somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

িবদিশার লেখা পড়ুন....

১১ ই মে, ২০০৮ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশার বই আসছে বাজারে। বইটি আসার আগে ব্লগের পাঠকদের জন্য প্রথম পর্ব দেওয়া হলো। ভাল লাগলে আরও দেওয়া হবে। প্রথম পর্বের নাম ‌‌‌‌পিছন ফিরে দেখা'।


পিছন ফিরে দেখা

চিৎ হয়ে শুয়ে ছিলাম।
দৃষ্টিতে ধরা পড়লো পলেস্তেরা খসে খসে পড়ছে- এমন একটা ছাদ।
বড়ই অচেনা ঠেকলো। এরকম ছাদের নিচে তো ঘুমাইনি কখনো!
মুখের ভিতর জিভটা নড়ে ওঠলো। সেখানেও পেলাম একটা অনভ্যস্ত স্বাদ। রাতে কী মুখ ধোওয়া হয়নি? এমন তো হওয়ার কথা নয়।
পিঠের নিচে ঠান্ডা শক্ত মেঝে, অমসৃন- এবড়ো থেবড়ো। চারদিকে আলো আঁধারির লুকোচুরি। উঠে বসতে চাইলাম, সারা শরীর বিদ্রোহ করলো। পিঠে তীব্র ব্যথা।
মাথাটা ঘুরিয়ে ডানে, বামে তাকালাম।
স্যাতস্যাতে ঘর, ১০ ফুট বাই ১৪ ফুট হবে। একটা মাত্র দরজা, সেখানে আবার কবাটের পরিবর্তে মোটামোটা লোহার রডের তৈরি গ্রিল। গ্রিলের পর একটা করিডোর। করিডোরের ঠিক অপর পাশে একেবারে মুখোমুখি একই রকম আরো একটি গ্রিলের দরজা। একই রকম আরেকটি ঘর। সে ঘরে কয়েকজন লোক বসে, তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
ওদের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আনলাম।
শরীর নাড়াতে না পারলেও চোখ ঘুরিয়ে নিজের ঘরটাকে দেখার চেষ্টা করলাম।
ঘরে কোন বাল্ব নেই, করিডোরে টিম টিম করে জ্বলতে থাকা একমাত্র বিজলী বাতি থেকে ছিটেফোটা কিছু আলো এসে পড়ছিল।
সেই আলোতে অনেক কিছুই প্রথমে দেখতে পেলাম না।
দেখতে না পেলেও ঘ্্রাণ পেতে কোন সমস্যাই হলো না। তীব্র ঝাঁঝালো একটা বোটকা গন্ধ এসে নাকে ঝাপটা মারলো।
প্রশ্রাবের গন্ধ।
প্রশ্রাবের সঙ্গে অনেক কিছু মিশে গন্ধটাকে করে তুলেছে তীব্র, আরও অসহ্য।
ততণ অন্ধকারটা সয়ে গেছে চোখে। দেখলাম ঘরের মধ্যেই পায়খানা প্রশ্রাবের জন্য উš§ুক্ত একটা টয়লেট।
আশে পাশে প্রচুর তেলাপোকা, টিকটিকি, আবর্জনা। কয়েকটা ইদুরকেও দেখলাম নির্ভয়ে চলাফেরা করছে।
সম্বিৎ ফিরে পেলাম। মনে পড়লো জ্ঞান হারানোর পূর্ব মুহূর্তের কথা।
পুলিশগুলো আমাকে মারছিল, লাঠি আর তাদের বুট জুতো দিয়ে।
কোথায় যেন আমাকে ঢুকানোর কথা ছিল।
তাহলে কি এটাই সেই জায়গা- যেখানে আমাকে ঢুকাতে তাদের এত উৎসাহ আর আগ্রহ?
প্যান টি দেখে মনে হলো অনেকণ থেকে প্রশ্রাবের বেগ চেপে ছিলাম।
উঠার কথা চিন্তা করতেই, চোখ গেল লোহার গ্রিলের দিকে। সামনের ঘরের লোকগুলো এখনো তাকিয়ে।
প্যানটি এমন এক জায়গায় যে, প্রশ্রাবের জন্য সেখানে বসলে, তা থাকবে সামনের করে লোকগুলোর দৃষ্টি সীমানার মধ্যেই।
ধারণা করলাম- এটাই বোধহয় থানা হাজত। সামনেরটা পুরুষ আসামীদের জন্য, আর আমারটি মেয়েদের।
পুরুষদেরটিতে বেশ কয়েকজন থাকলেও, মেয়েদেরটিতে আমি একাই।
কিন্তু আমি হাজতে কেন?
কী করেছি আমি?
আস্তে আস্তে মনে পড়তে থাকলো সবকিছু।
আমি চোর, আমি নাকি মোবাইল চুরি করেছি।
কার মোবাইল?
আমার স্বামীর। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের মোবাইল।
আমি যদি মোবাইল চুরিই করে থাকি, তাহলে তার হাতে যে চারটি মোবাইল এখনো সচল অবস্থায় আছে সেগুলো কোথা থেকে এলো?
চুরি যাওয়া মোবাইলগুলো কি উদ্ধার হয়েছে?
তাছাড়া ওই মোবাইল ফোনগুলো তো আমিই কিনে দিয়েছিলাম।
নিজের কিনে দেয়া জিনিস কি কেউ চুরি করে?
আমি নাকি গহনাও চুরি করেছি।
কার গহনা?
ওই বাসায় আমি আর কাজের মেয়েগুলো ছাড়া আর কোন নারী নেই।
তাহলে কার গহনা চুরি করলাম? আমার নিজের গহনাই চুরি করেছি?
আর পুলিশের নির্মম সেই মার- লাঠির বাড়ি, বুটের লাথি- এসব কেন? এভাবেই বুঝি চোরের কাছ থেকে চোরাই মাল উদ্ধার করে ওরা?
কিন্তু আমি তো চোর না।
তাহলে?
নাকি চুরির অভিযোগ নিছকই অজুহাত? রাজনীতিই কি এখানে মূল কারণ?
অথচ রাজনীতির কী ই বা বুঝতাম!
আমার স্বামী এরশাদই এনেছে আমাকে রাজনীতিতে। ছিলাম তার অনুগামী এতদিন, আমি তো ভিন্ন কোন রাজনীতি করতাম না। যা কিছু করেছি তার নির্দেশে, তার ভাল’র জন্যই করেছি।
তাহলে সে কেন মামলা করতে যাবে আমার বিরুদ্ধে?
রাজনীতিই কি নিয়ে এসেছে আমাকে এখানে? আমার তো এখানে আসার কথা ছিল না।
আর দশটা বাঙালী রমনীর মত আটপৌঢ়ে হতে পারতো আমার জীবন। তা না হয়ে এই ছোট্ট জীবনে এতকিছু ঘটে গেল!
এর সবই কি আমি চেয়েছিলাম? নাকি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে আমার উপর?
সবাই কি আমাকে ব্যবহার করেছে তাদের খেলার পতুল হিসাবে? আর অসহায়ের মত, বোকার মত, আমি কেবল ব্যবহƒত হয়েছি? খেলা শেষ হলে পরিত্যাক্ত পুতুলটিকে অবহেলায় ফেলে রেখে চলে গেছে সবাই?
পিছনের দিকে তাকালাম।
মনে হলো, কত ছোট্ট এই জীবন! আর সেখানে স্মৃতির চেয়ে শক্তিশালী বুঝি আর কেউ নেই। মুহূর্তেই সারাটা জীবনকে টেনে বর্তমানে নিয়ে আসতে পারে। রিওয়াইন্ড করা ভিডিও’র মত ছবির এক একট ফ্রেম যেন সরে যেতে থাকলো।
নিজেকে আরও একবার দেখার সুযোগ পেলাম।
নিজেকে দেখলাম।
বাঙলার একজন নারীকে দেখলাম। দেখলাম নারীর অসহায়ত্বকে।



৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×