somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

orennejuddho

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Published On 24-06-2010অরুন্ধতী রায়, বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতের প্রখ্যাত লেখিকা ও মানবাধিকার কর্মী। তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে অঘোষিতভাবে নিঃশব্দে ঘুরে আসেন সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ মাওবাদী অধ্যুষিত মধ্য ভারতের যুদ্ধক্ষেত্র দন্ডকারণ্য বনাঞ্চল। এখানে রাষ্ট্র সমর্থিত লুণ্ঠনকারী শোষকদের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে ভূমিপুত্র আদিবাসীরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। এসব সশস্ত্র যোদ্ধা, তাদের পরিবার ও মাওবাদী সহযোদ্ধাদের সঙ্গে লেখিকা সামনাসামনি কথা বলেছেন। সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেছেন পুরো পরিস্থিতি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক সপ্তাহ অবস্থানকালে যা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন তার এক অসাধারণ বাঙ্ময় বর্ণনা তিনি দিয়েছেন। নিবন্ধটি প্রকাশিত হয় দিল্লির ‘আউটলুক’ সাময়িকীতে। অরুন্ধতী রায়ের এই লেখাটির সংক্ষেপিত ভাষান্তর ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হলো ভারতের মধ্যাঞ্চলের জঙ্গলে কি ঘটছে তা সম্যক উপলব্ধির জন্য।
ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে যারা বিবেচিত তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা একটি চিরকুট আমার দরজার নিচ দিয়ে ঢুকল। খামে মোড়া, টাইপ করা, সংক্ষিপ্ত আকারের এই চিরকুটটির জন্যে গত কয়েক মাস ধরেই অপেক্ষা করছিলাম আমি।
নির্ধারিত দুটি দিনে মোট চারটি সময় দেওয়া আছে। এর যে কোনো দিনের যে কোনো একটি সময়ে ছত্তিশগড়ের দান্তেয়ারস্থ মা দান্তেশ্বরী মন্দিরে পৌঁছতে হবে আমাকে। আবহাওয়া খারাপ থাকতে পারে, গাড়ির চাকা ফুটো হয়ে যেতে পারে, অবরোধ থাকতে পারে, থাকতে পারে যানবাহন ধর্মঘটও। অথবা নিতান্তই ভাগ্য অপ্রসন্নতার শিকার হতে পারি। এসব ভেবেই সম্ভবত এতগুলো বিকল্প সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, লেখকের সঙ্গে থাকতে হবে ক্যামেরা, তিলক কাটা কপাল এবং নারকেল। সাক্ষাৎকারীর মাথায় থাকবে টুপি, আউটলুক পত্রিকার হিন্দি সংস্করণ ও কলা। শব্দসংকেতটি হচ্ছে : নমস্কার গুরুজি।
নমস্কার গুরুজি। আমি একটু ধন্ধে পড়ে গেলাম। যিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং আমাকে নিয়ে যাবেন তিনি আবার আমাকে একজন পুরুষ মানুষ ভেবে রাখেননি তো। আমার একটি পুরুষ সাজ নিয়ে নেওয়া উচিত কিনা তাও ভাবলাম।
দান্তেওয়ারার বর্ণনা বহুদিক থেকেই দেওয়া যায়। চারদিকে বিরোধের আভাস। যেন ভারতের অভ্যন্তরেই সীমান্তবর্তী দেশের একটি শহরের মতো এর অবস্থা। এটি একটি যুদ্ধের কেন্দ্রস্থল। সবকিছুই কেমন যেন খাপছাড়া। দান্তেওয়ারার পুলিশদের গায়ে সাধারণ পোশাক আর বিদ্রোহীদের গায়ে ইউনিফর্ম। কারা তত্ত্বাবধায়ক কারান্তরালে আর বন্দিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে বাইরে (তিনশ’র মতো বন্দি দুই বছর আগে শহরের পুরনো এলাকায় অবস্থিত জেল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল)। যেসব নারী ধর্ষিত হয়েছিলেন তারা পুলিশি হেফাজতে আটক, আর ধর্ষণকারীরা বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছে বাজার এলাকায়।
ইন্দ্রাবতী নদীর অপর পাড়টি মাওবাদীদের নিয়ন্ত্রণে। পুলিশের ভাষায় এটি হচ্ছে ‘পাকিস্তান’। সেখানকার গ্রামগুলো জনশূন্য, তবে জঙ্গলগুলো মানুষে ভর্তি। যেসব শিশুর স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল তারা এখন ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। অরণ্যের ভেতরকার চমৎকার গ্রামগুলোতে স্থাপিত ইটপাথরের তৈরি স্কুল বিল্ডিংগুলোর কোনো কোনোটি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, চোখে কেবল পড়ে সেগুলোর ধ্বংসস্তূপ। আর যেসব স্কুল বিল্ডিং এখনও অক্ষত আছে সেগুলো পুলিশে ভর্তি। অরণ্যে যে মরণপণ লড়াইয়ের বিস্তার ঘটছে সে যুদ্ধ ভারত সরকারের জন্যে যেমনি গর্বের তেমনি লজ্জারও।
অপারেশন গ্রিন হান্ট ঘোষণা করেও তা আবার অস্বীকার করা হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদাম্বরম (তিনিই এই যুদ্ধের মূল নিয়ন্ত্রক বা সিইও) বলেছেন অপারেশন গ্রিন হান্ট বলে কিছু নেই, এটা মিডিয়ার সৃষ্টি। অথচ এখনো এর জন্যে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, লাখ লাখ সৈন্যও প্রস্তত রাখা হয়েছে। যদিও যুদ্ধাঞ্চলটি ভারতের মধ্যাঞ্চলের গভীর অরণ্যে তবুও তার ভয়াবহ প্রভাব আমাদের সবার জীবনেই পড়ছে।
জঙ্গলের বিবদমান পক্ষ দুটি প্রায় সব দিক থেকেই অসম। একপক্ষ বিপুল সংখ্যার আধাসামরিক বাহিনী। তাদের রয়েছে অর্থ, অস্ত্র, মিডিয়া এবং বিশ্বের উদীয়মান এক বৃহৎশক্তির ঔদ্ধত্য।
অপরপক্ষ সাধারণ গ্রামবাসী। হাতে প্রচলিত কিছু অস্ত্র। তবে তাদের পেছনে রয়েছে দারুণভাবে সংগঠিত ও বিশেষ আদর্শ দ্বারা উদ্বুদ্ধ মাওবাদী গেরিলারা। এদের রয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহের অসাধারণ ও দারুণ এক ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস।
ভারতের মাওবাদীরা আর আধাসামরিক বাহিনী বহু পুরনো প্রতিপক্ষ। অনেকবারই তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুঝেছে। গত পঞ্চাশের দশকে তেলেঙ্গানায়, ষাটের দশকের শেষ ও সত্তরের দশকে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীকাকুলামে এবং পুনরায় অন্ধ্র, বিহার ও মহারাষ্ট্রে গত আশির দশক থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত। তারা পরস্পরের কৌশলের সঙ্গে পরিচিত এবং একে অন্যের রণ কৌশলগুলো খুব নিবিড়ভাবেই প্রত্যক্ষ করেছে। প্রত্যেকবারই যদিও মনে হয়েছে মাওবাদীরা (অথবা তাদের পূর্বসূরিরা) কেবল পরাজিতই হয়নি, আক্ষরিক অর্থেই তারা শারীরিকভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু তথাপি বারবার তারা ফিরে এসেছে। এসেছে অনেক বেশি সংগঠিত হয়ে, দৃঢ়তা নিয়ে, পূর্বেকার চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তারকারীরূপে। আজ আবারও তাদের উত্থান ঘটেছে এবং তারা ছড়িয়ে পড়েছে ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের খনিজসম্পদে ভরপুর অরণ্যাঞ্চলগুলোতে। এই অঞ্চলগুলোই ভারতের কোটি কোটি আদিবাসীর আবাসস্থল। একই সঙ্গে এটি আবার বিশ্ববেনিয়াদের (কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের) স্বপ্নের ভূমিও।
উদারদৃষ্টিতে দেখলে বলাই যায় যে, জঙ্গলের এই লড়াইটি চলছে ভারত সরকার এবং মাওবাদীদের মধ্যে। মাওবাদীরা নির্বাচনকে ধোঁকাবাজি আর পার্লামেন্টকে শূকরের খোঁয়াড় হিসেবে অভিহিত করে থাকে। প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থাটি উৎখাত করতে চায় তারা। মাওয়ের জন্মের শত শত বছর আগে থেকেই ভারতের মধ্যাঞ্চলের এই আদিবাসীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার একটি ঐতিহ্য রয়েছে। সুবিধার জন্যে সে ইতিহাস ভুলে যাওয়াই ভালো। (তবে সেটিই হচ্ছে প্রকৃত ইতিহাস। যদি তা না করতো তবে এতদিনে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত)। হু, ওড়াও, কোল, সাঁওতাল, মুন্ডা ও গন্ডরা বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ, জমিদার এবং মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। সেসব বিদ্রোহ কঠোর হস্তেই দমন করা হয়েছে, হাজার হাজার বিদ্রোহীকে হত্যা করে। কিন্তু এত কিছুর পরও তারা কোনো দিন বশ্যতা স্বীকার করেনি। এমনকি স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গে নকশালবাড়ি গ্রামকে ঘিরে প্রথম যে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল যেটিকে মাওবাদী বিদ্রোহ বলা যায়, সেই বিদ্রোহেরও প্রধান শক্তি ছিল এই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষরাই। (সে সময় নকশালপন্থী বলে যে শব্দটি চালু ছিল এখনকার মাওবাদী কথাটি তারই পরিপূরক)। তখন থেকেই নকশালপন্থী রাজনীতির সঙ্গে আদিবাসীদের বিদ্রোহ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে যায়। তাই আদিবাসীদের প্রসঙ্গ এলেই নকশাল প্রসঙ্গটিও আসে।
এসব বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই সংক্ষুব্ধ একটি জনগোষ্ঠী জন্ম নিয়েছে যাদেরকে ভারত সরকার খুব পরিকল্পিতভাবেই বিচ্ছিন্ন ও প্রান্তিক অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ভারতীয় গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত ভারতের সংবিধানটি ১৯৫০ সালে পার্লামেন্টে গৃহীত হয়। তবে সেটি ছিল ভারতের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য একটি বিষাদের দিন। সংবিধান ঔপনিবেশিক নীতিকেই স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকে রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত করে। ভারতের সব আদিবাসী জনগোষ্ঠী রাতারাতি নিজভূমে পরবাসীতে পরিণত হয়। এর মধ্য দিয়ে বনের সম্পদের ওপর আদিবাসীদের এতদিনকার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। এই প্রক্রিয়া তাদের পুরো জীবনযাত্রাকেই বিপর্যস্ত করে দেয়। রাষ্ট্র তাদের ভোটের অধিকার প্রদানের বিনিময়ে বেঁচে থাকার উপকরণ ও জীবনের স্বাতন্ত্র্য কেড়ে নেয়।
ভূমি থেকে উৎখাত করে ভাঁওতাবাজির মাধ্যমে সরকার তাদের এক চক্রাকার দারিদ্রে্যর মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের এই দারিদ্র্যকেই আবার ব্যবহার করা হচ্ছে তাদেরই বিরুদ্ধে। বারবার বাঁধ নির্মাণ, সেচ প্রকল্প ও খনি খননের কারণে বিপুল সংখ্যক আদিবাসী বাসুতচ্যুত হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব কর্মকান্ড আদিবাসীদের দেশের মূল জনস্রোতে নিয়ে আসার চেষ্টা কিংবা তাদের জীবনে আধুনিক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগানো হচ্ছে। ভারতের অভ্যন্তরে কোটি কোটি যে মানুষ স্থানচ্যুত হচ্ছে (বড় বড় বাঁধ প্রকল্পের কারণেই ৩ কোটিরও বেশি মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে), যারা ভারতীয় অগ্রযাত্রার উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে তাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই আদিবাসী। সুতরাং সরকার আদিবাসীদের কল্যাণের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই শংকিত না হয়ে পারা যায় না।
এক্ষেত্রে সাম্প্রতিকতম উদ্বেগের কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের একটি মন্তব্য। তিনি বলেছেন, আদিবাসীরা জাদুঘর সংস্কৃতির মধ্যে বসবাস করুক তা তিনি চান না। তবে তিনি যতদিন বিশ্ব বেনিয়াদের (কর্পোরেট ব্যবসায়ী) আইনজীবী হিসেবে বড় বড় খনি খনন কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন ততদিন কিন্তু তার কাছে আদিবাসীদের কল্যাণের বিষয়টি মোটেই গুরুত্ব পায়নি। এ ঘটনার মধ্যেই আদিবাসীদের নিয়ে তার এই নতুন উদ্বেগের উদ্দেশ্যটি খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
বিগত পাঁচ বছর কিংবা তারও বেশি সময়ে ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গের সরকারগুলো বিশ্ব বেনিয়া গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে শত শত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। ইস্পাত প্রকল্প, ধাতব কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র , অ্যালুমিনিয়াম পরিশোধনাগার, বাঁধ এবং খনি খনন সংক্রান্ত কোটি কোটি ডলারের এসব সমঝোতা স্মারকের সবগুলোই স্বাক্ষরিত হয়েছে একেবারেই গোপনে। এসব সমঝোতা স্মারককে টাকায় পরিণত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আদিবাসীদের রুখে দাঁড়ানো ছাড়া কোনো উপায় আর রাখা হয়নি। আর সে কারণেই এই যুদ্ধ।
গণতন্ত্রের দাবিদার একটি দেশ যখন নিজের ভৌগোলিক সীমার অভ্যন্তরেই যুদ্ধ ঘোষণা করে সে যুদ্ধের রূপটি তখন কী রকম দাঁড়ায়? প্রতিরোধ কি তখন কেবলই কিছু আকস্মিক ঘটনা? তাই কি হওয়া উচিত? কারা এই মাওবাদী? তারা কি কেবলই ভয়ঙ্কর একদল নৈরাজ্যবাদী মানুষ, যারা মান্ধাতার আমলের একটি আদর্শ আদিবাসীদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের মধ্যে অর্থহীন এক বিদ্রোহের আগুন উস্কে দিচ্ছে? নিজেদের অতীত থেকে তারা কী শিক্ষা পেয়েছে? সশস্ত্র সংগ্রাম আসলেই কি খুব একটা অগণতান্ত্রিক কিছু? এই যে বলা হচ্ছে, সাধারণ আদিবাসীরা রাষ্ট্র ও মাওবাদীদের মাঝখানে পড়ে ছত্তরখান হয়ে যাচ্ছে – সেটাই বা কতোটা সঠিক? মাওবাদীরা এবং আদিবাসীরা কি তাহলে একেবারেই ভিন্ন ধরনের দুটি ধারা যেমনটা শোনানো হচ্ছে? তাদের স্বার্থ ও লক্ষ্য কি অভিন্ন? তারা কি পরস্পরের কাছ থেকে কিছু শিখেছে? তারা কি একে অপরকে পাল্টাতে পেরেছে?
যেদিন আমি রওনা দেব তার আগের দিন ঘুম জড়ানো চোখে আমার মা ‘আমি ভাবছি কী জানো’, মায়ের সহজাত ঔৎসুক্য নিয়েই বলছিলেন তিনি, ‘এই দেশটির এখন যা প্রয়োজন তাহলো একটি বিপ্লব।’
ইন্টারনেটে প্রকাশিত একটি লেখা থেকে জানা গেছে, ইসরাইলের মোসাদ বাহিনী ৩০ জন উচ্চপদস্থ ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড চালানোর ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য, মাওবাদী সংগঠনটিকে নেতৃত্বহীন করে ফেলা। ইসরাইল থেকে নতুন ধরনের কী কী যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রশস্ত্র (হার্ডওয়্যার) আনা হয়েছে পত্রপত্রিকায় তাই নিয়ে খবরও বেরিয়েছে। এ সবের মধ্যে রয়েছে লেসার রেঞ্জ ফাইন্ডার, থারম্যাল ইমেজিং ইকুইপমেন্ট এবং চালকবিহীন ড্রোন বিমান যা মার্কিন সেনাবাহিনীতে খুব ব্যবহূত হয়। গরিবদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য এসবই হচ্ছে সঠিক অস্ত্র।
রায়পুর থেকে দান্তেওয়ারা ঘণ্টা দশেকের পথ। পথের পুরোটাই সরকারি ভাষায় যাকে বলে মাওবাদী উপদ্রুত অঞ্চল। আর এই ‘উপদ্রুত’ কথাটি খুব সচেতনভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে। উপদ্রুত মানে রোগবালাই। সুতরাং এই রোগ সারাতে হবে। বালাই নাশ করতে হবে। মাওবাদীদের নির্মূল করতে হবে। আর এভাবেই আপাত সরলপথে ও চুপিসারে গণহত্যা শব্দটি আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারিক ভাষায় ঢুকে যায়। রায়পুর শহর থেকে বের হওয়ার মুখেই বিশাল একটি বিলবোর্ডে বেদান্ত (এই কোম্পানিটিতেই আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক সময় চাকরি করতেন) ক্যান্সার হাসপাতালের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। বেদান্ত উড়িষ্যায় খনি থেকে অ্যালুমিনিয়াম তৈরির কাঁচামাল বা আকরিক বকসাইট উত্তোলন করে এবং সেখানেই তার অর্থে আবার একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। আর এভাবেই নির্বিরোধ ও লুকানো পথে খনি খনন সংস্থাগুলো আমাদের চিন্তা-চেতনার মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ভেবেছি, বিশাল, সুশীল এসব সংস্থা সত্যি সত্যি আমাদের ভালো-মন্দ নিয়ে ভাবে, কাজ করে। এসবকেই কর্পোরেটদের সামাজিক দায়বদ্ধতা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। আর এই সামাজিক দায়বদ্ধতার আড়ালে যে ভঙ্গুর অর্থনীতি চালু হয়েছে তার উপরই জন্ম নিয়েছে ভারতের খনি খনন সংস্কৃতি। যেমন বেসরকারি একটি খনন কোম্পানি প্রতি টন আকরিক লোহা উত্তোলন বাবদ ৫ হাজার রুপি কামাই করে। বিপরীতে প্রতিটন লোহা থেকে রয়্যালটি হিসেবে সরকার পায় মাত্র ২৭ রুপি। অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক বক্সাইটের ক্ষেত্রে চিত্রটি আরো ভয়াবহ। এ হচ্ছে দিনে-দুপুরে শত শত কোটি ডলারের ডাকাতি। নির্বাচন, সরকার, বিচারক, পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন, এনজিও এবং দাতা সংস্থাগুলো কিনে নেওয়ার জন্যে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থই বলতে হবে।
দু’চারটি ক্যান্সার হাসপাতাল এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখলে কিইবা আসে যায়?
ছত্তিশগড় সরকার যেসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে সেখানে ‘বেদান্ত’ নামটি দেখেছি কিনা আমার মনে নেই। তবে আমার ধারণা যেখানেই ক্যান্সার হাসপাতাল আছে সেখানকার মাটির নিচে কোথাও না কোথাও অবশ্যই পাহাড় পরিমাণ বক্সাইটের মজুদ রয়েছে।
কঙ্কার অতিক্রম করার সময় সন্ত্রাসবিরোধী ও জঙ্গলযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি চোখে পড়ল। ব্রিগেডিয়ার বিকে পনওয়ার স্কুলটি পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। তার কাজ হচ্ছে দুর্নীতিবাজ ও বদ পুলিশ কর্মকর্তাগুলোকে জঙ্গল-যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলা। স্কুলের সামনে শিলায় খোদিত বাণীটি হল – ‘গেরিলাকে গেরিলা হয়েই মোকাবিলা করতে হবে।’ প্রশিক্ষণ স্কুলটি থেকে প্রতি ছয় সপ্তাহ অন্তর আটশ’ করে স্নাতক পুলিশ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হচ্ছেন। সারা ভারতে অনুরূপ ২০টি স্কুল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এসব পুলিশ বাহিনীই ক্রমান্বয়ে সেনাবাহিনীতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ব্যাপারটিকে যে যেভাবেই দেখুক না কেন, শেষ বিচারে জনগণই হচ্ছে এদের মূল প্রতিপক্ষ।
নিশুতি রাত। ঘুমিয়ে আছে পুরো জগদল শহর। তবে যুব কংগ্রেসে যোগদানের জন্য রাহুল গান্ধীর আহবান সংবলিত বিশাল আকারের হোর্ডিংগুলো জেগে আছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বারদুই তিনি বাস্তার ঘুরে গেছেন। তবে যুদ্ধ নিয়ে খুব একটা কিছু বলেননি। জনগণও সম্ভবত তাদের যুবরাজকে এ নিয়ে বিরক্ত করতে চায়নি। তার মিডিয়া ব্যবস্থাপকরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক থেকেছে। আর এ কারণেই কংগ্রেসদলীয় স্থানীয় এমএলএ মহেন্দ্র অগ্নিসংযোগ করে হাজার হাজার গ্রামবাসীকে ঘরছাড়া করেছে সে বিষয়টি তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি।
সময় মতোই আমি মা দান্তেশ্বরী মন্দিরে পৌঁছলাম। সঙ্গে ছিল আমার ক্যামেরাটি, ছোট্ট একটি নারকেল এবং কপালে আমার হালকা লাল রঙের তিলক। মনে হল আমাকে দেখে হয়তো লোকজন হাসাহাসিও করতে পারে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ছোট্ট একটি বালক এগিয়ে এলো। মাথায় টুপি আর পিঠে ঝোলানো স্কুল ব্যাগ। নখে লাল রঙের নেইল পলিশ। আউটলুক-এর হিন্দি সংস্করণ কিংবা কলা কিছুই নেই। ‘আপনিই কি তিনি যিনি ভেতরে যাবেন’? জানতে চাইল সে। শব্দ সংকেত নমস্কার গুরুজিও উচ্চারণ করল না। ভেবে পাচ্ছিলাম না কী বলব। সে তার পকেট থেকে বের করে ঘামে ভেজা এক টুকরো কাগজ আমার হাতে দিল। তাতে লেখা আছে ‘আউটলুক পাওয়া যায়নি’। তাহলে কলা, কলা কোথায়?
‘আমি সেগুলো খেয়ে ফেলেছি। খুব ক্ষিদে পেয়েছিল’ বলল সে। সত্যিই সে ছিল একটি নিরাপত্তা হুমকি। সে জানাল, তার নাম মাংতু। খুব শিগগিরই বুঝতে পারলাম দন্ডকারণ্য নামে যে জঙ্গলে আমি ঢুকতে যাচ্ছি সেখানে এমন অনেক মানুষই আছে যাদের একাধিক নাম এবং ছদ্ম পরিচয় রয়েছে। একটু রোমাঞ্চিতই হচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল নিজেকে হারিয়ে ফেলে ক্ষণিকের জন্যে একেবারে ভিন্ন মানুষ হয়ে গিয়েছিলাম বুঝিবা। মন্দির থেকে কয়েক মিনিট হেঁটেই বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলাম আমরা। চারদিকে মানুষের ভিড়। দ্রুতই ঘটছিল সবকিছু। মোটরবাইকে দু’জন লোক। কোনো কথাবার্তা নেই। চোখের ইশারায় পরিচয়পর্ব সারা হয়ে গেল খুব দ্রুত। এরপর শুধু মোটরবাইকে চড়ে বসা আর ইঞ্জিন চালুর সঙ্গে সঙ্গে চাকা ঘুরতে থাকা। কোথায় যাচ্ছি এ ব্যাপারে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। আমরা স্থানীয় পুলিশ সুপারিনটেনডেন্টের বাড়িটি অতিক্রম করলাম। আগেরবার যখন এসেছিলাম তখন তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। ভদ্রলোক বেশ মনখোলা ধরনের মানুষ। আমাকে বলেছিলেন, দেখুন ম্যাম সত্যি কথা বলতে কী, এ সমস্যার সমাধান আমাদের অর্থাৎ পুলিশ বাহিনী কিংবা সামরিক বাহিনী দিয়ে সম্ভব নয়। এদেরকে নিয়ে বড় সমস্যা কী জানেন, লোভ কি জিনিস বা কাকে বলে এই আদিবাসী মানুষগুলো জানে না বা বোঝে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না এদের লোভের বশবর্তী করা যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আশার কিছু নেই। আমি আমার উপরওয়ালাকে বলেছি, বাহিনী সরিয়ে নিয়ে এদের ঘরে ঘরে টেলিভিশন দিয়ে দিন। দেখবেন সব কিছু কেমন সহজ হয়ে গেছে।
দ্রুতই আমরা শহরের বাইরে এসে গেলাম। আমার ঘড়ি অনুযায়ী ঘণ্টা তিনেক চলার পর হঠাৎ এক জায়গায় এসে মোটরসাইকেল থামল। জনশূন্য পথ, দু’পাশে জঙ্গল। মাংতু নামল, আমিও। মোটরসাইকেল উধাও হয়ে গেল। আমি আমার পিঠে জিনিসপত্র ঝুলিয়ে নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি ছোট্ট সেই ছেলেটির পিছু পিছু জঙ্গলের ভেতর পা বাড়ালাম। খুবই চমৎকার একটি দিন। সোনায় মোড়া জংলী পথ। অল্পক্ষণের মধ্যেই আমরা প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়া প্রশস্ত একটি নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ালাম। সময়টা বর্ষার শুরু। পাড় ধরে দীর্ঘ বালিয়ারি, আর মাঝখানটায় একটা প্রবাহ। হাঁটু পরিমাণ পানি। সহজেই পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়। আমি মাংতুর ইশারা মতো এগুতে লাগলাম। নদীর ওপারে হালকা সবুজ রঙের জামা গায়ে যে লোকটি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল সে হল চান্দু। তার বয়স মাংতুর চেয়ে একটু বেশি। হয়তো বা বছর কুড়ি। চোখে-মুখে চমৎকার হাসি। সঙ্গে একটি সাইকেল, জেরিকেনে ভরা ফুটানো পানি এবং আমার জন্য আনা অনেকগুলো গ্লুকোজ বিস্কুটের প্যাকেট। পার্টি থেকেই দেওয়া হয়েছে এগুলো। একটু দম নিয়েই আমরা আবার হাঁটতে শুরু করলাম। যে পথ দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম সেটি আসলে সাইকেল চালানোর জন্যে মোটেই উপযোগী ছিল না। আমরা একবার পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উপরে উঠছিলাম, আবার নামছিলাম পাথুরে পথ বেয়ে। তবে পথের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ স্টলগুলো আর তাদের চূড়া দেখতে ছিল অসম্ভব সুন্দর। সাইকেলটি যখন আর চালানো যাচ্ছিল না চান্দু তখন সেটিকে মাথার উপর তুলে হাঁটতে শুরু করল। মনে হচ্ছিল এর বুঝি কোনো ওজনই নেই। একটি গ্রাম্য বালকের এই চলন-বলন দেখে আমি বিস্মিতই হচ্ছিলাম। পরে জেনেছি এলএমজি ছাড়া আর সব ধরনের অস্ত্রই সে চালাতে জানে। কথাটা সেই আমাকে আনন্দের সঙ্গে জানিয়েছিল। মাথার পাগড়িতে ফুল গোঁজা তিনজন লোক, অনেকটাই মাতাল এবং বেশ সুদর্শন, আধ ঘণ্টা পর ভিন্ন পথ ধরার আগ পর্যন্ত আমাদের পাশাপাশিই হাঁটছিল। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে তাদের পিঠের ঝোলার মধ্যে মোরগ ডেকে উঠল। বোঝা গেল তাদের সঙ্গে যে মুরগিগুলো ছিল সেগুলো তারা বিক্রি করতে নিয়ে গিয়েছিল বাজারে। কিন্তু বিক্রি করতে না পেরে এখন ফেরত নিয়ে যাচ্ছে। চান্দু অন্ধকারেই দেখতে পায় বলে মনে হচ্ছিল। তবে পথ চলতে আমাকে আমার টর্চটা বের করতে হল। ঝিঁঝিরা ডাকতে শুরু করেছে। তাদের ডাকে চারদিকে শব্দের একটা মূর্ছনা সৃষ্টি হয়েছে। ইচ্ছে হচ্ছিল রাতের আকাশটার দিকে একটু তাকাই। কিন্তু ভরসা পাচ্ছিলাম না। কারণ আমাকে মাটির দিকে চোখ রেখে পা টিপে টিপে চলতে হচ্ছিল। এক পা এগিয়েই খুব সাবধানে আরেক পা ফেলা।
কুকুরের ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম। তবে ডাকগুলো কতটা দূর থেকে আসছিল ঠাহর করতে পারছিলাম না। ঝুঁকিপূর্ণ পথটুকু পার হয়েই এক পলক আকাশের দিকে তাকালাম। মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমার মনে হয় খুব তাড়াতাড়িই আমরা থামব। ‘তাড়াতাড়িই’, চান্দু জবাব দিল। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আমরা হাঁটছি। চারদিকে ছায়াছায়া অসংখ্য গাছ। আমরা পৌঁছালাম। গ্রামটা বেশ খোলামেলা ও ছড়ানো ছিটানোই মনে হল। একটা বাড়ি থেকে আরেকটা বাড়ির দূরত্ব অনেক। চমৎকার একটি ঘরে আমরা প্রবেশ করলাম। একটা কুপির আগুনকে ঘিরে কিছু লোক বসে আছে। আর ঘরের বাইরে অন্ধকারে বসে আছে আরো অনেক। তবে ঠিক কতজন তা বলতে পারব না। চারদিকে একটা বিড় বিড় শব্দ। লাল সালাম কামরেইড। (লাল সালাম কমরেড) আমিও বললাম লাল সালাম। যারপরনাই ক্লান্ত ছিলাম আমি। গৃহকর্ত্রী ভেতরে ডেকে নিয়ে গিয়ে আমাকে সবুজ মটরশুটি দিয়ে রান্না করা মুরগির মাংস আর কিছু লালভাত খেতে দিলেন। এককথায় অমৃত। তার শিশুটি আমার পাশেই ঘুমুচ্ছিল। কুপির আলোয় মহিলার পায়ের রুপালি মলটি চকচক করছিল।
রাতের খাবার শেষ করেই আমি আমার স্লিপিং ব্যাগটি খুললাম। তবে চেইন খোলার শব্দটা কেমন একটু রেসুরোই ঠেকল। কে যেন তার রেডিও অন করল। বিবিসির হিন্দি সার্ভিস। চার্চ অব ইংল্যান্ড বেদান্ত’র নিরাসগিরি প্রকল্পে দেওয়া তার বরাদ্দের অর্থ ফিরিয়ে নিয়েছে। কারণ এই প্রকল্প পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে এবং দংরিয়া কন্দ উপজাতির মানুষদের জীবন বিপন্ন করছে। গরুর গলায় ঘণ্টি নড়ার শব্দ, তাদের নড়াচড়া, হাঁসফাঁস করা আর বায়ু ত্যাগের শব্দ আমার কানে আসছিল। পৃথিবীতে সবকিছুই তো ঠিকঠাক মতো চলছে। আমার চোখ বুজে এলো। ভোর ৫টায় আমরা জেগে উঠলাম। ৬টায় রওনা দিলাম। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে আরো একটি নদী পার হলাম। বেশ সুন্দর সুন্দর গ্রামের ভেতর দিয়ে হাঁটছিলাম আমরা। প্রতিটি গ্রামেই চোখে পড়ল সারি সারি তেঁতুল গাছ। যেন পরোপকারী দেবদেবীর ছাড়ামূর্তি হয়ে গ্রামগুলোকে পাহারা দিচ্ছে। মিষ্টি অম্ল তেঁতুল। ১১টা নাগাদ সূর্য অনেক বেশি প্রদীপ্ত। এখন আর হাঁটা চলে না। দুপুরের খাবারের জন্যে আমরা একটা গ্রামে থামলাম। মনে হলো চান্দু সেখানকার লোকজনকে চেনে। অল্প বয়স্কা সুন্দরী একটি মেয়ে তার সঙ্গে হাসিঠাট্টা করতে লাগল। মনে হল, আমি সঙ্গে আছি তাই সে কিছুটা লজ্জাই পেল। দুপুরে আমরা কাঁচা পেঁপে দিয়ে মসুর ডাল আর লাল চালের ভাত খেলাম। সঙ্গে একটু শুকনো মরিচের গুঁড়াও দিল। এবার সূর্যের তাপ কিছুটা কমে আসার জন্যে আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। একফাঁকে একটু নাকও ডেকে নিলাম। জায়গাটার বাড়তি একটি সৌন্দর্য আছে। চারদিক ছিমছাম, গোছানোর কোনো কিছুতেই বাহুল্য নেই। ভিড়বাট্টাও নেই কোনো রকমের। কালো একটা মুরগি নিচু মাটির দেয়ালের ওপর একবার উঠছে, একবার নামছে। একটা কুঁড়েঘরের তালপাতার ছাউনিটি বাঁশের কঞ্চি বিছিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। ঘাসের একটি স্তূপ, দুটি পিপা, একটি তাঁতের বাক্স, ভাঙা একটি ছাতা এবং খালি ও ভাঙাচোরা পিচবোর্ড বাক্সের একটি স্তূপ। এক জায়গায় এসে আমার দৃষ্টি আটকে গেল। চশমাটি পরলাম। পিচবোর্ডের গায়ে লেখা : আইডিয়াল পাওয়ার ৯০ হাই এনার্জি ইমালশন এক্সপ্লোসিভ (ক্লাস-২) এমডি সিএটি জেড জেড।
২টা নাগাদ আবার আমরা রওনা দিলাম। যে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম সেই গ্রামে এক দিদির (কমরেড বোন) সঙ্গে দেখা হবে এবং পরের গন্তব্য কোথায় তা তিনিই বলে দেবেন। চান্দু এ ব্যাপারে কিছু জানে না। তথ্যাদি সরবরাহের ক্ষেত্রেও হিসাবের কড়াকড়ি। এককভাবে কারো সব ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু গ্রামে পৌঁছার পর জানলাম দিদি সেখানে নেই। তার কোনো হদিসও কেউ দিতে পারল না। এ প্রথম চান্দুর মাথার ওপর একটা দুশ্চিন্তার মেঘ দেখলাম। আমার অবস্থা আরো একটু শোচনীয়। আমিও বুঝে পাচ্ছিলাম না এখানকার যোগাযোগের ধরনটা কী। ভুল পথেই যদি এগিয়ে থাকি তাহলে কী হবে? গ্রামের একটু বাইরেই পরিত্যক্ত একটি স্কুল বিল্ডিংয়ের পাশে আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল আচ্ছা এসব গ্রামের সরকারি স্কুলগুলো কেন কংক্রিটের দুর্গের মতো বানানো? জানালার কপাটগুলোই বা কেন ইস্পাত নির্মিত এবং দরজাগুলো বা কেন ইস্পাতের পাত দিয়ে তৈরি এবং ভাঁজ করা? এগুলো কেন কাদা আর বাঁশের তৈরি গ্রামের ঘরগুলোর মতো হলো না? কারণ এগুলোকে ব্যারাক এবং বাংকার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। চান্দু বলল, আভুজমাদ অঞ্চলের গ্রামের স্কুলগুলো সব এরকমই…। সে কাঠি দিয়ে মাটির উপর স্কুল বিল্ডিংয়ের একটি নকশা অাঁকল। গায়ে গায়ে লাগানো তিনটি অষ্টভূজ। দেখতে অনেকটা মৌচাকের কুঠুরির মতো। একজন ব্যাটসম্যানের রান সংগ্রহের ওয়াগন হুইলের মতো এঁকে মাঝখানটায় একটা তীর চিহ্ন অাঁকল সে। বলল এখান থেকে সব দিকেই তারা গুলি ছুড়তে পারে। চান্দু জানাল, কোনো স্কুলেই কোনো শিক্ষক নেই। তারা সবাই পালিয়েছে। নাকি তোমরাই তাদের তাড়িয়েছ? না না আমরা কেবল পুলিশকেই তাড়া করি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ঘরে বসে বসেই যখন বেতন পাওয়া যায় তখন আর এ শিক্ষকরা জঙ্গলে আসবে কেন?
সে আমাকে জানাল এটি একটি নতুন এলাকা। পার্টির লোকজন সবেমাত্র এখানটায় প্রবেশ করেছে। জনাবিশেক তরুণ-তরুণী এসে হাজির হল। তাদের প্রায় সবারই বয়স আঠারো-উনিশ কিংবা বিশ-একুশ। চান্দু বুঝিয়ে বলল যে, এরাই হচ্ছে গ্রাম পর্যায়ের মিলিশিয়া। মাওবাদী মিলিশিয়াদের মধ্যে এরাই হচ্ছে পদক্রমের নিম্নতম ধাপ। এদের মতো কাউকে আমি এর আগে আর দেখিনি। তাদের পরনে শাড়ি আর লুঙ্গি। কোন কোনটি একটু ছেঁড়া। জলপাই রঙের। ছেলেরা গয়না পরা, মাথায় পাগড়ি। তাদের প্রত্যেকের কাছেই গুলিভর্তি রাইফেল যা ভার্মার নামে পরিচিত। কারো কারো কাছে আবার রয়েছে ছোড়া, কুড়াল এবং তীর-ধনুক। একটি ছেলের হাতে দেখলাম তিন ফুট লম্বা জিআই পাইপ দিয়ে তৈরি মর্টারের মতো একটি অস্ত্র। এটি গান পাউডার আর পেরেকে ঠাসা। চাইলেই গুলি করা যায়। এটি চালালে বিকট শব্দ হয় এবং কেবল একবারের জন্যই এটি ব্যবহার করা যায়। তারপরও পুলিশরা এটাকে খুবই ভয় পায় – বলে আর হাসে তারা।
মনে হল না যুদ্ধের ব্যাপারটা নিয়ে তারা খুব বেশি মাথা ঘামায়। কারণটা সম্ভবত এই যে, তাদের এই এলাকাটা সালওয়াজুদুম থেকে একটু দূরে। সবে সারাদিনের কাজ শেষ করেছে তারা। ছাগলগুলো যাতে মাঠে চলে যেতে না পারে সে জন্য গ্রামের কয়েকটি বাড়ির চারদিকে বেড়া তৈরি করে দিয়েছে। চোখে-মুখে তাদের আনন্দ আর কৌতূহলের ছাপ। মেয়েগুলো খুবই সাবলীল এবং ছেলেদের সঙ্গে তাদের আচরণে উচ্ছ্বল উদ্দামতা লক্ষ্যনীয়। সব কিছুর বর্ণনা দিতে পারব না। তবে তাদের দেখে সত্যি আমি মুগ্ধ। চান্দু জানাল, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে চার কিংবা পাঁচটি করে গ্রামে নিরাপত্তা টহল দান, ক্ষেতে খামারে লোকজনকে সাহায্য করা, কুয়া পরিষ্কার করা, বাড়িঘর মেরামত করে দেওয়া কিংবা যখন যা দরকার করে দেওয়া।
এখন পর্যন্ত দিদির কোনো পাত্তাই নেই। কী করা? কিছুই না। শুধু অপেক্ষা। অথবা কাঠচেঁরা কিংবা আগাছা পরিষ্কারে হাত লাগানো। রাতের খাবার শেষে সবাই কথাবার্তা না বলে লাইনে দাঁড়িয়ে গেল। বোঝা গেল আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সব শিশু আমাদের সঙ্গে সঙ্গে এগুচ্ছে। চাল, তরিতরকারি, হাঁড়ি পাতিল সব। আমরা স্কুল চত্বর ছেড়ে এক কাতারে জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করছি। আধ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে জঙ্গলের একটা ফাঁকা জায়গায় এসে আমরা নামলাম। এখানেই আমাদের রাত কাটাতে হবে। চারদিকে কোনো রকম সাড়াশব্দ নেই। কয়েক মিনিটের মধ্যে সবাই তাদের নীল রঙের প্লাস্টিকের চাদরগুলো পেতে নিল। এগুলোকে তারা ‘ঝিল্লি’ (এগুলো ছাড়া বিপ্লবের কথা ভাবা যায় না) বলে। চান্দু আর মাংতু দু’জনে মিলে একটাতে শুলো। আর আমার দিকে এগিয়ে দিল একটা। ধূসর বর্ণের পাথরের গা ঘেঁষে সবচেয়ে সুন্দর জায়গাটা তারা আমার জন্য বেছে দিল। চান্দু বলল, দিদিকে সে খবর পাঠিয়েছে। খবরটি যদি তার কাছে পৌঁছায় তবে একেবারে সকালেই সে এসে হাজির হবে। খবরটা যদি ঠিকঠাক মতো পৌঁছায়।
এত চমৎকার কোনো কক্ষে আমি ঘুমাইনি কোনোদিন। হাজার তারকা হোটেলে আমার ব্যক্তিগত বিলাসবহুল কক্ষ এটি। আমাকে ঘিরে রেখেছে অদ্ভুত সুন্দর ছেলেমেয়েগুলো। কৌতূহলোদ্দীপক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত তারা। সন্দেহ নেই, এরা সবাই মাওবাদী। এরা সবাই কি মরতে যাচ্ছে? জঙ্গল-যুদ্ধ প্রশিক্ষণ স্কুল কি তাদের লক্ষ্য করেই তৈরি করা হয়েছে? হেলিকপ্টার, গানশিপ, থারমাল ইমেজিং এবং লেসার রেঞ্জ ফাইন্ডার – এসব কিছু কি তাদেরই বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য? কেন তাদের মরতে হবে? কীসের জন্যে? তাদের জীবন, তাদের সবকিছুকে খনিতে পরিণত করতে হবে – এ কারণে? মনে পড়ে, উড়িষ্যার কঞ্জহারে আমি একবার আকরিক লোহার উন্মুক্ত খনি খনন দেখতে গিয়েছিলাম। একসময় সেখানে জঙ্গল ছিলো। শিশুরা সেসব জঙ্গল ভালোবাসত। কিন্তু সেখানকার ভূমি এখন ঊষর, লাল, ক্ষতবিক্ষত। লাল ধুলায় আপনার নাসিকাযন্ত্র, ফুসফুস ভরে যাবে। এখানকার পানি লাল, বাতাস লাল, মানুষগুলোও লাল। লাল তাদের ফুসফুস, চুল সবকিছু। সারাদিন সারারাত গ্রামগুলোর ভেতর দিয়ে ট্রাক চলছে। হাজার হাজার ট্রাকের আসা যাওয়ার বিকট শব্দ। টনকে টন আকরিক লোহা পৌঁছে দিচ্ছে পারাদ্বীপ বন্দরে। যেখান থেকে এগুলো যাবে চীনে। তৈরি হবে মোটরগাড়ি, ছুটবে ধোঁয়ার তুফান, রাতারাতি গজিয়ে উঠবে বড় বড় শহর নগরী। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবেন বিশ্বের তাবড় তাবড় অর্থনীতিবিদ প্রবৃদ্ধির হার দেখে। আর এই প্রবৃদ্ধি দিয়েই তৈরি হবে মারণাস্ত্র, নতুন নতুন যুদ্ধের জন্ম দেওয়ার জন্যে। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, জেগে আছে কেবল পাহারারতরা। তারা দেড় ঘণ্টার পালা করে পাহারা দেয়। এতক্ষণে উপরের দিকে তাকাতে পারলাম। আকাশভর্তি তারা। আমি তখন খুব ছোট। থাকতাম মিনাচল নদীর তীরে। সন্ধ্যা হলেই ঝিঁঝি পোকারা ডেকে উঠত। আমার তখন ধারণা ছিল ঝিঁঝির ডাক বুঝি তারাদের শব্দ। এরকম শব্দ করেই বুঝিবা তারা আলো দিতে শুরু করে। এমন একটি জায়গায় এমন একটি অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করতে পেরে আমি যে কতটা সুখী, কতটা অভিভূত তা বলে বোঝাতে পারব না, পৃথিবীতে এর চেয়ে ভাল কোনো জায়গা আর নেই যেখানে আমি যেতে চাইতে পারি, থাকতে চাইতে পারি, আজ রাতের জন্যে আমি কী হতে চাই, কী হবে আমার পরিচয়? তারকাখচিত আকাশতলে কামরেইদ (কমরেড) রাহেল? দিদি হয়তো আগামীকালই এসে হাজির হবে।
বিকেল গড়ানোর আগেই তারা এসে হাজির হল। দূর থেকেই আমি তাদের দেখতে পাচ্ছিল
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×