"শবে বরাত" বা "লাইলাতুল বরাত" বলা হচ্ছে আজকের মধ্য শাবানের রজনীকে। এ নিয়ে একটামাত্র দলিল পেশ করা যায় যেখানে বর্ণণা করা হয় যে আজকের মধ্যরাতে একদা রাসূল(সঃ) বিছানা থেকে উঠে খোলা আকাশের দিকে দু'হাত বাড়িয়ে প্রার্থনা করছিলেন। কেননা আজকের শেষরাতে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন দুয়া কবুল করতে। হাদিসটার সনদ নিয়ে ইমাম বুখারী সহ সকল মুহাদ্দিসগণই একমত যে এটা 'জয়িফ'। এবার প্রশ্ন আসবে আমরা কেন একটা জয়িফ হাদিসের উপর ভিত্তি করে আমল করে বিদ'আত করব? যেটা রাসূল(সঃ), সাহাবাগণ কিংবা তাবে তাবেঈগণদের কারোও পালন করার স্পষ্ট সহীহ দলিল নাই।
মূল কথা কেবল মধ্য শাবানের রজনীই না বরঞ্চ সহীহ বুখারি ও মুসলিমে এসেছে আল্লাহ তা'আলা প্রতি মধ্যরাতেই প্রথম আসমানে আসেন বান্দার দুয়া কবুল করতে।
মূলতঃ এ রাত্রিকে ভাগ্য রজনী বলার পেছনে কাজ করছে সূরা আদ-দুখানের ৩ ও ৪ আয়াত দু’টির ভূল
ব্যাখ্যা। তা হলোঃ
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻨْﺬِﺭِﻳﻦَ * ﻓِﻴﻬَﺎ ﻳُﻔْﺮَﻕُ ﻛُﻞُّ ﺃَﻣْﺮٍ ﺣَﻜِﻴﻢٍ
– ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺪﺧﺎﻥ 3:ـ4
আয়াতদ্বয়ের অর্থ হলোঃ “অবশ্যই আমরা তা (কোরআন) এক মুবারক রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি, অবশ্যই আমরা সতর্ককারী, এ রাত্রিতে যাবতীয় প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়”। এ আয়াতদ্বয়ের তাফসীরে অধিকাংশ মুফাসসির বলেনঃ এ আয়াত দ্বারা রমযানের লাইলাতুল ক্বাদরকেই বুঝানো হয়েছে। যে লাইলাতুল কাদরের চারটি নাম রয়েছে: ১. লাইলাতুল কাদর, ২. লাইলাতুল বারা’আত, ৩. লাইলাতুচ্ছফ, ৪.লাইলাতুল মুবারাকাহ। শুধুমাত্র ইকরিমা (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, এ আয়াত দ্বারা শা’বানের মধ্যরাত্রিকে বুঝানো হয়েছে। এটা একটি অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা। আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আলোচ্য আয়াতে ‘মুবারক রাত্রি’ বলতে ‘লাইলাতুল ক্বাদর বুঝানো হয়েছে, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ – ﺳﻮﺭﺓﺍﻟﻘﺪﺭ1: আমরা এ কোরআনকে ক্বাদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা আল-কাদরঃ১)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেনঃ
ﺷَﻬْﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ - ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘ 185: রমযান এমন একটি মাস যাতে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা আলবাকারাহঃ১৮৫)। যিনি এ রাত্রিকে শা‘বানের মধ্যবর্তী রাত বলে মত প্রকাশ করেছেন, যেমনটি ইকরিমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি অনেক দূরবর্তী মত গ্রহণ করেছেন; কেননা কোরআনের সুস্পষ্ট বাণী তা রমযান মাসে বলে ঘোষণা দিয়েছে’। (তাফসীরে ইবনে কাসীর (৪/১৩৭)।
অনুরূপভাবে আল্লামা শাওকানীও এ মত প্রকাশ করেছেন। (তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর (৪/৭০৯)। সুতরাং ভাগ্য রজনী হলো লাইলাতুল ক্বাদর যা রমযানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাত্রিগুলো। আর এতে করে এও সাব্যস্ত হলো যে, এ আয়াতের তাফসীরে ইকরিমা (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) মতভেদ করলেও তিনি শা’বানের মধ্য তারিখের রাত্রিকে লাইলাতুল বারা’আত নামকরণ করেননি।
শবে বরাতের নিয়তে নির্দিষ্ট পরিমাণে নফল নামাজ পড়া,এই রাতের উপলক্ষে হালুয়া-রুটি খাওয়া স্পষ্ট বিদ'আত।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ১০:১৭