ডিজিটাল
একে কামাল, খাগড়াছড়ি।
‘ডিজিট’ শব্দের আভিধানিক অর্থ অঙ্গুলি (এক অঙ্গুলি পরিমাণ বিস্তৃত)। আর এই ডিজিট শব্দ থেকে ডিজিটাল শব্দের উৎপত্তি যার আভিধানিক অর্থ অঙ্গুলিসম্বন্ধীয়। অর্থাৎ ০ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাঘটিত।
যান্ত্রিক বা প্রযুক্তিগত কাজগুলো ২ পদ্ধতিতেই করা হয়। ১) এ্যানালগ পদ্ধতি এবং ২) ডিজিটাল পদ্ধতি।
এ্যানালগ প্রযুক্তি ঃ
অ্যানালগ শব্দের অর্থ সদৃশ। অন্যকোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য রেখে কোন কিছুর মান নির্ণয় করাকে অ্যানালগ পদ্ধতি বলা হয়। যেমন-
১. ঘড়িতে সময় নির্ণয়ের েেত্র যেসব ঘড়িতে কাঁটা রয়েছে সেসব ঘড়ি সেকেন্ড, মিনিট এবং ঘন্টার কাঁটাগগুলো ঘড়ির গায়ে লেখা সংখ্যার সাথে তুলনা করে আমাদেরকে সময় জানায়।
২. বিদ্যুৎ মিটারে ইউনিট হিসাব করা হয় মিটারের সাথে দাগদেওয়া ঘূর্ণায়মান একটি চাকতি এবং কাছাকাছি ১ থেকে ৯ পর্যন্ত কতগুলো সংখ্যার সাথে তুলনা করে।
৩. টেলিফোনে শব্দ আদান-প্রদানেও গ্রহণ এবং প্রেরণ যন্ত্রের মধ্যে প্রযুক্তিগত দুটো জিনিষের সাথে তুলনা করে ইউনিট হিসাব করা হয়।
এভাবে যেসকল যন্ত্রে দুটো জিনিসের সাথে তুলনা করে কোনকিছুর মান হিসাব করা হয় তাকেই এ্যানালগ পদ্ধিতে বলা হয়।
এ এ্যানালগ পদ্ধতিতে বর্তমান ডিজিটাল পদ্ধতির তুলনায় অনেক ধীর গতির। যেমন- কিছুদিন আগেও মানুষ চিঠিপত্র বা ডকুমেন্ট আদান প্রদানের ক্ষেত্রে বাইরোড বা ডাকমাধ্যমে ব্যবহার করতো। আর এখন মোবাইল বা ই-মেইল (ইলেক্ট্রনিক্স মেইল) পদ্ধতি ব্যবহার করে। এতে সময়ের ব্যবধান অনেক।
ডিজিটাল প্রযুক্তি ঃ
ডিজিটাল শব্দটিকে ডিকশনারিতে এ রকম বর্ণনা করলেও এর অর্থ বা ব্যবহার অনেক ব্যাপক। বর্তমান বিশ্বের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে এ ডিজিটাল বলতে ০ এবং ১ সংখ্যার বাইনারী পদ্ধতিকেই ব্যাপকভাবে গুরুত্বের সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি আজ এমন হয়ে গেছে যে, বিশ্বটাকে আজ আর কেউ আধূনিক বিশ্ব বলতে চায়না, ডিজিটাল বিশ্ব বলতেই আনন্দ পাচ্ছে যা সারাবিশ্বের জন্য সময়ের দাবী। কারণ বর্তমান বিশ্বে শুধু ০(শূন্য) এবং ১ দ্বারা টেকনোম্যাজিকের খেলা। কম্পিউটার থেকে শুরু করে যাবতীয় ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি সবই ডিজিটালে রূপান্তর করা হচ্ছে বা উন্নতবিশ্বে আরো অনেক আগেই হয়ে গেছে। আরো সহজভাবে বললে বলতে হয়, কোন জিনিসের মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যদি কাঁটা (যেমন ঘটির কাঁটা) বা চাকা ছাড়া সরাসরি সংখ্যার মাধ্যমে মান পাওয়া যায় সেটাই হবে ডিজিটাল পদ্ধতি। যেমন - মোবাইল, ল্যান্ডফোন, ডিজিটাল মিটার, ওজন ইত্যাদি। একসময় মানুষ কাগজে-কলমে চিঠি লিখে যে কোন দূরত্বে ব্যক্তিগত যোগযোগ করতো। অথচ আজ যেন মানুষ হাতে চিঠি লিখা ভুলেই যাচ্ছে । এতোদিন মানুষ তাদের বই-উপন্যাস, গল্প-কাহিনী প্রেসে গিয়ে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে ছাপার মাধ্যমে প্রকাশ করা ছাড়া অন্যকোন উপায় পেত না। অথচ এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিডির মাধ্যমে এসব কেনাবেচা করতে পাচ্ছে। এভাবে ডিজিটাল ডিকশনারীর মাধ্যমেও আজ বড়বড় কিতাব উল্টানো থেকে মানুষ রেহাই পাচ্ছে। পরীক্ষার ফল, ভর্তি বিজ্ঞপ্তি, টেন্ডার, ব্যাংক লেনদেন, বিল পরিশোধ ইত্যাদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হচ্ছে। এভাবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় কার্যাদি পর্যন্ত যদি ই-গভর্নেন্স পদ্ধতিতে সমাধানের ব্যবস্থা করা হয় তাই হবে ডিজিটাল(টেকনোলোজির ব্যবহার অবশ্যই)।
একটি প্রাইভেট গাড়ির দরজা বা স্টার্ট যদি রিমোটের মাধ্যমে অটো করা হয় তবে গাড়িটি হবে ডিজিটাল গাড়ি। অর্থাৎ ঘরের দরজা থেকে শুরু করে বাস, রেলগাড়ি ইত্যাদির দরজা খোলা এবং চালু সবই ডিজিটাল পদ্ধতিতে একাএকা খোলা সম্ভব যা অ্যানালগ পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। অ্যানালগ শব্দের অর্থ সদৃশ। অন্যকোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য রেখে কোন কিছুর মান নির্ণয় করাকে অ্যানালগ পদ্ধতি বলা হয়। যেমন- ঘড়িতে সময় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যেসব ঘড়িতে কাঁটা রয়েছে সেসব ঘড়ি সেকেন্ড, মিনিট এবং ঘন্টার কাঁটাগগুলো ঘড়ির গায়ে লেখা সংখ্যার সাথে তুলনা করে আমাদেরকে সময় জানায়। ডিজিটাল ঘড়ি (সরাসরি সংখ্যা প্রদর্শনের মাধ্যমে), বিদ্যুতের মিটারের ক্ষেত্রে, টেলিফোন পদ্ধতিতে।
এখানে সারাদেশের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিদ্যুতের কিছুটা সাশ্রয় ঘটানোর লক্ষে¨ বর্তমান সরকার ঘড়ির কাঁটাকে (যে কোন ঘড়ি, হোক অ্যানালগ, হোক ডিজিটাল) ১ ঘন্টা এগিয়ে নিয়েছেন যার অনেকগুলো যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার সাথে ডিজিটাল বা অ্যানালগের কোন সম্পর্ক নেই। অথচ শিতি-অশিতি, ছোটবড় সবাই এ সময়টিকে ডিজিটাল সময় হিসাবেই পারমানেন্ট করে নিচ্ছে যা ডিজিটাল প্রসঙ্গের পরিপন্থী। ডিজিটাল শব্দের অর্থ বা প্রসঙ্গ অনুধাবন না করে ব্যাঙ্গাত্মক করারই অপপ্রয়াস।
অথচ ঘড়ির কাঁটাকে হাত দিয়ে ঘুরানোর ক্ষেত্রে কোন টেকনোলোজির প্রসঙ্গই আসেনি। তবুও না বুঝে একে ডিজিটাল টাইম বলে হাস্যকর একটা ঘটনার সূত্রপাত করা হচ্ছে যার সাথে তুলনা চলে এরকম- বাজারে গিয়ে আমরা যদি মাছ ব্যবসায়ীকে বলি ‘‘আমাকে ১ কেজি ডিজিটাল মাছ দাও তো!” বা গরুকে বলি- আমাকে ১০ কেজি ডিজিটাল দুধ দাও তো!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




