশ বিশেষ দান করে আরাম করছেন ? (নাউযুবিল্লাহ্‌) আপনারা কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ হয়ে গেছেন ? কে আপনাদেরকে নিরাপত্তা বার্তা পৌঁছালো ?

আল্লাহ্‌ কি বলেন নি ?
“অতএব তোমরা নিজেদেরকে পবিত্র বলো না । তিনিই বেশী জানেন কে বেশী আল্লাহকে ভয় করে” (সূরা নাজমঃ ৩২)

এরশাদ করেনঃ “হে ঈমানদারগণ ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছে তা থেকে আল্লাহর পথে খরচ কর সেই দিন আসার পূর্বে যখন না আছে বেচা-কেনা, না আছে বন্ধুত্ব আর না আছে কোন সুপারিশ” (সূরা বাকারাঃ ২৫৪)

আল্লাহ্‌ আরো বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সাঃ) আপনি এই কুরআন দ্বারা তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করুন যারা তাদের পালনকর্তার কাছে একত্রিত হওয়াকে ভয় করে, সেদিন তিনি (আল্লাহ্‌) ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী বন্ধু থাকবে না এবং কোন সুপারিশকারী হবে না” (সূরা আনআমঃ ৫১)

ইমাম ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেনঃ অর্থাৎ আল্লাহ্‌ যদি তাদেরকে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছা করেন তবে তা থেকে রক্ষা করার জন্যে কোন বন্ধু, কোন আত্মীয়, কোন সুপারিশকারী থাকবে না (তাফসীর ইবনে কাছীরঃ ৩/২৫৯)

যারা তাওহীদপন্থী প্রকৃত ঈমানদার তাদের একটা পরিচয় আল্লাহ্‌ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন ।
তিনি বলেনঃ “তারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং তারা কিয়ামত দিবসে কঠিন হিসাবের সম্মুখিন হওয়ার আশংকা করে” (সূরা রাদঃ ২১)

এই পীর সাহেবগণ কি কিয়ামত দিবসে আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় করেন না ? তারা কি আল্লাহর হিসাবের সম্মুখিন হওয়ার ব্যাপারে শংকামুক্ত ও নিরাপদ হয়ে গেছেন ? তারা নিজেরাই যদি হিসাবের সম্মুখিন হন তবে অন্যের ওকালতী করবেন কিভাবে ?

আল্লাহ্‌ বলেন, “ওরা কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে ? ক্ষতিগ্রস্থ জাতি ছাড়া কেউ আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারে না” (সূরা আরাফঃ ৯৯)

আয়াতুল কুরসীর মধ্যে আল্লাহ্‌ বলেনঃ “কে সেই এমন ব্যক্তি যে আল্লাহর কাছে তাঁর অনুমতি ব্যতীরেকে কারো জন্যে সুপারিশ করতে পারবে ?” (সূরা বাকারাঃ ২৫৫)
আল্লাহ্‌ আরো বলেনঃ “তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ কারো জন্যে সুপারিশ করতে পারবে না” (সূরা ইউনুসঃ ৩)

মুরীদদের সাহায্য বা সুপারিশ করার জন্যে পীর সাহেবগণ কি দুনিয়াতেই আল্লাহর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নিয়েছেন ? কোথায় সেই অনুমতি পত্র, দয়া করে তারা দেখাবেন কি ?

আল্লাহ্‌ বলেনঃ “তারা কি আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যকে সুপারিশকারী গ্রহণ করেছে ? তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন ! তাদের কোন কিছুতে মালিকানা না থাকলেও এবং তারা না বুঝলেও (সুপারিশ করতে পারবে) ? বলে দিন, যাবতীয় সুপারিশ আল্লাহরই আয়ত্বাধীন, আসমান ও যমীনে তাঁরই সম্রাজ্য । অতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে” (সূরা যুমারঃ ৪৩-৪৪)

আল্লাহ্‌ ব্যতীত সুপারিশের কেউ মালিক নয়, অধিকারী নয়, অতএব তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখে না । কেউ যদি আল্লাহর অনুমতি না পেয়েই নিশ্চিতভাবে আখেরাতে সুপারিশ করতে পারবে এমন দাবী দুনিয়াতে করে বসে, তবে সে যে নিজেকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করে নিল এবং মুশিরক হয়ে গেল তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই ।

বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, হাশরের মাঠে মানুষ যখন বিপদে পড়ে যাবে এবং অসহনীয় আযাবে গ্রেপ্তার হবে, তখন তারা একজন সুপারিশকারী খুঁজে ফিরবে । যাতে করে তারা এই ভীষণ সংকট থেকে রেহাই পেতে পারে । প্রথমে তারা আদম (আঃ) এর কাছে গমণ করবে । অতঃপর পর্যায়ক্রমে নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা (আঃ) এর কাছে যাবে । তাঁরা কেউ সুপারিশ করতে সাহস করবেন না । প্রত্যেক নবী নিজেদের অক্ষমতার কথা প্রকাশ করবেন । অবশেষে তারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসবে । তিনি মানুষকে এই বিপদজনক অবস্থা হতে মুক্ত করার জন্য আল্লাহর আরশের নীচে সিজদাবনত হবেন । আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তণ করবেন । তখন আল্লাহ্‌ তাঁকে মাথা উঠিয়ে প্রার্থনা করার অনুমতি দিবেন । তিনি তখন সমগ্র মানুষের হিসাব-নিকাশের জন্যে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন । আল্লাহ তাঁর দুআ এবং শাফাআত কবুল করবেন । এটিই হল মাক্বামে মাহমূদ বা সুমহান মর্যাদা, যা আল্লাহ তাকে দান করেছেন (এ সম্পর্কে দীর্ঘ হাদিস বর্ণিত হয়েছে; দেখুন সহীহ্ বুখারী, অধ্যায় তাওহীদ, অনুচ্ছেদঃ কিয়ামতের দিন নবী-রাসুল ও অন্যদের সাথে আল্লাহর কথা বলার বিবরণ, হা/৬৯৫৬; সহীহ্ মুসলিম, অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের সর্বনিম্ন মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তি হা/২৮৬)

পুলসিরাত পার হতে পীর নয় তাওহীদ দরকারঃ
পীর সাহেব আরো লিখেছেনঃ “হযরত থানবী লিখিয়াছেন, জনৈক দরবেশ সাহেবের মৃত্যুর পর এক কাফন চোর কবর খুড়িয়া (দরবেশের) কাফন খুলিতে লাগিল । দরবেশ সাহেব চোরের হাত ধরিয়া বসিলেন । তা দেখে চোর ভয়ের চোটে চিৎকার মারিয়া বেহুঁশ হইয়া মরিয়া গেল । দরবেশ স্বপ্নযোগে তার এক খলীফাকে আদেশ করিলেন চোরকে তার পার্শ্বে দাফন করিতে । খলীফা এতে আপত্তি করিলে দরবেশ বলিলেনঃ কাফন চোরের হাত আমার হাতের সঙ্গে লাগিয়াছে, এখন কেয়ামত দিবসে ওকে ছাড়িয়া আমি কেমনে পুলছেরাত পার হইয়া যাইব ?” (ভেদে মারেফতঃ ২৭-২৮ পৃঃ)

একমাত্র তাওহীদ ও নেক আমলই মানুষকে পুলসিরাত পার করিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবে । পীরের হাতে হাত রাখলে জান্নাত পাওয়া যাবে একথা কুরআন-সুন্নাতের কোথাও নেই ।

পুলসিরাত পার হওয়ার সময় মুমিনদেরকে তাদের ঈমান ও আমল অনুসারে আলো দেয়া হবে । যার আমল সবচেয়ে বেশী হবে তার আলো হবে পাহাড়ের মত বিশাল । আর যার আমল সবচেয়ে কম হবে তার আলো হবে অতি ক্ষুদ্র, যা তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের এক পাশে থাকবে । ঐ আলোকরশ্মিতে তারা পুলসিরাত পার হবে । মুমিন ব্যক্তি কেউ চোখের পলকে কেউ বিদ্যুতের বেগে, কেউ ঝড়ের বেগে, কেউ পাখির মত, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার মত এবং কেউ সাধারণ আরোহীর মত পুলসিরাত অতিক্রম করবে । “তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিরাপদে পার হবে, কারো শরীরের গোস্ত ছিঁড়ে যাবে, কেউ আবার জাহান্নামে পড়ে যাবে” (বুখারী ও মুসলিম)

কিন্তু মুনাফেকরা কোন আলো পাবে না । তারা মুমিনদের কাছে আলো ভিক্ষা চাইবে । তাদেরকে বলা হবে পিছনে ফিরে গিয়ে আলো অনুসন্ধান করো । আলোর খোঁজে ফিরে গেলে তাদের মাঝে এবং মুমিনদের মাঝে একটি দেয়াল খাড়া করে দেয়া হবে । (সূরা হাদীদঃ ১৩)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে । ওরা হচ্ছে এমন লোক যারা ঝাড়-ফুঁক করে না, কারো কাছে ঝাড়-ফুঁক চায় না, পাখি উড়িয়ে ভাল-মন্দ নির্ধারণ করে না । তারা আল্লাহর উপর পরিপূর্ণরূপে ভরসা করে” (বুখারী, অনুচ্ছেদঃ যারা ঝাড়-ফুঁক করে না হা/৫৩১১, ৬০৫৯ ও মুসলিম, অনুচ্ছেদঃ মুসলমানদের মধ্যে কিছু লোক বিনা হিসাবে বিনা আযাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন তার দলিল, হা/৩২০, ৩২৩)

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “যারা ঈমান এনেছে এবং তারা তাদের ঈমানকে শির্কের সাথে মিশ্রিত করেনি, তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা আর তারাই হল সুপথ প্রাপ্ত” (সূরা আনআম: ৮২)

অর্থাৎ যারা ঈমান আনার পর একনিষ্ঠ থেকেছে, খালেসভাবে আল্লাহর ইবাদত করেছে এবং তাঁর ইবাদতে কাউকে শরীক করেনি তারা কিয়ামত দিবসে জাহান্নামের শাস্তি থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে এবং তারাই দুনিয়া ও আখেরাতে সুপথ প্রাপ্ত (তাফসীর ইবনে কাসীর ৩/২৯৪ পৃঃ সূরা আনআমের ৮২ নং আয়াতের তাফসীর)

আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
আল্লাহ্‌ বলেন, “যে ব্যক্তি পৃথিবী পূর্ণ পাপ নিয়ে আমার কাছে আসবে এ অবস্থায় যে আমার সাথে কাউকে শরীক করেনি, তবে অনুরূপ (পৃথিবী পূর্ণ) মাগফিরাত নিয়ে আমি তার সাথে সাক্ষাত করব” (মুসলিম, অধ্যায়ঃ যিকির, দু’আ, তওবা ও ইস্তেগফার, অনুচ্ছেদঃ যিকির, দু’আ তওবা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ফযীলত হা/৪৮৫২)

মুআয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, মুআয ! তুমি কি জান বান্দার উপর আল্লাহর দাবী কি ? আর আল্লাহর উপর বান্দার দাবী কি ? তিনি বললেন, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন । নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর দাবী হচ্ছে তারা এককভাবে তাঁর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না । আর আল্লাহর উপর বান্দার দাবী হচ্ছে, যে বান্দা শির্ক মুক্ত ইবাদত করবে তিনি তাকে শাস্তি দিবেন না” (বুখারী ও মুসলিম)

আমাদের শিরক সম্পর্কে জানা প্রয়োজন । আল্লাহ শিরক সম্পর্কে কোরআন বলেছেন-

সূরা নিসা-৪৮, ১১৬> নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শিরকের গুনাহ মাফ করেন না ।

সূরা যুমার-৬৫> হে নবী আপনাকে প্রত্যাদেশ করা যাইতেছে এবং আপনার পুর্ববর্তীদেরও প্রত্যাদেশ করা হয়েছিল যে, যদি আপনি আল্লাহ সাথে শিরক করেন তাহলে আপনার সব আমল বাতিল হবে এবং আপনি হবেন ক্ষতিগ্রস্থদের অর্ন্তভূক্ত

সূরা আনআম-৮৮> এটি আল্লাহর হেদায়েত । স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা, এপথে চালান । যদি তারা শেরেকী করত, তবে তাদের কাজ কর্ম তাদের জন্যে ব্যর্থ হয়ে যেত ।
অতএব শিরক করলে আমলসমূহ ধ্বংস হয়ে যায় ।

সর্বশেষ যেই ডেন্জারাস আয়াত । সেটা হলো
মাযার ও কবরপূজা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত । আর যারা শিরক করে তাদের উপর আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতকে হারাম করেছেন ।
আল্লাহ তাআলা বলেন: নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন । আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই । (সূরা মায়েদা, আয়াত ৭২)

সূরা নিসা-১১৫> যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব । আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান ।

কারণ আল্লাহর নিকট এখলাসপূর্ণ শিরকমুক্ত ইবাদাতও গ্রহণযোগ্য (সূরা যুমার-৩)

রাসুল (সঃ) বলেন- বিদআতিদের নামায, রোযা, হজ্জ, উমরাহ, জিহাদ, যাকাত এবং ফরজ নফল কোন এবাদতই আল্লাহর নিকট কবুল হবে না । তারা ইসলাম থেকে সেরুপ ভাবে খারিজ হয়ে যাবে, যেভাবে আটা থেকে চুল পৃথক হয়ে যায় (ইবনে মাযাহ ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৪৯)

আরবের মুশরিকদের শিরক কি ছিল ?‎
মহান রাব্বুর আলামীন বলেন-‎‏ ‎“হে পয়গম্বর ! আপনি মুশকদেরকে জিজ্ঞেস করুন যে, বল তো কে তোমাদেরকে আসমান জমিন থেকে ‎রুযী দেন ? এবং কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক ? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের ‎করেন এবং কে মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন ? কে করেন কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থাপনা ? তারা ‎পরিস্কার বলবে যে, মহান আল্লাহ (সূরা ইউনুস-৩১)‎

আল্লাহ তায়ালাই মূল ক্ষমতার অধিকারী একথা আরবের মুশরিকরাও বিশ্বাস করতো, তারপরও তারা ‎কাফের কেন ?‎

এই সূরার প্রথমাংশে মহান রাব্বুল আলামীন এ প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছেন । ইরশাদ হচ্ছে-‎ আর তার (মুশরেকরা) আল্লাহ ভিন্ন এমন কতিপয়ের ইবাদত করে, যারা তাদের কোন অপকারও করতে ‎পারেনা এবং তাদের কোন উপকারও করতে পারেনা, ও তারা বলে-এরা হল আল্লাহ তায়ালার কাছে ‎আমাদের সুপারিশকারী । (হে রাসূল!) আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহ তায়ালাকে এমন বিষয়ের ‎সংবাদ দিচ্ছ যা আছে বলে তিনি (নিজেও) জানেন না, না আসমানে না জমিনে ! তিনি তাদের শিরকী ‎কার্যকলাপ হতে পবিত্র ও অনেক ঊর্দ্ধে (সূরা ইউনুস-১৮)‎

দেখা গেল তারা এ অসীলা গ্রহণের কারণেই শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়লো । আর এ শিরকের বিরুদ্ধে তাওহীদের দাওয়াতের জন্যই আল্লাহ তাআলা রাসূলগণকে পাঠালেন যুগে যুগে, প্রতিটি জনপদে । এ সকল দেব-দেবীর কাছে যেমন প্রার্থনামূলক দুআ করা শিরক তেমনি সাহায্য প্রার্থনা করে দুআ করাও শিরক ।

আল্লাহ তাআলা বলেন: বল, তাদেরকে ডাক, আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে (উপাস্য) মনে কর । তারা তো তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার ও পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না (সূরা ইসরা, আয়াত ৫৬)

যারা একদিন লাত উজ্জা প্রভৃতি দেব-দেবীর পূজা করতো, তারা কিন্তু এ বিশ্বাস করতো না যে এগুলো হল তাদের প্রভূ বা সৃষ্টিকর্তা । বরং তারা বিশ্বাস করতো এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বা তাদেরকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে তারা আল্লাহ নৈকট্য অর্জন করবে । তারা এটাও বিশ্বাস করতো না যে, এ সকল দেব-দেবী বৃষ্টি দান করে বা রিযক দান করে ।
তারা বলতো: আমরা তো তাদের ইবাদত করি এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে । (সূরা যুমার, আয়াত ৩)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: বল, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে আহবান কর । তারা আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে অণু পরিমাণ কোন কিছুর মালিক নয় । আর এ দুয়ের মধ্যে তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয় । আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কোন কাজে আসবে না । (সূরা সাবা, আয়াত ২২-২৩)

আল্লাহ তাআলা ব্যতীত যা কিছুর উপাসনা করা হয়, তা সবই বাতিল । আল্লাহ তাআলা বলেন: আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না । অতএব তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে । আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন ক্ষতি পৌঁছান, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই । আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের কোন প্রতিরোধকারী নেই । তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা দেন । আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু (সূরা ইউনূস, আয়াত ১০৬-১০৭)

যখন তারা সবই বাতিল, তাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করলে যখন কোন উপকার হয় না তখন কেন তাদের স্মরণাপন্ন হবে ? কেন তাদেরকে অসীলা গ্রহণ করা হবে ? কেন তাদের কবরে যেয়ে দুআ করা হবে ?

বিজ্ঞ পাঠক পাঠিকার কাছে আমার আবেদন-আপনারা শান্ত মস্তিস্কে একটু ভেবে দেখুন, আমাদের দেশে ‎মাজার পূজা আর কবর পূজার নামে মুসলমানদের কিভাবে মুশরিক বানানো হচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে ।
একবার যদি মন থেকে কেউ ঈমান আনে, আর সারা জীবন নাফরমানীও করে তবুও তার নাফরমানীর ‎শাস্তি পেয়ে জান্নাতি হবার সুযোগ আছে । কিন্তু কেউ যদি শিরক করে মুশরিক হয় তাহলে তাকে আল্লাহ ‎তায়ালা কখনো মাফ করবেন না । তার জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম । ‎

আল্লাহ তায়ালা আমাদের কবর পূজা ও মাযার পূজা এবং পীর পূজা করে মুশরিক হওয়া থেকে হিফাযত ‎করুন ।

মৃত্যু ব্যক্তি বা কবরে মাযারে শায়িত ব্যক্তির কাছে চাওয়া, পাওয়া কি সম্ভব ?
অনেক মানুষ মনে করে অলি আউলিয়া, পীরগণ মৃত্যু বরণ করে না ।

সূরা আল ইমরান-১৮৫> প্রত্যেক প্রাণীই মৃতু্র স্বাদ ভোগ করবে ।
কবরবাসী সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-সূরা নাহল-২১ > তারা মৃত, প্রাণহীন । কবে পুনরুত্থিত হবে জানে না ।

অনেকে বলে অলি আউলিয়াগণ মরার পরেও মানুষের কথা শুনে যখন মানুষ কবরের সামনে গিয়ে তাদের পুজা করে বা তাদের কাছে কিছু চায় ।
আল্লাহ কোরআনে বলেছেন সূরা ফাতির-২২>হে নবী, তুমি কবরে শায়িতদের কথা শুনাতে সক্ষম না ।

আল্লাহ নবীকে সম্বোধন করে বলেছেন: নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে পারবে না, আর তুমি বধিরকে আহবান শোনাতে পারবে না (সূরা নামল, আয়াত ৮০)

একই কথা সূরা রুম এর ৫২ নং আয়াতেও বলা হয়েছে ।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তু (কবর) কে ডাকে সে কিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সারা দিবে না, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে ? তারা তাদের ডাক সম্পর্কে খবরও রাখে না । যখন মানুষ কে হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে, তখন তারা (কবরবাসী) তাদের শত্রু হবে এবং তাদের ইবাদতের কথা অস্বীকার করবে (আহকাফ আয়াত ৫, ৬)

বলুনঃ তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি আল্লাহ আমার অনিষ্ট করতে চান তবে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাক, তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে ? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চান তাহলে কি তারা সে অনুগ্রহ পতিরোধ করতে পারবে ? বলুন আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট । নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে (আয-যুমার আয়াত ৩৮)

যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মৃতকে কিছু শোনাতে পারেন না, তখন সাধারণ মানুষ কিভাবে এ অসাধ্য সাধন করতে পারে ?

“নিশ্চয়ই আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি ও তোমারই নিকট সাহায্য চাই” (সুরা ফাতিহাঃ ৫)

এবার আসুন দেখি কবর পূজারীদেরর কর্মকান্ড হাদিসের মানদন্ডেঃ-
ওমর রা. দুআর সময় আব্বাস রা. কে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, এ বিষয়টি দিয়ে অনেকে মৃত ব্যক্তির অসীলা গ্রহণ করার বৈধতা দেয়ার প্রয়াস পান । কিন্তু ওমর রা. আব্বাস রা. এর দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন তার ব্যক্তিত্বকে নয় । আর আব্বাস রা. তখন জীবিত ছিলেন । যে কোন জীবিত ব্যক্তির দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করা যায় । ওমর রা. তা-ই করেছেন । তিনি বলেছেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত থাকাকালে আমরা তার অসীলা দিয়ে দুআ করতাম । এখন তিনি নেই তাই আমরা তার চাচা আব্বাসকে দুআ করার ক্ষেত্রে অসীলা হিসাবে নিলাম । ওমর রা. এর এ বক্তব্যে স্পষ্ট হল যে, তিনি কোন মৃত ব্যক্তিকে দুআর সময় অসীলা হিসাবে গ্রহণ বৈধ মনে করতেন না । তিনি নবী হলেও না ।

বিষয়টা এমন, যেমন আমরা কোন সৎ-নেককার ব্যক্তিকে বলে থাকি, আমার জন্য দুআ করবেন । কোন আলেম বা বুযুর্গ ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা নিজেদের জন্য দুআ করিয়ে থাকি । এটাও এক ধরণের অসীলা গ্রহণ । এটা বৈধ

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেন: মৃত ব্যক্তি নিজের কোন উপকার করতে পারে না ।

তিনি বলেছেন: মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে পেতে থাকে ।

১. ছদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে) ২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম(বিদ্যা) ৩. সৎ সন্তান যে তাঁর জন্য দুআ করে । বর্ণনায়: মুসলিম

অনেক বিভ্রান্ত লোককে বলতে শুনা যায়, অমুক অলীর মাজার যিয়ারত করতে গিয়েছিলাম । সেখানে যেয়ে এই দুআ করেছিলাম । দুআ কবুল হয়েছে, যা চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি ইত্যাদি । এ ধরনের কথা-বার্তা আল্লাহ তাআলার প্রতি মিথ্যারোপের শামিল ।

হ্যা, হতে পারে তবে অর্জন হলে সেটা
প্রার্থীত বিষয়টি পুরণ করা শুধু আল্লাহ তাআলার পক্ষেই সম্ভব, তাহলে বুঝতে হবে এ বিষয়টি অর্জনের কথা তাকদীরে আগেই লেখা ছিল । কবরে শায়িত ব্যক্তির বরকতে এটির অর্জন হয়নি ।

তাই সকল বিবেকসম্পন্ন মানুষকে বুঝতে হবে যে মাজারে যেয়ে দুআ করলে কবুল হয় বলে বিশ্বাস করা সর্বাবস্থায়ই কুসংস্কার । কেহ যদি মাজারে যেয়ে দুআ প্রার্থনা করে, মাজার পূজা করে মানুষ থেকে ফেরেশতাতে পরিণত হয় তাহলেও বিশ্বাস করা যাবে না যে, এটা মাজারে শায়িত ব্যক্তির কারণে হয়েছে । এর নামই হল ঈমান । এর নামই হল নির্ভেজাল তাওহীদ । তাওহীদের বিশ্বাস যদি শিরকমিশ্রিত হয়, কু সংস্কারাচ্ছন্ন হয় তা হলে মুক্তি নেই ।

১. স্বীয় কবরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান করাকে নিষিদ্ধ করে আল্লাহর নবী ইরশাদ করেন- ‎“তোমরা স্বীয় ঘরকে কবর বানিয়োনা । (অর্থাৎ কবরের ন্যায় ইবাদত-নামায, তেলাওয়াত ও যিকির ‎ইত্যাদি বিহীন করনা) এবং আমার কবরে উৎসব করোনা ।(অর্থাৎ বার্ষিক, মাসিক বা সাপ্তাহিক কোন ‎আসরের আয়োজন করনা) তবে হ্যাঁ আমার উপর দুরূদ পাঠ কর । নিশ্চয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন ‎তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে ।(আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতারা পৌঁছিয়ে দেন)” (সুনানে ‎আবু দাউদ: হাদিস নং-২০৪৪/৪০; আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ মানাসেক, অনুচ্ছেদঃ কবর যিয়ারত, হা/১৭৪৬; দ্রঃ সহীহুল জামে আলবানী হা/৭২২৬)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- রাসূলে সাঃ নিজ রওযা মুবারকে উৎসব (উরস) পালন করতে বারণ ‎করেছেন । তাহলে অন্য কে আর এমন আছে যার কবরে তা বৈধ হবে ? ‎

হাদিসের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা মুনাভী রহঃ এই হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন-‎ ‎“এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, সাধারণ মানুষ যারা বছরের কোন নির্দিষ্ট মাসে বা দিনে (উরসের নামে) ‎ওলীদের মাযারে একত্রিত হয় এবং বলে-আজ পীর সাহেবের জন্ম বার্ষিকী (মৃত্যু বার্ষিকী), সেখানে তারা ‎পানাহারেরও আয়োজন করে, আবার নাচ গানেরও ব্যবস্থা করে থাকে, এ সবগুলিই শরীয়ত পরিপন্থী ও ‎গর্হিত কাজ । এ সব কাজ প্রশাসনের প্রতিরোধ করা জরুরী (আউনুল মা’বুদ-৬/২৩)‎

২. কবরের সামনে বাতি প্রজ্জ্বলন করাকে হারাম সাব্যস্ত করে রাসূলে কারীম সাঃ ইরশাদ করেন-‎ ‎“হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর নবী সাঃ অভিশম্পাত করেছেন (বেপর্দা) কবর ‎যিয়ারতকারীনী মহিলাদের উপর, এবং সেসব লোকদের উপর যারা কবরকে মসজিদ বানায় (কবরকে ‎সেজদা করে) এবং সেখানে বাতি প্রজ্জ্বলিত করে (জামি তিরমীযী-২/১৩৬) ‎

উক্ত হাদিসে সুষ্পষ্ট কবরে বাতি প্রজ্জ্বলনকারীর উপর অভিশম্পাত করেছেন আল্লাহর নবী ‎সাঃ ।

৩. আল্লাহ ছাড়া কারো নামে মান্নত বা কুরবানী করা যায়না । কারণ মান্নত ও কুরবানী হচ্ছে ইবাদত । আর ‎ইবাদত আল্লাহ ছাড়া কারা জন্য করা জায়েজ নয় । মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ ‎করেন-‎
‎“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক ‎আল্লাহর জন্যই । তাঁর কোন অংশিদার নেই । আমি তা-ই করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম ‎আনুগত্যশীল (সূরা আনআম-১৬২-১৬৩)‎

সূরা কাউসারে মহান রাব্বুর আলামীন বলেন-‎‏ অতএব আপনার পালনকর্তার ‎উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন (সূরা কাউসার-২)‎

“নিশ্চয়ই আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি ও তোমারই নিকট সাহায্য চাই।” (সুরা ফাতিহাঃ ৫)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “কোন কিছু চাওয়ার হলে আল্লাহর কাছে চাইবে এবং সাহায্য চাইলে একমাত্র তাঁর কাছেই সাহায্য চাইবে ।” (তিরমিযী)

“যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের জন্য মানত করে সে যেন তা পূর্ণ করে, আর যে তার বিরুদ্ধে পাপাচরণে মানত করে সে যেন তা হতে বিরত থাকে” (বুখারী)

সুতরাং পীরের নামে ও মাযারের নামে মান্নত করা কি শিরকী কর্ম নয় ?‎

বিশিষ্ট সাহাবী জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরে চুন কাম করা, তার উপর বসা এবং তার উপর বিল্ডিং নির্মান করতে নিষেধ করেছেন (সিহীহ্ মুসলিম, অধ্যায়ঃ জানাযা, অনুচ্ছেদঃ কবরকে পাকা করা ও চুনকাম করা নিষেধ হা/১৬১০)

তারা বলে থাকেন আমরা সৌন্দর্য প্রকাশ ও কবরকে হেফাযতের জন্য এ গুলো করে থাকি । জেনে রাখুন সোন্দর্য প্রকাশের জন্য হোক, মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য হোক কিংবা হেফাযতের জন্য হোক, তা শরীয়তে জঘন্যতম বিদআত । এ গুলো করার পিছনে কোন দলীল নেই ।

রাসূল (ছাঃ) কবর উঁচু করতে, পাকা করতে, তার উপর সৌধ নির্মাণ করতে ও বসতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৯৬-৯৭)

এর একটি উজ্জল উদাহরণ হল, আবুল হায়্যাজ আল আসাদী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) বললেন,
আমি কি তোমাকে এমন মিশন দিয়ে পাঠাবো না, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে যে মিশন দিয়ে পাঠিয়েছিলেন ? আর তা ছিল, কোন মূর্তী পেলে তা ভেঙ্গে চুরমার করে দিবে, কোন উঁচু কবর পেলে ভেঙ্গে তা মাটি বরাবর করে দিবে ।” অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ “এবং কোন ছবি পেলে তা মিটিয়ে ফেলবে” (সহীহ্ মুসলিম, অধ্যায়ঃ জানাযা, অনুচ্ছেদঃ কবরকে ভেঙ্গে মাটি বরাবর করা হা/ ১৬০৯)

ইসলাম পূর্ব লোকেরা তাদের নবীদের কবরকে মাসজিদ বানিয়ে নিয়ে সেখানে ইবাদত করত ।
এ কথা হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিস্কার ভাবে বলে দিয়েছেনঃ “জেনে রাখা উচিৎ যে, তোমাদের পূর্বের লোকেরা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মাসজিদে পরিণত করত । সাবধান ! তোমরা কবরগুলোকে মাসজিদে পরিণত কর না । আমি তোমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করছি” (মুসলিম)

কবরকে মাসজিদে পরিণত করার অর্থ হল কবরের কাছে নামায আদায় করা । যদিও তার উপর মাসজিদ নির্মাণ করা হয়নি । মূলতঃ নামাযের জন্য কোন স্থানে গমণ করাই উক্ত স্থানকে মাসজিদে রূপান্তরিত করার শামিল ।

কাল্পনিক কারামত
অনেক মানুষই মুজিযা আর কারামতের পার্থক্য জানে না । মুজিযা প্রকাশের শর্ত হল নবী বা রাসূল হওয়া । আর কারামত প্রকাশের শর্ত হল নেককার ও মুত্তাকী হওয়া ।

অতএব যদি কোন বিদআতী পীর-ফকির বা শিরকে লিপ্ত ব্যক্তিদের থেকে অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায় সেটা মুজিযাও নয়, কারামতও নয় । সেটা হল দাজ্জালী ধোকা-বাজি বা প্রতারণা ।

অদৃশ্য জগতের চাবিগুলো (ভান্ডারগুলো) আল্লাহরই নিকট । তিনি ব্যতীত তা কেউ-ই জানে না (নামল আয়াত ৬৫)

আর অদৃশ্যের চাবি তাঁরই নিকটে রয়েছে । তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না । স্থলে ও সমুদ্রভাগে যা কিছু আছে তা তিনিই জানেন (আন-আম আয়াত ৫৯)

তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী পরন্ত তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না (জিন আয়াত ২৬)

আল্লাহ ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের কেউ গায়েবের খবর জানে না (নামল আয়াত ৬৫)

আল্লাহ তাআলা বলেন: কোন মানুষের জন্য সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার ইবাদতকারী হয়ে যাও । বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী (আল্লাহ ভক্ত) হও । যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে । আর তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীদেরকে প্রভূ রূপে গ্রহণ কর । তোমরা মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দেবেন ? (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৯-৮০)

মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কারণেই তারা অলী-বুযুর্গদের কবরে মানত করে, কবর প্রদক্ষিণ করে, কবর সজ্জিত করে, কবরে ওরস অনুষ্ঠান করে । কবরবাসীর কাছে তারা সাহায্য চায়, উদ্ধার কামনা করে । যদি কবরওয়ালার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত সম্মান ও ভালোবাসা না থাকতো, তাহলে তারা এগুলোর কিছুই করত না । আর এ ধরনের ভালোবাসা শুধু আল্লাহর তাআলার জন্যই নিবেদন করতে হয় । আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শিরক ।

আল্লাহ তাআলা বলেন: আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহকে ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে । আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসায় দৃঢ়তর । (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৬৫)

যখন একমাত্র আল্লাহর আলোচনা হয় তখন যারা পরকালে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর সংকুচিত হয়ে যায় । আর যখন আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের (ভন্ড বুজুর্গদের) আলোচনা হয় তখন তারা আনন্দে উল্লাসিত হয়ে উঠে (যুমার আয়াত ৪৫)

পীরেরা কি গায়েবীভাবে মুরীদদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেন?
পীর সাহেব হযরত রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী সাহেবের একটি কারামাত লিখেছেনঃ ঘটনাটি সংক্ষেপে এরূপঃ দেওবন্দ মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা আহমদ হোছায়েন সাহেব হজ্জ থেকে ফেরার পথে তাদের ষ্টীমার সাগরের মধ্যে ভয়ানক তুফানের মধ্যে পতিত হয় । ষ্টীমার লাইন ছেড়ে ২০০ মাইল অন্য দিকে সরে যায় । তখন হাজী সাহেবগণ খুরমা, সুরমা, রুমাল ইত্যাদি মক্কা শরীফ থেকে যা নিয়ে এসেছিলেন তা সামনে রেখে আল্লাহকে ডাকতে লাগলেন, ওগো আমার মাওলা ! আমাদের প্রাণের টুকরা ছেলেমেয়ে আপনার নাবালেগ বেগুনাহ্‌ বান্দাদের জন্যই আমরা এইসব আনিয়াছি, তাহাদের উছীলায় আমরা গুনাহগার বান্দাদিগকে এই মহাসংকট হইতে বাঁচাইয়া রাখুন ।

হযরত মাওলানা সাহেব (দেওবন্দের মোহতামিম) বলেন, “সে সময় আমার চোখে একটু তন্দ্রা আসিল । ঐ তন্দ্রার মধ্যে দেখিতে পাইলাম যে, কুতুবে আলম হযরত গঙ্গুহী রাহমাতুল্লাহি আলাইহে একখানা ছোট নৌকার উপর বসিয়া আমাদের ষ্টীমারখানা কাঁধের সঙ্গে লাগাইয়া ধরিয়ে রাখিয়াছেন । আমার তন্দ্রা ভাঙ্গিয়া গেল । আমি হাজী সাহেবদের বলিলাম কোন চিন্তা নেই আমাদের বাঁচাইবার জন্যে আল্লাহ্‌ পাক মেহেরবানী করিয়া তাহার কুতুব পাঠাইয়া দিয়াছেন”

পীর সাহেব ঘটনার সারাংশে লিখেছেনঃ “এখন লক্ষ্য করুন মাওলার খাঁটি আশেক হইতে পারিলে তিনি আপন আশেককে কতদূর মর্তবা ও কি পরিমাণ ক্ষমতা দান করিয়া থাকেন । আরো লক্ষ্য করুন যে, দুনিয়াতে যাহাকে এত শক্তি দান করিয়াছেন, আখেরাতে যে তাঁহাকে কত শক্তি, কত মর্তবা দিবেন তাহার কোন সীমা থাকিবে না” (আশেক মাশুক বা এস্কে এলাহীঃ ৬০-৬১ পৃষ্ঠা)

আরেকটি ঘটনাঃ
পীর সাহেব হযরত গঙ্গুহী সাহবের আরেকটি কারামাত লিখেছেনঃ “জনৈক বৃদ্ধের এক ছেলে তিনদিন যাবত নিরুদ্দেশ ছিল । বৃদ্ধ ছেলেকে উদ্ধারের জন্য গঙ্গুহী সাহেবের নিকট দরখাস্ত করলেন । তখন গঙ্গুহী সাহেব মুরাকাবায় বসে বৃদ্ধের ছেলেকে উদ্ধার করে দিলেন এবং তাকে বললেন, বাড়ি যাও, তোমার ছেলে বাড়ি আসিয়াছে । (আশেক মাশুক বা এস্কে এলাহীঃ ৬২-৬৩ পৃষ্ঠা)

আল্লাহ বলেনঃ “সমুদ্রবক্ষে যখন তোমাদেরকে বিপদ স্পর্শ করে তখন কেবলমাত্র আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা আহ্বান করে থাক তাদের কথা তোমাদের মন থেকে সরে যায় (যেহেতু এই বিপদের মুহূর্তে ওরা এখন কোন উপকারে আসবে না) কিন্তু তিনি স্থলভাগে তোমাদেরকে পৌঁছে দিয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার করে দেন, তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও । আসলে মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ” (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৬৭)

আল্লাহ্‌ বলেনঃ “তারা যখন নৌযানে আরোহণ করত, তখন বিশুদ্ধচিত্তে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকত; অতঃপর তিনি যখন স্থলে ভিড়িয়ে তাদেরকে উদ্ধার করতেন, তখন তারা শির্কে লিপ্ত হত” (সূরা আনকাবূতঃ ৬৫)

হানাফী মাযহাবের আলেম শায়খুল কুরআন শায়খ গোলাম (রহঃ) (মৃত্যু ১৯৮০ খৃঃ) বলেন: “উল্লেখিত আয়াত সমূহ দ্বারা পরিস্কার হয়ে গেল যে, মক্কার মুশরিকরা বিপদ-মুসীবতের সময় একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো স্মরণাপন্ন হতো না । তারপরও তারা ছিল মুশরিক । কেননা তারা অন্য সময় গাইরুল্লাহর স্মরণাপন্ন হত । কিন্তু বর্তমান যুগের পীরপন্থীরা মক্কার মুশরিকদেরকে টেক্কা দিয়ে সীমালঙ্ঘন করেছে । তারা সধারণ সময়ে তো অবশ্যই এমনকি বিপদাপদের মুহূর্তেও আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পীর-মাশায়েখ, কুতুবদেরকে ডেকে থাকে, তাদের কাছে সাহায্যের প্রার্থনা জানায় । বলেঃ আমাদের স্টীমার সমুদ্রে বিপদম্মুখ হয়েছে, হে আল্লাহর ওলী আমাদের সাহায্য করুন..।” (জুহূদুল উলামা আল হানাফিয়্যাহ্ ফী ইবতালি আকায়েদিল কুবুরিয়্যা ; কবর পুজারী পীরপন্থীদের ভ্রান্ত আকীদা মূলৎপাটনে হানাফী আলেমদের প্রচেষ্টা লেখকঃ ডঃ শামসুদ্দীন আফগানী (রহঃ) ২/১১৮৮ পৃঃ)

হায় আফসোস ! মক্কার কাফেররা নৌকা-স্টীমারে বিপদের সময় তাদের পালনকর্তা আল্লাহকে চিনল, কিন্তু বর্তমান যুগের মুসলমানরা ঠিক ঐ ধরণের বিপদে প্রকৃত উদ্ধারকারী আল্লাহকে চিনল না, চিনল কুতুব ও ওলী-আউলিয়াদেরকে ! যারা অন্যের উপকার তো দূরের কথা নিজেরা নিজেদের উপকার সাধন বা ক্ষতি রোধের বিন্দুমাত্র ক্ষমতা রাখেন না !

আল্লাহ্‌ ছাড়া কেউ বিপদাপদ দূর করতে সক্ষম নয়ঃ
আল্লাহ্‌ বলেনঃ “আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ্‌ ব্যতীত যাদের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার ধারণায় তাদেরকে ডেকে থাক, তারা তো তোমাদের বিপদাপদ দূর করার ক্ষমতা রাখে না এবং (তাতে সামান্যতম) পরিবর্তন করারও কোন শক্তি তাদের নেই । যাদেরকে তারা ডেকে থাকে তারা নিজেরাই তো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় অনুসন্ধান করে বেড়ায় যে, তাদের মধ্যে কে কত আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে । তাঁরা আল্লাহর দয়া প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে” (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৫৬-৫৭)

এরশাদ করেনঃ “আল্লাহ যদি আপনাকে কোন বিপদে ফেলেন, তবে তা থেকে তিনি ছাড়া উদ্ধার করার ক্ষমতা কেউ রাখে না” (সূরা আনআমঃ ১৭, ইউনুসঃ ১০৭)

আল্লাহ্‌ আরো বলেনঃ “আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে ওলী হিসেবে গ্রহণ করবে ? ওরা তো নিজেদেরই না উপকার করার ক্ষমতা রাখে না কোন ক্ষতি করার সামর্থ রাখে” (সূরা রাদঃ ১৬)

আল্লাহ্‌ আরো বলেনঃ “আপনি বলে দিন, আল্লাহ্‌ যদি তোমাদের ক্ষতি করার ইচ্ছা করে অথবা তোমাদের উপকার করার ইচ্ছা করেন, তবে কে আল্লাহর ইচ্ছাকে রুখে দেয়ার ক্ষমতা রাখে ?” (সূরা ফাতাহ্‌ : ১১)

আল্লাহ্‌ আরো বলেন, “ওরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে মাবূদ গ্রহণ করেছে । অথচ ঐ মাবূদরা কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না; বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে । ওরা নিজেদের কোন ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না । কাউকে মৃত্যু দেয়া, জীবন দেয়া এবং কারো পুনরুত্থানের মালিক নয়” (সূরা ফুরকানঃ ৩)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের ভাল-মন্দের মালিক ননঃ
আল্লাহ্‌ বলে দিয়েছেনঃ “(হে রাসূল!) আপনি বলে দিন, আল্লাহ্‌ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমি আমার নিজের আত্মার ভাল-মন্দ, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি বিষয়ে আমার কোন অধিকার নেই । আমি যদি গায়েবী বিষয়ের খবর জানতাম তবে আমি অনেক কল্যাণ লাভ করতে পারতাম, আর কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারত না । (অতএব আমি গায়েবের কোন খবরই রাখি না) আমি শুধু মুমিন সমপ্রদায়ের জন্যে একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদবাহী” (সূরা আরাফঃ ১৮৮)

আল্লাহ কোরআনে বলেছেন সূরা আহকাফ-৯> হে নবী, বল, আমি জানি না আমার সাথে আল্লাহ কি ব্যবহার করবেন এবং আমি জানি না আল্লাহ তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করবেন ।

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতেরও ভাল-মন্দের মালিক ননঃ
আল্লাহ্‌ তাঁকে কুরআন নাযিল করে আশ্বস্থ করেছেনঃ “আপনি কাউকে ভালবাসলেই তাকে হেদায়াত করতে পারেন না । কিন্তু আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছা হেদায়াত করতে পারেন । হেদায়াতপ্রাপ্তদের সম্পর্কে তিনি অধিক জ্ঞান রাখেন” (সূরাঃ কাসাসঃ ৫৬)‎

আল্লাহ্‌ তাআলা এরশাদ করেনঃ “আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের কারো জন্যে কোন ধরণের অনিষ্টের এবং কল্যাণের মালিক নই” (সূরা জিনঃ ২১)

আরেকটি ঘটনাঃ
পীর সাহেব আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করেছেনঃ হযরত শামছুত তাবরিজী (রঃ) একদা রোম শহরের দিকে রাওয়ানা হলেন । পথিমধ্যে জনৈক অন্ধ বৃদ্ধকে একটি লাশ সম্মুখে নিয়া কাঁদিতে দেখলেন । কারণ জিজ্ঞেস করিলে বৃদ্ধ বলিল, আমার কেউ নেই, ১২ বছর বয়স্ক এটা আমার নাতী গাভী পালিয়া আমাকে দুগ্ধ খাওয়াইত এবং আমার খেদমত করিত । এখন আমার কোন উপায় নাই তাই কাঁদিতেছি । তখন হুজুর (তাবরিজী) বলিলেন, হে ছেলে, তুমি আমার হুকুমে দাঁড়াও । তখনই ছেলেটি উঠিয়া দাঁড়াইল । তাহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল কিরূপে জীবিত হইলে ? নাতি বলিল, আল্লাহর ওলী আমাকে জেন্দা করিয়াছেন । এ খবর খাঁটি মুসলমান বাদশার কাছে পৌঁছিলে তিনি কুতুবকে ডেকে বললেনঃ যদি আল্লাহর আদেশে জেন্দা হইতে বলিতেন । কুতুব সাহেব উত্তর করিলেন, মাবুদের কাছে আবার কি জিজ্ঞাসা করিব- তাঁহার আন্দাজ নাই ? এই বৃদ্ধের একটি মাত্র পুত্র ছিল তাহাও নিয়াছে । বাকী ছিল এই নাতিটি, যে গাভী পালন করিয়া কোনরূপে জিন্দেগী গুজরান করিত, এখন এটিও নিয়া গেল । তাই আমি আল্লাহ্‌ পাকের দরবার থেকে জোরপূর্বক রূহ নিয়া আসিয়াছি...।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়ঃ
বাদশাহ্‌ তাবরিজী সাহেবকে বলিলেন, আপনি শরীয়ত মানেন কিনা ? তিনি বলিলেনঃ নিশ্চয়, শরীয়ত না মানিলে ভীষণ কিয়ামতের দিন হুজুর ছাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফায়াত পাওয়া যাইবেনা । বাদশা বলিলেন, আপনি শেরেক করিয়াছেন, সেই অপরাধে আপনার শরীরের সমস্ত চামড়া খসাইয়া ফেলিতে হইবে । আল্লাহর কুতুব কথা শুনা মাত্র দুই হাতের আঙ্গুলি দ্বারা পায়ের নীচ থেকে আরম্ভ করিয়া গায়ের সমস্ত চামড়া খসাইয়া বাদশাহর সম্মুখে ফেলিয়া জঙ্গলে চলিয়া গেলেন । জঙ্গলে বসিয়া আল্লাহর জেকেরে মশগুল হইয়া গেলেন । ভোর বেলা সূর্যের তাপ চর্মহীন শরীরে লাগা মাত্র কষ্ট পাইলেন এবং সূর্যকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, হে সূর্য্য আমি শরীয়ত মানিয়াছি, কাজেই তুমি আমাকে কষ্ট দিওনা । ইহা বলা মাত্র ঐ দেশের জন্য সূর্য্য অন্ধকার হইয়া গেল । দেশের ভিতর একটা সোরগোল পড়িয়া গেল । বাদশাহ্‌ অস্থির হইয়া ঐ হুজুরকে তালাশ করিতে লাগিলেন । বহু চেষ্টার পর এক জঙ্গলে গিয়া তাহার সাক্ষাৎ পাইলেন এবং আরজ করিলেন হুজুর শরীয়ত জারী করিতে গিয়া আমরা কি অন্যায় করিলাম, যাহার জন্য আমাদের এই মুসীবত আনিয়া দিয়াছেন ? হুজুর তখন সূর্য্যকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, হে সূর্য্য তোমাকে বলিয়াছি আমাকে কষ্ট দিওনা, কিন্ত দেশবাসীকে কষ্ট দেও কেন ? ইহা বলা মাত্র সূর্য্য আলোকিত হইয়া গেল । আল্লাহ্‌ পাক তাহার ওলীর শরীর ভাল করিয়া দিলেন ।

পীর সাহেব উক্ত ঘটনা উল্লেখ করে টিকায় লিখেছেনঃ
এধরনের কথা বলা আমাদের মত সাধারণ লোকদের জন্য পরিস্কার কুফুরি বলিয়া গণ্য হইবে । কিন্তু আল্লাহ্‌ পাকের দেওয়ানা বান্দাগণ এশ্‌কের চরম হালতে অন্তরের ভারসাম্য হারাইয়া একপ্রকার বেহুশ অবস্থায় কদাচিৎ এরূপ বলিয়া ফেলেন । আল্লাহ্‌ পাকের আশেকদের এধরনের ঊক্তি এশকের জোশ বশতঃ ঘটিয়া যায়, তাই আল্লাহ্‌ পাকের নিকট তাহা অপরাধ বলিয়া গণ্য হয়না । যেরূপ শিশু যদি পিতার মুখে থাপ্পড় মারে কিংবা দাড়ি ছিড়িয়া ফেলে, পিতার নিকট তাহা পীড়াদায়ক হয়না বরং তাহাতে আরো মহব্বতের জোয়ার উঠে । [দ্রঃ ভেদে মা'রেফত বা ইয়াদে খোদাঃ ১৫-১৭ নং পৃষ্ঠা]

ক) মারেফতের পীররা মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন !
কিন্তু ইসলাম কী বলে ? মানুষকে জীবন দেয়া ও মৃত্যু দেয়া একমাত্র আল্লাহরই কাজ । তিনিই জীবন-মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন (দ্রঃ সূরা মুলকঃ ২নং আয়াত)

আল্লাহ্‌ সত্যই বলেছেনঃ “ওরা যদি সত্যিকার ভাবে আল্লাহ্‌, নবী এবং তাঁর নিকট যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান রাখত, তবে তাদেরকে ওলী হিসেবে গ্রহণ করত না । কিন্তু তাদের অনেক লোকই ফাসেক” (সূরা মায়েদাঃ ৮১)

খ) সূর্য-চন্দ্র মারেফতী পীরদের কথা শুনে থাকে !
সূর্য-চন্দ্র ইত্যাদি আল্লাহর আজ্ঞাবহ, কোন মানুষের আজ্ঞাবহ নয় । এগুলো আল্লাহর বড় বড় নিদর্শন ।
আল্লাহ্‌ বলেনঃ “এবং তাঁর নিদর্শন সমূহের মধ্যে রয়েছে- দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্র” (সূরা হা-মীম আস্‌ সাজদাহ্‌ : ৩৭)

“তোমরা কি লক্ষ্য করো না যে, কিভাবে আল্লাহ্‌ সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন । এবং সেখানে চন্দ্রকে করেছেন আলো স্বরুপ ও এবং সূর্যকে করেছেন প্রদীপ স্বরুপ (সূরা নূহঃ ১৬-১৭)

সূর্য-চন্দ্রসহ পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহকে সিজদা করে থাকে । আল্লাহ্‌ বলেনঃ
“আপনি কি দেখেন না, আকাশ সমূহে যা কিছু আছে এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সকলেই আল্লাহকে সিজদা করে, আল্লাহকে আরো সিজদা করে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, পাহাড়, বৃক্ষ, প্রাণীকুল এবং অনেক মানুষ..” (সূরা হাজ্জঃ ১৮)

এই সূর্য-চন্দ্র-নক্ষত্র আল্লাহর নির্দেশে চলে । আল্লাহর নির্দেশেই তাদের গতি থেমে যাবে, তাদের আলো নিভে যাবে ।
আল্লাহ্‌ বলেনঃ “যখন সূর্য আলোহীন হয়ে পড়বে, যখন নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে...” (সূরা তাকভীরঃ ১-২) সন্দেহ নেই যে কিয়ামতের সময়ই চন্দ্র-সূর্যের এই অবস্থা হবে, তার পূর্বে নয় ।

গ) মারেফতের পীরগণ বাহ্যিকভাবে ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান মানতে বাধ্য নন !

ঘ) আল্লাহর শানে বেয়াদবী মূলক কথা মুখে উচ্চারণ করলেও মারেফতের পীরদের কোন অপরাধ নেই !

আল্লাহ্‌ বলেনঃ “যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের অন্বেষণ করবে তার থেকে তা গ্রহণ করা হবে না । আর সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভূক্ত হবে” (সূরা আলে ইমরানঃ ৮৫)

মারেফতের পীর-ওলীদের মর্যাদা নবীদের চেয়েও বেশী !
পীর সাহেব লিখেছেনঃ “হে মুমিন ভাই সকল ! এখন বুঝিয়া লউন যে, মূর্খ লোক মা'রেফতের উপরের দরজায় পৌঁছতে পারে কিনা এবং ইহাও খেয়াল করুন যে, মা'রেফতের রাস্তা কত বড় কঠিন ও কত গোপন, যেখানে মূছা (আঃ) এর মত অত বড় পয়গাম্বরও একজন সাধারণ রাখালের হাল বুঝিতে পারেন নাই” (আশেক মাশুক ৮৮-৯০ পৃঃ)

পীর সাহেব উল্লেখিত উক্তি দ্বারা পরোক্ষভাবে মানুষকে নবী-রাসূলদের অনুসরণ থেকে বিরত রেখে মা'রেফতের পীরদের অনুসরণের প্রতি আহ্বান করেছেন ।
আমরা জানি معرفة (মা'রেফত) শব্দটি আরবী, তার অর্থ চেনা বা জানা । একজন মানুষ কোন বিষয় সম্পর্কে জানলে বা চিনলে তার মা'রেফত হাসিল হল । আল্লাহকে চেনা ও জানার জন্য তাঁর প্রদত্ব কিতাব ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত ব্যতীত তৃতীয় কোন রাস্তা নেই । এজন্যেই

ইমাম ইবনে তাইমিয়া লিখেছেনঃ “ইবনে আরাবী তার রচিত ফুসুস নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ “আল্লাহর ওলীগণ কোন মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি আল্লাহর নিকট থেকে নির্দেশ পান । আর নবীগণ ফেরেশতার মাধ্যমে নির্দেশনা লাভ করে থাকেন ।” তার এই কথা মিথ্যা ও বাতিল । কেননা কোন ওলী আল্লাহর নির্দেশনা লাভ করতে পারেন না, তাঁর কাছে প্রেরীত নবী-রাসূলের মাধ্যম ছাড়া । অবশ্য ওলীর কাছে যদি কোন বিষয়ে এলহাম হয়, তবে তা ভিন্ন কথা । কিন্তু সেই এলহামের সত্যতা যাচাই করতে হবে কুরআন-সুন্নাহর মাপকাঠিতে” (মাজমু’ ফাতাওয়াঃ ১/১৪৯)

আল্লাহ্‌ বলেনঃ “কোন মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, ওহীর মাধ্যমে কিংবা পর্দার অন্তরালে অথবা দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে আল্লাহ্‌ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন । তাঁর ইচ্ছানুসারে তাঁরই অনুমতিক্রমে দূত (জিবরীল বা অন্য ফেরেশতা) ওহী আনয়ন করে থাকেন । নিশ্চয় তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়” (সূরা শূরাঃ ৫১)

ইমাম ইবনে হাজার হায়তামী (রহঃ) বলেন, কোন মানুষ যদি ধারণা করে যে, অন্তরের বিশুদ্ধতার মাধ্যমে নবুওতের সম্মান লাভ করা যায়, অথবা বিশ্বাস করে যে, কোন কোন ওলী নবী থেকে উত্তম, অথবা বলে যে তার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশনা এসে থাকে- যদিও সে নবুওতের দাবী না করে, তবে এ ব্যক্তি কাফের ও মুরতাদ হিসেবে গণ্য হবে । মুসলিম শাসকের উপর ওয়াজিব হচ্ছে তাকে হত্যা করা (আল যাওয়াজের আন ইক্বতিরাফিল কাবায়ের ১/৬৬ পৃঃ)

ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ ইমাম গাজালী (রহঃ) সুস্পষ্টরূপে একথা উল্লেখ করেছেন যে, কোন মানুষ যদি নবুওতের মর্তবার উপরে বেলায়াতের মর্তবাকে উচ্চ দাবী করে, তবে তাকে হত্যা করা আমার নিকট একশত কাফেরকে হত্যা করার চাইতে অধিক পছন্দনীয় । কেননা এই ব্যক্তি দ্বারা দ্বীনের ভয়ানক ক্ষতি সাধিত হবে (মাজমু ফাতাওয়া ৪/১০৪ পৃঃ)

প্রশ্নঃ কোন ভবিষ্যৎ বর্ণনাকারী পীরের কথা কি বিশ্বাস করা যায় ?
উত্তরঃ না, কোন পীরের ভবিষ্যৎবাণী বিশ্বাস করা শিরক ।

কুরআনের দলীলঃ “(হে নবী) বলুনঃ আসমান ও জমীনের গায়িবের খবর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানের না ।” (সুরা নামলঃ ৬৫)

হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি কোন গণক বা ভবিষ্যৎ বর্ণনাকারী ব্যক্তির নিকট গমন করে এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করে, তবে সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাকে যেন অস্বীকার করল”(সহীহ্, আহমদ)

প্রশ্নঃ আল্লাহ ও নবী রাসুল ছাড়া অন্য কেউ কি কোন ব্যাক্তিকে জান্নাতি বলতে পারে ?
উত্তরঃ আল্লাহ কোরআনে বলেছেন সূরা আহকাফ-৯> হে নবী, বল, আমি জানি না আমার সাথে আল্লাহ কি ব্যবহার করবেন এবং আমি জানি না আল্লাহ তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করবেন ।

বুঝার চেষ্টা করুন, নবী নিজেই যেখানে জানেন না তার সাথে কি ব্যবহার হবে, সেখানে আমাদের দেশের ৯০% মানুষ মনে করে আব্দুল কাদের জিলানী, শাহ জালাল, শাহ পরান (রহঃ) জান্নাতি । তারা জান্নাতের সার্টিফিকেটই দিয়া দেয় ।

অনেকে তাদের মুখে জান্নাতি না বললেও মনে মনে সেটা বিশ্বাস করে । আর ঈমান হলো সেটাই যা অন্তরে বিশ্বাস করা হয়, মুখে স্বীকার করা হয় এবং কার্য দ্বারা সম্পাদন করা হয় ।

কবরপুজারী, মাজারপুজারীরা মুখে অস্বীকার করলেও তাদের অন্তর এই স্বাক্ষ্যই দেয় যে তাদের মাযারে শায়িত বুজুর্গ জান্নাতি ।
আল্লাহ এই পীর পুজারী, কবর পুজারীদের হেদায়েত দান করুন । আমীন ।

প্রশ্নঃ পীর, মাযারকে সিজদা করা কি যায়েজ ?
পীরগণ ও তাদের মুরিদগণ কোরআন থেকে দলিল দেন যে আদম আ: কে সিজদাহ করতে বলা হইছিল ফেরেশতাদের । কারণ কি ? কারণ তিনি তাদের চেয়ে বেশী জ্ঞান সম্পন্ন ছিলেন । পাশাপাশি আদম আ: ও ফেরেশতাদের মধ্যে জ্ঞান এর প্রতিযোগীতায় তিনি জয়লাভ করেছিলেন ।

তো আদম আ: এর যদি জ্ঞান বেশী থাকার কারণে ফেরেশতারা তাকে সিজদাহ করে । তাহলে পীরের জ্ঞান বেশী থাকার কারণে কেন মুরীদরা তার সিজদাহ করতে পারবে না ?

শয়তান যেহেতু আদম আ: কে সিজদাহ করেনি, তাই সে জাহান্নামী । তেমনি বর্তমানে যে পীরদের সিজদাহ করবে না তারাও শয়তান, জাহান্নামী । নাউযুবিল্লাহ

তাদের এই দলিল এক কথাতেই খন্ডন করা যায় যে,
জ্ঞান বেশী থাকার কারণে যদি কাউকে সিজদা করা যেত তাহলে বিশ্ব নবী, সর্বশেষ ও চুড়ান্ত নবী, আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মোহাম্মদ সা: ছিলেন সেই সিজদাহ পাওয়ার সর্বপ্রথম দাবীদার এবং সবচেয়ে যোগ্য । সকল পীরের থেকেও যোগ্য ।

কিন্তু সাহাবাগণ কি তাকে সিজদাহ করেছিলেন ?
মহানবী সা: কি তাদের সিজদাহ করতে বলেছিলেন তাকে । নাকি এক আল্লাহকে ?

আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা করা সুষ্পষ্ট হারাম । কুরআনের অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে ‎নববী দ্বারা যা দিবালোকের ন্যয় পরিস্কার । একথা মনে হয় অন্ধ পীর ও মাজারপূজারী ছাড়া ‎সকল মুসলমানরাই জানে ।

প্রশ্নঃ: যারা মা‘রেফতী আক্বীদায় বিশ্বাস করে, মাযার ও কবর পূজা করে, ছালাত ও ছিয়ামের ধার ধারে না তাদের জানাযায় শরীক হওয়া যাবে কি ?
উত্তর : মা‘রেফতী আক্বীদা বলতে শরী‘আতে ভিন্ন কোন আক্বীদা নেই । যারা ইসলামকে শরী‘আত, মা‘রেফত, তরীকত, হাকীকত ইত্যাদি বলে ভাগ করেছে তারা মনগড়া দ্বীনের তাবেদারী করে । অথচ আল্লাহর নিকট মনোনীত দ্বীন শুধু ইসলাম (আলে ইমরান ১৯) ।
ইচ্ছা করে ছালাত ত্যাগ করা কুফরী কাজ (মুসলিম হা/১৩৪) ।
আর যারা ছালাত ছিয়ামের ধার ধারে না তারা ইসলাম থেকে দূরে । তাদের জানাযায় শরীক হওয়ার প্রশ্নই আসে না ।

আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, যারা কুফরী অবস্থায় মারা যাবে আপনি তাদের জানাযা পড়াবেন না (তওবা ৮৪)

প্রশ্ন: কোন রোগের কারণে গাছের শিকড় বা কোন গাছড়া মাদুলীর মধ্যে ঢুকিয়ে ব্যবহার করা যাবে কি ?
উত্তর: মাদুলী হচ্ছে তাবীয । আর যেকোন ধরনের তাবীয ব্যবহার করা শিরক ।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাবীয লটকালো সে শিরক করল (আহমাদ হা/১৬৯৬৯, সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৯২; তিরমিযী হা/২০৭২, সনদ হাসান)

প্রশ্ন: আমরা কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার উপর কোন পীর, ইমাম, আউলিয়া বা মণিষীদের কথাকে অথবা তাদের রচিত বই পুস্তককে প্রাধান্য দিব ?
উত্তরঃ না, অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার উপর এক বিন্দু পরিমাণ কাউকে প্রাধান্য দেয়া জায়িয নয়, বরং আল্লাহর হুকুমের সম্পূর্ণ পরিপন্থি ।

কুরআনের দলীলঃ “হে ঈমানদারগণ ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর কাউকে প্রাধান্য দিবে না”(সুরা হুজরাতঃ ১)

হাদীসের দলীলঃ “আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণের কারো কোন আনুগত্য চলবেনা । একমাত্র ভাল কাজেই আনুগত্য চলবে”(বুখারী ও মুসলিম)

উল্লেখিত কুরআন ও হাদিসের বিবরণ মোতাবিক ‎আমরা সহজেই অনুমান করে নিতে পারি আমাদের দেশের ভন্ড মাযারপূজারী ও ‎কবরপূজারীরা কি পরিমাণ শিরকী কর্মকান্ডে লিপ্ত । তাই জ্ঞান লাভের বা সত্য আসার পরপরই এসব পীরপুজা, মাযারপুজা, পীর সিজদাহ ছাড়ার আহবান রইল । আমাদের দায়িত্ব কেবল সত্য বিষয়টি আপনাদের কাছে পৌঁছে দেয়া ।

হে ঈমানদারগণ ! অধিকাংশ আলেম ও দরবেশদের অবস্থা এই যে তারা জনগনের ধনমাল বাতিল পন্থায় ভক্ষণ করে তাদেরকে আল্লাহর পথ হতে ফিরিয়ে রাখে (তওবা আয়াত ৩৪);

সঠিক ইসলামিক এসে সহিহ আক্বীদাহ’র উপর ইবাদত বন্দেগী করুনঃ-
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মূসা (আঃ)-এর উম্মত ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে । তন্মধ্যে একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে । ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সে জান্নাতী দল কোনটি ? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি ও আমার ছাহাবীগণ যে মত ও পথের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি, সেই মত ও পথের উপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তারাই জান্নাতী দল’ {আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৭১}

উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মিরকাত শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে,
"জেনে রাখ ! (উক্ত ৭৩টি দল) প্রধানতঃ ৮টি দলে বিভক্ত যা "মাওয়াক্বিফ" কিতাবে বর্ণিত রয়েছে- (১) মু'তাযিলাহ---এরা ২০ দলে বিভক্ত (২) শিয়া---এরা ২২ দলে বিভক্ত (৩) খারেজী---এরা ২০ দলে বিভক্ত (৪) মরজিয়্যাহ---এরা ৫ দলে বিভক্ত (৫) নাজ্জারিয়্যাহ---এরা ৩ দলে বিভক্ত (৬) জাবারিয়্যাহ---এরা ১ দলে বিভক্ত (৭) মুশাব্বিহা---এরা ১ দলে বিভক্ত উল্লেখিত ৭২টি দল, তারা প্রত্যেকেই জাহান্নামী । (৮) নাজিয়্যাহ---এরা ১ দলে বিভক্ত আর নাজিয়্যাহ হল-সাইয়িদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্পষ্ট সুন্নত ও উজ্জ্বল তরীক্বতের অনুসারী"

হযরত আব্দুল কাদির জ্বীলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আলোড়ন সৃষ্টিকারী গুনিয়াতুত্ তালেবীন কিতাবের ১৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,
"(হাদীস শরীফে বর্ণিত) ৭৩টি দল মুলতঃ ১০টি মুল দলের অন্তর্ভুক্ত যার বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নরূপঃ (১)আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত---এরা ১ দলে বিভক্ত (২) খারেজী---এরা ১৫ দলে বিভক্ত (৩) মু'তাযিলাহ---এরা ৬ দলে বিভক্ত (৪) মরজিয়্যাহ---এরা ১২ দলে বিভক্ত (৫) শিয়া---এরা ৩২ দলে বিভক্ত (৬) জাহমিয়্যাহ---এরা ১ দলে বিভক্ত (৭) নাজ্জারিয়্যাহ---এরা ১ দলে বিভক্ত (৮) জেরারিয়্যাহ---এরা ১ দলে বিভক্ত (৯) কিলাবিয়াহ---এরা ১ দলে বিভক্ত (১০) মুশাব্বিহা---এরা ৩ দলে বিভক্ত
উল্লেখিত সবগুলো দল মিলে ৭৩ দল হলো, যে সম্পর্কে সাইয়িদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে এরশাদ করেছেন । উক্ত দলগুলোর মধ্যে শুধুমাত্রর ১টি দলই নাজাত প্রাপ্ত আর সেটা হল ফিরক্বায়ে নাজী অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত"

উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মিরকাত শরীফের শরাহ তানজীমুল আশতাত কিতাবের ১ম খন্ডের ১২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
"হাদীস শরীফে যে ৭২টি ফিরক্বাহ কথা উল্লেখ আছে উক্ত ফিরক্বাহসমূহের মুলে হলো ৬টি যথাঃ (১) খারেজী---এরা ১৫ দল (২) শিয়া---এরা ৩২ দল (৩) মু'তাযিলাহ---এরা ১২ দল (৪) জাবারিয়্যাহ---এরা ৩ দল (৫) মরজিয়্যাহ---এরা ৫ দল (৬) মুশাব্বিহা---এরা ৫ দল উল্লেখিত সবগুলো দল মিলে ৭৩টি দল,যে সম্পর্কে সাইয়িদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে এরশাদ করেছেন । উক্ত দলগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ১টি দলই নাজাত প্রাপ্ত, আর সেটা হলো "ফিরক্বায়ে নাজী" অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত"

উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত শায়খ আব্দুল হক দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি আশয়াতুল লোমাত কিতাবের ১ম খন্ডের ১৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন যে,
"ইসলামের বড় দল ৮টি । যথাঃ (১) মু'তাযিলাহ---এরা ২০ দল (২) শিয়া ---এরা ২২ দল (৩) খারেজী---এরা ২০ দল (৪) মরজিয়্যাহ---এরা ৫ দল (৫) নাজ্জারিয়্যাহ---এরা ৩ দল (৬) জাবারিয়্যাহ---এরা ১ দল (৭) মুশাব্বিহা---এরা ১ দল (৮) নাজিয়্যাহ---এরা ১ দল"
উল্লেখ্য, ইমাম-মুজতাহিদগণ ৭২টি বাতিল ফিরক্বাহ নাম ও সংখ্যার ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করলেও নিম্নে বর্ণিত মূল দলগুলো বাতিল ও জাহান্নামী হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমতঃ (১) খারেজী (২) শিয়া (৩) মরজিয়্যাহ (৪) জাহমিয়্যাহ (৫) মু'তাযিলাহ (৬) ক্বদরিয়া (৭) জাবারিয়্যাহ (৮) মুশাব্বিহা ।
কারণ উক্ত ৮টি দলের প্রত্যেকেই কালিমা পাঠ করে, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি ফরয-ওয়াজিব ও সুন্নত আমল গুলোও প্রায় পালন করে । এমনকি অনেক বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা পোষণ করে । অথচ তার পরেও তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে গোমরাহ, বাতিল ও জাহান্নামী । কারণ তারা কোন কোন ক্ষেত্রে কূফরীমূলক আক্বীদা পোষণ করে ।

চোখ থাকতে অন্ধভাবে কারো অনুসরন না করে কুরআন হাদিসের সাথে মিলিয়ে ইবাদত করুনঃ-
পরকালীন জীবন অনন্তকাল যেখানে থাকতে হবে, যে জীবনের কোন শেষ নেই, সে জীবনের পাথেয় তথা নেকী অর্জন করতে হ’লে, যাচাই-বাছাই করে আমল করা অতীব জরূরী ।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ ! যদি ফাসেক বা পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন খবর আনয়ন করে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত না কর এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও’ {হুজুরাত ৬}

দেশে ধর্মীয় গোরামীর কিছু জ্ঞান পাপি লোক আছে, তাদের নিকট কুরআন ও ছহীহ হাদীছের কথা বলাই মুশকিল । কারণ মুরুব্বীদের সাথে নাকি আদবের সাথে কথা বলতে হয় । তাদের কথা যাচাই-বাছাই না করে গ্রহণ করলে কোন কথা নেই । কিন্তু ভুল ধরিয়ে দিয়ে সঠিকটা পেশ করলেই আদবের প্রশ্ন উঠে । তখন তারা রেগে গিয়ে বলেন, রাখুন আপনার কুরআন-হাদীছ ! অত যাচাই-বাছাই করতে গেলে শেষে কম্বলের খোঁজই থাকবে না । অর্থাৎ কম্বলের পশম বাছাই করতে গেলে শেষে কম্বল থাকবে না । তারা আরো বলেন, কত মানুষ যে ছালাতই পড়ে না ? তার খোঁজ-খবর নেই, আপনি আসছেন কুরআন হাদিস দেখাতে ? যে যেমনভাবে পারে ইবাদত করুক, এতে কিছু আসে যায় না । শুধু কুরআন-হাদীছ মানলেই চলবে না । নাউযুবিল্লাহ !

তওবাঃ-
সূরা আয-যুমার-৫৩> বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ ।কিন্তু যারা তওবা করবে, ঈমান আনবে এবং ভালো কাজ করবে আল্লাহ তাদের খারাপ কাজসমূহকে ভাল কাজ দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন । আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু (ফুরকান আয়াত ৭০)

কিন্তু যারা তওবাহ করে ও নিজেদের কর্মনীতির সংশোধন করে নিবে এবং যা গোপন করেছিল তা প্রকাশ করে, আমি তাদের ক্ষমা করে দিব । প্রকৃত পক্ষে আমি তওবাহ গ্রহনকারী ও দয়ালু (বাকারাহ আয়াত ১৬০)

আবু মুসা আব্দুল্লাহ বিন কায়েস আল-আশআরী (রাঃ) বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেছেনঃ পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ দিনের অপরাধীদের ক্ষমা করার জন্য রাতে এবং রাতের অপরাধীদের ক্ষমা করার জন্য দিনে ক্ষমার হাত প্রসারিত করে রাখেন (মুসলিম ২য় খন্ড ২৫৮ পৃঃ)
১৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×