somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

The Raid: Redemption – একটি একশনধর্মী রিভিউ !!

৩০ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভোর। প্রার্থনায় মগ্ন এক তরুণ। মানসিক একাগ্রতা আর আত্ম সমর্পনের পাঠ শেষ। এবার স্বভাবমতো ব্যায়াম আর পাঞ্চিং ব্যাগে ধূলো উড়ানো ঝড়ের মত আঘাত হেনে; সুগঠিত শরীরটাকে জাগিয়ে নিল সে । ইউনিফর্মে সুসজ্জিত হয়ে বিছানার দিকে এগুলো। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সন্তানসম্ভবা স্ত্রী। ভালবাসার পরশ বুলিয়ে বিদায় নিল স্ত্রী আর অনাগত সন্তানের কাছ থেকে। দরজায় এসে মুখোমুখি হোল বাবার। তার চিন্তাক্লিষ্ট অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে তার শান্ত প্রতিশ্রুতি, “আমি তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনবো”। ইন্দোনেশিয়ান সোয়াত টিমের নবীন সদস্য; রামা। তার চোখে বাবাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার অঙ্গীকার।



ঝুম বৃষ্টি। ছুটে যাচ্ছে সোয়াত টিমের ভ্যান। গন্তব্য; রাজধানী জাকার্তার অপরাধপ্রবন এলাকার একটি বিশাল এপার্টমেন্ট বিল্ডিং। আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন তামা রিয়াদি’র সাম্রাজ্য পরিচালিত হয় সেখান থেকে। সমস্ত শহরের কুখ্যাত সব অপরাধীদের সেফ হাউস বলে বিবেচিত এই সাম্রাজ্যে টোকা দেয়ার সাহস করেনা কোন বিরোধী মাফিয়া গ্রুপের ক্রাইম লর্ড; এমন কি পা রাখার মুরোদ রাখেনা কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও।


তামা রিয়াদি – বিগত ১০ বছরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে অপরাধ জগতের একজন লিজেন্ড হিসেবে; যাকে অন্ধকার জগতের ঈশ্বর বলে মানে ভয়ঙ্কর সব খুনী, নিষ্ঠুর অপরাধী এমন কি গ্যাংস্টার রাও! সরকারের উচু দরের রাজনীতিবিদ দের সাথেও রয়েছে তার স্বার্থের বোঝাপড়া। এই রিয়াদি’কে গ্রেফতার করা সহজকাজ না মোটেও। সে সবসময় পরিবেষ্টিত থাকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দ্বারা। আর রয়েছে তার দুই বডিগার্ড। একজন ম্যড ডগ; দুধর্ষ এই ফাইটার প্রচন্ড প্রভুভক্ত। আরেকজন এন্ডি; মাস্টারমাইন্ড। ধাবমান এই সোয়াত এলিট টিমের এসাইনমেন্ট শুধু একটাই; খাচায় ঢুকে হিংস্র এই বাঘকে বন্দী করা! টিম লিডার সার্জেন্ট জাকা আর লেফটেন্যান্ট ওয়াহিউ’র নেতৃত্বে ২০ জনের এই ছোট্ট দল পজিশন নিল ত্রাসের দূর্গের সামনে।

শুরু হোল আক্রমন। দুই দলে ভাগ হয়ে এলিট টিম সন্তর্পনে ঝাপিয়ে পড়ল তামা রিয়াদি নামক বিভীষীকার সমাপ্তি টানতে। তাদের প্ল্যান হচ্ছে যতটা সম্ভব গোপনে প্রতিটী ফ্লোর কভার করে টপ ফ্লোর পর্যন্ত পৌছে যাওয়া এবং অতর্কিতে হামলা চালিয়ে রিয়াদি কে বন্দী করা। কারন, এত বিশাল একটা সন্ত্রাসী দলের বিপক্ষে সরাসরি আঘাত করার মানে হচ্ছে এক অসম যুদ্ধ; যার পরিণতি নিশ্চিত মৃত্যু। জাকা আর ওয়াহিউ’র সুকৌশলী নেতৃত্বে এলিট টিম ধীরে ধীরে পেরিয়ে যেতে থাকে একের পর এক ফ্লোর। অসতর্ক অবস্থায় সন্ত্রাসীদের কাবু করতে বেগ পেতে হয়না তেমন। তাদের মূল চিন্তা কোন ভাবেই টপ ফ্লোরে থাকা রিয়াদির লোকজন যেন টের না পায়।

৬ তলা। পজিশন নিয়ে এগুচ্ছে এলিট টিম। আরো অনেক পথ বাকি। হঠাত ফ্রিজ হয়ে যায় সবাই। তাদের সামনে ঘুমের ঘোরে হাটতে থাকা এক কিশোর। সতর্ক ভঙ্গিতে এগুতে থাকা একদল কালো মূর্তি দেখেই কিশোরের ঘুমের ঘোর কেটে যায় নিমিষে। বুঝে যায় কি হতে যাচ্ছে। টান টান উত্তেজনা। ছেলেটিকে অভয় দিয়ে ধীরে ধীরে অস্ত্র নামিয়ে নিল জাকা। কিন্তু তাকে বিমূঢ় করে দিয়ে হঠাত ছেলেটি ঘুরে দৌড়! ক্ষিপ্রগতিতে বন্দুক তুলে গুলি করল ওয়াহিউ। গলায় বুলেট বিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার আগে তার চিল চিতকার– পুলিইইইশ !! ভেঙ্গে যায় এলিট টিমের সকল সাবধানতার রক্ষাবুহ্য! শেষরক্ষা বুঝি আর হোলনা!

আকাশ ভেঙ্গে পড়লো যেন। লকডাউন করে বেরুবার পথ সব রুদ্ধ করে দেয়া হোল। রিয়াদির নির্দেশে প্রতিবেশী ফ্ল্যাট গুলো থেকে আক্রমন শুরু করলো স্নাইপাররা। বাঘের খাচায় ঢোকার দুঃসাহসের সমুচিত শিক্ষা দিতে ২০ জনের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়লো গোটা এপার্টমেন্টের সন্ত্রাসী বাহিনী। একের পর এক সোয়াত সদস্য কিছু বুঝে উঠার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তে লাগলো। প্রচন্ড গোলাগুলি; জান বাচাতে মরিয়া এলিট টিমের সদস্যরা লড়তে লাগলো প্রাণপণ। ৬ তলার সিড়ি কোঠায় যখন একটু নিঃশ্বাস ফেলার সময় পেল তারা, তখনই লাউড স্পিকারে ভেসে এল খোদ তামা রিয়াদির গলা! ঘোষনা দিল ; এই অনাহূত অতিথিদের যারা পিষে মারতে পারবে তাদের জন্য এই এপার্টমেন্ট ভাড়া ফ্রি !! খাচায় আটকে পড়া ইদুরের মত অসহায় অবস্থায় নিজেদের আবিষ্কার করলো সর্বশেষ বেচে থাকা ৫ জন। রিইনফোর্সমেন্টের সব আশা নিভে গেল যখন সার্জেন্ট জাকা জানতে পারলো, এই অভিযান শুধুমাত্র লেফ. ওয়াহিউ’র ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে!! ডিপার্টমেন্টের কেউই জানে না এখানে সোয়াতের একটী এলীট টিম এখন স্রেফ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে !!

তামা রিয়াদি’র ওয়াচ রুম। মতবিরোধ শুরু হোল দুই ক্যাপুরিজিমির মধ্যে। এন্ডি কিছুতেই মেনে নিতে পারে না এই নির্বিচারে পুলিশ হত্যা। কিন্তু পুলিশের রক্তের গন্ধে পাগল ম্যাড ডগ। খুনের নেশায় মত্ত। হঠাত সিসি টিভির স্ক্রীনে জান বাচাতে মরিয়া এক পুলিশ অফিসারের দিকে চোখ আটকে যায় এন্ডির; রামা ! তার আপন ভাই!!


এমিউনিশনের শেষ বুলেট আর শারীরিক সক্ষমতার শেষ বিন্দু দিয়ে লড়তে থাকে এলিট সদস্যরা। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোজে নামে। চরম উতকন্ঠা নিয়ে পার হতে থাকে প্রতিটি মুহূর্ত। রিয়াদির খুনী বাহিনী প্রতিটী ফ্লোরে ফ্লোরে তল্লাশি শুরু করলো এলিট টীমের সন্ধানে। নিতান্তই ভাগ্য জোরে আর ইন্দোনেশিয়ান মার্শাল আর্ট পেনচাক সিলাতের চোখ ধাধানো প্রদর্শনীতে প্রান বাচালো রামা; নিজের আর আহত সহকর্মীর।
সম্মুখ যুদ্ধে ম্যাড ডগ আর সার্জেন্ট জাকা মুখোমুখি। হাতের অস্ত্র ফেলে দিল সাইকো কিলার; আহবান জানালো হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাটের। জান বাজি রেখে লড়েও টিম লিডার জাকা খুন হয়ে গেল নির্মম ভাবে। ক্লান্ত শরীর আর কন্ঠাগত প্রাণ রামা’র। লড়াইয়ের বিন্দুমাত্র শক্তি আর অবশিষ্ট নেই, তখনি ভাই কে বাচাতে নিজের দলের লোকদের খুন করে বসে এন্ডি। আর এই বেঈমানী টের পেয়ে গেল রিয়াদি যখন সিসি টিভিতে দেখতে পেল এন্ডির সাথে রামার এই পুনর্মিলন। ম্যড ডগকে লেলিয়ে দিল সে।


রিয়াদির কূট কৌশলে ধরা পড়ে এন্ডি। তিলে তিলে খুন করার জন্য তুলে দেয়া হোল ম্যাড ডগের হাতে।

এই অসম যুদ্ধের শেষ দেখার জন্য ঘুরে দাঁড়ায় বেচে থাকা শেষ তিনজন এলিট। সিদ্ধান্ত নেয় মরণ কামড় দেয়ার। এন্ডিকে বাচাতে খালি হাতে ঝাপিয়ে পড়ে রামা অসম্ভব ক্ষিপ্র আর কৌশলী এক যোদ্ধার ওপর। শুরু হয় খুনের নেশায় মত্ত এক অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দুই ভাইয়ের অমানুষিক সংঘর্ষ; চোখে বিভ্রম সৃষ্টিকারী কৌশল, ক্ষিপ্রতা, শক্তিমত্তা আর দমের লড়াই।



এদিকে দূর্ণীতিবাজ অফিসার ওয়াহিউ অনুপ্রবেশ করে রিয়াদির নিউক্লিয়াসে। খুন করে সাথের সোয়াত সদস্য দাগুকে। তার স্বার্থসিদ্ধির গোপন উদ্দেশ্য ফাস হয়ে যাওয়ায় এখন তার আল্টিমেট টার্গেট দুইজন; রিয়াদি আর রামা!
রামা, এন্ডি আর ম্যাড ডগ – এই তিন শক্তির মরণপণ যুদ্ধের শেষ কি? কে বেচে ফিরে আসতে পারলো এই অন্ধকার রাজ্যের মৃত্যুর প্রহরীদের হাত এড়িয়ে? জয় হোল কি শুভ শক্তির; নাকি বাস্তবতার জমিনে গোরাপত্তন করলো অশুভ শক্তি? রামা কি পারলো বাবা কে দেয়া তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে?

দেখে ফেলুন গ্যারেথ ইভান্স আর আইকো উয়াইসের; দ্য রেইডঃ রিডেম্পশন । একটি মাথা নষ্ট একশান মুভি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৪
৫৩টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×