কিছুদিন আগের ঘটনা। অ্যাপোলো গ্লিনিগেলস হসপিটালের ১৩৭ নম্বর বেড। ওয়ার্ডের নাম আই.সি.ইউ এক্সটেন্সান। শুয়ে আছেন একজন মৃত্যূ পথযাত্রী মানুষ। কি হয়েছে উনার?- ক্যানসার। একদম শেষ অবস্থা। ওয়ার্ডে আরো অনেক রোগী আছেন খুব ক্রিটিকাল কন্ডিশন কিন্তু উনি যেন একটু ব্যতিক্রম। উনাকে দেখে বোঝার উপায় নেই আসলে উনি শুয়ে শুয়ে মৃত্যূর কড়ি গুনছেন। ভিতরে ভিতরে যত খারাপ অবস্থাই হোক না কেন বাইরে তার বিপরীত প্রতিফলন দেখানোর এক অদম্য চেষ্টা। সিস্টাররা উনাকে জিজ্ঞেস করে, "আংকেল কষ্ট হচ্ছে?" জবাবে উনি বলেন,"না না, অনেক্ষন চা খাইনি তো তাই জিভটা কেমন অসাড় লাগে" বোঝ ঠেলা এ কিরকম কথা হোলো,- মানুষটা খাবি খাচ্ছে প্রচন্ড অক্সিজেনের অভাবে তখন কিনা বলছেন চাএর তেষ্টা। বিকেলের দিকে উনাকে ইন্টুবেট করে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। ডাক্তার উনার বাড়ির লোককে ডেকে বলে দেন,"এই মুহূর্তে আমাদের হাতে আর কিছুই নেই। উনাকে যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে তা কাজ শুরু করতে, কিছুটা অবস্থার উন্নতি ঘটাতে অন্তত বাহাত্তর ঘন্টা সময় লাগবে কিন্তু উনি সেই সময়টাও দেবেন কিনা জানিনা। এই অবস্থায় উনাকে ভেন্টিলেশনে দিয়ে আমরা কিছুটা সময় কিনে নিতে চাইছি। না হলে উনি খাবি খেতে খেতে মারা যাবেন কিছুই করার থাকবে না। কিন্তু কি হবে কিছুই বলা যাচেছনা।" ইন্টুবেট করার সময়ও অবাক করা আচরণ। সাধারণত মানে বেশির ভাগ সময় যা দেখেছি যে সমস্ত রোগীকে ইন্টুবেট করা হয় বা ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় তারা অচেতন অবস্থায় থাকে অথবা জ্ঞান থাকলেও কি হচ্ছে বোঝার মত অবস্থা থাকেনা। কিন্তু উনাকে দেখলাম ডাক্তারের সাথে সমানে কোঅপারেশনের চেষ্টা করে চলেছেন। ডাক্তার মাথাটা একটু তুলতে বললে তুলছেন একটু কাত হতে বললে হচ্ছেন। এমনকি জল চেয়ে খেলেনও যদিও এই অবস্থায় বেশি জল উনার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে তাই সামান্যই দেওয়া হয়। এরপর অবশ্য ফেন্টানিল ইনজেকশন দিয়ে উনাকে রেস্টলেস করা হয় কারণ ইন্টুবেসন বা ভেন্টিলেশনের সময় রোগী রেস্টলেস না হলে ডাক্তারের কাজে বা রোগী উভয়েরই ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়। উনার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে যে ওষুধটা ব্যবহার করা হয়েছিল তার নাম Atra 40-
all-trans retinoic acid
Generic: Tretinoin
Trade name: vesanoid
উনি সময় দেননি। মারা যান সেইদিনই গভীর রাতে। পরের দিন ডিউটিতে গিয়ে শূন্য বেড দেখে সিস্টারকে জিজ্ঞাসা করতে খবরটা পাই। হসপিটালে অনেক মানুষ আসেন কেউ ভালো হয়ে বাড়ি ফিরে যান কেউ ভালো হননা কেউ বাঁচেন কেউ বাঁচেননা কিন্তু কেউ কেউ থাকেন যাঁরা দাগ রেখে যান। একটা অস্তিত্ব যেন থেকে যায় মৃত্যূর পরেও। আর এইরকম একটা স্মৃতিকে স্বীকৃতি দিতে কবিতার চেয়ে ভালো উপায় আর কি বা হতে পারে। আমার সেই মৃত্যূর পথযাত্রী বন্ধুর স্মরণে (যে আর বেঁচে নেই) আজকের কবিতা -
আট্রা ৪০
সপ্ন তুমিও অনেক দেখেছো তবুও অপারগ;
ডাক্তারও আজ চাইছে সময় শিয়রে মৃত্যূযোগ।
৭২ ঘন্টা সময় সেতো অল্প সময় নয়,
আট্রা ৪০ দেওয়া হয়েছে বন্ধু, দাও সময়।
ভেন্টিলেশন ইনটুবেসন চিকিত্সার নাম নয়,-
ভিক্ষা চাইছে ডাক্তারও আজ, দাও সময়।
সুস্থ তুমি ছিলেনা জানি শুধুই মনের জোড়;
তেষ্টা, বড্ড তেষ্টা, একটু জল দাওনা গো।
মৃত্যু এসে দাঁড়িয়ে আছে জীবন আঙিনায়,
স্বপ্নগুলো চোখের সামনে শুধুই আসে যায়,
কত ফেরেশতা কত বদ্যি নিশ্চুপ নিরালায়,-
ক্যান্সার সব থামিয়ে দিল, আজকে বিদায়।
চেষ্টা অনেক করেছিলে জানি, কিন্তু নেই সময়।
আট্রা ৪০ শেষে থমকে গেল, বন্ধু, দাও বিদায়।।
বি.দ্র: পোস্টে ব্যবহৃত ছবিটি গুগুল থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:২৯