somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিপলোব চোরিা গেলো সোবখানে

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

30.09.10অরুন্ধতী রায়, বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতের লেখিকা ও মানবাধিকারকর্মী। সম্প্রতি দিল্লির ‘আউটলুক’ সাময়িকীতে ‘ওয়াকিং উইথ কমরেডস’ শিরোনামে লিখেন তার সাড়া জাগানো দীর্ঘ নিবন্ধ। নিবন্ধটি সাপ্তাহিক বুধবার-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ওই ‘আউটলুক’ সাময়িকীতেই প্রকাশিত হয়েছে তার নতুন নিবন্ধ ‘দি ট্রিকলডাউন রেভুলিউশন’। ভারতের রাজনীতি ও ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ নামে কর্পোরেট বাণিজ্যের ধ্বজাধারী শাসক সম্প্রদায়ের গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকান্ডের গতিপ্রকৃতি অনুধাবনের সুবিধার্থে অরুন্ধতী রায়ের এ নিবন্ধটিও ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হল। ভাষান্তর : নেয়ামুল হক
২০১০ সালের ২ জুলাই অতি প্রত্যুষে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য পুলিশ আদিলাবাদের গহীন অরণ্যে চেরুকুরি রাজকুমার নামে এক ব্যক্তির বুকে গুলি চালায়। কমরেডদের কাছে তিনি আজাদ নামেই পরিচিত। আজাদ ছিলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মাওবাদী) পলিট ব্যুরোর সদস্য। ভারত সরকারের সঙ্গে প্রস্তাবিত শান্তি আলোচনায় প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে তার দল তাকেই নিয়োগ দিয়েছিল। পুলিশ তাকে এত কাছ থেকে গুলি চালিয়ে এভাবে হত্যা করল কেন, কেনইবা ঘটনাটিকে এত সাজানো-গোছানো করে উপস্থাপন করল? বিশেষত, চাইলেই যেখানে পুরো ঘটনাটি তারা খুব সহজেই ধামাচাপা দিতে পারত। তবে কি তারা ভুলবশত এটি ঘটিয়েছে, নাকি এ ঘটনার মধ্য দিয়ে কোনো বার্তা তারা পৌঁছে দিতে চেয়েছে?
ওইদিন সকালে পুলিশ হেমচন্দ্র পান্ডে নামে তরুণ এক সাংবাদিককেও হত্যা করে। আজাদকে আটক করার সময় পান্ডে আজাদের সঙ্গেই ছিল। তারা তাকেও খুন করল কেন? পুলিশ কি তবে ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী বেঁচে থাকুক এটা চায়নি? নাকি নেহাৎ খেয়ালের বশেই তারা এ হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে? একটি যুদ্ধ চলাকালে শান্তি আলোচনার শুরুতেই যদি কোনো এক পক্ষ অন্য পক্ষের প্রধান সমন্বয়কারীকে হত্যা করে বসে, তাহলে এটি ভাববার যথেষ্টই অবকাশ আছে, হত্যাকারী পক্ষটি আসলে শান্তি চায় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কেউ একজন এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়েছিল, আজাদকে বাঁচিয়ে রাখাটা বড় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। তবে এ জাতীয় সিদ্ধান্ত মোটেই বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করে না। এক্ষেত্রে আজাদ কে ছিলেন সেটি বিবেচ্য নয়, বিবেচনার প্রধান বিষয় হলো ভারতের চলমান রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতিটি কেমন সেটি।
বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ছে
দন্ডকারণ্য জঙ্গলের কমরেডদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসার কিছুদিনের মধ্যেই অমি নতুন দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিটে অবস্থিত জন্তর মন্তরে যাই। এটি একটি পুরনো মানমন্দির। ১৭১০ সালে জয়পুরের মহারাজা সাওয়াই জাই এটি স্থাপন করেন। সমসাময়িককালে বৈজ্ঞানিক বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত এ মানমন্দিরটি সময়জ্ঞাপন এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদানের কাজে ব্যবহৃত হতো। এমনকি এখান থেকে গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থাও ছিল। আজকের দিনে পর্যটকদের এটি তেমন একটা আকৃষ্ট করে না, যতটা করে দিল্লির ওই গণতন্ত্রের ছোট্ট প্রদর্শনী ঘরটি।
বেশ কয়েক বছর ধরেই কোনো রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় সংগঠন কর্তৃক আহূত ছাড়া অন্য যে কোনো ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশই দিল্লিতে নিষিদ্ধ আছে। রাজপথ এ অবস্থিত বোট ক্লাবটি আগে বহু ঐতিহাসিক মিছিল সমাবেশ প্রত্যক্ষ করেছে। এসব সমাবেশের কোনো কোনোটি লাগাতার কয়েক দিন ধরেও চলতো। এখন এখানে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডই নিষিদ্ধ। বর্তমানে স্থানটিতে কেবল বনভোজনকারী, বেলুন বিক্রেতা আর নৌবিহার করতে আসা লোকজনের আনাগোনাই চোখে পড়ে। ইন্ডিয়াগেট পরিণত হয়েছে মোমবাতি আর ফুলের তোড়া হাতে মধ্যবিত্তের প্রতিবাদ জানানোর স্থানে, এর বেশি আর কিছুই নয়। যেমন দিল্লির এক বারে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুন্ডার হাতে নিহত জেসিকা নামের এক মডেল কন্যার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদস্বরূপ ‘জেসিকা হত্যাকান্ডের বিচার চাই’ লেখা ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে থাকা। উনিশ শতকের পুরনো একটি আইন ১৪৪ ধারায় বলা হয়েছে, ৫ জনের বেশি লোক প্রকাশ্য স্থানে নিজিদের বেআইনি কোনো উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে একত্রিত হতে পারবে না। সেটিই এখন রাজধানীতে কার্যকর আছে। আসলে ব্রিটিশরা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পুনরাবৃত্তি রোধের লক্ষ্যেই ১৮৬১ সালে এ আইনটি প্রণয়ন করেছিল। কেবল জরুরি পরিস্থিতিতে এটি কার্যকর করার কথা থাকলেও ভারতের বহু স্থানেই এটি স্থায়ীভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। ব্রিটিশরা যে আমাদের এমন একটি আইন উপহার দিয়ে গেছে সম্ভবত তারই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনক এক ডিগ্রি গ্রহণ করার সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমাদের বিচার বিভাগ, আইন ব্যবস্থা, আমাদের আমলাতন্ত্র ও পুলিশ বাহিনী এক একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। উত্তরাধিকার সূত্রে এগুলো আমরা ব্রিটিশ-ভারত প্রশাসনের কাছ থেকেই পেয়েছি এবং দেশ যথাযথভাবেই এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সেবা পেয়ে আসছে।’
সারা দিল্লিতে জন্তর মন্তরই হচ্ছে একমাত্র এলাকা যেখানে ১৪৪ ধারা প্রযোজ্য হলেও কার্যকর নয়। রাজনীতিবিদ ও প্রচার মাধ্যমগুলোর কাছে ধরনা দিতে দিতে ত্যক্ত-বিরক্ত মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানেই ছুটে আসেন নিজেদের দাবি-দাওয়ার কথাগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিতে পারার আশা নিয়ে। দীর্ঘ রেল যাত্রা শেষে কেউ কেউ এখানে এসে পৌঁছান। আবার কেউ কেউ, যেমন ভুপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ক্ষতিগ্রস্তরা কয়েক সপ্তাহ পায়ে হেঁটে দিল্লিতে এসে হাজির হয়েছিলেন। বক্তব্য প্রচারের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক স্থানটির দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে থাকলেও এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত প্রতিবাদকারীরা জন্তর মন্তর এলাকায় তাঁবু গেড়ে যতদিন ইচ্ছা অবস্থান করতে পারতো। সেটি সপ্তাহ, মাস এমনকি বছরও হতে পারে। পুলিশ এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের লোকজনের শ্যেন দৃষ্টির সামনেই তারা তাদের বিবর্ণ হয়ে যাওয়া শামিয়ানা ও ব্যানারগুলো টাঙিয়ে রাখতে পারত। এখান থেকেই স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে, প্রতিবাদ পরিকল্পনা ঘোষণার মাধ্যমে এবং অনির্দিষ্টকালীন অনশন কর্মসূচির মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রতি তারা তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটাতো। এখান থেকেই তারা পার্লামেন্ট ভবনের দিকে রওনা দিত (অবশ্য কোনো দিনই সেখানে পৌঁছতে পারতো না)। এখানে দাঁড়িয়েই তারা আশায় বুক বাঁধতো।
একটু দেরিতে হলেও গণতন্ত্রের সময়সূচিটি কিন্তু পাল্টে ফেলা হয়েছে। এসব কর্মকান্ড এখন চলতে পারবে শুধু সরকারি অফিস চলাকালীন সময়ে এবং সেটি হচ্ছে সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা। এর বাইরে সময়ের এতটুকু হেরফের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঘুমানোর কোনো অনুমতি তো নেইই। কে কোথা থেকে এলো কিংবা রাজধানীতে তাদের থাকা-খাওয়ার কোনো জায়গা আছে কি না সেটি একেবারেই বিবেচ্য নয়। সন্ধ্যা ছটার মধ্যে চলে না গেলে প্রয়োজনে পুলিশ জোর করেই তাদের সরিয়ে দেবে। এমনকি পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকলে পুলিশ লাঠিপেটা কিংবা জলকামান ব্যবহারের আশ্রয়ও নিতে পারে। তারা অবশ্য জানে, সময়সূচি পরিবর্তনের এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে নতুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য ২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমসটি যেন সুচারুরূপে অনুষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য। তবে এটি কেবল লোক দেখানো একটি বাহানা মাত্র। কারণ লোকজন বুঝতে পারছে, অদূর ভবিষ্যতে ওই সময়সূচিটি পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। ব্যাপারটা এমন হতে পারে, গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটা যেটুকু আমাদের ছিল সেটুকুকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য এককালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী একটি উপলক্ষ উদযাপনের ক্ষণটিকেই বেছে নেওয়া হলো। এটিই হয়তো সবচেয়ে মানানস হয়েছে। সম্ভবত একই কারণে ৪ লাখ মানুষের আবাসস্থল গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে এবং রাতারাতি তাদের শহর থেকে বের করে দেওয়া হবে। কিংবা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে বাস্তার পাশের হাজার হাজার ফেরিওয়ালা তাদের আয়-উপার্জনের পথ হারাবে এবং তাদের ব্যবসাটা নিয়ে নেবে শহরের সুসজ্জিত বিপণিবিতানগুলো। একইভাবে হাজার হাজার ভিখারিকে হয়তো শহর থেকে বের করে দেওয়া হবে আর লাখেরও বেশি ক্রীতদাসরূপী কর্মীকে ঢুকানো হবে বড় বড় ফ্লাইওভার, মেট্রো টানেল, অলিম্পিক আকৃতির সুইমিংপুল, অনুশীলনের জন্য স্টেডিয়াম আর ক্রীড়াবিদদের জন্য বিলাসবহুল আবাসন নির্মাণের কাজে লাগানোর জন্য। পুরনো সাম্রাজ্য হয়তো এখন আর টিকে নেই। কিন্তু সাম্রাজ্যের প্রতি আমাদের ভৃত্যসুলভ আচরণ এখনো একটি লাভজনক পেশা।
আমার জন্তর মন্তরে আসার কারণ হলো, সারাদেশের বিভিন্ন শহর থেকে হাজার খানেক ফুটপাতের হকার সেখানে এসে হাজির হয়েছে তাদের মৌলিক কিছু অধিকারের কথা বলার জন্য। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আবাসন পাওয়ার অধিকার, আহারের অধিকার (রেশন কার্ড), জীবন যাপনের অধিকার (পুলিশি নির্যাতনের হাত থেকে এবং মিউনিসিপ্যাল কর্মকর্তাদের বেআইনি চাঁদা আদায়ের হাত থেকে রেহাই পাওয়া)।
বসন্তের প্রথম দিক। সূর্যালোক তীব্র হলেও সহনীয়। জানি, বিষয়টির বর্ণনা পীড়াদায়ক। তবে এটিই বাস্তবতা। একটু খেয়াল করলেই শুনতে পাবেন দূর থেকে ভেসে আসা প্রতিবাদের ধ্বনি। এটি হাজারো মানুষের জমে থাকা বেদনার ভাষা। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সারা জীবনের জন্য না হলেও বছরের পর বছর ধরে বঞ্চিত হয়ে চলেছে একজন মানুষের (এমনকি প্রাণীরও) জন্য প্রয়োজনীয় শরীর ও স্বাস্থ্যগত মৌলিক অধিকারগুলো থেকে। আমাদের বড় বড় শহরের অাঁস্তাকুড় আর নালা-নর্দমায় এ মানুষগুলো দলা পাকিয়ে পড়ে থাকে। প্রতিকূল আবহাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে এমন কোনো আশ্রয় তাদের নেই। বিশুদ্ধ পানি, বায়ু, পয়োঃব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা থেকে এরা বঞ্চিত। বিশাল এ দেশের কোথাও তাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। তাদের ঘিরে কোনো রকম পরিকল্পনা বা কোনো নগর প্রতিষ্ঠান আজ পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। জওহরলাল নেহেরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশনে তারা উপেক্ষিত। কোনো রকম বস্তি উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির আওতায় তারা কখনো পড়েনি। খোলা নর্দমায় তারা মল ত্যাগ করে। তারা ছায়ামানব। পরিকল্পনা আর প্রতিষ্ঠানিক আয়োজনের মাঝখানে যে একটা ফাঁক থাকে সেখানেই তাদের বসবাস। তারা রাস্তার ওপর ঘুমায়, রাস্তায় বসেই খায়, রাস্তাতেই সঙ্গম করে এবং সেখানেই সন্তান জন্ম দেয়। ধর্ষিতও হয় রাস্তার ওপরই। সেখানে বসেই তারা তাদের সবজি কাটে, কাপড় কাচে। রাস্তাতেই তারা সন্তানদের লালন-পালন করে, সেখানেই তাদের জীবন যাপন এবং সেখানেই মৃত্যু।

চলচ্চিত্র যদি এমন একটি শিল্পমাধ্যম হতো যার কিনা ঘ্রানেন্দ্র আছে, অর্থাৎ সিনেমা যদি কোনো কিছুর গন্ধ শুঁকতে পারতো তবে স্লামডগ মিলিওনিয়ারের মতো ছবি অস্কার জিততে পারতো না।
জন্তর মন্তরে উপস্থিত সেদিনকার প্রতিবাদকারীদের কেউই কোনো বস্তিবাসী ছিলেন না। তারা ছিলেন ফুটপাতের হকার। এরা আসলে কারা? এসেছেনই বা কোত্থেকে? এরা আসলে উদীয়মান অত্যুজ্জ্বল ভারতের বলির শিকার। শিল্পকারখানার পরিত্যক্ত বিষাক্ত তরল বর্জ্যের মতোই এরা অপাঙক্তেয়। গ্রামীণ দারিদ্র্য, লাগাতার অনাহার, বন্যা ও খরা (যার বেশিরভাগই মানবসৃষ্ট), খনি খনন, ইস্পাত কারখানা, অ্যালুমিনিয়াম গলানোর কারখানা, মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত নির্মিত ৩ হাজার ৩০০টি বড় বাঁধ এবং বর্তমান সময়ের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে যে ৬ কোটি মানুষ বাস্ত্তচ্যুত হয়েছেন এরা তাদেরই প্রতিনিধি। মাথাপিছু দৈনিক ২০ রুপিরও কম আয়ের ওপর নির্ভর করে ৮৩ কোটি মানুষ জীবন ধারণ করে। এরা তাদেরই অংশ। সরকারি খাদ্যগুদামগুলোতে কোটি কোটি টন খাদ্যশস্য যখন ইঁদুরে কাটে কিংবা পুড়ে ছাই হয়ে যায় (কারণ এসব খাদ্যশস্য গরিব মানুষের হাতে পৌঁছানোর চেয়ে পুড়ে ফেলার খরচ অনেক কম) এরা তখন উপোস করে মরে। এরা আমাদের দেশের অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা কোটি কোটি শিশুর জনক-জননী। পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই এসব শিশুর ২০ লাখ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এদের লাখ লাখ এক শহর থেকে আরেক শহরে চালান হয়ে যায় নতুন ভারত নির্মাণের কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য। এটিই কি তাহলে কথিত ‘আধুনিক উন্নয়নের সুফল ভোগ’? জনগণের অর্থ থেকে নয়শ’ কোটি ডলার (শুরুতে প্রস্তাবিত বরাদ্দের দুই হাজার গুণ) খরচ করে যে সরকার দুই সপ্তাহের একটি ক্রীড়ানুষ্ঠান আয়োজনের বিলাসিতা দেখাতে পারে সে সরকারকে এ মানুষেরা কোন চোখে দেখে? বিশেষত, সন্ত্রাসবাদ, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং নতুন দিল্লির নয়া জুজুদের ভয়ে বহু দেশের ক্রীড়াবিদ যেখানে এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কমনওয়েলথের নামসর্বস্ব প্রধান ইংল্যান্ডের রানী কোনো রকম খেয়ালের বশেও এ ক্রীড়ানুষ্ঠানে পৌরহিত্য করতে রাজি হবেন না। এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশই যে রাজনীতিবিদ ও ক্রীড়া কর্মকর্তারা চুরি করে হজম করে ফেলবে সে ব্যাপারটিই বা এ মানুষগুলো কীভাবে নেবে? আমার ধারণা, এটা নিয়ে তারা খুব একটা কিছু ভাববে না। কারণ যে মানুষ মাথাপিছু দৈনিক ২০ রূপিরও কম আয়ের ওপর বেঁচে থাকে অত বড় অংকের অর্থের বিষয়টি তাদের চিন্তায় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই না। এগুলো যে তাদেরই টাকা সম্ভবত এ চিন্তাটাই তাদের মাথায় ঢোকে না। আর এ কারণেই ভারতে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের বার বার ক্ষমতায় ফিরে আসতে অসুবিধা হয় না। চুরি করা টাকা দিয়ে তারা নির্বাচন কিনে নেয়। (এর পরই তারা সাজানো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, ‘মাওবাদীরা নির্বাচনে দাঁড়ায় না কেন?’)
07.10.10
উজ্জ্বল সেই দিনটিতে ম্লানমুখ মানুষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমার কেবলই মনে পড়তে লাগল এদেশের সাধারণ মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামের কাহিনী। নর্মদা উপত্যকা, পোলাভারাম আর অরুনাচল প্রদেশে তারা আন্দোলন করেছে বড় বড় বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে। উড়িষ্যা, ছত্তিশগড় এবং ঝাড়খন্ডে লড়াই করেছে খনি খননের বিরুদ্ধে। পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছে লালগড়ের আদিবাসীরা। আর যারা দেশজুড়েই শিল্পকারখানা ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের নামে তাদের জমি দখল করে নেওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়েছে তারাও সাধারণ মানুষই। কেবল এরকম একটি দুর্ভাগ্যের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বহু বছর (এবং বহু পদ্ধতিতে) ধরে তারা আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। আমার মনে পড়ে ম্যাসির কথা, মনে পড়ে নর্মদা, রুপাই, নীতি, মাংতু, মাধব, সরোজা, রাজু, গুদসা উপেন্দি এবং কমরেড কমলার (সেই তরুণীটি যে কিনা মাওবাদীদের সঙ্গে জঙ্গলে দেখা করার সময়টাতে আমার দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করেছিল) কথা। তাদের সবার কাঁধেই ঝুলে আছে বন্দুক। অতিসম্প্রতি ঘুরে আসা অরণ্যের মহিমা আমি কল্পনা করতে পারছি। অনুভব করতে পারছি বাস্তারে উদযাপিত ভূমকল দিবসে অংশ নেওয়া আদিবাসীদের বাজনার তাল-লয়ও। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটি যেন বা ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা একটি জাতির দ্রুত সঞ্চরণশীল হৃদকম্পন।
পদ্মার কথা মনে পড়ছে আমার, যার সঙ্গে ভারাঙ্গল গিয়েছিলাম। বয়স মাত্র তিরিশের কোটার এ মেয়েটি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে রেলিংয়ের ওপর ভর করে এগুচ্ছিল। অতি কষ্টে টেনে তুলছিল নিজের শরীরটাকে। এপেন্ডিক্স অপারেশনের সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই সে গ্রেফতার হয়। মার খেতে খেতে তার দেহের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায় এবং শরীরের কয়েকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও কেটে বাদ দিতে হয়েছে তার। তার হাঁটু দুটি থেঁতলে ভেঙে দিতে দিতে পুলিশ বলছিল, তারা নিশ্চিত হতে চায়, সে যেন আর কোনো দিন জঙ্গলে হেঁটে চলাফেরা করতে না পারে। অতঃপর দীর্ঘ আট বছর কারাভোগের পর সে মুক্তি পায়। এখন সে ‘আমারুলা ভাধু মিতরুলা কমিটি’ চালায়। এটি শহীদদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে গঠিত একটি সমিতি। মিথ্যা বা সাজানো বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের মরদেহের সৎকার করাই এ সমিতির কাজ। পদ্মা তার কর্মব্যস্ত সময় কাটায় অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তরাঞ্চলে। এখানকার যেসব দরিদ্র বাবা-মা কিংবা স্বামী-স্ত্রী তাদের নিহত আপনজনদের দেহাবশেষ সৎকার করার ক্ষমতা রাখে না তাদের হয়ে কাজ করে সে। মৃতদেহগুলো সে সাধারণত ট্রাক্টর বা অন্য কোনো যানবাহনে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দেয়।
যে মানুষগুলো বছরের পর বছর এমনকি দশকের পর দশক ধরে পরিবর্তন আনার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে, এমনকি নিদেনপক্ষে নিজেদের উপর সুবিচার প্রতিষ্ঠার কথাগুলোও বলাবলি করে যাচ্ছে তাদের ধৈর্য, প্রজ্ঞা এবং সাহস বিস্ময়কর। এইসব মানুষ ভারতীয় রাষ্ট্রকাঠামোটিকে উৎখাত করতে চায়, কিংবা বড় বড় বাঁধের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন, অথবা নির্দিষ্ট একটি ইস্পাত কারখানা, খনি খনন কিংবা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন করছে- যেভাবেই তাদের কর্মকান্ডকে ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, আসল ব্যাপারটি হচ্ছে তারা লড়াই করছে নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করার জন্য। লড়াই করছে মানুষের মতো করে বেঁচে থাকার অধিকার আদায়ের জন্য। তারা লড়াই করছে, কারণ তারা জানে, ‘আধুনিক উন্নয়নের ফল’ নামক মৃত পশুটি মহাসড়কের মাঝখানটায় পড়ে থেকে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
ভারতের ৬৪তম স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং লাল কেল্লায় স্থাপিত বুলেটপ্রুফ মঞ্চে দাঁড়িয়ে তার ভাষণটি দিলেন। এটি ছিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া আবেগহীন হাড়শীতল করা গতানুগতিক একটি ভাষণ। তার ভাষণ শুনে কে বলবে, তিনি এমন একটি দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ হয়েও যার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিমাণ বিশ্বের সবচেয়ে গরিব ২৬টি আফ্রিকান দেশের জনসংখ্যার সমান? তিনি বলছিলেন, ‘আপনারা সবাই ভারতের সাফল্যে ভূমিকা রেখে চলেছেন। ভারত আজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তার পেছনে রয়েছে আমাদের শ্রমিক, কারিগর এবং কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, আমরা এক নতুন ভারত গড়ে তুলছি যেখানে প্রতিটি নাগরিকেরই সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে। এ হবে এক সমৃদ্ধশালী ভারত যেখানে শান্তি ও সৌহার্দমূলক পরিবেশে সব নাগরিকই সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবে। এ ভারতে সব সমস্যারই সমাধান হবে গণতান্ত্রিক পন্থায়। এখানে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকারই রক্ষিত হবে।’ এ ভাষণটিকে সমাধি ক্ষেত্রের পরিহাস হিসেবেই বিবেচনা করতে হয়। এটি তিনি ফিনল্যান্ড কিংবা সুইডেনের জনগণের উদ্দেশ্য দিলেও তেমন কোনো ইতরবিশেষ হতো না।

আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সততার যে সুনাম তা যদি তিনি তার ভাষণেও ছড়িয়ে দিতে পারতেন তবে হয় তো তিনি বলতে পারতেন, ‘ভাই ও বোনেরা, বর্ণময় ঐতিহ্যকে স্মরণ করার এ দিনটিতে আপনারা আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন। আমি জানি, পরিস্থিতি ক্রমে কিছুটা অসহনীয়ই হয়ে পড়ছে। আপনারা হয়তো খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কথাটিই বলতে চাইবেন। বিষয়টিকে আমরা অন্যভাবেও দেখতে পারি। আপনাদের মধ্যে ৬৫ কোটিরও বেশি মানুষ কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকরূপে কৃষির ওপরই নির্ভরশীল। কিন্তু আপনাদের সবার সম্মিলিত উদ্যোগ আমাদের অভ্যন্তরীণ মোট জাতীয় উৎপাদনে মাত্র ১৮ শতাংশের কম পরিমাণ উৎপাদন যোগ করতে পারে। সুতরাং আপনাদের অবস্থানটি কোথায়? আমাদের তথ্য-প্রযুক্তির দিকেই একবার তাকান না। এখাতে আমাদের মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.২ ভাগ মানুষ নিয়োজিত। অথচ এ খাতটিই যোগান দিচ্ছে আমাদের মোট জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশ। আপনারাই বলুন, আপনারা কি এর সমকক্ষতা অর্জন করতে পারছেন?

এ কথা ঠিক, আমাদের দেশে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি প্রবৃদ্ধির হারের সঙ্গে তাল মিলাতে পারছে না। তবে, সৌভাগ্যের বিষয়, আমাদের কর্মশক্তির ৬০ শতাংশই স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত রয়েছেন। আমাদের শ্রমশক্তির ৯০ ভাগই অসংগঠিত খাতসমূহে নিয়োজিত। এ কথাও সত্য, তারা বছরে মাত্র কয়েক মাস কাজ করার সুযোগ পায়। কিন্তু আমাদের কর্মসংস্কৃতিতে যেহেতু ‘স্বল্প নিয়োজিত’ বলে কোনো খাত নেই সেহেতু এ বিষয়টিকে আমরা একান্তই কিছুটা অস্পষ্টতার মধ্যে রেখে দিয়েছি। তবে তাদেরকে আমাদের হিসেবের খাতায় একেবারে কর্মহীন হিসেবে দেখানোও সঠিক হবে না।

এবার অন্য আরেকটি প্রসঙ্গে আসি। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত মতে বিশ্বে আমাদের দেশেই শিশু ও প্রসূতি মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। এ প্রসঙ্গে আমি বলব, জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধভাবে খারাপ সংবাদগুলোকে অন্তত কিছু দিনের জন্য হলেও আমরা আমলে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে চাই। সমস্যাগুলো নিয়ে আমরা পরেও ভাবতে পারব। বিশেষত চুইয়েপড়া বিপ্লবের পর স্বাস্থ্যখাতটি যখন পুরোপুরি বেসরকারি পর্যায়ে চলে আসবে। ইতোমধ্যেই আমি আশা করব, আপনারা সবাই চিকিৎসাবীমা কিনে ফেলবেন। আরেকটি কথা, মাথাপিছু খাদ্যশস্য প্রাপ্তির হার বিশ বছর ধরে আসলেই কমতির দিকে। অথচ এ সময়টিই ছিল আমাদের দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাল। বিশ্বাস করুন, এটি একেবারেই একটি কাকতালীয় ব্যাপার।

প্রিয় দেশবাসী, আমরা যে নয়া ভারত নির্মাণ করতে যাচ্ছি সেখানে একশ’ ধনী ব্যক্তির হাতেই কেন্দ্রীভূত রয়েছে আমাদের মোট অভ্যন্তরীণ জাতীয় আয়ের ২৫ শতাংশ সম্পদ। স্বল্পসংখ্যক হাতেই সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়। আর হাতের সংখ্যা যেখানে যত কম দক্ষতাও সেখানে তত বেশি এবং এমনটাই সব সময় ঘটে থাকে। কথায় বলে না, অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। আমরা চাইব, আমাদের কোটিপতিরা, তাদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সহযোগীরা শান্তি-সৌহার্দ্যের এমন একটি পরিবেশে আরো বেশি সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠুন যেখানে তারা বসবাস করবেন সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে, যেখানে তাদের মৌলিক অধিকারগুলোও নিরাপদে সংরক্ষিত থাকবে।

আমি জানি, এককভাবে শুধু গণতান্ত্রিক প্রথা পদ্ধতিই আমার স্বপ্নকে বাস্তবতা দিতে পারবে না। বস্ত্তত, আমি এখন এ বিশ্বাসেই পৌঁছেছি, প্রকৃত গণতন্ত্র আসে বন্দুকের নলের মধ্য দিয়েই। আর এ কারণেই আমরা আমাদের সামরিক বাহিনী, পুলিশ, কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স, কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী, প্রাদেশিক সামরিক কনস্টেবল বাহিনী, ভারত-তিববত সীমান্ত পুলিশ, পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত রাইফেলসের মতো বাহিনীগুলো তৈরি করেছি। পাশাপাশি আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোতে বিপথগামী যেসব বিদ্রোহী রয়েছে তাদের নির্মূল করার জন্য গঠন করেছি স্করপিয়ন্স, গ্রে-হাউন্ড এবং কোবরার মতো বাহিনীগুলো।

নাগাল্যান্ড, মনিপুর ও কাশ্মিরে আমরা আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছি। কাশ্মির, বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি ভারতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানে জনগণের মধ্যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা পাঁচ লক্ষাধিক সৈন্য মোতায়েন করেছি। যেসব কাশ্মিরী তরুণ দুই মাস ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সান্ধ্য আইন অমান্য করছে এবং পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারছে তারা লস্কর-ই তৈয়েবার জঙ্গি সদস্য। তারা আসলে স্বাধীনতা নয়, চায় কর্মসংস্থান। হৃদয়বিদারক ঘটনা এই, চাকরির দরখাস্তগুলো যাচাই-বাছাই করার আগেই তাদের মধ্যেকার ষাটটি জীবন ঝরে গেছে। আমি ইতোমধ্যেই পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি, ওইসব বিভ্রান্ত তরুণদের যেন কোনোভাবেই হত্যা করা না হয়, প্রয়োজনে গুলি করে আহত করা যেতে পারে।

সাত বছরের প্রধানমন্ত্রীকালে মনমোহন সিং কেবল সোনিয়া গান্ধীর একজন কেতাদুরস্ত, আপৎকালীন আজ্ঞাবাহী হিসেবেই নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছেন। এ মানুষটি প্রথমে অর্থমন্ত্রী এবং পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিশ বছরে দেশকে এমন এক নয়া অর্থনৈতিক নীতির শাসন ব্যবস্থা উপহার দিয়েছেন যা ভারতকে বর্তমান অবস্থায় এনে ফেলেছে। সুতরাং, এমন চমৎকার একটি ছদ্মবেশ তাকেই মানায়। তবে এ থেকে এটি ভাববার কোনো কারণ নেই, তিনি আজ্ঞাবাহী নন। তবে কি, সব নির্দেশই সোনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে আসে না। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র তার আত্মজীবনীতে মনমোহন সিংয়ের ক্ষমতায় আরোহণের কাহিনী বর্ণনা করেছেন। ১৯৯১ সালে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মারাত্মকভাবে কমে গেলে নরসিনহা রাও সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে জরুরি ঋণের আবেদন জানান। আইএমএফ দুটি শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিতে রাজি হয়। প্রথম শর্তটি ছিল কাঠামোগত সমন্বয় ও অর্থনৈতিক সংস্কার। আর দ্বিতীয়টি ছিল আইএমএফের পছন্দসই একজন অর্থমন্ত্রী নিয়োগদান। আর সেই ব্যক্তিটিই ছিলেন, মিত্র বলছেন, মনমোহন সিং। বছরের পর বছর ধরে তিনি তার মন্ত্রিপরিষদ ও আমলাতন্ত্রকে এমন সব মানুষের সঙ্গে জুড়ে রেখেছেন যারা পরিণতি কী হবে সেই বিবেচনা বাদ দিয়ে পানি, বিদ্যুৎ, খনিজ সম্পদ, কৃষি, জমি, টেলিযোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব কিছু বেনিয়া পুঁজির হাতে তুলে দিতে ধর্মে বিশ্বাসীদের মতোই অঙ্গীকারাবদ্ধ। (চলবে)

14.10.10অরুন্ধতী রায়, বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতের লেখিকা ও মানবাধিকারকর্মী। সম্প্রতি দিল্লির ‘আউটলুক’ সাময়িকীতে ‘ওয়াকিং উইথ কমরেডস’ শিরোনামে লিখেন তার সাড়া জাগানো দীর্ঘ নিবন্ধ। নিবন্ধটি সাপ্তাহিক বুধবার-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ওই ‘আউটলুক’ সাময়িকীতেই প্রকাশিত হয়েছে তার নতুন নিবন্ধ ‘দি ট্রিকলডাউন রেভুলিউশন’। ভারতের রাজনীতি ও ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ নামে কর্পোরেট বাণিজ্যের ধ্বজাধারী শাসক সম্প্রদায়ের গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকান্ডের গতিপ্রকৃতি অনুধাবনের সুবিধার্থে অরুন্ধতী রায়ের এ নিবন্ধটিও ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হল। ভাষান্তর : নেয়ামুল হক


সোনিয়া গান্ধী এবং তার পুত্র এসব কিছুতেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাদের কাজই হলো মানুষের মনে দয়া-দাক্ষিণ্য আর মোহময়তা জাগিয়ে তুলে নির্বাচনে জয়ী হওয়া। তারা আপাত প্রগতিশীল কিন্তু আদতে কৌশলগত এবং কেবল প্রতীকী মূল্য রয়েছে, এমন সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও (এসব সিদ্ধান্ত নিতে পারার জন্য তারা আবার বাহবাও পেয়ে থাকেন) ক্ষমতা রাখেন। আর এসব সিদ্ধান্ত তারা নিয়ে থাকেন সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে প্রশমিত রেখে বিশাল আকৃতির ক্ষমতার জাহাজটিকে চলতে দেওয়ার জন্য (সাম্প্রতিক এমন একটি ঘটনার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। নিয়ামগিরি অঞ্চলে বেদান্ত কোম্পানি বক্সাইট উত্তোলনের যে অনুমতি পেয়েছিল সেটি বাতিল করাতে পারার ঘটনাটিকে রাহুল গান্ধীর কৃতিত্ব হিসেবে দাবি করে সেখানে এক বিজয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। অথচ এটি বাতিল করার জন্য ডোঙ্গারিয়া কোন্দ আদিবাসী, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পরিবেশ এবং সমাজকর্মীরা বছরের পর বছর ধরে সম্মিলিতভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। সমাবেশে রাহুল গান্ধী নিজেকে ‘আদিবাসীদের সৈনিক’ হিসেবে আখ্যা দেন। তার দলের নেওয়া অর্থনৈতিক নীতিই যে আদিবাসী মানুষকে ব্যাপকভাবে বাস্ত্তহারা করছে সে বিষয়টির কোনো উল্লেখই তিনি করেননি। কিংবা বক্সাইট সমৃদ্ধ আশপাশের অন্য সবগুলো গিরি আর পাহাড়েই যে খনি খননের ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেদিকেও আদিবাসীদের এ সৈনিকটির নজর গেল না। ব্যক্তিগতভাবে রাহুল গান্ধী হয় তো বা একজন নিপাট ভদ্রলোকই। তবে তিনি কিন্তু চারদিকে ঘুরে ঘুরে ‘দুইভারত’ তত্ত্ব, অর্থাৎ একটি ‘ধনী ভারত’ এবং অন্যটি ‘গরিব ভারত’, প্রচার করে প্রতিটি মানুষের বুদ্ধিমত্তা এবং এমনকি নিজের বুদ্ধিমত্তার প্রতিও অবিচার করছেন। দুই ভারত নিয়ে তার নিজের দলেরই যে করণীয় কিছু নেই)।

রাজনীতিবিদদের জনগণের মধ্যেও একটি ভিত্তি রয়েছে। তারা নির্বাচনে জয়ী হয়ে গণতন্ত্রের ধ্বজাটিকে সচল রাখেন। অন্যদিকে প্রকৃত অর্থেই দেশটিকে যারা চালান (বিচারক এবং আমলারা) তাদের কিন্তু নির্বাচনে জিততে হয় না বা কষ্ট করে নির্বাচনে জেতার দায় থেকে তারা (যেমন আমাদের প্রধানমন্ত্রী) মুক্ত। দুই দলের মধ্যে বিন্যস্ত এ কর্মবিভাজনটি কিন্তু গণতন্ত্র চর্চার পথে মারাত্মক এক বাধা। সোনিয়া আর রাহুল গান্ধী যদি এক সঙ্গেই সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেন তবে সেটি হবে একটি ভুল পদক্ষেপ। আসল ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে বিচারক, আমলা ও রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি প্রেতচক্রের হাতে। তারা আসলে দেশের মোটামুটি সবকিছুই কুক্ষিগত করে রাখা সামান্য কয়েকটি করপোরেশনের পুরস্কারলোভী ঘোড়দৌড়ের ঘোড়া। এরা এক একজন এক এক রাজনৈতিক দল করতে পারেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে পরস্পরের বিরুদ্ধে হম্বিতম্বিও প্রদর্শন করতে পারেন। তবে এর সবকিছুই হচ্ছে লোকদেখানো অভিনয়। আসল বিরোধটা হচ্ছে বিভিন্ন করপোরেশনের মধ্যেকার ব্যবসায়িক বিরোধ। প্রেত চক্রটির শীর্ষস্থানীয় একজন সদস্য হলেন পি চিদাম্বরম। কেউ কেউ বলেন, তিনি বিরোধী দলগুলোর কাছেও এতটা প্রিয়, কংগ্রেস যদি আগামী নির্বাচনে হেরেও যায় তবুও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনিই হয়তো থেকেই যাবেন। ব্যাপারটি হয় তো তাই। তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত আরো কয়েকটি বছর হয় তো তিনি থেকেও যেতে পারেন। তবে তিনি থাকলেন কি চলে গেলেন তাতে কিছুই আসে যায় না। ছাঁচ তৈরিই আছে।

২০০৭ সালের অক্টোবরে চিদাম্বরম তার পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডে দেওয়া এক বক্তৃতায় নিজের সেই কর্তব্য কর্মের একটি ফিরিস্তিও তুলে ধরেছিলেন। বক্তৃতার শিরোনাম ছিল ‘গরিব-ধনী দেশসমূহ : উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ’। বক্তৃতায় তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম তিনটি দশককে ‘সর্বনাশা বছরসমূহ’ হিসেবে উল্লেখ করে ২০০২ সালের ৬৯ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার ২০০৭ সালে এসে যে ৯.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে সেটি প্রকাশ করে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। তিনি কী বলেছেন সেটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই আপনাদের কাছে তেঁতো ঠেকলেও তার নীরস বক্তৃতার কিছু অংশ আমি উদ্ধৃত না করে পারছি না। তিনি বলছেন : ‘‘গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অধীনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেশ দ্রুতগতি সম্পন্ন হওয়ার কারণে কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, এ অবস্থায় উন্নয়নের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করা ততটা কঠিন নয়। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই এর বিপরীত। গণতন্ত্র কিংবা বলতে পারেন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং আমাদের সমাজতান্ত্রিক কাল পর্বের উত্তরাধিকার মিলে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জকে বরং কঠিনতরই করে তুলেছিল। এ বিষয়ে কয়েকটি উদাহরণ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। ভারতের খনিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে কয়লা যা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মজুদ, আকরিক লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, মাইকা, বক্সাইট, টাইটেনিয়াস, ক্রোমাইট, হীরক, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম এবং চুনাপাথর। কান্ডজ্ঞান দিয়েই আমরা বুঝি, এসব সম্পদ আমাদের অতিদ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে উত্তোলন করা উচিত। এর জন্য দরকার বড় আকারের পুঁজি, দক্ষ প্রতিষ্ঠান এবং এমন সব নিয়ম-নীতি যা পুঁজি নিয়ন্ত্রক শক্তিগুলোকে কাজ করার সুযোগ করে দেবে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের খনি খনন খাতে এর কোনোটিরই উপস্থিতি নেই। এ সংক্রান্ত আইনগুলোও বহ
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×