somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোভিড পিল নামা

১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ পর্যন্ত্য কভিড ট্রিটমেন্ট নিয়ে সাইন্টিফিক জার্নালে শয়ে শয়ে থেকে হাজার গবেষনা পত্র প্রকাশ হয়েছে কিন্তু ইফেক্টিভ কোন ট্রিটমেন্ট এখন পর্যন্ত্য অধরা ই আছে বলতে হবে। তার মাঝে আশার আলো হিসাবে সবার আগে থাকবে MERCK এর Molnupiravir- (উচচারন হবে- মল-নিউ-পিয়ার-রা-ভির) আর Pfizer এর Paxlovid, কেননা এটা এখন সবাই জানে যে এই প্রথম কোন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দ্বারা পরিক্ষায় 'পাশ' করা মুখে খাওয়ার পিল। খুশির খবর এই যে দুইটা ঔষুধই এর জেনেরিক ফর্ম উৎপাদন করার লাইসেন্স সল্প আয়ের দেশগুলিতে খুলে দেওয়া হয়েছে তাই কোন পেটেন্ট প্রটেকশান থাকবে না। খুব সহসাই বাংলাদেশের বাজারে দুই পিল ই পাওয়া যাবে যা আমরা আমেরিকায় বসেও এখনও হাতের কাছে পাব না..। দামেও সস্তা হবে। আগামী বছর এর জানুয়ারী/ফেব্রয়ারী নাগাদ আমরা পেতে পারি। molnupiravir এবং Paxlovid কভিডে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে খাওয়া আরম্ভ করতে (২-৩ দিনের মাঝে) হবে..বেশী দেরী হলে এই ঔষুধ কাজ করবে না। দুই পিল দুই কোম্পানী দ্বারা তৈরী হওয়াতে সামান্য জঠিলতা হচ্ছে। প্রায় সব ভাইরাস কে বেশী ইফেক্টিভ ভাবে মোকাবিলা করা যায় যখন ২-৪ টা এন্টিভাইরাল কে এক সাথে মিলিয়ে খাওয়ানো হয়। যেমন HIV drug যেটা ৩-৪ টা ঔষুধকে একসাথে মিলিয়ে বিক্রি করা হয়। ভাইরাস একটা ঔষুধ এ খুব সহজেই রেজিসট্যান্স হয়ে যায়...৩-৪টা এক সাথে থাকলে অনেক দিন লাগবে রেজিসট্যান্স হতে। তাই এটা মনে করা হচ্ছে এই দুটা পিলকে একসাথে নিলে, আক্রান্ত ব্যাক্তির মাঝে থাকা কভিড একেবারেই নির্বংশ হয়ে যাবে.... কিন্তু এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল টা দুই কোম্পানী হওয়াতে এখনও হচ্ছে না (লিগ্যাল ব্যাপার আছে বলে)। এখন কেউ আমেরিকার বাইরে বা আমেরিকার সরকারী প্রতিস্ঠানে এর ট্রায়াল আরম্ভ করলে এর একটা রেজাল্ট বের হলে সেটা বিশ্বে অনেক কাজে দিবে। ট্রায়াল করা ছাড়া একসাথে নেওয়া ঠিক হবে না...অনেক জঠিলতা হতে পারে (ড্রাগ-ড্রাগ ইন্টারএ্যাকশান) যেটা হয়ত আমরা জানি না কিন্তু সেটা ট্রায়াল এর মাধ্যমে বের হয়ে আসবে বলেই ধারনা।

দুটার মাঝে তুলনা করা গেলে, আমি কিন্তু molnupiravir এর থেকে Paxlovid কে আগিয়ে রাখব।
Paxlovid এ ৮৯% লোক কে হসপিটালাইজেশন থেকে রক্ষা করা গেছে যেখানে molnupiravir এ ৫০% ইফেক্টিভ। কিন্তু দুটা পিলই ১০০% ইফেক্টিভ মারা যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে (ট্রায়াল এ যারা এই ঔষুধ নিয়েছেন কেউ মারা যায় নাই কিন্তু placebo নেওয়া অনেকেই মারা গিয়েছেন)

দুটা ঔষুধই কিভাবে কাজ করে সেটা জানার পর, molnupiravir ঔষুধ টাকে একটু রিস্কি মনে হচ্ছে। আমরা প্রায় সবাই এখন জানি যে কভিড হল RNA ভাইরাস (যেমন আমাদের মাঝে DNA হল genetic material যেটা আমাদের জীবনের ব্লুপ্রিন্ট, তেমনি কভিড ভাইরাস এর genetic material হল RNA)। ভাইরাস বংশবৃদ্ধির জন্য RNA এর মিলিয়ন মিলিয়ন কপি তৈরী করে। RNA তৈরি করতে DNA এর মতই চারটা মলিকুল এর দরকার (A, C, G, U). Molnupiravir ঔষুধটা দেখতে অনেকটা RNA এর C মলিকুল এর মত। তাই ভাইরাস যখন RNA কপি করে, ভুল করে আসল C ব্যবহার না করে C এর মত দেখতে molnupiravir কে RNA এর মাঝে নিয়ে নেয়। পরে যখন এই ভুল RNA কে কপি করা হয় তখন আরো অনেক ভুলে ভরা RNA তৈরী হতে থাকে। আর এভাবেই মিলিয়ন মিলিয়ন ভুল এর পর মিউটেশন এর ফলে ভাইরাস আর বেচে থাকতে পারে না (স্লীম চান্স আছে ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাস বের হওয়ার)।
প্রবলেম হল যে আমাদের কোষেও তো RNA কপি হয় আমাদের নিজের কাজে, তাহলে আমদের শরীর এর RNA তে যদি এই ভুল মলিকুল ঢুকে পরে তাহলে তো ক্যান্সার থেকে আরেক অনেক রোগ হয়ে যাবে মিউটেশন এর ফলে। তবে আশার কথা যে এটা RNA মলিকুল। ভাইরাস এর মাঝে RdRp নামক একটা এনজাইম থাকে যেটা RNA থেকে RNA তৈরী করে এবং molnupiravir কে ভুল করে এই এনজাইম RNA তে এ্যাড করে দেয়। মানুষের কোষে কোন RdRp এনজাইম নাই। আমাদের মাঝে RNA তৈরী হয় DNA থেকে (অন্য এনজাইম দ্বারা), তাই বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে molnupiravir মানুষের RNA তে এ্যাড হবে না। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষনায় দেখা গেছে যে molnupiravir কে মানুষের কোষে দেওয়ার পর কিছু মিউটেশন দেখা গেছে। মনে করা হচ্ছে কোষ কোন ভাবে
RNA এর C এর মত দেখতে মলিকুল কে ভেংগে হয়ত DNA এর C এতে পরিবর্তন করে, তখন সহজেই সেটা DNA এর C এর যায়গায় ঢুকে পড়তে পারে।
ক্যান্সার চিকিৎসায় (যেমন কেমোথেরাপিতে এই ধরনের DNA মলিকুল এর মত দেখতে নকল DNA মলিকুল ইউজ করা হয় যাতে দ্রুত কোষ বিভাজন করা ক্যান্সার সেল ভুল DNA মলিকুল কে কোষের মাঝে DNA এর মাঝে এ্যাড করে আর তাতেই ভুল DNA এর জন্য ক্যান্সার কোষ মারা যায় কিন্তু সাইড ইফেক্ট হিসাবে অন্যান্য দ্রুত বিভাজন করা কোষ ও এই ভুল DNA কে তার কোষের DNA এর মাঝে এ্যাড করে তাই তারাও মারা যায় - যেমন চুল পড়ে যায়, নখ পড়ে যায়)।

তাই molnupiravir ইউজ টা কে পর্যবেক্ষন এ রাখা উচিত (লং টার্ম কোন সাইড ইফেক্ট হয় কিনা)

কিন্তু Paxlovid ভাইরাস এর প্রোটিন কে সরাসরি 'আক্রমন' করে যাতে ভাইরাস তার অনেকগুলি জোড়া লাগা লম্বা প্রোটিন চেইন কে ভেংগে ফাংশানাল ছোট ছোট প্রোটিন না বানাতে পারে। যেহেতু আমাদের শরীরে Paxlovid এর কোন টার্গেট নাই, তাই এটা থেকে কোন সাইড ইফেক্ট হওয়ার প্রবাবিলিটি একটু কম। তবে Paxlovid একা খেলে কোন কাজ করবে না কেননা আমাদের শরীরে এনযাইম এটাকে ফরেন মলিকুল দেখে ভেংগে ফেলে। এই ভাংগার হাত থেকে রক্ষা করতে Paxlovid এর সাথে এইচআইভির একটা ঔষুধ
ritonavir ও খেতে হবে একসাথে। ritonavir আমাদের শরীরে যে এনযাইম টা Paxlovid কে ভেংগে ফেলে, তাকে ইনহিবিট করে।

আশা করি এই দুই পিল দিয়েই কভিড কে নিয়ন্ত্রন করা যাবে। তবে আমার কিছুটা প্রশ্ন আছে...দুটা ঔষুধ এর ট্টায়াল হয়েছে যারা ভ্যাকসিন নেয় নাই তাদের উপর। যারা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের উপর কাজ করবে কিনা তার কোন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয় নাই। সম্প্রতি আরেকটা কোম্পানীর পিল ট্রায়াল এ 'ফেইল' করেছে আর তাদের ট্রায়াল এ যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের কেও ইনক্লুড করা হয়েছিল। আসলে ভ্যাকসিন গ্রহিতা দের হসপিটালাইজেশন এর হার এমনিতে ই কম আর ট্রায়াল তারা দেখছে হসপিটালাইজেশন এর হার!!! তাই মনে হয় ভ্যাকসিন গ্রহিতাদের পিল এর ট্রায়ালে ইনক্লুড করা হচ্ছে না।

কোন ব্লগার ভাই আমেরিকায় আসলে সাথে করে আমাদের জন্য এই পিলগুলি নিয়ে আসলে বড়ই 'কৃতজ্ঞ' থাকব!!!!!!!!!



সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:১০
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×