মাথার কাছে রাখা মোবাইলটা একটানা বেজে চলছিল। আধো ঘুম চোখে মোবাইলটা ধরে হ্যালো বলতে ওপর প্রান্ত থেকে বলে উঠলো-
- কি খবর তোমার? এখনো ঘুমাচ্ছ?
- হ্যালো কে?
- ও ভুলে গেছো? আমার কণ্ঠস্বর এখন আর চেনা যাচ্ছে না?
আমি চোখ কচলাতে কচলাতে বললাম-
- জী, না মানে, কি খবর তোমার? কেমন আছো? এতো সকালে? কি ব্যাপার?
- তোমার খবর কি তাই বল? বাবা কেমন আছে?
- হমম, ভালো।
- গত কয়েকদিন থেকে তোমার কথা মনে পড়ছে। কিচ্ছু ভালো লাগে না। তুমি সত্যি করে একটা কথা বলবে?
- কি?
- তুমি কি সত্যি আমায় ভালোবাসতে? নাকি শুধুই টাইম পাস করেছিলে?
- টাইম পাস। আরে তোমারে আমি ভালোবাসতে যাব কেন? আর ভালোবাসলে এখন এই অবস্থা হবে কেন। তুমি আসলে একটা বোকা মেয়ে, এত দিনেও বুঝলা না। গত রাতে কি ঘুমাও নি? আজ কি কেউ তোমায় দেখতে আসবে? নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?
- না, আমায় কে বিয়ে করবে? তোমার সাথে যখন বিয়ের কথা চলছিল তখন কত দিক থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছিল, কতরকম চাপ। এখন একটাও খবর আসে না। মনে হয় তোমার সাথেই আমার বিয়ে হবে। সেদিনও মা তোমার কথা জানতে চেয়েছিল। আমি কিছুই বলতে পারিনি।
- না হবে না। হলে, অনেক আগেই হয়ে যেত।
- তুমি আসলে একটা গর্দভ, বুদ্ধু। এতো দিনে বাবাকে ম্যানেজ করতে পারলা না?
- থাক সে কথা, তোমার কথা বল। সেদিন তো একবারের জন্যও পিছন ফিরে তাকালে না। আমি অনেকক্ষন বসে বসে তোমার চলে যাওয়া দেখলাম। রিক্সায় চড়লে একবারের জন্যও তাকালে না। ভেবেছিলাম অন্যদিনের মত তুমি রিক্সা ঘুরিয়ে ১০ মিনিট পর আবার ফিরে আসবে। কিন্তু না।
- থাকবে কেন সে কথা? আর সেদিন যদি আমি ওভাবে না যেতাম তবে সারাজীবনেও আমার যাওয়া হতো না। তুমি কোনভাবেই আমাকে ছাড়তে পারতে না।
- ভালো আছো তো?
- রাখ তোমার ভালো আছো? নতুন করে শিখছো ভালো আছো তো?
- কেন আগে কি ভিন্ন কিছু বলতাম? "তারপর খবর কি? কেমন আছো?" এই টাইপের কিছু? তবে যাই বল এইরূপ কথা বলার সময় আমি একটা কথা বলতাম। থাক বলবো না। ওটা অনেক দূরের হয়ে গেছে।
- কেন বলবা না বল। বলতে হবে।
- না থাক
- না বল, কি কথা?
- I Love You
- এটা দূরের কথা হবে কেন? তোমার যদি ১৪টা বিয়েও হয় তারপরও এটা থাকবে।
- আমারে ১৪টা বিয়ে দিয়ে দিলে?
- যদি ১৪ দ্বিগুনে ২৮ টা বাচ্চাও হয় তারপারও থাকবে।
- এখন সাত সকালে ফোন করলা কেন, সে টা বল আগে
- না এমনি, ভালো লাগছিল না, তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিল তাই।
- ও তাই।
- গত পরশু চাচাতো বোনের জন্মদিন গেল। ও তোমার কথা জিজ্ঞাস করে বলল "ভাইয়াটা এমন করলো কেন?" আমি বলেছি, তোর ভাইয়ার কোন দোষ নাই। যা হবার তাই হয়েছে।
- আসলেই তাই, নিয়তি। নিয়তিতে নাই তাই এই অবস্থা। চেষ্টাতো কম করিনি।
- কিসের নিয়তি? দোষতো তোমাই। তোমার জন্যইতো আজকে এই অবস্থা। তুমি কি পারতে না সবকিছু ছেড়ে আমায় গ্রহণ করতে?
- এই সাত সকালে কি ঝগড়া করবে?
- আচ্ছা থাক, ভালো লাগছে না কিছু। তুমি ভালো আছো তো, বাবা কেমন আছে?
- সবাই ভালো আছি, অনেক আনন্দে আছি। তুমি ভালো থেকো
- কচু থাকবো। তুমি ছাড়া কি আমি ভালো থাকতে পারি?
- থাকতেছো ঠিকই, আগে বলতে একদিন কথা না বললে নাকি তোমার দম বন্ধ হয়ে যায়। কই এখন তো দেখি দিব্বি কথা না বলে মাসের পর মাস পার করে ফেল।
- তুমিই তো সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছো।
- ভালো আছো তো?
- হুমম, তুমি?
- ভালো। আমায় ক্ষমা করে দিও।
- আমার জন্য একটু দোয়া করো। আর নিজের প্রতি যত্ন নিও। বাবার দিকে খেয়াল রেখো।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




