somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সভ্য মানুষের ভীড়ে আমি এক রমিজ পাগলা হতে চাই। /:)

০১ লা জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রমিজ পাগলা ঠিক কি কারণে, কখন হতে পাগল তার আসল খবর কেউ জানেনা। দেশ, গ্রাম, পরিবার কোথায় কেউ জানেনা। পাগলদের এত খবরইবা রেখে লাভ কি? হয়তো তাই। আউলা জাউলা কাকড়া চুল, লম্বা দাড়ি, ছেড়া কাপড়, নোংরা শরীর নিয়ে সারা গ্রামময় ঘুরে বেড়ানো এ পাগলটাওতো একটা মানুষ। সবাই বলে সে মানুষ না, পাগল। পাগল আর মানুষের মধ্যে বিরাট ফারাক।

তার একটাই সমস্যা কাউকে হঠাৎ আক্রমন করে বলবে একটা টাকা দে, একটা দিলে বলে আরেক টাকা দে, আরেকটা টাকা দিলে বলে আরেক টাকা দে। না দিলে কাদা কিংবা গরুর গোবর মুখে ও জামায় মাখিয়ে দেয়। তাই সে যখন বের হয় সবাই দুরে দুরে পালায়। শুনেছি অনেকেই নাকি আজকাল পকেটে এক টাকার নোট রাখে তার ভয়ে। আরো শুনেছি রমিজ পাগলা নাকি আজ পর্যন্ত স্কুল কলেজ পড়ুয়া কোন ছাত্র ছাত্রীকে আক্রমন করেনি। কিন্তু কেন?

রমিজ পাগলাকে কয় টাকাইবা এভাবে দিতে থাকবে? তাই পরবর্তীতে তার একটা উপায় বের করেছিলো মাইনাচ তার যন্ত্রনা মাইনাচ করতে। সেটাই এখন গ্রামের সবাই ফলো করে।

রমিজ পাগলা যখন এক টাকার পর আরেক টাকা চাইতেই থাকে, তখন তাকে তিন টাকা দিয়েই বলে, দেখেনতো কয় টাকা হলো? রমিজ পাগলা টাকার হিসেবে তাল গোল পাকিয়ে ফেলে। বাম হাতে টাকা নিয়ে গুনতে থাকে। যে টাকা একবার গুনেছে সেটা বাকী টাকার নীচে রাখে, পরে সেটা ভুলে যায়। এভাবে একটা গুনে সেটা নীচে রাখে , পরে সেটাও বাকীগুলোর সাথে আবার গুনে। এভাবে গুনতেই থাকেতো গুনতেই থাকে। কিন্তু তার টাকা গুনা শেষ হয়না। অস্থির হয়ে পরে দেয়ালে মাথা টুকে। সে ফাঁকেই লোকেরা ভেগে যায়। বাহ কি দারুন বুদ্ধি মানুষের। একজন পাগলকে পাগল বানিয়ে ভেগে যাবার কি দারুন বুদ্ধি। তাইতো আমরা মানুষ। আর রমিজ মিয়া মানুষনা, রমিজ পাগলা।

গ্রামে রমিজ পাগলার একটাই সমস্যা, সেটা হচ্ছে টাকা চাওয়া। সেটাও সব সময় কিন্তু না । যখনি তার মন চায় তখনি। কিন্তু সে ওই একটা বিষয় ছাড়া কাউকে তেমন জালাতন করেইনা। টাকা চাওয়াটাই তার দোষ, তাই সে পাগল। সে মানুষ না। আর আমরা মানুষ। আমরা যারা মানুষ তারা কি করি? মানুষ খুন করি, চুরি করি, ডাকাতি করি, হাইজ্যাক করি, মারামারি করি, ইভটিজিং করি, ধর্ষন করি, রেষারেষি করি, হিংসা হিংসি করি, ঘুষ আদান প্রদান করি, অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকি, সত্য বলতে ভয় করি, ওজনে কম দিয়ে ব্যবসা করি, আর রমিজ পাগলা টাকা গুনায় তাল গোল পাকিয়ে ফেলে জেনে তার কাছ হতে রক্ষা পেতে তাকে টাকা গুনতে দিয়ে ধোকা দিয়ে দেয়ালে মাথা টুকতে দিয়ে ভেগে যেতে পারি। তারপরও কিন্তু আমরা মানুষ। কিন্তু রমিজ পাগলা আউলা জাউলা কাকড়া চুল, লম্বা দাড়ি, ছেড়া কাপড়, নোংরা শরীর নিয়ে সারা গ্রামময় ঘুরে বেড়ায় বলে সে পাগল, যার তার কাছে টাকা চেয়ে বসে বলেই সে পাগল। আর আমরা এত কিছু করেও আপাদমস্থক মানুষ।


রমিজ পাগলার পেছনের কথা।

রমিজ ছিলো একজন সরকারী চাকুরীজীবি। রমিজ সাহেব থেকে রমিজ পাগলা হলো কি করে? সে এক বিরাট ইতিহাস। শুনবেন? শুনেন তাহলে সংক্ষেপে।

উনি চাকরী করতেন একটা সরকারী মন্ত্রনালয়ে। যেখানে হিসেবের কাজকারবারই হতো বেশি। রমিজ মিয়া ছিলেন সৎ একজন কর্মচারী। হিসেবের বেলায় পাক্কা। ইচ্ছে করে কোন প্রকার গড়মিল করা, চুরি করা, জালিয়াতি করা, ঘুষ খাওয়া, দুর্নীতি করা উনার একদম পছন্দনা। উনার এ পছন্দনা ব্যাপারটাও কিন্তু অন্যদের পছন্দ না। আরে বাবা সরকারী মাল একটু এদিক ওদিক হিসেব করলে কি এমন ক্ষতি? আর তোমার পছন্দ না হলে তুমি বাবা চুপ থাকো। আমাদের জালাতন করতে আসো কেন? এটা বড় বিরক্তিকর বাপু। এটা মেনে নেয়া যায়না। কিন্তু রমিজ সাহেব নিজে সৎ থাকবেন, অন্যদেরকেও অন্যায় করতে দেবেন না চোখের সামনে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় সর্বজন সম্মানী রমিজ সাহেব একদিন সবার চক্ষুশুলে পরিনত হলো। হয়ে গেল বেকুব, হয়ে গেল বোকা, একটা সময় পাগল বলতেও দ্বিধা করেনা সহকর্মীরা।

আসল ঘটনা ঘটলো ক’দিন পরেই। একটা সরকারী প্রজেক্টের হিসেবে বড় ধরনের গড়মিল তার চোখে ধরা পড়ে যায় অন্য সবার বেখেয়ালে। তিনি নাছোড় বান্দা। এর বিহীত করেই ছাড়বেন। প্রয়োজনে উপর মহলে নালিশ করবে। এতো দেখি বড়ই বেপরোয়া লোক? একেতো ঠান্ডা করতেই হয়। নইলে সবাই ফেঁসে যাবে, চাকরী হারাবে। তার চেয়ে বরং এই একটাকেই কিছু একটা করতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সবাই মিলে তাকেই উল্টো চুরির দায়ে অভিযুক্ত করলো। পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিলো। কয়েক লক্ষ টাকা চুরির দায়ে তার জেল হলো। কেউ তারঁ কথা শুনেনা।

অন্যায়ের প্রতিবাদ করেই আজ তিনি চোর। দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়েই আজ তিনি দুর্নীতিবাজ। এ অন্যায়, এ মিথ্যা অপমান এ সৎ মানুষটির কোমল মন সইতে পারেনি। দিন দিন একিই টেনশনে বিপর্যস্থ হয়ে মুশড়ে পড়ে। এভাবেই দিন গড়িয়ে যায়। একসময় মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন রমিজ সাহেব। জেলের ভিতরের মানুষের (?) সাথে বিরুপ আচরন করতে থাকেন। পরে সবাই ত্যক্তবিরক্ত হয়ে পড়ায় সবার অনুরোধেই তাকে জেল থেকে নিজ ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ঘরে উনার আর থাকা হয়নি। রাতেই কোথায় হারিয়ে যায় তার কোন হদিসও পায়নি কেউ।

তাই আমাদের গ্রামে রমিজ পাগলা এক অপরিচিত পাগল। কেউ জানেনা তার ঠিকানা। যে মানুষ এক সময় টাকাকে ধর্মজ্ঞান জানতো, টাকাকে ভগবান মনে করে পুজো করতো, টাকাকে দেশের সম্পদ ভেবে তার অপচয় রোধ করতো, টাকাকে পবিত্র জেনে তা চুরি হতে দুরে থেকে অপরকেও দুরে রাখার আপ্রান চেষ্টা করতো, সেই রমিজ মিয়া এখন টাকার পাগল, মাত্র এক টাকা। যে মানুষ টাকার হিসেবে ছিলো পাকা, সেই রমিজ মিয়া এখন তিন টাকার হিসেবটাও মিলাতে পারেনা। তাইতো সবাই তিন টাকা দিয়েই বলে গুনে দেখতে। আর রমিজ পাগলা গুনতেই থাকেতো গুনতেই থাকে, কিন্তু হিসেব মিলেনা। টাকাগুনা শেষ হয়না। অবশেষে অস্থির হয়ে দেয়ালে মাথা ঠুকে শান্ত হয়। ব্রেইনের অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে দেয়ালে মাথা ঠুকে শক্ত মাথার খুলিতে পাওয়া ব্যথাটা তেমন অনুভুত হয়না।



সভ্য মানুষের ভীড়ে আমি এক রমিজ পাগলা হতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৩২
৫৫টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×