somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আট্রা ৪০

০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছুদিন আগের ঘটনা। অ্যাপোলো গ্লিনিগেলস হসপিটালের ১৩৭ নম্বর বেড। ওয়ার্ডের নাম আই.সি.ইউ এক্সটেন্সান। শুয়ে আছেন একজন মৃত্যূ পথযাত্রী মানুষ। কি হয়েছে উনার?- ক্যানসার। একদম শেষ অবস্থা। ওয়ার্ডে আরো অনেক রোগী আছেন খুব ক্রিটিকাল কন্ডিশন কিন্তু উনি যেন একটু ব্যতিক্রম। উনাকে দেখে বোঝার উপায় নেই আসলে উনি শুয়ে শুয়ে মৃত্যূর কড়ি গুনছেন। ভিতরে ভিতরে যত খারাপ অবস্থাই হোক না কেন বাইরে তার বিপরীত প্রতিফলন দেখানোর এক অদম্য চেষ্টা। সিস্টাররা উনাকে জিজ্ঞেস করে, "আংকেল কষ্ট হচ্ছে?" জবাবে উনি বলেন,"না না, অনেক্ষন চা খাইনি তো তাই জিভটা কেমন অসাড় লাগে" বোঝ ঠেলা এ কিরকম কথা হোলো,- মানুষটা খাবি খাচ্ছে প্রচন্ড অক্সিজেনের অভাবে তখন কিনা বলছেন চাএর তেষ্টা। বিকেলের দিকে উনাকে ইন্টুবেট করে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। ডাক্তার উনার বাড়ির লোককে ডেকে বলে দেন,"এই মুহূর্তে আমাদের হাতে আর কিছুই নেই। উনাকে যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে তা কাজ শুরু করতে, কিছুটা অবস্থার উন্নতি ঘটাতে অন্তত বাহাত্তর ঘন্টা সময় লাগবে কিন্তু উনি সেই সময়টাও দেবেন কিনা জানিনা। এই অবস্থায় উনাকে ভেন্টিলেশনে দিয়ে আমরা কিছুটা সময় কিনে নিতে চাইছি। না হলে উনি খাবি খেতে খেতে মারা যাবেন কিছুই করার থাকবে না। কিন্তু কি হবে কিছুই বলা যাচেছনা।" ইন্টুবেট করার সময়ও অবাক করা আচরণ। সাধারণত মানে বেশির ভাগ সময় যা দেখেছি যে সমস্ত রোগীকে ইন্টুবেট করা হয় বা ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় তারা অচেতন অবস্থায় থাকে অথবা জ্ঞান থাকলেও কি হচ্ছে বোঝার মত অবস্থা থাকেনা। কিন্তু উনাকে দেখলাম ডাক্তারের সাথে সমানে কোঅপারেশনের চেষ্টা করে চলেছেন। ডাক্তার মাথাটা একটু তুলতে বললে তুলছেন একটু কাত হতে বললে হচ্ছেন। এমনকি জল চেয়ে খেলেনও যদিও এই অবস্থায় বেশি জল উনার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে তাই সামান্যই দেওয়া হয়। এরপর অবশ্য ফেন্টানিল ইনজেকশন দিয়ে উনাকে রেস্টলেস করা হয় কারণ ইন্টুবেসন বা ভেন্টিলেশনের সময় রোগী রেস্টলেস না হলে ডাক্তারের কাজে বা রোগী উভয়েরই ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়। উনার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে যে ওষুধটা ব্যবহার করা হয়েছিল তার নাম Atra 40-
all-trans retinoic acid
Generic: Tretinoin
Trade name: vesanoid
উনি সময় দেননি। মারা যান সেইদিনই গভীর রাতে। পরের দিন ডিউটিতে গিয়ে শূন্য বেড দেখে সিস্টারকে জিজ্ঞাসা করতে খবরটা পাই। হসপিটালে অনেক মানুষ আসেন কেউ ভালো হয়ে বাড়ি ফিরে যান কেউ ভালো হননা কেউ বাঁচেন কেউ বাঁচেননা কিন্তু কেউ কেউ থাকেন যাঁরা দাগ রেখে যান। একটা অস্তিত্ব যেন থেকে যায় মৃত্যূর পরেও। আর এইরকম একটা স্মৃতিকে স্বীকৃতি দিতে কবিতার চেয়ে ভালো উপায় আর কি বা হতে পারে। আমার সেই মৃত্যূর পথযাত্রী বন্ধুর স্মরণে (যে আর বেঁচে নেই) আজকের কবিতা -

আট্রা ৪০

সপ্ন তুমিও অনেক দেখেছো তবুও অপারগ;
ডাক্তারও আজ চাইছে সময় শিয়রে মৃত্যূযোগ।
৭২ ঘন্টা সময় সেতো অল্প সময় নয়,
আট্রা ৪০ দেওয়া হয়েছে বন্ধু, দাও সময়।
ভেন্টিলেশন ইনটুবেসন চিকিত্সার নাম নয়,-
ভিক্ষা চাইছে ডাক্তারও আজ, দাও সময়।
সুস্থ তুমি ছিলেনা জানি শুধুই মনের জোড়;
তেষ্টা, বড্ড তেষ্টা, একটু জল দাওনা গো।
মৃত্যু এসে দাঁড়িয়ে আছে জীবন আঙিনায়,
স্বপ্নগুলো চোখের সামনে শুধুই আসে যায়,
কত ফেরেশতা কত বদ্যি নিশ্চুপ নিরালায়,-
ক্যান্সার সব থামিয়ে দিল, আজকে বিদায়।
চেষ্টা অনেক করেছিলে জানি, কিন্তু নেই সময়।
আট্রা ৪০ শেষে থমকে গেল, বন্ধু, দাও বিদায়।।

বি.দ্র: পোস্টে ব্যবহৃত ছবিটি গুগুল থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:২৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×