১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১, শুক্রবার
আমার ভালোবাসা,
কেমন আছো তুমি? জানি, ঠিক এই মুহূর্তে এ প্রশ্নটির উত্তর তোমার জন্যে পৃথিবীর কঠিনতম প্রশ্নগুলোর একটি। কেননা, আর কেউ না জানুক, অন্তত: আমি জানি, কি নিদারূণ যন্ত্রণাময় দিনগুলো তুমি পার করছো, কতটা অস্থিরতা জন্ম নিয়েছে তোমার মাঝে।
এক বুক আশা নিয়ে ছিলাম আজ তোমার জন্মদিনে ক্ষণিকের জন্যে হলেও দেখা হবে আমাদের। হলোনা। বুকে কেমন যেন একটা চাপা কষ্ট হচ্ছে আমার। তারপরেও জন্মদিনের শুভেচ্ছা আর এক বুক ভালোবাসা শুধু তোমার জন্যেই।
এবার দেশের বাইরে যাওয়া থেকে শুরু করে ফিরে আসা - এর কোনটাই ভালো ছিলনা আমার জন্যে। তুমি আমার ওপরে অভিমান করে আছ - সবসময় এই অনুভূতি কাজ করেছে নিজের ভেতরে। কিছুটা ভয়ও মিশ্রিত ছিল এর সাথে। এ ভয় তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়, এ ভয় আমাদের দু'জনের মাঝে যোজন দূরত্ব সৃষ্টির ভয়।
তোমাকে বললে বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা, বিদেশ বিভুঁইয়ে কাটানো এ ক'টা দিন আমার কিভাবে কেটেছে, সত্যিই আমি জানিনা। এতটুকু বলতে পারি, আমি ছটফট করেছি, খাঁচায় বন্দি পাখির মতো। প্রায় সময়ই আমার মন উদাস হয়ে গিয়েছে তোমার কথা ভেবে, শুধুই তোমার কথা মনে করে।
আর জানো, বার বার আমার একটি কথাই মনে হয়েছে শুধু, কেন আমি তোমার ব্যাপারে ভুল ধারণা করলাম? কেন এ ভুল বোঝাবোঝির সৃষ্টি হলো আমাদের মাঝে? আত্মগ্লানিতে ভুগেছি আমি এ দিনগুলোতে। আমি জানি, আর হয়তোবা তুমি যোগাযোগ করবেনা আমার সাথে। আর হয়তোবা কোনদিন দেখাই হবেনা আমাদের। আর কখনও হাত ধরাধরি করে বৃষ্টিতে ভিজবোনা আমরা, আর কখনো তোমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারবোনা আমি, আর কখনও তোমার বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমানো হবেনা আমার। কি যে এক মানসিক যন্ত্রণায় দিনগুলো পার করেছি, ভাবলে এখনও গা শিউরে ওঠে আমার।
আমি জানি, আমার ভেতরের অস্থিরতা, মানসিক বিপর্যয় - এসব একজনই পারে দূর করে দিতে। আর সেই মানুষটি তুমি - এটা নতুন করে তোমাকে বলে দিতে হবেনা, 'আমার আমি' কে নতুন করে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবেনা তোমার কাছে। ঠিক এ মুহূর্তে আমি যে বিশাল এক মানসিক যন্ত্রণার মাঝে দিনানিপাত করছি, তা হয়তো তুমি কিছুটা হলেও বুঝতে পারো। আমার কষ্ট, আমার দু:খ, আমার বিষাদের কথা বলার মতো কোন মানুষতো নেই তুমি ছাড়া। আমি জানি, বড় অভিমানী তুমি। অভিমান করে আমাকে কষ্ট দাও, নিজেও কুঁড়ে কুঁড়ে মরো।
আজ তুমি নেই আমার পাশে, হাতে হাত ধরার মতোও কেউ নেই। অথচ মনে পড়ে, যখন আমি হতাশাগ্রস্থ হয়েছি, এই তুমি-ই এসে হাত ধরে বলতে, "চলো, আজ আমরা লং ড্রাইভে যাবো ঘুরতে"। কিংবা বারান্দার দোলনাতে পাশাপাশি বসে আমার হাত ধরে চুপ করে বসে থাকতে। তোমার হাতের সেই উত্তাপ, মৃদু আলিঙ্গন আমাকে বাঁচার অনুপ্রেরণা দিত। মনে হতো, তোমার জন্যেই হয়তো আমার পৃথিবীটা এত সুন্দর, এত বর্ণিল। জানো, বারান্দার টবে তোমার লাগানো সেই অর্কিডের গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে। সেই আগের মতোই আছে ঘরের পেছনের বাগানের সেই শিউলী গাছটি। লজ্জাবতী গাছগুলো তোমার স্পর্শের ছোঁয়াতে এখনও যেন মুখ লুকিয়ে আছে। শুধু তুমি নেই। তোমার স্মৃতি ছড়িয়ে আছে সবখানে, চারিদিকে, আমার অন্তরে, আমার অস্তিত্বে।
কোন এক শীতের রাতে চাদরে জড়াজড়ি করে ভালোবাসারত অবস্থায় অন্তরঙ্গ এক মুহুর্তে আমায় বলেছিলে তুমি "কখনও ছেড়ে যাবোনা তোমায়।" তোমার সেই একটি কথাই কানে বাজে খুব। এখনও আমি প্রতিটি মুহুর্তের জন্যেই মাত্র ওই একটি কথাই বিশ্বাস করি। এখনও তাই কলিংবেল বেজে উঠলেই ছুটে চলে যাই দরজা খুলতে। ভাবি, তুমি এসেছো। দরজা খুলেই হয়তো দেখবো তোমার হতে একগোছা রজনীগন্ধা, গালে টোল ফেলে হাসি মুখে তুমি বলবে, "এই বোকা, দাঁড়িয়ে আছো কেন? ঢুকতে দেবেনা আমায়?"
কখনোবা গভীর রাতে হঠাৎ-ই জেগে উঠে হতবিহ্বল হই। মনে হয়, এইতো তুমি আমার পাশেই ঘুমোচ্ছো, স্নিগ্ধ এক আভা তোমার মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে। পরক্ষণেই নিজের ভুল বুঝতে পারি। তুমি নেই - এটা মেনে নেয়াটা অনেক বেশি কষ্টকর হলেও তোমার অলীক অস্তিত্বকে বিলীন হতে দিতে চাইনা। নিজের একাকীত্বকে মাঝে মাঝেই প্রশ্ন করি, "আর কতদিন চোখের কোণ থেকে অজান্তে জল গড়িয়ে পড়বে? আর কত রাত এভাবে নির্ঘুম কাটাতে হবে তোমাকে ছাড়া?
ভালোবাসা, একটা কথা তোমাকে কখনো বলা হয়েছে কি? আগে বলে থাকলেও শেষ করার আগে কথাটা আবার বলছি: তুমি হয়তোবা আমাকে তোমার জীবনের একটা অংশ মনে করেছিলে। কিন্তু আমি তোমাকে আমার জীবন মনে করি।
ভালো থেকো আমার ভালোবাসা, যেখানেই থাকো, সবসময় ভালো থেকো, আনন্দে থেকো।
ইতি তোমার
বাবুসোনা
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৩১