somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন বছরের প্রত্যাশা

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময় বদলায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনও আসে। নতুন আরেকটি বছর আমাদের মধ্যে হাজির হলো ‘দু হাজার ষোল’ নামে। যীশু খ্রিষ্ট তথা হযরত ঈসা (আ.) এর জন্ম অথবা মৃত্যু তারিখকে কেন্দ্র করে এই বছরটির কার্যক্রম। কিন্তু আমাদের নিকট ‘ইংরেজি সন’ নামেই এর ব্যাপক পরিচিতি। কেউ কেউ খৃষ্টাব্দ বা ঈসায়ী সনও বলে থাকি।

যে নামেই ডাকি না কেন, ক্যালেন্ডারের হিসেবটা এখন মুখে মুখেই করা হয়। তাছাড়া প্রযুক্তির বদৌলতে মোবাইল ফোনের মধ্যেও ক্যালেন্ডারটি সেটিং করা থাকে। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়টাকেই আমরা মূলত বছর হিসেবে গণনা করি। পয়লা বৈশাখ দিয়ে যে বছর শুরু হয় সেটা ওই পয়লা বৈশাখেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এক সপ্তাহ পর কেউ আর সহজে বলতে পারি না ওই দিন বৈশাখ মাসের কত তারিখ! এমন কি জৈষ্ঠ বা আষাঢ় মাস পেরিয়ে যেতে না যেতেই আমরা মাসের নামটি পর্যন্ত মনে রাখতে পারি না। এই যেমন আজকে বাংলা কত সনের কোন্ মাসের কত তারিখ, সেটা বলতে গেলেও অনেককেই দৈনিক পত্রিকার সন্ধান করবেন। হ্যাঁ, পত্রিকাতেই তারিখগুলো লিপিবদ্ধ থাকে। দেয়ালে টানানো অনেক ক্যালেন্ডারেই বাংলা সন তারিখের উল্লেখ নেই! যদিও বা দু একটিতে দেওয়া থাকে তাও এত ছোট করে সাজানো, পাঠককে সেটা পড়তে হলে নেহাত চশমার দোকানে ছুটতে হবে। আর বাংলার মতো সমসাইজের আরবি সন তারিখ দেওয়ার ফলে কোনটা বাংলা আর কোনটা আরবি বুঝতে হলেও অনেক্ষণ গবেষণা করার প্রয়োজন। এই হলো আমাদের বাঙালিত্ব।

ইন্টারভিউ বোর্ডে চাকরি প্রার্থীকে বলা হলো, আজ কত তারিখ? বেচারা সার্ট-প্যান্ট ইন করে টাই লাগিয়ে কিন সেভ করে সুদর্শন যুবকের বেশে ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন! পড়াশোনা করেছেন রাত জেগে। প্রশ্নের ধরন দেখে হাসি পেল। বললেন, আজ ১৮ জানুয়ারি! প্রশ্নকর্তা মুখ টিপে হাসলেন। বললেন, বাংলা কত তারিখ? অবাক হলেন চাকরি প্রার্থী। তিনি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। স্মরণ করতে পারলেন না! প্রশ্নকর্তা এবার বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে তারিখ না হয় ভুলে গেছেন, কোন্ মাস চলছে এখন? বেচারা অগ্র অগ্র করতে করতে শেষ পর্যন্ত বললেন, পৌষ মাস। একেই বলে কারো পৌষ মাস আর কারো সর্বনাশ! এরকম ঘটনা রীতিমতো স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে আমাদের সোনার বাংলাদেশে। আমরা ইংরেজিকে এতবেশি প্রাধান্য দিয়েছি যে নিজেদের আলাদা একটি সন তারিখ রয়েছে তাও ভুলে বসে আছি।

অনলাইনের সবচেয়ে সহজলভ্য মাধ্যমটি হলো ফেসবুক। এখন মানুষ নিজের মনের কথাগুলো ফেসবুকে শেয়ার না করে থাকতে পারে না। ঘটনা যাই ঘটুক, ফেসবুকে সেটা আপলোড করতে হবে। একজন লিখলেন, হেলছি কিন্তু দুলছি না! এই স্ট্যাটাসেও অনেকগুলো লাইক আর কমেন্ট পাওয়া গেল। আরেকজন জানান দিলেন, বাথরুমে যাচ্ছি! কেউ খেতে বসছেন, টেবিলে সাজানো আলু ভর্তা ও ভাতের একটি ছবি তুললেন মোবাইল ফোনের ক্যামেরায়। আপলোড করলেন ফেসবুকে। কখনো কখনো এ মাধ্যমটি আবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদও বহন করে। রাস্তায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন কেউ, জ্ঞান হারিয়েছেন। লোকজন ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। একজন ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে দিলেন। জেনে গেলেন তার আপনজনেরা। জনপ্রিয় এ মাধ্যমটির বদৌলতে এখন মানষ অনেক আপডেটেড। একটি নতুন বছর শুরু হচ্ছে, এ নিয়ে তাই ফেসবুকও সরগরম। বছরের বিদায়লগ্নে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে পোস্ট দিয়েছেন। আবার নতুন বছরকে স্বাগত জানাতেও ব্যস্ত রয়েছেন অনেকে। সবচেয়ে বড় কথা, নতুন বছরের নিকট নিজেদের প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন অনেকে। নতুন বছরে নতুন করে পথ চলতে চাই। নতুন বছরে স্বপ্ন পূরণ হবে তো? নতুন বছর, তুমি আমাকে এটা দাও ওটা দাও ইত্যাদি। বছর বা সনটা আসলে কি কিছু দিতে পারবে? এ তো সময়ের একটি নির্দিষ্ট ছক মাত্র। কিন্তু আমরা সময়ের ছকে এতটাই বন্দী যে, বছর আমাদের কাছে কিছু চায় কি না সেটা না ভেবেই বছরের নিকট প্রত্যাশা করে বসি।

কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে কাল। মহাকাল হিসেবে আবার সেটাই আমাদের নিকট গণ্য হচ্ছে বারবার। আমরা যুগ থেকে যুগ পার করছি। আমাদের বয়স প্রতিদিন বাড়ছে। বয়স বাড়া নিয়েও কথার উল্টো পিঠে কথা থেকে যায়। আসলে কি আমাদের বয়স বাড়ছে? নাকি বয়স ফুরিয়ে যাচ্ছে? সময়টা আমাদের এত বেশি কায়দা করে জব্দ করে আছে যে আমরা আমাদের চাওয়াটকেও তার দিকে ছুঁড়ে দিয়েছি। বিদায়ী দু হাজার পনেরো সনের হতাশা ও বঞ্চনাকে পেছনে ফেলে ভাল কিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশা নিয়ে নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে মানুষ তাই বরণ করে নিয়েছে নতুন বছর দু হাজার ষোল খৃষ্টাব্দকে।

নতুন বছরকে সামনে রেখে মানুষের চিন্তা ভাবনা করাটা একেবারেই স্বাভাবিক। আমরা যেভাবেই হোক ইংরেজি বা ঈসায়ী সনকেই বেছে নিয়েছি আমাদের কর্মক্ষেত্র ও বাস্তব জীবনে। এর থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ নেই। তাই নতুন বছর বলতে আমরা জানুয়ারিকেই বুঝি। বৈশাখ বা মহররম কেবল জেনে রাখার জন্য। মেনে চলি জানুয়ারিকে। আর সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে হলেও এই সনটির গুরুত্ব রয়েছে। নানা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই এবার দু হাজার ষোল সালের আগমন। দু হাজার তেরো, চৌদ্দ এবং পনেরো সালের শুরুতেই যেভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছিল আশা করা হচ্ছে সেরকম কিছু ঘটবে না এবার। মানুষের মধ্যে তাই আতংক বা আশংকাও অনেক কম। সত্যি কথা বলতে কি, খেটে খাওয়া মানুষ কখনোই এগুলো নিয়ে ভাবার সময় পায়নি। রাজনীতি আমাদের দেশে থাকা না থাকা অনেকটা সমান হয়ে গেছে। মানুষও এখন তাই কোন দলের নিকট কিছু প্রত্যাশা করে না। যা পাওয়া যায় সেটাকে বোনাস ধরেই মানুষের কর্মচিন্তা এগোচ্ছে। না পাওয়ার বেদনা থেকেই যেখানে বের হওয়া যাচ্ছে না সেখানে চাওয়ার মতো সাহসও হারিয়ে ফেলেছে অনেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চান, এটাকে কার্যকর করতে পারলে দেশের মানুষ যারপরনাই কৃতজ্ঞ থাকবে তাঁর নিকট। মালোয়েশিয়ায় মাহাথির মোহাম্মদ যা করেছেন, শেখ হাসিনাও কি পারবেন সেরকম কিছু করতে এ দেশে? মানুষ আশাবাদী, তাই নতুন বছরে এরকম প্রত্যাশাও করছেন অনেকেই। আবার কারো কারো প্রত্যাশা ভিন্ন। তারা আশা করেন, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে। দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাশ বইবে। প্রত্যাশার কোন শেষ নেই রাজনৈতিক চিন্তাভাবনায়।

মানুষ হিসেবে আমরা একটি আত্মভোলা জাতি। আমরা অতীতের অনেক কথাই বেমালুম ভুলে যাই। আবার ভবিষ্যতের চিন্তাভাবনাও খুব বেশি স্থায়ী করতে পারি না মস্তিষ্কে। শেষ করতে চাই হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি কথা দিয়ে। তিনি বলেছেন, পাঁচটি বিষয়কে অন্য পাঁচটি বিষয় গ্রাস করার পূর্বেই তার সদ্ব্যবহার করো। এরমধ্যে অন্যতম তিনটি হলো, তোমার বার্ধক্য আসার পূর্বেই যৌবনকালকে, অসুস্থ হবার পূর্বেই তোমার সুস্থতাকে, সর্বোপরি মৃত্যু আসার পূর্বেই জীবনকে। তাই নতুন বছরের শুরুতেই প্রত্যাশা, আসুন অতীতের হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, শত্রুতা ইত্যাদি ভুলে গিয়ে নতুন করে আমাদের চলার পথ সৃষ্টি করি।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×