মেঘের রাজ্যে আমার কাছে স্বপ্নের রাজ্য। আর সে স্বপ্নের রাজ্যকে বলা হয় সাজেক। সাজেক মানেই মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া। প্রকৃতির এত সৌর্ন্দয্য নিজের চোখে না দেখলে কখনো বিশ্বাস করা যাবে না । আর তাইতো বার বার ছুটে যেতে ইচ্ছে করে সেই স্বপ্নের সাজেকে।

সাজেকের কথা বললেই আমি যেন ব্যাগ গুছিয়ে তৈরী। কে আটকায় আমায়? তাই এবারও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের বার্ষিক ট্যুর ঠিক হয় সাজেক। আর আমি সাজেক শুনেই রাজি। এবার শুধু আমি না সাথে ছিল আমার কয়েকজন মেয়ে বন্ধুরাও। ভাবতেও পারি নি তারাও ট্যুরে যাবে।

প্রতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরে আমাদের ব্যাচ থেকে চার থেকে পাচঁ জন মেয়ে যায় । এবার সাজেক শুনে মেয়ের সংখ্যা বাড়ল চার থেকে সাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুর সর্ম্পকে অনেকের মধ্যে নেগেটিভ ধারণা। নেগেটিভ ভেবে আমিও প্রথম দুটি ট্যুর মিস করেছি। তবে যখনই ট্যুরে গেলাম আমার নেতিবাচক দিক এখন ইতিবাচকে। আমি আমার মতামত থেকে বলবো প্রতিটি ট্যুরের মজা আলাদা। ফ্যামিলির সাথে এক ,বন্ধুদের সাথে আরেক মজা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে আরেক মজা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক শিক্ষিকা সবসময় মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকেন আর চিন্তায় থাকেন সবাইকে নিয়ে যেন ভালভাবে বাড়ি ফিরতে পারেন। তারা ভাবেন প্রতিটা শিক্ষার্থী খেয়েছে কিনা, সবাই ঠিক আছে কিনা। কারণ বাবা মার অনুপস্থিতে তারাই তখন বাবা মা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুর অভিঙ্গতায় আমি বলবো স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকরা অনেক বন্ধুতাপূর্ন। তাদের সাথে ঘুরতে যাওয়া মানে নিজের পরিবারের মাথে ঘুরতে যাওয়া।
এবার আমি মেঘের রাজ্য সাজেক নিয়ে । সাজেক নিয়ে আমার মধ্যে যেমন কৌতুহল তেমনি মনের মধ্যে ভয় এই বুঝি চাদেঁর গাড়ি উল্টিয়ে পড়লো। তবুও দূর্গম রাস্তা দিতে হবে পাড়ি। আর তাই খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেকের উদ্দেশে সকাল ১১ টায় চাদেঁর গাড়ি উঠলাম। সংখ্যায় ৮০ জন ছিলাম তাই গাড়ির সংখ্যাও বেশি ছিল। সামনে পিছনে শুধু আমাদের গাড়ি। সবার মুখে যেন আন্দদের জোয়ার বইছে। নভেম্বরের শেষের দিকে তাই একটু শীত কম ছিল তবে মেঘের কুয়াশা ছিল বেশ। এরপর দীঘিনালা, বাঘাইহাট, কাসালাং, নদীকে পেছনে ফেলে পৌছেঁ গেলাম সােজা রুইলু্ই পাড়ায়। প্রায় দুই হাজার ফুট পাহাড়ের উপর ঝকঝকে প্রশস্ত পথ। এখনকার প্রতিটি ঘরবাড়ি, রাস্তা, ফুটপাত একেবারে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি। কাঠের ও বাশেঁর তৈরী ছোট ছোট ঘরগুলো দেখে মনে হচ্ছিল এ এক ভিন্ন জায়গায় আমরা অচেনা মানুষ। তাদের সাথে আমাদের কোন কিছুরই মিল নেই। পথের পাশে পাহাড়িদের খুব সুন্দরভাবে সাজানো।
পাহাড় আর মেঘের রাজ্যে ছোট ছোট ঘরবাড়ি দেখে মনে হল বাংলাদেশের মধ্যে ছোট আরেকটি বিদেশী দেশ। সেখানকার পাহাড়ি পেপেঁ আর কলার স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। প্রতিটি খাবারের যেন ভিন্নতা রয়েছে। তাদের সব খাবারের মধ্যে বাশেঁর ভেতর মুরগি পোড়ানো খাবার সবচেয়ে ভালো ছিলো। রাতে আমাদের বারবিকিউ পার্টির আয়োজন বেশ জমজমাট হয়ে উঠে। সবার হাতে পৌঁছে দেওয়া হয় ফানুশ । কার ফানুশ কতদূর উপরে উঠে তা নিয়ে চলে মাতামাতি। ফানুশ উড়াতে সাহায্য করলো রির্সোটের কর্মচারিরাও । আমার দেখা সবচেয়ে বড় ফানুশ ছিল এবারের ট্যুরে। ফানুশ উড়ানোর পর শুরু হয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলা। আর এতে অংশগ্রহন করে স্যার ম্যামরাও । ছেলেদের বেলুন ফুটানোর খেলা বেশ জমে উঠে। আমার ক্লাশমেট প্রান্তর বেলুন খেলা মনে পড়লে আমি এখনো হাসি। বেলুন খেলার শর্ত ছিলো নিজের বেলুন ঠিক রেখে অন্যর বেলুন ফুটানো। প্রান্ত নিজের বেলুন বাচাঁবার জন্য খেলার বাইরে দাড়িয়ে লাফায় আর যখন দু থেকে তিনজন আছে তখন হুট করে খেলার মধ্যে ঢুবক বলে আমি আছি। সব মিলিয়ে জমজমাট এক পিকনিক রাতের পরিধিকে ছোট করে দিলো।
সাজেকে সবচেয়ে বেশি আসে কংলাক পাহাড় দেখতে। মেঘের ছোঁয়া পেতে সবাই ছুটে যায় কংলাকে। রুইলুই থেকে উত্তরে অন্য একটি উচুঁ পাহাড়ের উপর কংলাক পাড়ার অবস্থান। সেখানে গাড়ি উঠার পথ নেই। তাই পাহাড় বেয়ে ইঠতে হয়। চাকমা, লুসাই াার ত্রিপুরাদের অবস্থান সেখানে। রুইলুই পাড়ার শেষ প্রান্তে হেলিপ্যাড। তার পাশেই পাহাড়ের কোল জুড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে অবস্থান কেন্দ্র । এখানে বসলে মিজোরামের পাহাড়গুলো চোখের সামনে ভেঁসে উঠবে অন্য এক রূপ নিয়ে। ঘুমের কারণে সকালে কংলাক পাড়ায় যাওয়া মিস করেছি। সবার মুখে কংলাকের কথা শুনে খুব আফসোস হলো। আবার একদিন যাবো কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের হাতছানি নেওয়ার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ২০১৭ সালের ভার্সিটির সাজেক ট্যুর ছিলো আমার সেরা ট্যুর।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৮:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




