somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের অবিনাশী চেতনা, ঐক্যের ধ্রুপদী

২৫ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা স্বাধীন জাতি। বিশ্বের মানচিত্রে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ একটি স্বাধীন সার্ভভৌম রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রের পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তা ব্যক্তিরা স্বৈরাচার তো নয়ই, নয় কোন রাজতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতাসীন। তাদেরকে এ দেশের আপামর জনগণই ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এই যে আমাদের এই ’বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রটি আমরা এমনি এমনি পাইনি। এজন্য আমাদেরকে লড়াই করতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা।

অথচ বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত সামনের দিকে, আর আমরা হাঁটছি পেছনে। পিছু হাঁটতে হাঁটতে এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন আর অসুস্থ রাজনীতি চর্চার ফলে আমরা হারাতে বসেছি আমাদের অফুরন্ত সব উজ্জ্বল সম্ভাবনা। শুধু তাই নয় প্রতিহিংসাপরায়ন রাজনীতি আমাদেরকে বারবার গভীর সংকটের দিকে ধাবিত করেছে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিরোধী দলে থাকলে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এবং ক্ষমতায় থাকলে আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য সবধরনের জোর জবরদস্তি ও কলাকৌশল প্রয়োগ করে থাকেন। মাঝখানে জনগণের শিলে পাটায় ঘষাঘষিতে মরিচের বেহুঁশি দশার মতো অবস্থা। দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ুক, তাতে কোন সমস্যা নেই। রাজনীতিবিদেরা তাদের ‘হরিলুট’ কার্যক্রম ঠিকই পরিচালনা করে নেন ক্ষমতার মসনদে বসার পর। এজন্য রসিক জনেরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে ‘পেটনীতি’ বলে চিহ্নিত করে থাকেন।

১৯৭১ সালের এ্ সময়ে আমাদের জাতীয় গগণে উদিত হয়েছিল মুক্তির সূর্য। প্রায় দু'শ বছরের ইংরেজ শাসনের বেড়াজাল, সিকি শতাব্দীর পাকিস্তানী জুলুম নির্যাতনের নাগ পাশ থেকে আমাদের স্বাধীন স্বত্তার জন্ম হয়েছিল একাত্তরে। পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম পাকিস্তানী শোষণের হাত থেকে। মহান মুক্তিযুদ্ধ তাই আমাদের জাতীয় জীবনের অবিনাশী চেতনা, ঐক্যের ধ্রুপদী।

একটি স্বাধীন দেশ আর একটি উন্মুক্ত মানচিত্রের জন্য, একটি লাল সবুজের পতাকার জন্য এ জাতি সংগ্রাম করে আসছিল বহু যুগ ধরে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার যে উদ্দেশ্য ছিল শুরু থেকেই তা অবাস্তবায়িত থাকায় বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দারা শোষিত ও বঞ্চিত হতে থাকে বিভিন্ন দিক থেকে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ৬৯ এর গণ অভ্যূত্থান মূলত: ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতি। ৭০ এর নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে স্বৈরাচারী সরকার হামলা করেছিল নিরীহ বাঙালি জনতার উপর। ২৫শে মার্চের সেই কালো রাত্রে গ্রেফতার হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করলেন মেজর জিয়াউর রহমান। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। এক সাগর রক্ত আর অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর জাতির ভাগ্যে জুটেছিল চূড়ান্ত মানযিল। অর্জিত হয়েছিল বিজয়।

এ তো গেল চার দশকেরও বেশি সময় আগের কথা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। কিন্তু যে মহান উদ্দেশ্য আর চেতনা নিয়ে ৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম দীর্ঘ চার দশকেও তা কি আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি? আমরা পশ্চিম পাকিস্তানীদের অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, আমরা কি এখন অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্ত? আমরা পশ্চিম পাকিস্তানীদের রাজনৈতিক শোষণ থেকে মুক্ত হতে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, এখন কি আমরা রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন? যে সাংস্কৃতিক গোলামি হতে মুক্ত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে একাত্তরে স্বাধীন হয়েছিলাম এখনও আমরা সাংস্কৃতিক গোলামী হতে মুক্ত হতে পারিনি। আসলে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হতে পারলেও প্রকৃত বিজয় এখনও আমাদের নাগালের বাইরেই থেকে গেছে। আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে পেরেছি বটে, তবে গড়ে তুলতে পারিনি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বদেশ। একাত্তরে মাত্র ৯ মাস যুদ্ধ করেছিলাম পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে, এখন প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছি ক্ষুধা আর দারিদ্রের সঙ্গে। যে মহান ঐক্যের চেতনায় আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, রাজনৈতিক রেষারেষি আর হানাহানিতে সে ঐক্যকে আমরা তছনছ করে ফেলেছি।

গণতন্ত্রের জন্য আমরা বারবার আন্দোলন করেছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা -পুন:প্রতিষ্ঠা করেছি। আবার আমরাই গণতন্ত্রের কবর রচনা করতে পেরেছি। আমরা হচ্ছি সেই জাতি যে জাতি তার জাতীয়তার প্রশ্নেও এক হতে পারিনি যুগের পর যুগ ধরে! কেউ বলছি আমরা বাঙালি আবার কেউ বলছি আমরা বাংলাদেশি। আমরা জাতীয় নেতৃবৃন্দকে দলীয় নেতার আসনে বসিয়েছি আর যাদের কোন দল নেই তাদেরকে ইতিহাসের ভিতরের পাতায় ঠেলে দিয়েছি। আমরা স্ব-পরিবারে হত্যা করেছি জাতির জনক খ্যাত রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধূ শেখ মুজিবুর রহমানকে। আমরা হত্যা করেছি স্বাধীনতার ঘোষক খ্যাত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকেও! এই কি আমাদের সফলতা?

কিছু পেতে হলে কিছূ দিতে হয়। কিন্তু আমাদের দেওয়ার পরিমাণটা এতই বেশি যে, সে তুলনায় প্রাপ্তি নেই বললেই চলে। অনেক দিয়েছি, আর নয়। এবার আমরা পেতে চাই। এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর।আর পেছনে তাকানোর কোন সুযোগ নেই। আমাদের সামনে এখনও অনেক সম্ভাবনা। এ সুযোগ আর সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে হলে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অর্থনৈতিক মুক্তি আর ক্ষুধা দারিদ্রের সঙ্গে যুদ্ধে এবার আমাদের জয়লাভ করতেই হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, দল, মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল বিভেদ ভুলে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে দাঁড় করাতে হবে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বদেশ হিসেবে। বস্তা পঁচা বিভেদ আর বিতর্কের কথা ভুলে গিয়ে আসুন আমরা নতুন করে শপথ নেই একটি সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×