১। ডেটলাইন ১০ই অগাষ্ট, ২০১১ সকাল।
স্থানঃ কক্ষ নং-৩২৩/এ, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হল।
টেবিলের সামনে একটা গল্পের বই খুলে বসে আছে সুমী, কিন্তু পড়ছে না, বইয়ের অক্ষরগুলি চোখের পানিতে ঝাপসা। মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ, রেজাল্ট ভালো হবে জানে সে, অনার্সে ফার্স্ট হয়েছে সে, মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। শিক্ষক হবার আশ্বাসও পেয়েছে বিভাগীয় প্রধানের কাছ থেকে। কিন্তু এখন যেন সব কিছুই অর্থহীন মনে হচ্ছে।
সুমীর পুরো নাম মার্জিয়া জান্নাত সুমী। জাবি'র ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্রী। শিক্ষক হবার আজীবন লালিত স্বপ্ন সফল হবে এটা সে সেদিনও জানতো। জানতো তার সহপাঠী-বান্ধবী-জুনিয়র-সিনিয়র সবাই। সাথে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের এক তরুন শিক্ষকের সাথে মন নেয়া-দেয়া আর বিয়ের প্রস্তাব, সব মিলিয়ে সুমীর বৃহস্পতি ছিলো তুংগে। কয়েকমাস ধরে চলা সেই প্রেমের সম্পর্কে বুনেছে সে অনেক স্বপ্ন। ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের মধ্যস্থতায় বিয়ের দিকে আগানো সেই সম্পর্ক সম্বন্ধে পরিচিত সবাই জানে। কেউ কেউ এসে সে নিয়ে মজাও করে, বান্ধবীরা খেপানোর জন্য টিপ্পনী কাটে। কপট রাগের ভাব দেখালেও সেসব শুনতে ভালোই লাগে সুমীর। বাংগালী একটা মেয়ের বিয়ে-সংসারের শ্বাসত স্বপ্নে সেসব কথা আরও রোমান্টিকতার নিয়ে আসে। কিন্তু সুখ যে সইলো না তার। আগের এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার প্রেমিক-হবু স্বামী জানিয়ে দিলো যে সেই এই সম্পর্ক আর এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক না, বিয়ে করতে ইচ্ছুক না। আর শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার আশ্বাস দেয়া সেই ঘটক শিক্ষকেরও বিভাগীয় প্রধানের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে শীঘ্রই। তাতে সুমীর শিক্ষক হবার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। হাজার হোক তার কোন শক্তিশালী দলীয় পরিচয় নেই, নেই জাবি'র কোন শিক্ষক পিতা।
কাল সারা রাতে সে ভেবেছে, কুল কিনারা করতে পারেনি, বরং কষ্ট গুলো দু'চোখ কে করেছে রক্তজবা লাল। শেষে আর কোন ভাবে এই কষ্ট-অপমান-প্রত্যাখান-হতাশা মেনে নিতে না পেরে বৈদ্যুতিক ফ্যানের সাথে উড়না প্যাচিয়ে ঝুলিয়ে দিলো নিজের সব কষ্ট। বাবা-মা আর এলাকাবাসীর গর্ব সেই মেয়েটির অপার সম্ভাবনা সেই সাথেই শেষ।
সুমীর সতীর্থরা থেমে থাকেনি। তার অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যাক্তিদের বিচারের দাবীতে ক্যাম্পাস মুখর করেছে। ইতিহাস বিভাগের সেই ঘটক বিভাগীয় প্রধান আর সুমীর প্রেমিক উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সেই তরুন শিক্ষক, দুজনই আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক দলের সদস্য, বর্তমান জাবি ভিসির একান্ত লোক। তাই এই দু'জনকে বাচাতে প্রশাসন মরিয়া। সুমীর মৃত্যুর বিচারের দাবীতে সংগঠিত আন্দোলনকে ধামা চাঁপা দেয়ার সুযোগ খুজে বেড়ায় প্রশাসন।
২। ইন্সটিটিউড অব ইনফরমেশন টেকনোজিতে দুজন তরুন লেকচারার নিয়োগ হয়েছে কিছুদিন আগে। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার্থে ছুটিতে যাওয়া দু'জন শিক্ষকের পোষ্টে "লিভ ভ্যাকেন্সি"তে নিয়োগ পাওয়া এ দু'জন লেকচারার তাই শংকায় থাকে কখন বিদেশ থেকে সেই দু'জন ফিরে আসে। একি চিন্তায় বিভাগীয় লীগপন্থী সিনিয়র শিক্ষকরা। ভিসি হবার দৌড়ে বর্তমান ভিসির কাছে গোপালগন্জ ফ্যাক্টরে পিছিয়ে পড়া এক কট্টর লীগপন্থী সিনিয়র শিক্ষকের চাপও আছে এখানে, কারন নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন দু'জন শিক্ষক er একজন আবার তার কন্যা। টার্গেট বিদেশে থাকা দু'জন শিক্ষকের পোষ্ট। ইশশ! এরা যদি কেউ পদত্যাগ করতো, বিদেশে গিয়েছে, বিদেশে থেকে গেলেই তো হয়। কোন ভাবে যদি এদের কাউকে চাকরীচ্যুত করা যেতো....
৩। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ, জাবি’র শাখার কমিটি স্থগিত হয়ে আছে অনেক দিন। দিন বদলের সোনার ছেলেরা তাদের পারফরমেন্সে এতই এগিয়ে গিয়েছিলো যে কেন্দ্রিয় কমিটি এটা করতে বাধ্য হয়েছে। কব্জি ডুবিয়ে নির্বিচারে সব খানে ঝোল-মাংস তাই খাওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সহযোদ্ধারা যেখানে শিক্ষক পিটিয়ে হাত মকশো করছে, সেখানে এরা বসে আছে নিরামিষ হয়ে। সাথে সুমীর মৃত্যর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবীতে একাট্টা হওয়া সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য দলীয় শিক্ষক ও প্রশাসন থেকেও চাপ আসছে বার বার। এদেরও দরকার একটা ঘটনা যার উপর ভর করে কেন্দ্রীয় কমিটি তথা জননেত্রীকে দেখিয়ে দেখা যাবে সোনার ছেলেরা কত ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরী।
৪। জাবি'র ইন্সিটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির লেকচারার মোহা্ম্মদ রুহুল আমিন খন্দকার, বিদেশে বিনাবেতনে শিক্ষা ছুটিতে আসা দু'জন শিক্ষকের একজন। রুহুল এসেছে পার্থ, ওয়েষ্টার্ন অষ্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পিএইচডি করতে। হয়ছে প্রায় দুই বছর। পিএইচডি প্রগ্রেস ভালো ভাবেই হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু পাবলিকেশন হয়ে গেছে ভালো জার্নালে, কয়েকটি কনফারেন্সেও এটেন্ড করেছে, এ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে। পিএইচডি শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে, তার আগে একবার দেশে ঘুরে আসবে। এই রোজার ঈদটা দেশেই করার প্ল্যান তার। বিশাল কেনাকাটা শেষে সেসব প্যাকিংও চলছে বিপুল উৎসাহের সাথে। প্রবাসে থাকা প্রতিটা মানুষই রুহুলের এই আনন্দটা অনুভব করতে পারবেন। রুহুলের ভাস্তে বলে দিয়েছে চাচ্চুকে, যেন তার জন্য একটা ল্যাপটপ নিয়ে আসে। রুহুল কিনে প্যাকিং করে রেখেছে সেই ল্যাপটপ। একমাত্র ভাগ্নী, যাকে রুহুল ডাকে "মা" বলে সে ক'দিন আগে একটা সংগীত প্রতিযোগীতায় প্রথম হয়ে পুরস্কার পেয়েছে, তবে সে পুরস্কারের মোড়ক না খুলে রুহুলের রুমে রেখে দিয়েছে, ওটা তার মামার জন্য, মামা এসে খুলবে। রুহুলের বাবা একটা আস্ত ফলবান কাঠাল গাছ বুকিং দিয়ে রেখেছে, কাঠাল ছেলের খুব প্রিয় কিনা, এসে যেন প্রান ভরে খেতে পারে। রুহুলের মা দিন গুনছেন অধৈর্য্য হয়ে কবে ছেলে আসবে। রুহুলের শ্বশুর রাজহাস কিনে রেখেছে কয়েকটা, জামাই এসে খাবে। পুরো পরিবার প্রতীক্ষায় আছে কোন না কোন উপলক্ষ তৈরী করে, রুহুল আসবে বলে। রিক্সার হুড ফেলে বৃষ্টির দিনে ঘুরে বেড়ানোর plan করছে রুহুল আর রুহুলের স্ত্রী। আর মাত্র কয়েকটা দিন...
৫। আমাদের অধিকাংশই যেখানে দেশকে নিয়ে হতাশ, নেতিবাচক ধারনায় আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে বলি সব সময়, "দেশের কিছু হবে না", রুহুল বলে না। সে সেই অল্প কয়েকজন মানুষদের একজন যে এখনও দেশকে নিয়ে আশা করে, বিদেশের তুলনামুলক নিরাপদ জীবনকে পায়ে দলে দেশে ফিরে যাবার প্ল্যান তারও, আর তার সাথে অনেক কিছু করার প্ল্যান দেশের জন্য। তাই দেশের খবরাখবর রাখে সব সময়।
৬। এরই মধ্যে গত ১১ই অগাষ্ট সকালে প্রথম আলো'র অনলাইনে ভার্সনের সর্বশেষ সংবাদে "চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মনির" এর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবরটা দেখে রুহুল চমকে উঠে আর সবার মতই। দু'জন মেধাবী মানুষ, যারা প্রবাসের উন্নত জীবনের মায়া ছেড়ে দেশে ফিরে গিয়েছেন দেশকে নিজেদের মেধার স্ফুরনে আলোকিত করার জন্য। তারা কোন বির্তকে নেই, কোন দলবাজিতে নেই, কাজপাগল দু'জন সৃষ্টির উল্লাসে উদ্দাম। এমন দু'জন মানুষের মৃত্যুতে যে কেউ কেপে উঠবে। এর পরই সরকারের যোগাযোগমন্ত্রীর "দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসের ড্রাইভারের সব দোষ" জাতীয় স্টেটমেন্টে সেই ক্ষোভে আরও জ্বালানী যোগায়। প্রথম আলো'র অনলাইন ভার্সনে ক্ষোভে-দুঃখে জেরবার হয়ে কমেন্ট করে অনেকেই। তেমনি একটি কমেন্ট কপি করে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে রুহুল। স্ট্যাটাসটি ছিলোঃ
" ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ফলঃ তারেক মাসুদ ও মিশুক মনির নিহত, সবাই মরে হাসিনা মরে না কেন?"
স্ট্যাটাসটি ছিলো আরেকজন পাঠকের তীব্র ক্ষোভ-হতাশা থেকে করা কমেন্ট থেকে নেয়া, রুহুলের নিজস্ব মন্তব্যও না। আবার এ স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যু কামনাও করা হয়নি। রেগে গেলে কাউকে বলা "তুই মর" আর এই স্ট্যাটাসের মধ্যে পার্থক্য কি?
তবে সেই আপাত নিরীহ ক্ষোভ মিশ্রিত স্ট্যাটাসটাই অনেকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলো।
৭। সুমীর অকাল মৃত্যুর পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবীতে সংগঠিত আন্দোলন থেকে সবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য জাবি প্রশাসন পেলো একটা নতুন ইস্যু। নিজের দলের ধামাধরা দু'জন শিক্ষকে বাচাতে দলহীন রুহুলকে কোরবানী দিতে তাদের বাধবে না।
৮। ইন্সিটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি'র নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত লেকচারারাও খুশি। অন্তত সামনে থাকা একজনকে তো তাড়ানো যাবে। আর লীগ পন্থী প্রভাবশালী শিক্ষকের মেয়েকে স্থায়ী করতে পারলে তো বিভাগীয় অন্য শিক্ষকরাও জাতে উঠবেন।
৯। হতাশ হয়ে বসে থাকা ছাত্রলীগ, জাবির শাখার সোনার ছেলেরা নেত্রীপ্রেম দেখানোর টনিক পেয়ে গেলো, হোক না যতই মামুলি ফেসবুক স্ট্যাটাস।
১০। সব ময়লা নালা এসে মিললো বুড়িগংগায়, শুরু হলো রুহুলের সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসকে "নেত্রীর মৃত্যু কামনা" বলে ট্যাগ করা, আর রুহুল হলো "নেত্রীর মৃত্য কামনা কারী”। শুরু হলো মিছিল, ভাংচুর, নোংরামী। সোনার ছেলেরা রুহুলের কুশপুত্তলিকা দাহ করলো। বাকৃবিতে সোনার ছেলেরা তাদের শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছে, রুহুলকে হাতের কাছে পেলে জাবি ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা তাও করতো হয়তো। প্রতোযোগীতায় হারবে কেন ওরা।
১১। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফেসবুক স্ট্যাটাসের মত ব্যক্তিগত বিষয়টিকে তদন্তের আওতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করলো, তদন্ত কমিটি গঠন হলো। ছাত্রলীগ আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বুদ্ধিবৃত্তিক লেভেল তো একিই। সবারই স্বার্থ নিজেদের হাসিনা-প্রেমিক হিসেবে জাহির করা, ব্যক্তিগত স্বার্থই যেখানে মুল উদ্দেশ্য। রুহুল আমিন শেখ হাসিনার মৃত্যু কামনা না করলেও এই ধান্দাবাজরা প্রকারন্তরে তাদের নেত্রীর মৃত্যুই কামনা করে, কারন তাতে প্রতিবাদ বা শোকের নামে নাম ফোটানো যায়, টিভি ক্যামেরায় বা পত্রিকায় দৃশ্যমান হওয়া যায়, ভবিষ্যতের আখের গোছানো যায়।
১২। ব্যাপারটিকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছেন হাইকোর্টের অলরেডি বিতর্কিত হয়ে যাওয়া বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চ। কি এক্টিভ তারা! নিজেদের নিয়োগের কৃতজ্ঞতা ও যৌক্তিকতা প্রমান করতে রুল জারি করেছেন কেন ফেসবুকের স্ট্যাটাস ফৌজদারী আইনের আওতায় আনা যাবে না, কেন রুহুল আমিনকে রাষ্ট্রদোহ মামলায় অভিযুক্ত করা হবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাবতেও অবাক লাগে, উনারা বিচারকের তকমা লাগিয়ে এসব করছেন।
১৩। রুহুলকে প্রথমে ট্যাগ করা হলো বিএনপি-জামাত পন্থী শিক্ষক হিসেবে, কিন্তু জাবি'র জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের ফোরাম এই ফেসবুকের স্ট্যাটাসের নিন্দা করে বিচারের দাবী জানানোয় বিএনপি ট্যাগিং ধোপে টিকলো না। তাই দুর্নীতি করে ধরা খেয়ে মুক্তিযোদ্ধা বনে যাওয়া আতিকুল্লাহ খান মাসুদের জনকন্ঠ (মতান্তরে জঘন্যকন্ঠ) রুহুলকে বানিয়ে দেয় জামাতপন্থী। হায়রে দেশ! ২০০৮ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া রুহুল হয়ে গেলো জামাতী। কারন তাতে জংগীদের সাথে একটা যোগসু্ত্র তৈরী করে রুহুলকে ঘৃনিত চরিত্র হিসেবে দেখানো যাবে। ফলতঃ মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষরা রুহুলের পক্ষে দাড়াবে না।
১৪। উল্লেখ্য, আশুলিয়া থানায় জাবি ছাত্রলীগের এক সোনার ছেলে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে জিডি করেছে।
দেশে ঘুরতে আসার জন্য উদগ্রীব রুহুল হতভম্ব হয়ে যায়, মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ে। এতদিন ধরে সবার জন্য কেনা কাটা করে গোছানো, দেশে কি কি করবে তার পরিকল্পনা করা সব কিছু অর্থহীন হয়ে যায়। শুভাকাংখীরা বাধ্য হয়ে বলে দেশে না ফিরতে। তার নামে ধান্দাবাজদের এই হঠকারী কর্মকান্ডে অবাক হয়, ভাবে এরা তার নির্দোষ স্ট্যাটাসটা নিয়ে এমন করছে কেন?
রুহুল দেশে ফিরতে চাইলেও এই ধান্দাবাজরা সেটা হতে দেবে না। এদের কারও কারও ক্যারিয়ারে রাজনৈতিক বিবেচনায় আরও সাফল্যের পালক যোগ হবে, কেউ কেউ ভিসি না হলেও প্ল্যানিং কমিশন বা পিএসসি বা ইউজিসির মেম্বার হবেন। ছাত্রলীগ জাবি শাখার কমিটি স্থগিতাদেশ কাটিয়ে উঠবে। ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি থেকে রুহুলকে পদচ্যুত করে দলীয় পরিচয়ে বা আত্নীয় পরিচয়ে অন্যদের চাকরী দেয়া হবে। ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্রী সুমী'কে আত্মহত্যায় বাধ্যকারী শিক্ষকরা দলীয় আনুগত্যের কারনে বেচে যাবেন, বিচার পাবে না সুমীর পরিবার। চৌধুরী-ঠাকুরের বেন্চ দলীয় আনুগত্যে আরও বড়ও কিছু পাবেন। আর এইবারের উদাহরন তুলে ধরে ভবিষ্যতে যে কাউকে ফেসবুকের স্ট্যাটাস-কমেন্টের ভিত্তিতে ফৌজদারী বা রাষ্ট্রদোহ মামলায় ফাসানো যাবে।
অন্যদিকে রুহুলের ভাস্তের ল্যাপটপের আশা পুরন হবে না, ভাগ্নী তার পুরস্কারটা আর খুলেই দেখবে না। ছেলেকে মনে আঁশ মিটিয়ে কাঠাল খাওয়ানোর বাবার আশা পুরন হবে না। মা ঘরের দাওয়া ধরে অপেক্ষা না করে জায়নামাজে বসে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন ছেলের নিরাপত্তার জন্য, না হলোই বা ছেলের সাথে দেখা। শ্বশুর দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন জামাইকে তার প্রিয় রাজহাসের দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে না ভেবে। এই রোজার ঈদটা রুহুলের অনেক আনন্দে কাটানোর কথা ছিলো, সবাইকে নিয়ে হৈ চৈ করবে, বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেবে অনেকদিন পর, এসব কিছুই হবে না। রিক্সার হুড ফেলে স্বামীকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর শখ পুরন হবে না রুহুলের স্ত্রীর। নাই বা হলো। আমজনতার সব শখ পুরন হয় নাকি?
দেশটা রুহুলের না, জনগনের না। কারন রুহুল কোন দল করে না। দেশটা দলীয় ধামাধরা ভিসি-শিক্ষক-ছাত্রনেতা-বিচারকদের। ওরাই ভালো থাকুক। শৈনে শৈনে উন্নতি করুক। নিরীহ-নির্দোষ স্টেটমেন্ট থেকে মৃত্যুর পরোয়ানার নির্যাস বের করা এসব মাকড়শাই আমাদের ভাগ্য বিধাতা এখন। মুখ বুজে তাই সব সহ্য করতে হবে।
(ব্লগার মলিকউলের অনুরোধে এখানে দেয়া হলো।)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




