-কেন?
-মার্কেটে যাবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে। বই বের কর।
সোহান বই খাতা বের করতে করতে ও ভাবতে বসে যায়। টিউশনির সব টাকা পেয়ে গেলে কাকে কাকে কি দিবে। বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবী। মার জন্য শাড়ি। আর ছোট বোনটার জন্য সেদিন মার্কেটে দেখা জামাটা। আর, কাঁচাবাজার থেকেও কিছু কিনতে হবে।
সোহানকে নিয়ে ওর তিনটি টিউশনি। বাকি দুইটার চেয়ে সোহানের বেতনটা একটু বেশি। তাই ও খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ায়। অবশ্য তিন জনকেই ভালোভাবে পড়ায়। তার পড়ানোর সুনাম আছে।
চাকরীর আশা করতে করতে টিউশনিটাই এখন ভরসা হয়ে গেছে।তাই ভালোভাবে না পড়ালে চলেনা। কত যে পরীক্ষা দিলো। রিটেনে ভালোভাবে পাশ করার পর ভাইভাতেও গেছে কয়েকবার।তবু কেন যে হয়না! সরকারী চাকরির বয়সও শেষ হয়ে আসছে প্রায়।
এইতো কয়েকদিন আগে ব্যাংকের ভাইভার রেজাল্ট দিলো। এবার গত কয়েক পরীক্ষার চেয়ে পরীক্ষা এত ভালো হয়েছে যে, অনেকের মত সে নিজেও আশাবাদী ছিলো এইবার চাকরীটা তার হবেই। চাকরিটা হয়ে গেলে ওকে আর পায় কে! কত ভাবনা ছিলো কি কি করবে। কিন্তু, হয়নি তার চাকরীটা! আসলে ওরা যে কাকে নিতে চায় তা ওরাই জানে। অথচ সরকারি ব্যাংক গুলোতে গেলে দেখা যায় কোন কাজের লোক নাই। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়ায়া থাকা আর আরো কত রকম হেনস্থা যে হতে হয়!
-ভাইয়া , আপনার কেনাকাটা হয়ে গেছে?
-না।
-কেন ভাইয়া?
-এইতো কিনবো।
-আর কবে কিনবেন ভাইয়া?
-এ্যাঁ, হ্যাঁ কিনবো। কথা না। পড়।
সোহান আর কথা না বাড়িয়ে পড়ায় মনোযোগ দেয়।
তাহিন অবাক হয়ে ভাবে ছোট্ট একটা ছেলে সেও বুঝতে পারছে আর কেনাকাটার বেশি সময় নেই। কিন্তু, ওর বাবা-মার সে জ্ঞান থাকলেতো!
টিউশনিটা নেয়ার সময়েই বলে দিয়েছিল মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে বেতন পেতেই ও পছন্দ করে। কিন্তু, ওই বলাই সার। প্রত্যেক মাসে ধরনা দিতে দিতে মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়!
ওর এই টাকায় পুরো সংসারটা চলে।আর, তাহিনের আরেকটা বিষয় খুব অবাক লাগে। শালা সব চাকরীরই ঈদ বোনাস আছে। টিউশনির নাই। আরে বাবা বাসা বাড়িতে যারা পড়ায় তারা অত্যন্ত ঠেকায় না পড়লে কেউ পড়ায়না। তবে কেন এই হেনস্থাটা করো বাপু!
বেতনের কথা বললে আবার ওনাদের গায়ে লাগে! এত চাওয়াচাওয়ি টিচার বলে ওঁদের অপছন্দ। এই কথা পিচ্চিটা আবার ওকে বলে দিয়েছে। তাই টিউশনিটা ছুটে যাওয়ার ভয়ে কিছু বলা ছেড়েই দিয়েছে।
বেতনটা এনেছে কিনা সেটা কিভাবে সোহানকে বলবে ভেবে না পেয়ে বললো সব বই খাতা বের করোতো দেখি!
এর আগেও এই ট্রিক্সটা খাটিয়ে ছেলেটিকে মনে করিয়ে দিয়েছে। ব্যাগে হাত দিয়ে তার মনে পরে গেছে স্যারের বেতনটা দেয়নি।
কিন্তু, নাহ্। আজকে আর কোনও ট্রিক্সেই কিছু হলোনা। বেতনটা সত্যিই আজও পাওয়া গেলোনা। সোহান তার পড়া করে চলে গেছে কখন।
আর মাত্র একদিন রয়ে গেছে পড়ানোর! তাহিন মন খারাপ করে তার ঘরে গিয়ে শুয়ে জানালা দিয়ে দুটি কাকের ঠোকরাঠুকরি দেখতে লাগলো।