ওরা আমাদের এখন আর বাঙ্গালি বলেনা,
সংখ্যালঘু বলে।
_________________________________________
আগে একটু প্রাথমিক চিকিৎসা তারপর
ডাক্তার বাড়ী.....
হায়দার হোসেনের একটা গানকে একটু
অন্যভাবে উপস্থাপন করতে চাই....
কি দেখার ছিল কি দেখছি.....কি
বলার ছিল কি বলছি
কি ভাবার কথা কি ভাবছি....কি
শোনার কথা কি শুনছি
অর্ধশত পার না হতেই
স্বাধীনতা রোগে ভুগছি
স্বাধীনতা কি ধর্ম দেখে
বুঝে শুনে পথ চলা?
স্বাধীনতা কি বাঙগালিকে
সংখ্যালঘু বলা?
স্বাধীনতা কি ঘরবাড়ী ভেঙ্গে
পথে নামিয়ে দেয়া?
স্বাধীনতা কি কোন দলের দেখে
বিচারে হাত দেয়া?
কি দেখার ছিল কি দেখছি কি
বলার ছিল কি বলছি
তবে বাবারা কেন প্রাণ দিয়েছিল
সে কথায় আজ ভাবছি......
গানতো শুনালাম এবার গল্প শুনুন......
উপরের ছবিটি দেখেছেন???
পুরো তিনটি পরিবারকে পথে নামিয়ে ঘর
বাড়ী ভেঙ্গে পথে নামিয়েছিল এক রাক্ষস
গরিব অসহায় মানুষেরতো আর আধ্মাত্বিক
শক্তি নেই,
কি আর করা গাছতলায় ঘুমাত।
খেয়ে নাখেয়ে খোলা আকাশে আর কত
কাটাবে?
তাই তারা ভাবল রাজার কাছে যাবে
প্রজার এমন দূর্দিনে নিশ্চই রাজা চুপ
থাকবেন না
কিন্তু দুষ্ট রাক্ষস জানতে পেরে গেল
আর এসে বলল তোরা রাজ্য ছেড়ে চলে যাবি
নয়তো তোদের ঘাড় মটখাবো
তবুও তারা রাজার দাড়স্ত হল
কিন্তু লাভ কি???
এতো রাজার পালিত রাক্ষস.......
হ্যাঁ বন্ধুরা.......এমন করেই কি জগৎ জুড়িয়া
মার খাবে দূর্বল???
গল্পটা তৈরি হল তেমন দেরি হয়নি
২১-শে মার্চ ২০১৫ মানে ১০,১১ দিন আগের
ঘটনা
সুনামগঞ্জের ছাতকের,দোলারবাজার
ইউনিয়নের রাউলি গ্রামে তিন অসহায়
হিন্দু পরিবারকে স্থানীয় প্রবাসী মস্তাব
আলীর লোকেরা বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে
পিটিয়ে বের করে দিলো রাস্তায়।
কেড়ে নিল জায়গা জমি।
আইনের আশ্রয় নিলে দেশ ছাড়া করার
হুমকি।
মিডিয়া চুপ
জামাত শিবির কিংবা বিএমপি নয়
হয়তোবা তাই
আমরা কোথায় আছি???
আমাদের করেছে সংখ্যালঘু
নামধারী।
আওয়ামীলিগ বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে
দেশকে
দারিদ্রমুক্ত করবে আসলেই সত্য
এইতো মাত্র গরিব মারা শুরু করল
গরিবের দাম নেই
নইলে খালেদা জিয়া একদিন খেতে
পারবেনা শুনলে তার বাড়ীর সামনে
বিরাট খাবারের লাইন পড়ে
যায়,জেনারেটর দিয়ে কারেন্ট দেওয়া
হয়,বড় গাড়িতে করে আনা হয় পানি
কি দরদ.........
কিন্তু প্রতিদিন কত শিশু না খেয়ে মরে
তাতে কি......
খালেদার ঘরে পাটকেল মারলে কি হয়
পুলিশ দেখিয়েছে
কিন্তু কত মন্দির মন্ডপ পুড়ছে ভাঙ্গছে খুন
হচ্ছে সংখ্যালগু নামধারীরা
কই তখন কারো বুকে আঘাত লাগেনা???
একজন জামাত শিবিরের বন্ধুকে জিজ্ঞেস
করলাম
আচ্ছা জামাতের মূল লক্ষ কি?
বললেন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা
বললাম,ইসলামতো প্রতিষ্ঠিত,আপনারা
আবার কি প্রতিষ্ঠা করবেন?
বলল ইসলামের শাসন।
বললাম আমরা হিন্দু,বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান কি
সেখানে বাঁধা বলে আপনার মনে হয়
বলল, না
তাহলে আমাদের উপর কেন সবকিছু যায়
বন্ধুটি বলল জামাত করছে না সে কথা বলব
না কিন্তু সরকারি দলেরা করে সেটাও
চাপায়
হুম আমিও এক মত
হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন
সব ধরনের অভিনয়ের মধ্যে
শ্রেষ্ট হচ্ছে রাজনীতি
ঐ রাজনীতি দিয়ে সব করছে ওরা
উপজাতীদের উপর যখন অত্যাচার হয় তখন
তারা বলে বাঙ্গালি খারাপ, কথাটা
আমার গায়ে লাগে কিন্তু পরক্ষনে আমি
ভুলে যায় আমিতো বাঙ্গালি নই আমিতো
সংখ্যালঘু। এদেশে অনেক আগেই ধর্ম
আমাদের কাছ থেকে বাঙ্গালি শব্দটা
ছিনিয়ে নিয়েছে। যখন আমি বলি আমি
ধর্ম জানি না আমি জানি আমি মানুষ
আমি বাঙ্গালি তখন আমাকে নাস্তিক বলে
ধর্ম আইনে হত্যা জায়েজ হয়ে পড়ে। আমার
ধর্মতো দূরে থাক মানুষ হয়ে বাঁচার
অধিকারটুকুও এ দেশটাতে নেই। আমি কোন
বাঙ্গালির ঘরে জন্ম নিয়েও বাঙ্গালি
হতে পারিনা।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যখন লক্ষাধিক
মানুষের সামনে ভাষনে মাইকে চিৎকার
করে বলে আমরা সংখ্যালঘু তখন হতবাক হয়ে
চেয়ে থাকি, কার মেয়ে কি বলছে।
বিরোধি দলীয় নেতা/নেত্রীরা যখন বলে
সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার তখনো দেখি
আমাকে বাঙ্গালি বলার কেউ নেই। আমি
বাঙ্গালি শব্দটা হারিয়ে ফেলেছি।
বৌদ্ধরা বাংলা ভাষার জন্ম দিয়ে দাবী
করেনি বাংলা তাদের। কোন হিন্দু ঘরের
হর প্রসাদ শাস্ত্রী বাংলার পূনজন্ম দিয়ে
বলেনি বাংলা হিন্দুদের, কোন হিন্দু ঘরের
গিনেশ চন্দ্র কোরআনের বাংলা করে
বলেনি বাংলায় আরবি লেখা যাবেনা।
কিন্তু সংখ্যালঘু বলে ওরা আমাদের শুধু
আলাদা করেনি, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা
থেকে কোন পাঠ্য বইয়ে যাতে সংখ্যালঘুর
লিখা না থাকে আজ তার আওয়াজ উঠে।
বিশ্ব কবির সোনার বাংলা
নজরুলের বাংলাদেশ
জীবনানন্দের রুপশি বাংলা
রুপের যে তার নাইকো শেষ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।
কিংবা
বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ
বাংলার খ্রিষ্টান, বাংলার মুসলমান
আমরা সবাই বাঙ্গালি।
এসব শুধু গানই ছিল, জানতাম না এটা
মিথ্যা হবে। ৪০০ বছর ধরে বাংলা বইটি
পড়ে শুধু পরীক্ষায় দিয়েছি জানতাম
এখানে ফলাফল হবে কোটা ভিত্তিক,
জানতাম না সেটা বিদ্যালয়ের
পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে সুনাম ধরে
রাখার একটা পদ্ধতি। জানতাম না এটা
মাথা দেখিয়ে রাজনীতি, জানতাম না
এটা প্রয়োজনের আয়োজন।
মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি।
কিন্তু আমরা পথের ফুল বলেই টবে সোভা
পায়না, আমি যখন উপজাতি মেয়ে তখন
আমার কাপড় খুলে নেয়া হয়, ধর্ষন করা হয়,
ফুলের পাপঁড়ি কষে পড়ে, জানতাম না কোন
ফুলকে বাঁচানোর জন্য লড়াই ছিল, দেশের
সেনা বাহিনীরাও ছাড়েনা খুবলে খায়,
বিচার হয়না, শান্তি চুক্তি হয়েছে শান্তি
হয় ধর্ষকেরা, ঝুলুমবাজরা, শোষকরা।
সংখ্যালঘু বলে পেটের বাচ্চাও জন্মের
আগে লাতি খেয়ে গর্ভে মরে যায়, তখন
গানের দ্বিতীয় লাইনটিও অসহায়, মোরা
একটি ফুলের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি, কিন্তু
সে শিশুর হাসিতো ফুটেনি গর্ভে মরে
গেল, শোক মায়ের চোখে, শিশুর মৃত
চেহারাটা সে দেখেছে হাসিটা দেখেনি,
শোকে শোকে মরে গেল তুলসি দাসটাও,
যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা
যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা
যে মাটির ফুলে ফলে মোর সপ্ন আঁকা
যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা
যে দেশের নীল অম্বরে মোর মেলছে পাখা
সাড়াটি জনম সে মাটির প্রেমে বক্ষ ভরি।
হ্যাঁ, যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে
মাখা
জানতাম না সে মাটিতে আমাকে বের
করে দেয়া হবে, ঝুলুম করে বসতভিটা কেড়ে
নেয়া হবে, কারন আমিতো হিন্দু সংখ্যালঘু
বাঙ্গালি নই, যখন আমি বৌদ্ধতখন আমার
মন্দির নয় আমার ঘরও জ্বালিয়ে দেয়া হয়,
কোলের শিশুটা বোঝেনা কি হচ্ছে কিন্তু
আগুন দেখে মানুষের চিৎকর দেখে সেও
ভয়ের বুকফাটা চিৎকার দিচ্ছে। একটা
স্বাধীন দেশ যেখানে আমি মায়ের গর্ভে
রেহাই পায়না আমাকে জন্মের আগে গর্ভে
গুলি খেতে হয়, আমি আর একটু বড় হলেই
মাকে জিজ্ঞেস করবো মা আমার শরীরে
এই দাগ কিসের? মা বলবে এটা স্বাধীনতার
দাগ বাবা। তুই স্বাধীন দেশে জন্মেছিস,
যেখানে সব কিছুই স্বাধীন, যেখানে
মাতাল হয়ে একটি শিশুর দু,পায়ে গুলি
করলেও মানুষ তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরন
করে, যেখানে নাটোরের হিন্দু বনলতা
সেনদের কাপড় খুলে ধর্ষন করা হয়, যেখানে
মেয়ের ইজ্জ্বত বাঁচাতে দেশ ছেড়ে তোর
বাবারা কতবার বুক চেঁপে ধরে, কান্নায়
ভেতরটটা ফেটে যায়, বার বার পিছন ফিরে
তাকায় ভালবাসার এই দেশকে, চোখ আর
লুকাতে পারেনা,
চোখ ছল ছল করে ওগো মা
কি ব্যাথা অন্তরে ওগো মা
ভাঙ্গনের যে খেলাঘর চারিদার
নেই গান আজ একতার।
এক এক করে সব বদলে যাবে, যেভাবে আমরা
বাঙ্গালি থেকে সংখ্যালঘু হয়ে গেলাম।
কখনো পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়ে যায়
হারাম, কখনো জাতীয় সংগীত সংখ্যালঘুর
লেখা বলে পাল্টে দেয়ার দাবী উঠে,
আমরা কি মানুষ নই? জাতীয় সংগীত কি
বাংলায় লেখা নয়? যদি জাতীয় সংগীত
পাল্টে যায় আর আমরা সংখ্যালগুরা যখন
গাইবো আমার সোনার বাংলা আমি
তোমায় ভালবাসি, তখন লজ্জাটা কার
হবে? যখন ভবিষ্যত প্রজন্ম শুনবে এই গানে
এত মধু কেন সেটা সড়ানো হল? তখন কে
দেবে তার জবাব?
মানব কখনো হয়না দানব
দানব কখনো হয়না মানব
যদি দানব কখনো হয় মানব
লজ্জা কি তুমি পাবেনা
আপনারা আমাদের সংখ্যালঘু বলে
অত্যাচার করতে পারেন, জায়গা দখল করে
সহায় সম্বলহীন করতে পারেন,দেশ থেকে
তাড়িয়ে দিলে বাইরের লোক দেখবে বলে
চালাকি করে কৌশলে চলে যেতে বাধ্য
করতে পারেন, কিন্তু আমার মুখের বুলি
পাল্টাবেন কি করে? অন্য কোন দেশের অন্য
ভাষাই যখন আমি কথা বলি তখন আমার
মগজে বাংলাটাই ঘুরে, আমি কি বলছি তা
আমি চোখের সামনে দেখি বাংলায়,
সেটা পাল্টাবেন কি করে? আপনি স্বজাতী
হয়ে আমাকে সংখ্যালঘু বলতে পারেন
কিন্তু বাইরের বিশ্বে আমি বাঙ্গালি
তাদের মুখ বন্ধ করবেন কি করে? বাঙ্গালি
আমার গায়ের পোশাক নয় আমার রক্ত।
বলুন সংখ্যালগুদের উপর অত্যাচার নয়
বাঙ্গালিদের উপর অত্যাচার, আপনাদের
কাছে জাতীয় সংগীত হারাম, সংস্কৃতি
হারাম, ঐতিহ্য হারাম শুধু আপনাদের
বানানো সংবিধান আরাম। ভাই বলে
একসাথে যুদ্ধ করেছেন, তারপর ধুর ছাই বলে
আপনাদের সংবিধান জুড়ে দিয়েছেন তখন
কোন বাঙ্গালির দরকার পড়েনি হিন্দু
বৌদ্ধ খ্রিষ্টান বলে ওদের সংখ্যালঘু
বানিয়ে দিয়েছেন যাতে তারা বলতে না
পারে কিছু, সংবিধান করার সময় জিজ্ঞেস
করেননি কারো অসুবিধা আছে কিনা
কারো আর কিছু প্রয়োজন আছে কিনা,
তাদের সংখ্যালঘু বানিয়ে আপনারা
সেজেছেন বাঙ্গালি। আপনারা কোলস
লাগিয়েছেন বাঙ্গালির বাংলাকে
সর্বশান্ত করার জন্য আর আমাদের রক্তে
মিশে আছে বাংলা, যতই সংখ্যালঘু বলুন,
শেষ একফোটা রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত
আমি বাঙ্গালি, যে ধর্ম দিয়ে আজ আমাকে
আলাদা করছেন সে ধর্মে আপনি নিজেই
আলাদা হয়ে যাবেন।
আসিতেছে শুভদিন
দিনে দিনে বাড়িতেছে দেনা
শুধিতে হইবে ঋন।
লেখক,রাজীব বড়ুয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৫২