somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বাস ভঙ্গ

২৩ শে আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জগতে যেসব বৃত্তি অর্থাৎ জীবিকা অর্জনের উপায় আছে, তন্মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তিটাকেই আপনি সবচাইতে বেশি অপছন্দ করেন। আর যারা ভিক্ষা করে খায় তাদেরকে আপনি প্রচন্ড ঘৃণা করেন। আপনার বিশ্বাস এই যে, নানা ছল-চাতুরী করে মিথ্যা কথা বলে, মানুষকের পটিয়ে, ভিক্ষা আদায় করাই ভিক্ষুকদের কাজ। তাই যারা ভিক্ষা চাইতে আসে তাদের আপনি প্রায় গলা ধাক্কা দিয়েই বের করে দেন।

তো এই আপনাকেই আজ একটা নিদারুন ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে। ঘটনাটির শুরু হবে আজ বিকেল সাড়ে চারটায়। ঠিক সাড়ে চারটায়, যখন আপনি বৈকালিক ভ্রমণে বেরুনোর জন্য তৈরি হবেন, তখন দশ-বারো বছরের একটি ছেলে আপনার বাড়ীর দ্বারপ্রান্তে এসে সাহায্য চাইবে। আপনি তখন, বরাবরের মতো, কিছুটা বিরক্ত হয়ে তার কাছে মাপ চেয়ে বাথরুমে প্রবেশ করবেন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার অভিপ্রায়ে। সেখান থেকেও আপনি ছেলেটির চিৎকার-চেঁচামেচি শুনবেন। তার চেঁচামেচির সার কথা হল এই যে, ছেলেটির বাবা হঠাৎ ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সে ডাক্তার ডাকতে গিয়েছিল। কিন্তু অগ্রিম ফি না দিলে রোগী দেখতে যাবেন না -এই বলে ডাক্তার তাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তার বাবা ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন। সময় মত ডাক্তার দেখাতে না পারলে হয়তোবা তার বাবা আর বাঁচবেন না। এমতাবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে সে ডাক্তারের ফি জোগাড় করতে বেরিয়েছে।

স্বভাবতঃই আপনি ছেলেটির কথা বিশ্বাস করবেন না। উপরন্তু তার অভিনয় ক্ষমতা (তার এহেন কর্মকে আপনি অভিনয় ভাববেন) দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। কিন্তু এই মুগ্ধতাকেও অতিক্রম করে যাবে বিরক্তিভাব। তাই একসময় আপনি এগিয়ে গিয়ে তার গালে কষে একটা ‘চড়’ মারবেন। আশ্চর্য! চড় খেয়ে সে কান্না থামিয়ে দিবে এবং মাথা নুইয়ে চলে যাবে।

ছোট্ট একটা বালককে চড় মারার ফলে এমনিতেই খারাপ লাগার কথা। উপরন্তু ছেলেটি এভাবে নিশ্চুপ চলে যাওয়ায় আপনার মনে একটি অপরাধবোধ জেগে উঠবে। তাই এবার আপনি নিজের উপর বিরক্ত হবেন। কেন যে তাকে মারতে গেলেন! এখন কমপক্ষে এক সপ্তাহ এই অপরাধবোধ আপনাকে খোঁচাতে থাকবে, খোঁচাতেই থাকবে। এ একেবারেই অসহ্য একটা ব্যাপার! এই অসহ্য ব্যাপারটি যাতে আপনাকে ছোঁতে না পারে, সেজন্য আপনি সাথে সাথে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবেন। হ্যা, আপনি ছেলেটিকে ফলো করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবেন।

নাটাই ছেড়া ঘুড়ির পেছনে যখন ছোট ছেলেরা ছুটে বেড়ায় তখন তাদের মনে এক উন্মাদনা থাকে - আনন্দ থাকে। ঘুড়িটাকে হস্তগত করার সুযোগ পাওয়ায় সে আনন্দ। ঠিক তেমনি আপনিও সেই ছেলেটির পেছন পেছন ঘুরতে থাকবেন এবং আপনার মনেও তখন থাকবে এক ধরণের উন্মাদনা, আনন্দ। ছেলেটি যে আপনার সাথে মিথ্যা বলেছে এবং আপনিও যে অযৌক্তিকভাবে তাকে আঘাত করেননি তা আবিষ্কার করতে পারার সম্ভাবনায় সে আনন্দ।

গোয়েন্দাগিরি করার শখ আপনার অনেকদিনের। কিন্তু সুযোগের অভাবে কখনও সে ইচ্ছেটা আপনার পূরণ হয়নি। তো আজ নিজেকে গোপন রেখে ছেলেটিকে ফলো করতে গিয়ে গোয়েন্দাগিরি করার আমেজটা পেয়ে যাওয়ায় আপনি খুশীই হবেন। ছেলেটিকে ফলো করতে করতে লক্ষ্য করবেন যে, অধিকাংশ লোক ছেলেটিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে অর্থাৎ সাহায্য করছে না। কদাচিৎ দু’একজন ছেলেটির কান্নায় বিগলিত হয়ে অর্ধ টাকা অথবা এক টাকার কয়েন নিতান্ত অবহেলায়। ছেলেটির বাড়িয়ে দেয়া থালায় ছুড়ে দিচ্ছে। সাহায্যকারীর সংখ্যা কম দেখে আপানি সন্তুষ্ট হবেন এবং কামনা করতে থাকবেন আর কেউ যাতে তাকে সাহায্য না করে।

একসময় সূর্য পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে, পাখিরা সব নীড়ে ফিরবে, ছেলেটিও দ্রুত হাতে থালায় ছড়িয়ে থাকে টাকাগুলো গুনতে শুরু করবে। আর আপনি একটি থাম্বার আড়ালে দাঁড়িয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবেন ও আসন্ন আবিষ্কারের আনন্দে উদ্বেলিত হতে থাকবেন।

টাকাগুলি গুনা শেষ হবার পর ছেলেটির চোখে দ্বিতীয় বারের মতো জল দেখা যাবে। সেই যে আপনি তাকে চড় মেরেছিলেন তারপর থেকে আর কাঁদেনি সে। আপনি ভাববেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় কম উপার্জন হয়েছে বলেই ছেলেটির এই কান্না। যা হোক ছেলেটি টাকাগুলি পকেটে ঢুকিয়ে ধীর লয়ে হাটতে থাকবে। আপনার আনন্দও বাড়তে থাকবে। আপনি কল্পনায় দেখতে পাবেন, ছেলেটি বাড়ী ফিরে তার সুস্থ-সবল বাবাকে ডেকে বলছে - ‘বাজান, আইজকা বেশি টাকা পাই নাই।’
বাজান বলছে, ‘আমি যে রকম শিখাইয়া দিছিলাম ওই রকম কইছস?’
- ‘হ কইছি। তয় লাভ অয় নাই।’
- ‘মানুষগুলি যেন আইজ-কাইল পাষাণ হইয়া গেছেগা। আমিও আইজকা বেশি পাই নাই। আন্ধা সাইজা রাস্তায় বইয়া থাইকাও মানুষরে গলাইতে পারি নাই।

এসব ভাবতে ভাবতে একসময় দেখবেন ছেলেটি রাস্তার পাশে রাখা বিরাট বিরাট পাইপগুলির একটিতে প্রবেশ করেছে। আপনি উৎসাহী হয়ে নির্দিষ্ট পাইপাটির কাছে গিয়ে কান পাতবেন। শুনবেন ছেলেটির কান্না ধীরে ধীরে বিলাপে পরিণত হচ্ছে। আপনি কিছুটা হলেও অবাক হবেন। অতঃপর পাইপটির মুখে লাগানো পর্দাস্বরূপ পলিথিনটি সরিয়ে ভেতরে দৃষ্টি দিবেন। দেখবেন ছেলেটির সামনে শতছিন্ন চাদর দিযে আপাদমস্তক ঢাকা কোন এক মনুষ্য দেহ। দেহটির অধিকারী ছেলেটির কী হয় তার খোঁজ আপনি করবেন না। কেননা ছেলেটি তখনও কাঁদছে।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×