somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেত্নী এফএমে প্রচারিত একটি ভয়ংকর ভুতের গল্প

২৮ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কে ? কে ওখানে ? (ভয়ংকর ভুতের মিউজিক)

কাউয়া রেডিওর 'পেত্নী এফএমে' আপনাদের স্বাগতম। আমরা এখন শুনবো আবুল মিয়ার জীবন ঘটে যাওয়া ভয়ংকর একটি ভুতের গল্প । দুর্বল চিত্তের পাঠকদের অনুরোধ জানাচ্ছি রেডিও বন্ধ করে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য । পরবর্তীতে কোন সমস্যা হলে কাউয়া রেডিও দায়ী থাকবেনা।

আসুন ,তাহলে আমরা শুনি আবুল মিয়ার ভুতের গল্প...


আবুল মিয়াঃ সেদিন ছিলো আষাঢ় মাস । আমি বাজার কইরা বাড়ী ফিরতাছি । আমাবইশ্যার রাইত । ঘুটঘুটা আইন্ধাইর । এক হাত দুরের জিনিষও দেখা যায়না । তখন আবার ম্যালা রাইত । গ্রামের রাস্তা তো, একটা কাকপক্ষীও নাই । আমি তো হালার ভয়ে অস্থির । বিভিন্ন সূরা আর দোয়া পড়তে পড়তে হাটতাছি । আমার হাতে ছিল দুইখান ইলিশ মাছ । সাড়ে ৬শ টাকা দিয়া কিনা। হালায় দাম চাইছিলো ২ হাজার । আমি কইছি থাপ্পর দিয়া তোর দাঁত ফালায়া দিমু হারামজাদা ! চিনোস আমারে । যাই হউক , রাত্রে বেলা ইলিশ মাছ নিয়া বারি ফিরতাছি , ইলিশ মাছ আবার ‘তেনাগো’ বিশেষ পছন্দের জিনিষ । সেই কারনে আমার ডর আরো বাইরা গেলো ।
অবশ্য এখনকার ইলিশে আগের সেই গন্ধ আর শুয়াদ (স্বাদ) নাই । ইলিশ আনতেনে আমার নানাজান । আহারে কি গন্ধ !! কি টেস্ট !! আইনা নানীরে কইতেন ... ‘ও করিমের মা ...’

উপস্থাপকঃ আমরা সে গল্প না হয় আরেকদিন শুনবো , আমরা মূল গল্পে ফিরে আসি ।

যাই হউক । কিছুদুর হাটার পর হাল্কা চান্দের আলোতে দেখি সামনে মিঞাবাড়ির বটগাছ দেখা যায়।

উপস্থাপকঃ কিন্তু আপনি তো বললেন আমাবস্যার রাত।

ইশ , ভাইজান , আপ্নে বড়ই সমস্যা করেন , কইলাম না এইটা ভুতের গল্প । এইখানে চান্দ মিনিটের মধ্যে উঠবো , মিনিটের মইধ্যে নামবো । এতো প্রশ্ন করলে কইলাম আমি নাই , ডাইক্কা আইন্না বেইজ্জত !!

উপস্থাপকঃ আচ্ছা , আচ্ছা আমরা ঘটনায় ফিরে আসি । আপনি বটগাছ দেখলেন ... তারপর ?

এই বটগাছের আবার বিরাট কাহিনী । এই গাছের ডালে ফাঁস দিয়া কুলসুমা মরছিল । আহারে কুলসুমা । দেখতে বড়ই সউন্দর ছিল । স্কুলে আইতে যাইতে কুলসুমের সাথে রংতামাশা করতাম । ‘টুনির মা’ কইয়া ডাক দিতাম । কুলসুম কিছু কইতো না । ডরে তার মুখ দিয়া কথাই বাইর হইতোনা । খিক খিক খিক ...

একখান ‘বিশেষ’ কারনে কুলসুমা গলায় ফাঁস দিছিল । সেই কথা আপনেরে আলগা কইরা কমু , তয় হেইদিন কুলসুমার কথা মনে হইতে আমি বুঝলাম ‘ডর’ কি জিনিশ । তিনবার সুরা এখলাস পইড়া হাটা দিলাম । পূর্ণিমার রাইত , সব কিছু পস্ট দেহা যাইতাসে । আতকা দেখি আমার সামনে একটা কালা বিলাই ।

আমি বুঝলাম এইটা কুলসুমা ছাড়া আর কেউ না। আমারে শাস্তি দিতে আইছে । আমি মাথা ঠাণ্ডা রাইখা কইলাম ‘আম্মা , তুমি আমারে মাফ কইরা দ্যাও ‘
বিলাই এ কয় ‘ম্যাও’ । বড়ই আজিব ব্যাপার !!!

এইদিকে ‘ভাদ্র’ মাসের গরমে আমি ঘামে ভিইজা জুবজুবা।

আমি কুলসুমা (বিলাই) রে কইলাম , ‘আমি আর জিন্দেগিতে কোন মাইয়ার দিকে চউখ তুইলা তাকামু না , কেউরে মিসকল দিমুনা, মাফ করো আম্মা , বারি যাইতে দ্যাও ...
কুলসুমা কয় ‘ম্যাও’ ... চিন্তা করছেন অবস্থা ?

এমন সময় শুনি পেছনে বেটা মাইনশের গলার আওয়াজ । আমি আপনাদের অনুষ্ঠানের মত কইরা ডাক দিলাম ... ‘কেডা ? কেডা ওনে ?’

আওয়াজ আইলো ‘জী , আমি রহিম । ভালা আছেন নি ভাই ?’

রহিম রে দেইখা আমার জানে শান্তি আইল । আবার লগে ডর ও লাগলো । এত রাইতে রহিম এইহানে কি করে ?

সামনে তাকায়া দেখি কুলসুমা (কালা বিলাই) নাই !!! তহন আমার মনের সন্দেহ আরও বাইড়া গেলো । তাইলে কি বিলাইটা রহিমের রুপ ধইরা আইলো ? আমি তাকায়া দেহি আমাদের রহিমের মতো এই রহিমের শইল্যের রঙ ধলা না, কালা !!! বিলাইয়ের রঙ ও কালা আছিল । কুলসুমার গায়ের রঙ ও কালা আছিল । দুইয়ে দুইয়ে চাইর হইতে সময় লাগলো না।

তয় আমি যে ভয় পাইছি সেইটা রহিম (না কুলসুমার আত্না ?) রে মোটেও বুজবার দিলাম না । একবার যদি ব্যাটা টের পায় আমি ভয় পাইছি , ব্যাটা আমার ঘাড় মটকাইয়া খাইবো । আমি জোরে জোরে হাটতে থাকলাম লগে সূরা পড়তে থাকলাম । বাড়ি আমার আরো মিনিট দশেকের পথ ... কেমতে যে যাই । যত সূরা মুখস্ত আছে সব পড়া শুরু করলাম । এইদিকে রহিম আমার পিছ পিছ হাটতাছে।

রহিমের সাথে হাল্কা গফসফও করা শুরু করলাম। এর মধ্যে দুইবার রহিম জিগাইলো আমার ব্যাগের মধ্যে কি ? আমি কিছু কইলাম না । হালায় যদি একবার টের পায় ইলিশ মাছ তাইলে আমার আর বাইচা থাহনের কোন আশা নাই ।

কিছু সময় পড়ে আমি রহিমরে কইলাম চইত্র মাসের গরম টের পাইতেছ রহিম ? কেমুন গা জলতাছে ? কিন্তু পেছনে কোন উত্তর নাই ! আমি কইলাম ‘ও রহিম , রহিম ।‘ উত্তর নাই ।

পিছনে তাকায়া দেহি রহিম নাই । আমার ধারনাই সত্যি হইলো । আমি জানের ডরে উইঠা দিলাম দৌড় । কুলসুমার ভুত আবার কোন সময় চইলা আসে ঠিক নাই ।

এমন সময় পেছন থাইকা শুনি রহিমের গলা ‘ও মিয়া ভাই , ও মিয়া ভাই ।‘ কুলসুমার ভুত আবার চইলা আইছে । আমি দৌড় থামাইলাম না । জানের শক্তি দিয়া দৌড়াইতে থাকলাম । কুলসুমার ভুত ‘রহিম’ ও আমার লগে দৌড়াইতে থাকলো । আর কইতে থাকলো ও মিয়া ভাই আমারে লইয়া যান । আমারে লইয়া যান’ আরে আমি কি আর এতোই বুকা ?

শেষে দৌড়াইতে দৌড়াইতে বাড়ি আইসা পৌঁছাইলাম । এখন আর আমার কোন ডর নাই! এমন সময় হালা ভুতও আইসা উপস্থিত । আমি কইলাম কুলসুমা তুই এইহান থাইকা যা ... নইলে কিন্তু আমি মাওলানারে ডাকমু ...
ভুত রহিমে আমারে কইলো ‘ ও ভাইজান , আপনের কি হইছে আমারে কুলসুমা কোন ক্যান ? আপনের কি হইছে ।
আমি ভালো কইরা খেয়াল কইরা দেখলাম রহিমের শরীরের ছায়া মাটিতে পড়তেছে । তার মানে এইটা ভুত না , ভুতের শরীরে কোন ছায়া থাকেনা।‘
বুঝলাম , এইটা আসলেই রহিম , কুলসুমার ভুত না!!

আমি রহিমরে কইলাম ‘আমার পিছন থাইকা আতকা তুই গেসিলি কই ?’
রহিম শরমের হাসি দিয়া কইল ‘মুততে গেছিলাম ভাই , ক্ষেতের ধারে’
আমি আবার কইলাম ‘শালা , কইয়া যাবিনা ?’
রহিম কইলো ‘ক্যাম্নে কমু ভাই ? মুতার কথা কইতে শরম লাগে , কিন্তু আপ্নে দৌড় দিলেন ক্যান ? কি হইছিলো ?
আমি আর সত্য ঘটনা কইলাম না। আমি কইলাম ‘কিছু না , মনে হয় কুলসুমারে দেখছিলাম , তাই দৌড় দিলাম ।‘
রহিম রাগ কইরা বলে ‘তাই বইলা আমারে রাইখা দৌড় দিবেন ? যে ভয়ডা পাইছিলাম । যাই হউক আমারে এক খান লুঙ্গি দেন ।‘

আমি জিগাইলাম ‘লুঙ্গি চাস কেন ?’

রহিম আবারো শরমের হাসি দিয়া কইলো ‘ ভাই অর্ধেক কামের মাঝে আপনে উইঠা দিলেন দৌড় , আমিও দিলাম দৌড় , বাকি অর্ধেক দৌড়াইতে দৌড়াইতেই... ‘ রহিম আর কিছু কইতে পারলোনা। শরমে তার মুখ লাল হইয়া আছে।

আমি কইলাম ‘ছিঃ রহিম , তুই এতো ডরাস ? তোরে আমার ছুটো ভাই হিসেবে পরিচয় দিতেই লজ্জা করবো । যাউজ্ঞা , লুঙ্গি বদলাইয়া বাড়িত যা, কাইল্কে আইনা ফেরত দিছ । রহিম লুঙ্গি লইয়া বাড়িত চইলা গেলো। আমিও এই ঘটনার কথা মনে কইরা হাসতে হাসতে বিছানায় শুইতে গেলাম ।

‘বৈশাখ’ মাস । হটাত কইরা ঝড়-তুফান শুরু হইলো । আমি খেতা মুড়ি দিয়া আরামসে ঘুমাইতে গেলাম । আর ভাইবা দেখলাম , রহিম যদি সময় মতো না আইতো তাইলে ঐ কুলসুমার ভুত ‘কালা বিলাইটা’ আমারে জানে মাইরা ফেলতো । কার দোয়ায় বাইচা আইছি কে জানে ?

শিশ শ শ শ শ...। (মিউজিক) (প্রেত এফ এমের প্রথম পর্বের এখানেই সমাপ্তি)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:০৫
২৬টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×