somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা গল্পের উত্তরাধিকার: প্রতিক্রিয়া পর্ব

০১ লা জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটি ইয়াহু গ্রুপ কবিসভা ও আমাদের সময়ের সাপ্তাহিক 'কাগজ' এ প্রকাশিত হয়েছে।

যেসব সুশীল ও ফাজিল পাঠক সাহিত্যের কানাগলিতে অল্পবিস্তর ঢু মারার অভ্যাস এখনো ছাড়তে পারেন নাই তাদের জন্য গত মাসদুয়েকের সবচেয়ে বড় চমক হতে পারে প্রায় অতর্কিতে নাজেল হওয়া ‘সাপ্তাহিক কাগজ’ নামের শিল্প-সাহিত্যের একমাত্র সাপ্তাহিক বলে নিজেকে জানান দেয়া পত্রিকাটি। নতুন একটা সাপ্তাহিকের সবগুণ ধারণ করে প্রকাশিত কাগজটির প্রতি সংখ্যার কড়াইয়ে গরম মশলায় রান্না করা উপাদেয় খাবারের লোভে আমিও যখন ঘাটের পয়সা খরচ করতে অভ্যস্থ হয়ে ওঠলাম, তখন দেখলাম প্রাপ্তিও নেহায়েৎ মন্দ না। আমরা, প্রায় মৃত মানুষেরা, নিজেদের অমতা ঢাকতে অন্যের বিরুদ্ধে প্রায় রুচিহীন ভাষায় পরিবেশিত গালাগালির সাজিয়ে রাখা পসরায় যেমন চোখ বোলায়, তেমনি দুয়েকজন লেখকের খানিকটা শ্রমে অর্জিত লেখার দিকেও আপনা আপনি চোখ নামাাই। চিন্তা ও তৎপরতার এই প্যারাডক্স আমাদের মৌলিক চিন্তা বিকাশের হাজার বছরের প্রবণতার সাথে খানিকটা বেমানান মনে হতে পারে অনেকের, সন্দেহ নেই। এর যে কারণ আমি খোঁজে পায় সেটা বোধকরি লোক সং¯কৃতির ক্রমাগত বিলুপ্তি ও মিডিয়া সংস্কৃতির প্রায় অপরাজেয় বিকাশ। তা না হলে পুরো এক চন্দ্রবর্ষ ব্যয় করে বের হওয়া একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক কাগজের দোষত্র“টি মাত্র কয়েক লাইনে হাজির করার লাগামহীন অধিকার কী করে পায় একটি সাপ্তাহিক মুনাফাভোগী পত্রিকা! ােভ ও বেদনার রণ আমরা থামাতে পারিনা। এর মানেই কী সামালোচনা সাহিত্য?
আমার বক্তব্য মূলত ‘বাংলা গল্পের উত্তরাধিকার’ নামের সৃজনশীল লেখাটিতে সীমিত রাখার ইচ্ছা রাখি। আহমাদ মোস্তফা কামালের লেখার সাথে বোধকরি সব ক্যাটাগরির পাঠকের অল্পবিস্তর পরিচয় আছে। পরিচয় এ কারণে থাকবে যে একজন লেখকের মূল দায়বদ্ধতা যেখানে মুখ্য হওয়া উচিত, ঠিক সেখানটাই তার সক্রিয়তা কিংবা তৎপরতা। সরল ভাষায় মাঝেমধ্যে অভূতপূর্ব যেসব গল্প আমরা পাই, ঠিক একই রকম ভাষার মননশীল গদ্য উপভোগের সুযোগও তিনি আমাদের দেন। তবে নিয়মিত পাঠকের জন্য তিনি একটা সমস্যাও তৈরী করেন। একই চিন্তা ও বিষয় নিয়ে লেখা বিভিন্ন রচনার প্রচুর রিপিটেশন! অথবা রচনার মাতৃকাঠামোটা এতটাই পরিচিত মনে হতে পারে যে, তার লেখার নিবিষ্ট পঠকের জন্য সেটা মর্মপীড়ার কারণও হতে পারে। প্রায় একদশকের কাছাকাছি সময় আগে আটারো-কুড়ি বছর বয়সে পড়া, দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি দৈনিকে তার সমসাময়িক গল্পকারদের নিয়ে লেখা গদ্যের সাথে বর্তমান লেখাটির সাদৃশ্য খানিকটা দৃষ্টিকটু লাগল। হয়ত বর্তমান রচনাটি খানিকটা বৃহৎ ক্যানভাসে লেখা বলেই আগের রচনা থেকে ধারকর্জ করার প্রয়াস পেয়েছেন তিনি। প্রশ্ন সেটা নয়। আমার প্রশ্ন আলোচকের মমিপ্রীতি নিয়ে। দীর্ঘদিন নি®কৃয় থাকা একজন গল্পকারের গল্প নিয়ে আলোচনা দোষের কিছু নয়। নি®কৃয়তা অনেক সময় দীর্ঘ সক্রিয়তার রসদ হয়ে ওঠতে পারে। সে সম্ভাবনা মাথায় রেখেও বলা যায়, যখন পুরো একটি দশকের প্রতিনিধিত্ব করা লেখকেরা আলোচনায় আসেন তখন আলোচককে খানিকটা নির্দয় না হলে সম্ভবত আলোচনায় ফাঁকফোকড় বেড়ে যাবার সম্ভাবনাও তৈরী হয়। ধরা যাক, একটি বা দু’টি গল্প লিখে কেউ যদি অসম্ভব সম্ভাবনাময় বলে প্রতিয়মান হয়, সেেেত্র তার প্রতিভার অপচয় যেকোনো সৃষ্টিশীল লেখক ও কাণ্ডজ্ঞান ওয়ালা পাঠকের জন্য বেদনাদায়ক মনে হতে বাধ্য। কিন্তু এই বেদনা ভারাক্রান্ত হওয়া ছাড়া তাদের করারও বোধকরি কিছু থাকেনা। জ্ঞান আমার কাছে এমনই এক ভয়ংকর প্রথা মনে হয়, যেন যে যত বেশি গ্রহণ করে সে তত বেশি বিপর্যস্ত হয়। তবু পাঠক চায় আরো বেশি বিপর্যস্ত হতে! কিন্তু তাদের বিপর্যস্ত করতে সেসব লেখক এগিয়ে আসতে পারে না। রিপ ভেন উইংকেল কিংবা পিরামিডের ভেতর মমি হয়ে যাওয়া সেসব লেখক কবে ঘুম থেকে জেগে ওঠবে তার জন্য পাঠকের হা পিত্যেশ কখনো শেষ হয়না। একজন সচেতন অথচ বিপর্যস্ত হতে প্রস্তুত থাকা পাঠক হিসেবে আলোচকও গত দশ বছরে তাদের ভুলতে পারে নাই। কিন্তু আমার ব্যাক্তিগত মত তাদের আরো খানিকটা ঘুমাতে দেয়া হোক। এই ফাঁকে আমি আবার নতুন ঘ্রাণের সন্ধানে বের হই। যে ঘ্রাণ আমাকে সন্ধান দেবে খোকন কায়সারের মতো প্রতিনিধির। কারণ আলোচক তার পাঠ ও শ্রম দিয়ে নতুনদের না খোঁজলে তারা বেরিয়ে আসতে পারে না। এই না খোঁজার অনিবার্য পরিণতি খোকন কায়সারদেরই সমসাময়িক আরেক নিখাদ গল্পকার আহমেদ মুনির কিংবা তার মতো আর কারো বাদ পড়া। মাহবুব লিলেনের নামটাও চোখে পড়লনা মনে হয়। তার ‘উকুন বাছা দিন’ এর পনের-ষোলটি গল্পের মধ্যে ৪/৫ টি আমাকে এতটাই আলোড়িত করেছিল যে বছর দুয়েক আগে একটি জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় নিজের ভাবনাগুলো পাঠকের সাথে ভাগাভাগি করে শান্তি পেয়েছিলাম।
লেখার শেষদিকে নব্য লেখকদের একটি সংপ্তি তালিকাও হাজির করেছেন আলোচক। জানালেন তালিকার সীমাবদ্ধতার কথা। গুণে দেখলাম প্রায় ষাটের কাছাকাছি! গত শতকেরই শেষদিকে নিজেদের জানান দিযে নতুন দশকে প্রায় গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা সাত আটজন প্রতিষ্ঠিত ও ত্রেবিশেষে গোলঠেবিল আলোচনার অন্যতম সদস্য হয়ে ওঠা গল্পকারদের এই দলে ঠেলে দেয়াটা আমার কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়। এর ফলে দশক বিভাজনের রহস্যময় ও গোলকধাঁধায় ভরা বিতর্ক একটুও বাড়বে না বলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। বরং দশকের বেয়াড়া সেজে বাজিমাত করা কসমোপলিটন ইমেজের লেখকদের নতুন করে ভাবতে উদ্ধুদ্ধ করবে। দশকের ব্যাকরণ মেনে যারা লেখালেখিতে আসার সুযোগ পায়না, তাদেরকে বরাবরই শূণ্য দশকের বলে আমি গণ্য করি। সে অর্থে প্রতি দশকে শূণ্যের তালিকা বাড়ে। তাদের জোট পুরো একটি শতকেও নি:শ্বেষ হয়না। আর সনাতন দশক বিবেচনায় জন্মলগ্নেই একটি দশকের মৃত্যু নিয়তি হিসেবে লেখা থাকে। তাই প্রচলিত যে অর্থে শূণ্য দশক বিবেচনা করা হয়, আমি সে দলের নই। এভাবে ভাবলে একটা জটিল গোলকধাঁধার উত্তর পাওয়া যেতে পারে। সে যাই হোক, কষ্মিক কালেও ভাবিনি এত লেখকের কথা। এই যে উড্ডয়ন, এটা কে আমরা যেন সতর্কতার সাথে নিই। ফেলে দেয়া সহজ কাজ। কিন্তু বাছাই বড় কঠিন। যাদের নাম আনা হল তারা যেন আলোচকের মান রাখেন। একজন লেখকের রণ যদি কেউ বুঝতে পারে তাহলে সে নিশ্চয় স্বীকার করবে লিখতে পারার আনন্দ, বেদনা ও সম্ভাবনার কথা। আমি নিশ্চিত এদের কেউই নিঃশ্বেষ হবার শংকা নিয়ে লিখতে আসেনি। একজন অতি নগন্য তরুণ গল্পকার হিসেবে আমি তাদের মঙ্গল কামনা করি।
কৌশলী ও নিবেদিত লেখক হিসেবে আহমাদ মোস্তফা কামালের লেখাটি আমাদের সক্রিয়তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। লেখক কেবল লিখে বাঁচে না। তাকে লেখা খেতেও হয়। কিন্তু লিখিয়েদের খাওয়ার রেসিপিতে ডায়েট কন্ট্রোলের বিদ্যা এত বেশি মানা হচ্ছে যে, তাদের খাওয়া দাওয়া নিয়ে আমরা অতি সাধারণ পাঠকরা খানিকটা সন্দিহান হয়ে ওঠছি সন্দেহ নেই। সেসব নাক উঁচু ও উন্নাসিক লেখকের মধ্য থেকেই যদি কেউ কেউ আলোচকের মতো শ্রম ও বিবেচনাবোধ নিয়ে এগিয়ে না আসেন সেেেত্র শনির দশায় পতিত হবার জোর সম্ভাবনা থেকে কেউ রেহাই পাবে না। এটা আমরা হতে দিতে পারিনা।

১২/০৫/২০০৮
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×